ইনফ্লুয়েন্সার প্রভাবে নিজের সঠিক সিদ্ধান্তে আপস করছেন ? -

ছবি -কেরিয়ার গাইড ডট কম

ইনফ্লুয়েন্সার প্রভাবে নিজের সঠিক সিদ্ধান্তে আপস করছেন ?

লাইফস্টাইল এবং কাউন্সিলিং এক্সপার্ট সঙ্গীতা দাসগুপ্ত,পার্থ মিত্র,ডঃ রেখা রাঠির পরামর্শ।

আজকাল ডিজিটাল মাধ্যমের প্রাবল্যে ক্রেতাদের ওপর ইনফ্লুয়েন্সারদের গুরুত্ব অপরিসীম হয়ে উঠেছে যার ফলে নিত্যনতুন ট্রেন্ড এবং কেনাকাটার সময়ে এই ইনফ্লুয়েন্সারদের পরামর্শে আমরা সম্পূর্ণ প্রভাবিত হয়ে পড়ছি এবং পরে লক্ষ্য করে দেখা গেছে অন্ধ হয়ে পরামর্শ মানার কুফল।

ফ্যাশন ,রূপচর্চা,ট্রেন্ডি লাইফস্টাইল,ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসপত্র থেকে রেসিপি সর্বত্র  এই সোশ্যাল মিডিয়ার তথাকথিত এক্সপার্টদের পরামর্শের প্রতি আমাদের আস্থা বেড়েই চলেছে। যদিও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ইনফ্লুয়েন্সারদের গুরুত্ব ,পরামর্শ জরুরি কিন্তু সেটা কখনোই নিজের অভিজ্ঞতা ,বিশ্বাস অর্জিত জ্ঞানকে গুরুত্বহীন করে নয়।ইনফ্লুয়েন্সার আর নিজের সঠিক সিদ্ধান্তের মেলবন্ধনের জন্য মনে রাখবেন :    

১)_ঠিক বেঠিক ইনফ্লুয়েন্স চিনে নিন: ইনফ্লুয়েন্সার উপদেশ অন্ধ ভাবে না মেনে প্রথমে জেনে নিতে হবে আপনার সিদ্ধান্তের জন্য এর পরিণতির কথা।মনে রাখবেন এই ইনফ্লুয়েন্সাররা অনেকেই কিন্তু কিছু বিশেষ ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি তাই সেই ব্র্যান্ড প্রমোট করার জন্য তাদের উৎসাহ থাকবেই কিন্তু সেই বিষয়ে আপনি  সতর্ক ও সন্ধানী হলে ,যেমন সেই প্রোডাক্ট রিভিউ পড়লেন,পরিচিত যারা ব্যবহার করছেন তাদের কাছ থেকে জানলেন আর তার পর সিদ্ধান্ত নিলেন।  

২)নিজের অভিজ্ঞতা আর মূল্যবোধকে মর্যাদা : যে কোনো জিনিসের প্রতি প্রভাবিত হওয়ার আগে নিজস্ব মূল্যবোধ যাচাই করুন। জিনিসপত্র কেনার সিদ্ধান্তে কোন বিষয়টা আপনার নিজের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিজেকে প্রশ্ন করুন।দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করতে পারা ? গুণমান ?সাশ্রয়ী ?ব্র্যান্ড ভ্যালু কোনটা আপনার কাছে জরুরি আর এই ইনফ্লুয়েন্সারদের পরামর্শ সেই বিষয়ে কি বলছে সেটা বোঝা।

৩) রিসার্চ করুন : শুধু অন্ধ ভাবে ইনফ্লুয়েন্সারকে বিশ্বাস করার আগে সেই বিষয়ে রিসার্চ করুন। এখন অনলাইনে প্রোডাক্ট রিভিউ ,কম্প্যারিজন ওয়েবসাইট আর কনজিউমার ফোরামের কল্যাণে আপনি সেই প্রোডাক্টের গুণমান,কর্মক্ষমতা,খ্যাতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল থাকতে পারেন।এক নয় নানা সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করে তবেই সিদ্ধান্ত নিন।     

