কেমব্রিজের সরস্বতী পুজো -

কেমব্রিজের সরস্বতী পুজো

সুমনা আদক

পরম্পরা ঐতিহ্য মেনে  বাগদেবীর আরাধনায় মেতেছে আপামর বাঙালি। বাঙালির শিল্পকলা সৌন্দর্য ঘিরে রেখেছে নিজের পরিচিতিকে, স্বদেশের ছিটেফোঁটা রয়েছে পরদেশের কোনো এক আরবাড়ি সেন্টারে। যেখানে একছাদের নিচে একঝাঁক বাঙালির হাসি আনন্দ আড্ডার খুনসুটি চোখে না দেখলে কেউ বলতে পারবেন না এটাকে বিলেতের বাঙালিদের পুজো বলে। হ্যাঁ, লন্ডনের আরবাড়ি কমিউনিটি সেন্টার কেমব্রিজ এর একেবারে মাঝবরাবরে অবস্থিত। খুদে থেকে বড়দের মিলন ক্ষেত্র এবারের সরস্বতী পুজোর মঞ্চ। চোখধাঁধানো শহরে সনাতনী রীতিতে পুজো-অর্চনা সাজানো- গোছানো ব্যাপার সত্যিই ভালোলাগারই কথা।পাশাপাশি আতিথেয়তার কোনো ত্রুটি ছিল না বিন্দুমাত্র।

কেমব্রিজ শহরে ইন্ডিয়ান কমিউনিটি সেন্টারের এবছরের পুজো নাকি ২৪ বছরের সরস্বতী পুজোর ইতিহাস বয়ে বেড়ায়। সবথেকে ভালো লাগার মধ্যে ছিল মাতৃপ্রতিমার মায়াবী মেশানো রূপের আলিঙ্গন।মায়ের মূর্তির বর্ণনার মতোই সুন্দর ছিল ছোট পুজোর পরিকাঠামো, ব্রিটেনের ভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করা ক্ষুদেরা বাংলা বলতে বেশ স্বাচ্ছন্দ বোধ করছিল আরো ভালো ছিল তাঁদের সঙ্গে  তাদের অভিবাবকদের সহযোগিতা। বিলেতে ইংরেজি মিডিয়ামের পড়ার বইয়ের পাশে বাংলা ভাষার সংস্কৃতি কিন্তু হারিয়ে যায়নি। তাইতো এরা “কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি” কবিতা একেবারে গড়গড়িয়ে বলে।

আজকাল কলকাতার আনাচে কানাচে কান পাতলে সোশ্যাল এডুকেশনাল ট্রেন্ড এর ভিড়ের ঠেলায়,সহজপাঠ বর্ণপরিচয় হাতেখড়ি একেবারে ডুমুরের ফুল, দুঃখের বিষয় সাথে হতাশারও বটে। মাতৃভাষায় কথা বলা লজ্জার তো নয়ই বরং গর্বের। সুনিপুণভাবে এমন সুন্দর করে বিদেশীরাও সরস্বতী পুজোতে সামিল হল কেমব্রিজ কমিউনিটি তার বিরাট ছবিটা অনেক কিছু প্রমান করে দিলো। পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে প্রসাদ হাতে নিয়ে অনেকের সাথে গল্প, কেউ আবার কথার ফাঁকে সেই নিজের ছেলেবেলায় ফেলে আসা দিনের স্মৃতিচরণার সাথে  পুরোনো স্কুলের গল্প থেকে ডানপিটেপনার রঙিন কাহিনীগুলো ঝরঝরে বর্ণনা করলো। খাওয়াদাওয়ার পর্বে ছিল পুরোপুরি ঘরোয়াবাপ্যার। ভোগের খিচুড়ি লাবড়া, পায়েস মিস্টি চাটনি, পাঁপড় রসগোল্লা সবইতো ছিল। ব্রিটিশ থেকে স্প্যানিশ ফরাসি সব মানুষের চোখেমুখের আনন্দ বুঝিয়েছে বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স সত্যিই স্পেশাল।কেমব্রিজ এর সরস্বতী মায়ের আরাধনা মিলিয়ে দিলো সুদূর বাংলার বাগদেবীর আরাধনাকে।

আজকাল যেখানে বাঙালিদের মধ্যে বাংলাভাষা চর্চা,বাংলা গল্প কবিতা পড়া দুর্ভাগ্যবশত কমে যাচ্ছে সেখানে সুদূর কেমব্রিজে সরস্বতীপুজো হচ্ছে আর সেখানে ‘কুমোরপাড়ার গরুর গাড়ি’ আবৃত্তি হচ্ছে এই বিষয়টি তৃপ্তিকর। 

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *