হিরণ্ময় স্বীকৃতি -

ছবি - নির্মলেন্দু মণ্ডল

হিরণ্ময় স্বীকৃতি

কবিতা লিখে আপনি কোনও প্রাইজ পাননি বলে বউদিও খুব দুঃখ পেত। আপনি জানেন ?

হর্ষ দত্ত

ছাদে রাখা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছে বুদ্ধপ্রতিম। মনখারাপ হয়ে গেলে মানুষটা চুপচাপ ছাদে চলে আসে। স্ত্রী মিতালি কয়েকদিনের অসুখে নার্সিংহোমে মারা যাওয়ার পর, কঠোরভাবে শোক সামলে নিয়েছিল দাদাবাবু। বিশেষ করে, একমাত্র ছেলে পাপুনদা মায়ের শ্রাদ্ধ-শান্তি শেষ হওয়ার পরপরই, নিজের বউ-মেয়েকে নিয়ে যেদিন হায়দরাবাদে চলে গেল, সেদিন ‘তোমরা ভাল থেকো’ ছা়ড়া দাদাবাবু আর একটা কথাও বলেনি। বাগডোগরা এয়ারপোর্টের দিকে ভাড়া গাড়িটা যেন পাখির মতো উড়ে গেছিল। তারপর, বউদির ছবির সামনে সেদিন দাদাবাবু অনেক রাত্রি পর্যন্ত বসেছিল।

রাত প্রায় এগারোটা নাগাদ যেন অনেক সাহস সঞ্চয় করে, নম্র স্বরে সাজুনি বুদ্ধপ্রতিমকে ডেকেছে, দাদাবাবু, আপনার খাওয়া-দাওয়ার সময় অনেকক্ষণ পেরিয়ে গেছে।…এবার কিছু মুখে দিন।

সাজুনি মাঝবয়সি কাজের মহিলা। প্রায় বছর কুড়ি বছর বুদ্ধপ্রতিমের বাড়িতে আছে। এখন ও সুখে-দুঃখে পরিবারেরই একজন। দাদাবাবু চমক ভাঙার মতো বলেছে, হ্যাঁ, খেতে হবে, ঘুমোতে হবে, কাল সকালে উঠতে হবে। কোথাও কিছু থেমে নেই। দে, খেতে দে।

বউদি চলে যাওয়াতে এমনিতেই সাজুনি প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছে। দাদাবাবুর মতো সাজুনিও একা হয়ে গেছে। বেদনা বুকের মধ্য়ে নিয়ে ও কাজ করে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু  দাদাবাবুকে দেখে ওর কেমন যেন ভয় লাগে। বউদি স্বর্গে চলে যাওয়ার পর মানুষটা পাথরের মতো হয়ে গেছে। এর পেছনে আছে পাপুনদার মস্ত ভূমিকা। শোক-তাপে দগ্ধ বাবার কাছে আরও কয়েকটা দিন থাকলে, কী এমন ক্ষতি হত ? পাপুনদা ঠিক কাজ করেনি।

আরও পড়ুন –

এ বাড়িতে কাজ করতে এসে বউদির কাছ থেকে সাজুনি জেনেছিল, দাদাবাবু স্কুলে মাস্টারি করে। আর অবসর সময়ে কবিতা লেখে। ওর লেখা অনেকগুলো কবিতার বইও আছে। বাড়িতে দাদাবাবুর সঙ্গে যারা দেখা করতে আসে, তারা সবাই নাকি কবি। সাজুনি ক্লাস সিক্সের পর আর পড়াশোনা করতে পারেনি। গরিবের ঘরে জন্মালে লেখাপড়া শেখার চেয়ে উড়নচণ্ডি হওয়া সহজ। পেট চালানোর জন্যে যা খুশি করা যায়, হওয়া যায়। এ-বাড়ি ও-বাড়ি কাজ করতে করতে মিতাবউদির বাড়িতে ওর পাকাপাকি ঠাঁই হয়ে গেল। যৌবনের দিনগুলোতে খুব সাজত বলে বউদি ওকে সাজুনি নামে ডাকত।

ওর আসল নাম গৌরী। অবিবাহিত মেয়েটিকে, পরিবারেরই একজন বলে মিতা মনে করত। এমনটাও ভেবেছিল, সাজুনির বিয়ে দেবে। কিন্তু মেয়েটি নিজেই রাজি হয়নি। কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, যে আমাকে বিয়ে করবে, সে তো আর চাকরি-বাকরি করা লোক হবে না।… খুব বেশি হলে হবে ভ্যান রিকশাওয়ালা। আমাকে আবার সেই আধপেটা, জুতোপেটা খেয়ে বেঁচে থাকতে হবে।… না, বউদিমণি না, আমি বিয়ে করব না। আমাকে বিদেয় করে দিও না গো। তোমার পায়ে পড়ি।

মিতা এ বিষয়ে আর কোনও চেষ্টা করেনি। সাজুনি আজও আছে। বুদ্ধপ্রতিম অনেক গভীরে অনুভব করে, মেয়েটি আছে বলেই একাকিত্ব পাহাড়প্রমাণ হয়ে যায়নি। কবিতা লেখা আমার মুক্তির জায়গা—একসময় মানুষটা এমন ভাবনায় মনে মনে গর্ব অনুভব করত । কিন্তু চাকরি সূত্রে পাপুন সপরিবার চলে যাওয়ার পর, বুকের ভেতর আছড়ে পড়েছিল সমুদ্র-কল্লোল। আর মিতার চিরবিদায় ওকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। যেন মৃত ঝিনুকে ভরে আছে ওর বড় সাধের মুক্তির জায়গা। সাহিত্য-চর্চা জীবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

আজ সন্ধের কিছু পরে অনুরাধা, পার্থসারথি ও হিমাংশুবাবু কথা বলতে এসেছিল। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সেই একই কথা, ‘ আপনি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন। শোক আপনার হৃদয়ে যে-আলোড়ন তুলেছে, তার পরিমাপ  আমরা করতে পারব না। কিন্তু শোকই তো শেষ কথা নয়। জীবন তো আসলে দেওয়া-নেওয়ার খেলা। ‘ কথাগুলোর এই সারমর্ম বুদ্ধপ্রতিমকে ক্রমাগত বিরক্ত করছে। অথচ এদের আসতে বারণ করাও মুশকিল। এই মফস্বলের প্রায় সব কবি এবং কয়েকজন গদ্যলেখক মিলে বছর দুয়েক আগে ‘ উত্তরবঙ্গ সৃষ্টি সঞ্চয়ন ’ নামে যে-মিলন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা করেছিল, এরা তারই সক্রিয় সদস্য। বুদ্ধপ্রতিম এই ক্লাবের অন্য়তম প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি। অতএব ওরা তো ওর কাছে আসবেই। বারণ করা দুরূহ। তবে আজ ওরা জ্ঞান বা সান্ত্বনা দিতে আসেনি। ওরা এসেছিল সংগঠন থেকে একটি কবিতা-পুরস্কার চালু করার প্রস্তাবনা নিয়ে কথা বলতে।  কলকাতা-কেন্দ্রিক দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গের কবিদের প্রতি কোনও সম্মাননা  আসে না, এবছরও যথারীতি আসেনি। তাই ওদের সংগঠনের পুরস্কার আগামী দিনে হয়ে উঠবে একটা চ্যালেঞ্জ।

বুদ্ধপ্রতিম ওদের বক্তব্য মন দিয়ে শুনেছে। পার্থপ্রতিমরা একেবারে ভুল কথা বলেনি। প্রতি বছর ওর ভেতরেও তো সম্মানপ্রাপ্তির আশা জেগে ওঠে। পঞ্চাশ কিংবা পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে কবিতা লেখার পর, আজও বুদ্ধপ্রতিম কবি হয়ে উঠতে পারেনি। হয়তো এখনও মাঝারি মাপের কবি হিসেবে চিহ্নিত। পুরস্কার প্রাপকের তালিকায় ওর নাম দেখতে না-পেয়ে, অনুরাগীরা হা-হুতাশ করে। বুদ্ধপ্রতিম নিজেও ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ হয়, বঞ্চনার সীমা সত্যিই ছাড়িয়ে গেছে। নীলকমল নামের ওর অনুরক্ত এক তরুণ কবি, গত কয়েক বছর ধরে জোর দিয়ে বলে, আমার কাছে পাক্কা খবর আছে, এ বছর জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার আপনাকেই দেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। কিন্তু ছেলেটির সংবাদ প্রতিবারই চুপসে গিয়ে গড়াগড়ি খায়।

বুদ্ধপ্রতিমের মন ভেঙে যায় ঠিকই, কিন্তু নীলকমলের ওপর ও রাগ করে না। কলকাতার কোনও সূত্র হয়তো নীলকে মিথ্যে স্বপ্ন দেখায়। যুবকটি প্রত্যাশার ভেলায় ভাসতে থাকে। ঘটনাটা সত্যি সত্যি যদি কখনও ঘটে যায়, তা হলে সারা আলিপুরদুয়ারে নীলকমলের গৌরব ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু সে সম্ভাবনা এতটাই ক্ষীণ যে, ওকে বকুনির চোটে চুপ করিয়ে দেওয়া, কিংবা বছরওয়ারি একই কথা বলতে দেওয়া সমান।

হিমাংশুবাবুকে ভারী গলায় বুদ্ধপ্রতিম বলেছে, সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা খুব সহজ হবে কি ? তা ছাড়া পুরস্কারের অর্থমূল্য কে দেবেন ? কত টাকা ? কার স্মৃতিতে অর্থাৎ নামে এই পুরস্কার চালু হবে— এই বিষয়ে সবাই একমত নাও হতে পারেন।

মাথা নিচু করে একটু ভেবে হিমাংশুবাবু বলেছেন, আমাদের সদস্যরা অনেক দিক থেকে আলোচনা করে, এমন একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাইছে। আসলে বঞ্চনার কোনও শেষ দেখা যাচ্ছে না, বুদ্ধবাবু।…স্ত্রী বিয়োগের পর থেকে আপনি সংগঠনে যাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন।…আপনার ওপর তো আর জোর করা চলে না। তাই আমরাই আসি…আপনাকে বিরক্ত করি।

না,না, আমি বিরক্ত হব কেন ! আপনাদের প্রপোজল নিয়ে আমাকে একটু ভাবতে সময় দিন।

অনুরাধা বলেছিল, বুদ্ধদা, কার স্মৃতিতে এই পুরস্কার হবে জিজ্ঞেস করছিলেন না ! ও পার্থদা, আমি বলব ?

হিমাংশুবাবু ও পার্থসারথি নীরবে সম্মতি দিতেই অনুরাধা বলেছে, প্রায় সত্তর ভাগ সদস্যের অভিমত, কবি বেণু দত্তরায়ের স্মৃতিতে পুরস্কার দেওয়া হোক, বাকিরা শঙ্খ ঘোষের নাম প্রস্তাব করেছে।

মৃদু হেসেছিল বুদ্ধপ্রতিম, তাহলে শুরুতেই নাম নিয়ে মতান্তর। এরপর কাকে পুরস্কার দেওয়া হবে, সে নিয়েও তো বিতর্ক বেধে যাবে।…আমার কথাগুলো কিন্তু নেগেটিভ অ্যাপ্রোচ নয়। জল কোথায় গড়াতে পারে, সে সম্পর্কে সামান্য কিছু ভাবনা। তোমরাও ভাববে।…সাজুনি, ও সা–জু–নি, এদের চা-জলখাবার কিছু দিলি না !

বাড়ির ভেতর থেকে সাজুনি চেঁচিয়ে বলেছে, এই আনছি, দাদাবাবু।

দু-তিন মিনিটের নীরবতার মধ্যে সাজুনি বড় এক প্লেট সুজির পকৌড়া সেন্টার টেবিলে নামিয়ে দিয়ে গেছিল। তারপর চায়ের কাপ। ওরা কেউ আপ্যায়নে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেনি। কেননা এই সামান্য সৌজন্যে কেউ আপত্তি জানালে  বুদ্ধপ্রতিম অত্য়ন্ত ক্ষুণ্ণ হন। 

দাদা, আমরা সব দিক নিয়ে আলোচনা করছি। কোথাও যেন ফাঁক, বিরোধিতা বা দলাদলি না থাকে। সংগঠনটির সেক্রেটারি পার্থসারথি বাঁ হাতে চায়ের কাপ ও ডান হাতে পকৌড়া নিয়ে বলেছিল, আপনি এর মধ্যে একদিন আসুন। সবাই থাকব, সকলে আসবে। জানি, ফাউন্ডার-প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে এমন একটা চ্যালেঞ্জিং ম্যাটার নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি। তাই ক্ষমা চাইছি।

এ আবার কি ? ক্ষমা চাওয়ার কী হল ! দোষ তো আমারই। ব্যক্তিগত কষ্টকে সংস্থার সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি। ঠিক আছে, আমি যাব। এমন একটা উদ্যোগ সার্থক হোক—আমিও মনে-প্রাণে চাই।…কবে যাব, আমি তোমাকে ফোনে জানিয়ে দেব।

ওরা চলে যাওয়ার পরে  কবি-মানুষের ভেতরটা ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠল। উপেক্ষার বিরুদ্ধে, প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থার বিপক্ষে ‘উত্তরবঙ্গ সৃষ্টি সঞ্চয়ন’ যা করতে চাইছে তা আপাতভাবে বৈপ্লবিক মনে হলেও, আদতে কার্যক্রমের নির্যাস এই—নিজেকেই নিজে পুরস্কৃত করা। দ্বিতীয়ত, এই পুরস্কার কখনই সরকারি সম্মাননার সমতূল্য হতে পারবে না। উত্তরবঙ্গ যেসব লেখকদের আবাসভূমি, তারা এবার নিজেদের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিতে চাইছে। ‘ আমরা বঞ্চিত, অবহেলিত ’—একমাত্র এই কারণে, বিস্তীর্ণ রণাঙ্গন থেকে পিছিয়ে আসা কোনওভাবেই গৌরবজনক নয়। কিন্তু এই কঠিন সত্যটি সদস্যদের বোঝানো মুশকিল। স্বপ্নভঙ্গের বেদনা বর্শার মতো স্রষ্টাদের হৃৎপিণ্ডে গেঁথে গেছে। বুদ্ধপ্রতিম স্বয়ং এই হত্যা-উৎসবের শিকার। তবু একবার  ও  সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করবে।

একটা কবিতা কদিন ধরে মাথায় ঘুরছে । লিখে ফেললেই হয়। নিজের ঘরে গিয়ে টেবিলের মাঝামাঝি রাখা চেয়ারে বসতেই, মিতার ছবির দিকে চোখ চলে গেল। পাপুন জন্মাবার পর তোলা ছবি। মিতার মুখে স্মিত হাসিটি লগ্ন হয়ে আছে। সেই সঙ্গে মা হওয়ার আনন্দ-আভাস। ছবিটির ওপরে নিশ্চয়ই সময়ের ধুলো পড়ে গেছে। চোখের পাতা নামিয়ে বুদ্ধপ্রতিম চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তখনই নীরবে ঘরে ঢুকল সাজুনি। দু’হাতে ও ধরে আছে একটা ছোট ট্রে। হাতির দাঁত দিয়ে কারুকাজ করা এই ট্রে-টা ছিল মিতার বড্ড প্রিয়। সাজুনি এক গেলাস জল আর ট্যাবলেটের স্ট্রিপ নিয়ে এসেছে। নার্ভের ওষুধ। একবার বিনা কারণে বুদ্ধপ্রতিম অজ্ঞান হয়ে গেছিল। তারপর থেকে একাধিক চিকিৎসকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরামর্শ  অনুযায়ী নার্ভাস সিস্টেম ঠিক রাখার ওষুধ নিয়মিত খেতে হয়।

সাজুনি টুলে বসল। কাজের মেয়েটি খানিক উসখুস করছে দেখে বুদ্ধপ্রতিম জিজ্ঞেস করল, কিছু বলবি ?

কবিতা লিখে আপনি কোনও প্রাইজ পাননি বলে বউদিও খুব দুঃখ পেত। আপনি জানেন ?

হ্যাঁ, আমি জানি। আমাকে বলত। অবসন্ন স্বরে কবি উত্তর দিল।

আবার অনেক কিছু আপনাকে বলত না। ম্লান হাসল সাজুনি, যেমন সন্ধের দিকে দোকানে-বাজারে বউদিমণি যখন বেরোত, তখন অনেকে ওর দিকে তাকিয়ে সঙ্গের লোককে গলা নামিয়ে বলত, ওই দেখ, কবি বুদ্ধপ্রতিমবাবুর স্ত্রী। আপনি যে মান্য মানুষ তা নিয়ে বউদির গর্ব হত।

হালকা হাসতে হাসতে কবি বললেন, এসব বাজে কথা। আমি কি বিখ্যাত কেউ ? কবিতা লিখি, কাব্য নিয়ে চর্চা করি আর কিছু বই বেরিয়েছে। এই তো আমার অল্প পরিচয় !

দাদাবাবু গো, আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন। বউদি যখন নার্সিংহোমে ভর্তি ছিল, সেই সময়ে আপনাকে একটা জিনিস দেওয়ার জন্য়ে, আমাকে চুপিচুপি বলে গেছিল। বউদি নিজের হাতেই আপনাকে এই বছর দিত। কিন্তু সময়ই পেল না। ভগবানের এমনই অবিচার যে, অমন ভালো মানুষটাকে তুলে…. ডুকরে উঠল সাজুনি। যেন হঠাৎ মনে পড়েছে, এমনভাবে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

বুদ্ধপ্রতিম হতভম্ব। কী এমন জিনিস মিতা ওকে দেওয়ার জন্যে সাজুনির কাছে রেখে গেছে ! আশ্চর্য !

কয়েক মুহূর্ত পরেই সাজুনি ফিরে এল। ওর ডান হাতে মিতার দু‘থাকের প্যাঁচওয়ালা সিঁদুর কৌটো। রুপোর তৈরি। সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে, দ্বিতীয় থাকের প্যাঁচ থেকে ও বের করে আনল পাঁচ টাকা মাপের একটা কয়েন। সাজুনি হাত বাড়িয়ে বলল, এই নিন। বউদিমণি আপনাকে এই প্রাইজটা দিয়ে গেছে। বলে গেছে, মন খারাপ করবেন না। খুব আশা করেছে, আপনি সুন্দর, সুন্দর  কবিতা লিখবেন।  

হাত পেতে কবি যা নিল, তা মহারানি ভিক্টোরিয়ার প্রোফাইলের ছাপ মারা পুরনো গিনি। সোনা খানিকটা বিবর্ণ। মুহূর্তে মুচড়ে উঠল বুদ্ধপ্রতিমের বুকের ভেতরটা। মনে হল, ওর সৃষ্টির এমন নিবিড়, নির্মল, নিঃসংশয় স্বীকৃতি, অন্য সব পুরস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে।

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *