ফেলুদার পাঠশালা -

গ্রাফিক্স -সৌরভ হাজারী।ছবি-'জয় বাবা ফেলুনাথ'।

ফেলুদার পাঠশালা

ফেলুদার গল্প উপন্যাসের সিগনেচার ট্রেড মার্কগুলোতে আলো ফেলার চেষ্টা।

সুমন্ত্র মিত্র

ফেলুদার পৃথিবীতে আপনাকে স্বাগত। গত ৫০ বছর ধরে আবহমান এই অধমের মতন আপামর ফেলুদা প্রেমীদের জন্য অকিঞ্চিৎকর নিবেদন।

১৯৬৫ -১৯৯৭ এই ৩২ বছরে ৩৫টি সম্পূর্ণ ও ৪টি অসম্পূর্ণ গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত। যাত্রা শুরু ১৯৬৫ সালে সন্দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি ‘ থেকে।

এখানে আমরা ফেলুদার গল্প উপন্যাসের যে সিগনেচার ট্রেড মার্ক সেখানে একটু আলো ফেলার চেষ্টা করছি। একজন ফেলুদা ভক্ত হয়ে জানার আর বোঝার  চেষ্টা করছি কী সেই অনুপান যার  অমোঘ আকর্ষণে  প্রজন্মের পর প্রজন্ম আট থেকে আশি বিমুগ্ধ হয়ে ফেলুদার গল্প পড়ে চলেছে।

প্রথমত ফেলুদার গল্প উপন্যাসের ভাষা।সেটা স্রষ্টার অমোঘ লেখনীতে ঝরঝরে,স্বাদু গদ্য,একবার ধরলে ছাড়া যায়না যা সত্যজিত রায়  একটি ইংরেজি দৈনিকের ক্যাচ লাইন তৈরি করেছলেন সেই unputdownable,  এমন এক আশ্চর্য পৃথিবীতে নিয়ে যান। সেখানে অ্যাডভেঞ্চার আছে ,রহস্য আছে,হাস্যরস আছে,দেশবিদেশ ভ্রমণের মজা আছে আর সেটা যে ভাষায় বলা হয়েছে সেইটাই আসল।সেটা না হলে প্রায় অর্ধ শতাব্দী অতিক্রান্ত শিশু থেকে বয়স্ক সবাইকে এমন মনোরম আনন্দ দিতে পারতো না।নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেছিলেন,’এত সাহিত্যচর্চা,লেখালেখি করার পর যখন পড়ি ‘’লোকটার গায়ের রং একেবারে সদ্য কালি বুরুশ করা নতুন জুতোর মতন চকচকে ‘(সোনার কেল্লা’)’’ এই আশ্চর্য উপমাতে মোহিত হয়ে যেতে হয়।‘                

দ্বিতীয়ত ফেলুদার ব্যক্তিত্ব,আন্তর্জাতিক বাঙালিয়ানা,নানান বিষয়ে গভীর পড়াশোনা (শুধু সমগ্র ফেলুদা উপন্যাসগুলোতে ফেলুদা যা বই পড়ছে সেটা পড়লেও একজন সাধারণ মানুষ অনেক সমৃদ্ধ হবেন এবং হয়েওছেন।এর সঙ্গে ফেলুদা ,তোপসে ,লালমোহনবাবুর নিজেদের ,মক্কেলদের,যে কোনো রহস্যের তদন্তে নেমে যাকে বলে জেরা আরও অন্যান্য কথোপকথনের মধ্যে যে মূল সুর সেটা হল আভিজাত্য,মার্জিত রুচি আর শিক্ষার পরিচয় যাতে আচ্ছন্ন হতেই হয় পাঠককে।

তৃতীয়ত  ফেলুদার কোল্ট পয়েন্ট .৩২ রিভলভার থাকা সত্ত্বেও মগজাস্ত্রর  (‘যেটা মাঝে মাঝে ঘ্যাচাং করে মানুষের মনের ভেতরে ঢুকে পড়ে মানুষের সব মনের কথা জেনে নেয়’) শানিত ব্যবহার।মানে ফিজিক্যাল গোয়েন্দার চেয়েও বেশি সেরিব্রাল গোয়েন্দা।

চতুর্থত সমস্ত ফেলুদা গল্প উপন্যাসের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিছু বৈশিষ্ট অথবা সাদৃশ্য আছে। যেমন:

১) ফেলুদার মক্কেলরা বেশিরভাগই ধনী,শুধু কৈলাস চৌধুরী, মণিমোহন সমাদ্দার, সোনার কেল্লার সুধীরবাবু ছাড়া।আর এই মক্কেলদের একটি করে সেক্রেটারি আছেন যারা গল্পের অন্যতম মুখ্য চরিত্র ,তাদের মধ্যে কেউ ভিলেন,কেউ ভিলেনকে সাহায্য করে ,কেউ নিজেই ভিলেনের হাতে মারা পড়ে। যেমন রজত বোস (হত্যাপুরী), তড়িৎ সেনগুপ্ত (রয়েল বেঙ্গল রহস্য)।

২) বেশ কিছু গল্পে ( বাদশাহী আংটি,জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা, ,গোঁসাইপুর সরগরম) ফেলুদা নিজে আগে থেকে মূল্যবান জিনিস সরিয়ে রেখেছিল বা রহস্যোদ্ঘাটনের সময় সামনে এসেছে।

৩) বাবার সঙ্গে ছেলের দূরত্ব, মনোমালিন্য,অসদ্ভাব।(ফেলুদার গোয়েন্দাগিরির রাজেনবাবু ,গ্যাংটকে গন্ডগোলে শেলভাঙ্কার ও পুত্র বীরেন্দ্র ,গোঁসাইপুর সরগরমে শ্যামলাল মল্লিক ও পুত্র জীবনলাল, হত্যাপুরীতে দূর্গাগতি (ডিজি ) সেন ও পুত্র মহিম সেন,ছিন্নমস্তার অভিশাপে মহেশ চৌধুরী ও পুত্র অরুণ,টিনটোরেটোর যীশুতে নবকুমারের পুত্র নন্দ।       

৪) লালমোহনবাবুর বন্ধু গড়পাড়ের এথেনিয়াম ইনস্টিটিউশনের ভূগোল আর ইতিহাসের শিক্ষক বৈকুণ্ঠনাথ মল্লিকের কবিতা যা ফেলুদার গল্পে একটি অবিচ্ছেদ্য জনপ্রিয় আকর্ষণ। শুধু এই কবিতার মনোরম শ্লেষ নিয়ে একটি আলাদা নিবন্ধ লেখা যায়। ‘এক পায়ে খাড়া থাকি একা বালুচরে’,অয়ি কাঞ্চন জঙ্ঘে’। এখানে উল্লেখ্য প্রতিবছর এই এথেনিয়াম ইনস্টিটিউশনে সাড়ম্বরে সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন পালিত হয়।  

৫) তোপসে আর লালমোহনবাবুর স্বপ্নের বর্ণনা ফেলুদা গল্প উপন্যাসের অন্যতম আশ্চর্য আকর্ষণ।পৃথিবীর কোনো গোয়েন্দা গল্প উপন্যাসে ঘটনা সম্বলিত দুর্দান্ত রোমাঞ্চকর,তদন্তের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে হাস্যরসে ভরা এই স্বপ্নসৃষ্টি  এক অসাধারণ  অনুপম,অনন্য সৃষ্টি।কিছু অতুলনীয় দৃষ্টান্ত উল্লেখ করছি-

তোপসের স্বপ্ন – ‘…একটা প্রকান্ড ঘরে একটা প্রকান্ড লোহার দরজা,আর তাতে একটি প্রকান্ড বড় ফুটো। ফুটোটা এতো বড়ো যে তার মধ্যে দিয়ে অনায়াসে উলটো দিকে চলে যাওয়া যায়,কিন্তু তা না করে আমি,ফেলুদা আর মণিমোহনবাবু তিনজনে একসঙ্গে একটা প্রকান্ড চাবিকে আঁকড়ে ধরে সেটাকে ফুটোটার মধ্যে ঢোকানোর চেষ্টা করছি আর সুরজিৎ দাশগুপ্ত একটা আলখাল্লা পরে তিড়িং  বিড়িং লাফাচ্ছেন আর সুর করে বলছেন ,’এইট টু নাইন ওয়ান -এইট টু নাইন ওয়ান-এইট টু নাইন ওয়ান।'(সমাদ্দারের চাবি )।     

লালমোহনবাবুর স্বপ্ন -‘ একদন ডাকাতকে হিপনোটাইজ করে কেল্লার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছি ,সেখানে সুড়ঙ্গের মধ্যে আন্ডারগ্রাউন্ডে বসে একটা উট জিবেগজা খাচ্ছে… (সোনার কেল্লা)।’এক জায়গায় ডজন খানেক বাঁদর বিক্রি হচ্ছে,আর একটা লোক ডুগডুগি বাজিয়ে বলছে রেনেসাঁস কা সুবাসিত বান্দর –  রেনেসাঁস কা সুবাসিত বান্দর – দো দো ডলার…'( টিনটোরেটোর যীশু )।

৬) হয়তো মূলত কিশোর কিশোরীদের জন্য লেখা বলে গল্পের মাঝে চরিত্রদের পাঠকের মনে রাখতে সুবিধের জন্য ফেলুদা তোপসেকে পরীক্ষা করছে এমন করে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি যা বিখ্যাত নীল খাতা খুলে লেখা।ফেলুদার কথায় সেটা দায়সারা হলে চলবে না।

”…এখন যারা গ্যাংটকে আছে তার মধ্যে বল।’এক শশধর বাবু। পদবি ?”দত্ত’,’তোর মুন্ডু’.’সরি –বোস।”কেন এসেছেন এখানে ?’,’ওই যে বললেন কী  সুগন্ধী গাছের ব্যাপার’।’অত দায়সারাভাবে বললে চলবে না। ‘…( গ্যাংটকে গন্ডগোল)। 

৭)সংকেত।রবীন্দ্রনাথের গুপ্তধনের ‘তেঁতুল বটের কোলে,দক্ষিণে যাও চলে’র পর সম্ভবত বাঙালির  সবচেয়ে জনপ্রিয় সংকেত, ‘মুড়ো হয় বুড়ো গাছ,হাত গোন ভাত পাঁচ দিক পাও ঠিক ঠিক জবাবে,ফাল্গুন তাল জোড় দুই মাঝে ভুইঁ ফোঁড়,সন্ধানে ধন্দায় নবাবে'(রয়েল বেঙ্গল রহস্য)।এরই সঙ্গে ‘ত্রিনয়ন ও ত্রিনয়ন একটু জিরো'(ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা)।এই সব আশ্চর্য রোমাঞ্চকর সংকেত সৃষ্টি তাঁর অসাধারণ, অদ্বিতীয় প্রতিভার স্বাক্ষর।      

৮) এবং সিধুজ্যাঠা। সিদ্ধেশ্বর বোস।ফেলুদার বাবা জয়কৃষ্ণ মিত্রর গ্রাম তুতো দাদা তাই জ্যাঠা। শার্লক হোমসের  মাইক্রফ্ট হোমসের মতো। বন্ধু রাধাপ্রসাদ গুপ্তের লেখা থেকে জানা যায় নির্মলচন্দ্র কুমারের আদলে সিধু জ্যাঠাকে সৃষ্টি করেছিলেন সত্যজিৎ।’নির্মল কুমারের  ঘরের চারদিকের দেওয়াল জুড়ে ছাদ অবধি ছিল খালি বই আর বই। সেই ঘরের এক কোণার তক্তপোশে একটা হাতাওয়ালা গেঞ্জি আর ধুতি পরে শান্ত চেহারায় শিবের মতন বসে থাকতেন তিনি।’ ঠিক তেমন আমাদের সিধু জ্যাঠা  সর্দার শংকর রোডে থাকেন।উনি অনেক কিছু করলে অনেকেরই পসার থাকতোনা তাই উনি মনের জানলা দরজা খুলে রেখে কাগজের কাটিং সমৃদ্ধ খাতার ভলিউম আর লাইব্রেরি সদৃশ বই নিয়ে থাকেন আর ফেলুদার প্রয়োজন পড়লে সাহায্য করেন।

৯) ফেলুদার ভিলেনরা ।ফেলুদার ভিলেনদের মধ্যে সবচেয়ে ধুরন্ধর,লালমোহনবাবুর ভাষায় পাঁচটি ভেঙে একটি হওয়া মগনলাল মেঘরাজ ,ইনিই একমাত্র ভিলেন যিনি তিনবার ফেলুদার মুখোমুখি হয়েছেন।জয়বাবা ফেলুনাথ ,যত কান্ড কাঠমান্ডুতে আর গোলাপি মুক্তা রহস্যে।অন্য দুর্ধর্ষ দুশমনরাও শয়তানিতে কম যান না।বিশেষ করে বাদশাহী আংটির বনবিহারী সরকার,গ্যাংটকে গন্ডগোলের শশধর বোস,সোনার কেল্লার অমিয় বর্মন আর অসামান্য ধুরন্ধর মন্দার বোস।পুরো তালিকা দীর্ঘায়িত না করে বলা যেতে পারে এই সব দুর্ধর্ষ প্রখর বুদ্ধির ভয়ঙ্কর অপরাধীদের হাড় হিম করা শয়তানির বিরুদ্ধে ফেলুদার মানসিক আর শারীরিক দুর্দান্ত যুদ্ধজয় বার বার পড়েও পুরোনো হয়না।

এখন সিনেমায় স্পাই ইউনিভার্সের মতো করে কল্পনা করতে ইচ্ছে হয় শহরের এক হোটেলে একসঙ্গে মগনলাল মেঘরাজ,বনবিহারী সরকার ,শশধর বোসেরা একজোট হয়ে ফেলুদাকে আক্রমণ করার,এবারে পুরোপরি হত্যা করার প্ল্যান করছে …. আর এবারে ফেলুদা তার সর্বশক্তি দিয়ে তার মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে… ।               

সন্দেশ ‘ফেলুদা বিশেষ সংখ্যায় (অগ্রহায়ণ ১৪০২) সংখ্যায় লীলা মজুমদারের ‘ফেলুচাঁদ’ প্রবন্ধে লিখেছেন,’ফেলুদার গল্প যারা পড়েনি ,তারা ঠকেছে। ভালো জিনিস উপভোগ না করতে পাড়ার দুঃখ আর কিছুতে নেই।…ফেলুদার গল্প উপন্যাসে যে সব অকুস্থলে রহস্য পেকে উঠেছে ,সে সমস্ত জায়গার বর্ণনা নিখুঁত।কোথাও কোনো ইতিহাস -ভূগোল- বিজ্ঞানের এতটুকু ভুল চুক চোখে পড়ে না।সব বয়েসের পাঠকরাই ফেলুচাঁদের পাঠশালায় শেখা যাবতীয় বিদ্যাবুদ্ধি সটাং বই থেকে তুলে,নিজের জীবনে যেমন খুশি কাজে লাগাতে পারে।বরং না লাগালেই ঠকতে হবে।…’

 সন্দীপ রায়ের ‘খসড়া খাতায় ফেলুদা’ লেখায় জেনেছি ফেলুদার গল্পের প্রথম নামকরণ যা পরে বদল করা হয়েছিল।কিছু নমুনা –

শেয়াল দেবতা রহস্য                            ফেলুদা ও আনুবিস রহস্য/আনুবিস রহস্য

গ্যাংটকে গন্ডগোল                               গ্যাংটকে ফেলুদা

কৈলাসে কেলেঙ্কারি                              কৈলাস  রহস্য

রয়েল বেঙ্গল রহস্য                              যেখানে বাঘের ভয়

জয় বাবা ফেলুনাথ                                কাশীধামে ফেলুদা

ফেলুদার গল্পে একধরণের মনস্তাত্ত্বিক আর আবেদন আছে যা পঞ্চাশ বছরের বেশি সময়কাল ধরে বাঙালিকে আকর্ষিত করে রেখেছে,ফেলুদার অনাড়ম্বর যাপন,মার্জিত রুচি,অস্ত্ৰ কম মগজাস্ত্রের প্রয়োগ বেশি, বর্তমান, আন্তর্জাতিক ঘটনা,ইতিহাস সম্পর্কে প্রখর জ্ঞান, আগ্রহ আর অনুসন্ধিৎসা।   

ফেলুদা পড়েই আমরা অনেক কিছু জেনেছি তার পুরো তালিকা না দিয়ে কিছু উল্লেখ করছি ,যেমন ‘হাড়ের ব্যারামের ডাক্তার অস্টিওপ্যাথ ,অস্টিও আর অস্থি -মিলটা লক্ষ্য করা’ (বাদশাহী আংটি),  ‘অর্জুনের শাঁখের নাম দেবদত্ত আর যুধিষ্ঠিরের শাঁখের নাম অনন্তবিজয়,'(গোলোকধাম রহস্য)হয় মানে ঘোড়া (রয়েল বেঙ্গল রহস্য),মিশরে গিজার পিরামিড দু’লক্ষ পাথরের ব্লক আছে ,তেরোশো বছর আগে দাক্ষিণাত্যের একদল কারিগর পাহাড়ের গা কেটে এই (কৈলাস ) মন্দিরটা বের করেছে। (কৈলাসে কেলেঙ্কারি)’এবং এই জানা শিক্ষকের পড়ানোর,মুখস্থ করা নয় গল্পের ফাঁকে ফাঁকে জুড়ে দেওয়া জ্ঞানার্জন।

সোনার কেল্লা ছবিতে তোপসে খাবার টেবিলে উর্ধশ্বাসে খাবার খেয়ে চলে যাওয়ার পর তোপসের মার চিন্তাব্যাকুল প্রশ্ন ছিল.’…ফেলুর কথা তো হচ্ছে না,ও তো পেশাও বেছে নিয়েছে,কিন্তু আমার ছেলের তো পড়াশোনা আছে,ইস্কুল আছে… ‘ উত্তরে তোপসের বাবা বলেছিলেন ‘ফেলুর মতন মাস্টার আছে কি সেই স্কুলে ?’

জয় বাবা ফেলুনাথ।

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *