এই বসন্ত শেষ হয়ে আসা আর গ্রীষ্মের আগমনীর সময়ে কম খরচে কাছেপিঠে উইকেন্ড ট্রিপের হদিশ রইল।

আজিমগঞ্জ :ভাগীরথী নদীর তীরে ৩০০ বছরের পুরোনো শহর।অন্যতম আকর্ষণ কাছের বড়নগর গ্রাম যাকে আগে ‘বাংলার বারাণসী’ বলা হত।নাটোরের রানী মা ভবানীর প্রিয়,পরের দিকে এখানে থাকতেন।এখানে থাকার সময় অনেক মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যার অন্যতম ‘চারবাংলা’মন্দির।আনুমানিক ১৭৫৫ সালে তৈরি করেছিলেন এই অপূর্ব মন্দির।এছাড়া গঙ্গেশ্বর,জোড়বাংলা,রাজরাজেশ্বরী মন্দির,উদয়নারায়ণের গৃহদেবতা,মদনগোপাল মন্দির।অন্যতম আকর্ষণ ;বড়ি কোঠি’।
কীভাবে যাবেন : হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে বেশ কিছু সরাসরি ট্রেন আছে যেমন গণদেবতা এক্সপ্রেস,শিয়ালদহ থেকে তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস।
কোথায় থাকবেন :হাউস অফ শেহেরওয়ালী (৯০৬৪৪৪১৭৬০)।

কাটোয়া: অজয় ও ভাগীরথীর সঙ্গমে অতীতের কণ্টক দ্বীপ এখনকার বর্ধমানের কাটোয়া।শহরের প্রধান আকর্ষণ গৌরাঙ্গবাড়ী।এখানে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু মধু প্রামানিকের কাছে মাথা মুড়িয়ে দীক্ষা নেন ।গুরু শিষ্যের পায়ের ছাপ,মহাপ্রভুর মূর্তি।এরপর প্রাচীরে ঘেরা মঠবাড়ি মাধাইতলা।মহাপ্রভু নবদ্বীপ থেকে যখন কাটোয়া শহরে আসেন তিনি তখন এই মাধবী গাছের নিচে বিশ্রাম গ্রহণ করেছিলেন।
কাটোয়া মহকুমায় রয়েছে চার সতীপীঠ। এবার এই চার সতীপীঠকে নিয়ে ‘সার্কিট ট্যুরিজম’ শুরু করার উদ্যোগ নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি এই চার সতীপীঠ পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য বিশেষ প্যাকেজেরও পরিকল্পনা করছে পর্যটন দফতর।এছাড়া দাঁইহাটে আছে ভাস্কর পন্ডিতের দুর্গামন্দির।এর পাশে ঘুরে দেখুন সতীপীঠ যোগদ্যা, বহুলাক্ষী, অট্টহাস তলা,মঙ্গলকোট। শেষ দুটি সতীপীঠের সঙ্গে ঘুরে নিন বনয়ারীবাদ রাজবাড়ী এবং গঙ্গাটিকুরী বাবুদের বাড়ি।
কীভাবে যাবেন:বর্ধমান থেকে লোকাল ট্রেনে ,হাওড়া থেকে হাওড়া কাটোয়া লোকাল ট্রেনে।
কোথায় থাকবেন :পুরসভা পরিচালিত শ্রাবনী গেস্ট হাউস (০৩৪৫৩২৫৫১৩৫/৯৭৪৯২২৪৯৭০)

শিবনিবাস (নদীয়া): নদীয়া জেলার অন্যতম আকর্ষণ ঐতিহাসিক এবং জনপ্রিয় শিবনিবাস মন্দির।
সেকালের বাংলাদেশে বর্গীদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় তাঁর রাজধানী এখানে স্থানান্তরিত করেছিলেন।এখানে তৈরি করেছিলেন রাজপ্রাসাদ ও মন্দির।একসময় এই শিবনিবাসকে ‘কাশীতুল্য’ মনে করা হতো।১৭৫৪ সালে তৈরি এই মন্দিরে ৯ফুট উচ্চতার কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ প্রসিদ্ধ।এই মন্দিরের পাশেই রয়েছে রাজ্ঞীশ্বর শিবমন্দির,রামসীতার মন্দির।
আর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই নদীয়ার স্বাধীনতা দিবস ১৫ই অগাস্ট ১৯৪৭ নয়,১৮ই অগাস্ট ১৯৪৭।এবং ১৫ই অগাস্ট ১৯৪৭ এখানে মুসলিম লীগের পতাকা উত্তোলন করা হয় স্বাধীনতা উদযাপনে কারণ দেশভাগের সময় স্যার সিরিল রাডক্লিফের বাউন্ডারি কমিশন এই অঞ্চল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান,অধুনা বাংলাদেশে চিহ্নিত করেছিল।এই অঞ্চলের বিশাল জনগণ এই সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেননি এবং সেই সময় বিষয়টি জনরোষের দিকে চলে যাওয়ায় তড়িঘড়ি কুষ্টিয়া,চুড়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরকে পূর্ব পাকিস্তান এবং কৃষ্ণনগর সহ রানাঘাট সাবডিভিশনকে পশ্চিমবঙ্গের আওতায় আনা হয়,এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ১৭ই অগাস্ট তাই ১৮ই অগাস্ট এখানে স্বাধন ভারতের পতাকা উত্তোলন করে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।শিবনিবাসের এধার ওধারে আছে আরও দর্শনীয় স্থান।আসাননগরে পাগলাখালী নদীর ধারে প্রাচীন শিবমন্দির।
কীভাবে যাবেন : শিয়ালদহ থেকে গেদেগামী ট্রেনে মাজদিয়া,এছাড়া কৃষ্ণনগর থেকেও কাছে।
কোথায় থাকবেন : শিবনিবাসে সেরকম থাকার জায়গা নেই বলে পাশের আসাননগরে থাকতে পারেন।প্রাকৃত হোম স্টে:৯৮৩১১৭৪০৯৪)

আরও আকাশ–কামারপাড়া,শান্তিনিকেতন
মাটির বাড়ি,নিজস্ব চাষের ক্ষেত্রে,নিরালা নির্জনে গ্রামের বাড়িতে থাকার দারুণ আনন্দ।
বোলপুর স্টেশন থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কামারপাড়া গ্রামে আরও আকাশ। এখানে থাকার ঘরের নামগুলো বেশ সুন্দর।এক্কা আর দোক্কা।এক্কা দোক্কার মাঝের দরজাটাও খুব মনোরম। ম্যানেজার বাসুদা আর সকল কাজের কাজী লালদার আন্তরিক আপ্যায়নে মন ভরে যাবে।
এই সময়ে নির্জন প্রকৃতির মাঝে গ্রামের মাটির বাড়িতে দোলনা,আরামকেদারা, দাওয়ায় খাটিয়ায় বসে ঘি আর চিনি মাখা মুড়ি,ক্ষেতের অর্গানিক সব্জী,পুকুরের মাছের তাজা স্বাদের মহিমা পাবেন।বিকেলে কাছের লক্ষীসায়র দীঘিতে ঘুরে আসুন। সঙ্গে করে যদি ‘নির্বাচিত ভূতের গল্প সংকলন নিয়ে যান সেটা সন্ধ্যেবেলায় ওখানে পড়তে বা সঙ্গের সাথীদের পড়ে শোনাতে একটা আলাদা থ্রিল অনুভব করবেন।
কীভাবে যাবেন :শান্তিনিকেতন,বোলপুরের কাছে,টোটো ,গাড়ি সব পাওয়া যায়। আরও আকাশ বুকিং যোগাযোগ: 09830181462

৫) গড়বেতা –গনগনি: পশ্চিমবঙ্গের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।গনগনিতে সূর্যের গতিপথের সঙ্গে বদলে যায় মাটির রং। প্রাগৈতিহাসিক যুগের ল্যাটেরাইট মাটির স্তর আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে গিরিপথে বদলে গেছে।গড়বেতা নামকরণ নিয়ে একাধিক মত আছে,একমতে এখানকার বনে অনেক বেতগাছ পাওয়া যেত বলে গড়বেতা নাম,অন্যমতে বেত্রবর্মা বলে একরাজার নাম থেকে এই নাম।তবে এলাকার প্রাচীন নাম যে বেতা সেটি ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দের প্রখ্যাত রেনেলের মানচিত্রে এই অঞ্চলের নাম যে বেতা তার উল্লেখ আছে।এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত জাগ্রত দেবী সর্বমঙ্গলার মন্দির।
অন্যান্য দর্শনীয় কামেশ্বর মহাদেব মন্দির,রাধাবল্লভ জিউয়ের মন্দির,দ্বাদশ শিবমন্দির,লক্ষী জনার্দন মন্দির। কীভাবে যাবেন :হাওড়া থেকে মেদিনীপুর হয়ে বাঁকুড়াগামী ট্রেনে গড়বেতা স্টেশন।
কোথায় থাকবেন : গড়বেতায় গীতাঞ্জলি লজ (৯৮৭৪৬৯৫১৩৯),আপ্যায়ন লজ (৮৩৪৮৬৯৪৮০১)
শেয়ার করুন :