৪) নিজের সহজাত প্রবণতায় ভরসা রাখুন : যে কোনো পণ্য অথবা পরিষেবার মূল্যায়নে নিজের অভিজ্ঞতা আর বিশ্বাসের প্রতি ভরসা করুন।নিজের সহজাত অনুভূতির ওপর আস্থা রেখে আপনার প্রয়োজন আর পছন্দের ভিত্তিতে কেনাকাটা করুন,ভেবে দেখুন আপনার মন কি চাইছে আর সেই মতন সিদ্ধান্ত নিন। মনে রাখবেন আপনার মন তৈরি হয়েছে পূর্ব অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধি থেকে।   

) সচেতন ব্যবহার : ইনফ্লুয়েন্সারদের থেকে প্রভাবিত হয়ে কেনাকাটার আগে ভেবে দেখুন এটা এখন আপনার কতটা প্রয়োজন নাকি তাৎক্ষণিক লোভে পড়ে কিনে ফেলছেন / শুধু আবেগের এবং  একটু ট্রেন্ডি বলেই কেনার আগে একটু ভেবে দেখুন এর দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি,উপকারিতা,আর্থিক বিষয় আর তারপর নিশ্চিত হয়ে তবেই সিদ্ধান্ত নিন।

৬)ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা : ব্র্যান্ড ভ্যালু বস্তুটি আকাশ থেকে পড়ে না।বহু বছরের সুনাম আর খ্যাতিতে তৈরি হয়।কেনাকাটার আগে এই বিষয়ে মনোযোগ দিন /আজকাল এমন অনেক ঘটনার কথা শোনা যায় যেখানে ব্র্যান্ড নামি হলেও অনামী বা ভুয়ো অনলাইন পোর্টাল থেকে অবিশ্বাস্য ডিসকাউন্টের ফাঁদে পড়ে কেনার পর গ্রাহক ঠকে গিয়েছেন।এছাড়াও যে ব্র্যান্ড বিশ্বস্ত,প্রামাণ্য সেই ব্র্যান্ডের জিনিসপত্র কেনা শ্রেয় কারণ দীর্ঘদিন ধরে এরা গ্রাহকদের বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে চলেছে।

৭) বিভিন্ন মতামত শোনা : হুজুগে কিছু কেনাকাটা করার আগে সবার মতামত (অবশ্যই যারা বিষয় সম্পর্কে জানে) সেটা পক্ষে অথবা বিপক্ষের হলেও শুনে নিন।আপনি অবাক হতে পারেন জেনে যে যখন আপনি নিজে একদম নিশ্চিত সেখানে একটি বিপক্ষের হলেও মূল্যবান মতামত আপনার সিদ্ধান্ত বদল করে দিচ্ছে।এর মানে সবার কথা আর মতামত শুনে তবেই আপনি সব সিদ্ধান্ত নেবেন এমন নয় কিন্তু যাকে ইম্পালসিভ বায়িং বলে তার আগে সবার মতামত শুনে যাচাই করা।( তবে এক্ষেত্রে কিপটে স্বামী /স্ত্রী হলে অন্য কথা।)  

) একটু নির্লিপ্ত, অনাসক্তির অভ্যাস : আপনি গত ৬ মাসের কেনাকাটায় নজর দিলে দেখবেন এর মধ্যে কিছু জিনিস হঠাৎ আবেগ বা হুজুগের মাথায় কিনে ফেলেছেন যেটা না কিনলেও হত।এর কারণ হয়তো সামাজিক চাপ,হয়তো সব বিষয়ে ট্রেন্ডি থাকার আকুল প্রবণতা।এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসলে এবং নিজস্বতা বজায় রাখার চেষ্টা করুন।এখানে কিন্তু বৈরাগ্যের কথা বলা হচ্ছে না বরং সামাজিক বা অন্যের কথায়  চাপ কাটানোর স্বাধীনতা আর স্বকীয়তার প্রতি জোর দিতে বলা হচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হচ্ছে যে এই প্রতিবেদন ইনফ্লুয়েন্সারদের বিপক্ষে নয় এবং আজকের দিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় এদের সুচিন্তিত,পরীক্ষিত মতামতের গুরুত্ব অপরিসীম কিন্তু সেটা কখনই যেন  আপনার নিজস্ব বিচারবুদ্ধি এবং প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করে নয়।   

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *