বিশিষ্ট লেখিকা বাণী বসু তাঁর স্মৃতিকথায় বলেছেন সেই পঞ্চাশের দশকে ছোটবেলায় ফ্রক পরে মানিকতলার এক আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার প্রধান আকর্ষণ ছিল মাছের চপ খাওয়ার জন্য ,আর তার তখনকার সেলেব কুক ছিলেন নীলকণ্ঠ ঠাকুর। তিনি যে বাড়িতে রান্নার আয়োজন নেবেন সেই বাড়ির সম্ভ্রমই ছিল আলাদা।
নিমতিতা রাজবাড়ির এই জিভে জল আনা রেসিপির বয়েস ১০০ বছরের ওপর।সেকালে এই চপ বানাতে যা পুর লাগতো তার অনেক বেশি বানাতে হত কারণ বাড়ির ছোটরা চপ হওয়া অবধি অপেক্ষা না করে চুরি করে চপের পুর খেয়ে নিত।
নিমতিতা রাজবাড়ির সুস্বাদু মাছের চপের এক্সকুসিভ রেসিপি, অন্তর্জালে এই প্রথম।
(৮ টি মাঝারি আকারের চপের জন্য)
উপকরণ:
কাতলা মাছের গাদা:২৫০ গ্রাম,পেঁয়াজ-১৫০ গ্রাম,আদারসুন বাটা (পেস্ট নয়) ২ চামচ, আলু সেদ্ধ:৩ টি গোটা জিরে ২ চামচ,শুকনো লঙ্কা ৩টে,গরম মশলা গুঁড়ো ১ চামচ,ডিম-২ টি,পরিমান মত নুন ,চিনি,কাঁচা লঙ্কা কুচি ১ চামচ,সর্ষের তেল ২০০ গ্রাম।
প্রণালী: প্রথমে মাছের টুকরো সামান্য নুন হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে নিতে হবে। শুকনো কড়াইতে জিরে,শুকনো লঙ্কা ভেজে বেটে (মিক্সিতেও) রাখতে হবে। কড়াইতে সামান্য তেল গরম হলে একে একে পেঁয়াজকুচি,আদা রসুন বাটা,লঙ্কাকুচি দিয়ে ভেজে নিতে হবে। ৩/৪ মিনিট ভাজার পর এর মধ্যে সেদ্ধ করা আলু ও মাছ দিয়ে কষতে হবে।এর পরে এতে পরিমাণ মত নুন,মিষ্টি দিয়ে এর পরেই আসল ব্যালেন্সের কেরামতি যার ওপর মাছের চপের স্বর্গীয় স্বাদ আর অন্য সব পদ্ধতিকে টেক্কা দেওয়ার খেলা।এই জিরে লঙ্কার ভাজা মশলা একটু করে দিয়ে কষে আবার একটু দিয়ে কষে এর স্বাদ নিতে হবে,বেশি হলে তেতো আর কম হলে অতুলনীয় স্বাদ কম।
এই পুর এত সুস্বাদু হওয়ার কারণে রাজ বাড়ির তখনকার ছোট ছেলে মেয়েরা পুর টেস্ট করতে করতেই নাকি তিন চারটে চপের পুর খেয়ে নিত আর সঙ্গে বকুনিও খেত।
এর পরে গরম মশলার গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে রাখতে হবে।
বিস্কুটের গুঁড়ো চাটুতে হালকা সেঁকে আবার মিক্সিতে গুঁড়ো করে একটি পাত্রে রেখে অন্য পাত্রে দুটো ডিম ভাল করে ফেটিয়ে রেডি রাখতে হবে।এর পর মাছ ও আলুর মিশ্রণ চপের আকারে গড়ে ডিমের গোলায় চুবিয়ে বিস্কিটের গুঁড়োয় মাখিয়ে ডুবো তেলে ভেজে তুলে টিস্যু পেপারের ওপর রেখে দিতে হবে।
সঙ্গে অবশ্যই জরুরি লেবু জড়ানো পেঁয়াজ,কাঁচা লঙ্কা, টম্যাটো,শসা কুচি আর ১৬০ বছরের অভিজাত ইংলিশ মাস্টার্ড কোলম্যান সস (অ্যামাজনে পাওয়া যায়। ১৭৫ টাকা দাম) যার অবর্তমানে কাসুন্দি দিয়ে।
এ স্বর্গীয় স্বাদের ভাগ হবে না। মাছের চপ তো অনেক খেয়েছেন কিন্তু এমন স্বাদ পেয়েছেন কি?
রেসিপি : অপরূপা (রায়চৌধুরী) মিত্র।
শেয়ার করুন :