প্রখ্যাত রুপটান স্টাইলিস্ট অনিরুদ্ধ চাকলাদার সাক্ষাৎকারে বললেন –
১) পয়লা বৈশাখের সেকালের একালের সাজ ,ফ্যাশন এর মধ্যে কি পার্থক্য লক্ষনীয়
– আগেকার নববর্ষের সাজ আর এখনকার সময়ে নববর্ষের সাজ, উজ্জাপন এর বিস্তর ফারাক, আগেকার সময় মানুষ তাদের সাজ নিয়ে অত সচেতন ছিলেন না, বা বলা যেতে পারে তারা অনেক বেশি ন্যাচারাল ছিলেন মূলত নতুন শাড়ী, সালওয়ার,একটু কাজল আর ছোট্ট টিপ কখনো হাল্কা লিপস্টিক এটুকুই, কিন্তু বাড়ীর অন্যান্য সদস্যদের সাথে আনন্দ করা, হালখাতা তে যাওয়া, কালীমন্দিরে পুজো দেওয়া এগুলো চল ছিলো বেশি। কিন্তু যুগের সাথে আমাদের সকলেরই সাজ – পোশাকে পরিবর্তন এসেছে এখন মানুষ অনেক বেশি সোশ্যাল তাই আনন্দ উপভোগ করার থেকেও সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাক্টিভ থাকা( ছবি পোস্ট করা) টাই বেশী প্রায়োরিটি পাচ্ছে এবং সেটার পার্ট আমরা সকলেই। তাই এখনকার নববর্ষের সাজ নিয়ে সকলেই অনেক সচেতন এবং সাজ আর ফ্যাশন টা অনেক বেশি পরিকল্পিত ।
![](https://sukanyadigital.com/wp-content/uploads/2023/04/noboborshe-fashion-funda-2-botique-amrapali.png)
২) এখন কার সাজ আর ফ্যাশনের বদল
এখন দুরকমের সাজ ফ্যাশন খুব ইন – একটি ধরন খুব গডি, অন্যটি খুব ন্যাচারাল। আমার মতামত জানতে চাইলে বলব এই অনুষ্ঠান গুলো যেহেতু আমাদের রিচুয়াল এর সাথে জড়িয়ে আছে তাই খুব এথনিক এলিমেন্ট রাখতে পারলে ভালো । মহিলার হ্যান্ডলুম বা কটনের খুব সুন্দর উজ্জ্বল রং এর শাড়ী,সালওয়ার, কুর্তি ছোট্ট সিলভার বা গোল্ডের গয়না,ছোট দুল বা ছোট ঝুমকা খুব হাল্কা মেকআপ কারণ গরমের সময় মেকআপ বেশিক্ষণ থাকে না তাই ভালো সানস্ক্রিম এর উপর হাল্কা কম্প্যাক্ট বেশ খানিকটা কাজল চোখে, ছোট্ট টিপ, সামান্য লিপস্টিক, যাঁদের খুব লম্বা চুল গরমে সেটা কে খুলে না রেখে সুন্দর ভাবে বেধেনিয়ে তাতে একটু জুঁই বা বেল ফুল ব্যাবহার করা আর যাদের ছোট চুল তারা চাইলে চুলটা খুলও রাখতে পারেন। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে শার্ট প্যান্ট বা জিন্স অ্যাভয়েড করাই ভাল এই দিনটা একটু পাঞ্জাবী, কুর্তা পরলেই ভাল, কিন্তু যদি শার্টেই থাকতে চান সেক্ষেত্রে একটু ইক্কত বা বাটিক শার্ট আমার পছন্দের।
এখনকার পয়লা বৈশাখে সকাল ও সন্ধ্যার সাজ ও ফ্যাশন
সাজ অর্থাৎ মেকআপ এর ক্ষেত্রে খুব কিছু ডিফারেন্স আমি বলবো না কিন্তু পোশাক এর ক্ষেত্রে সকলের দিকে একটু ভাইব্রেন্ট কালরস থাকতে পারে যেটা রোদে ঝলমল করে আর রাতের দিকে আমরা একটু ডার্ক কালরস রাখা যেতে পারে। সকলের দিকে মাস্টার্ড ইয়েলো, ব্রাইট পিঙ্ক, দুধে আলতা রং যেমন ভালো লাগবে ঠিক তেমনি ডিপ মেরুন, অলিভ গ্রীন এর সাথে অরেঞ্জ রং এর কম্বিনেশন ভালো লাগবে চাইলে কালো রং ও পরতে পারেন কারণ আমার মনে হয়না রঙ এর সাথে কোনো শুভ অশুভ জড়িয়ে থাকতে পারে যদিও সেটা সম্পূর্ণ আমার ভাবনা, কিন্তু নববর্ষ হবে অবশ্যই কটন পরার সময়।
বল্লভপুরের রূপকথা,ব্যোমকেশ ও পিঁজরাপোল ছবির কস্টিউম স্টাইলিস্ট সঞ্চিতা ভট্টাচার্য বললেন –
নববর্ষ হলো বাঙালির বর্ষ বরণ উৎসব ,অনেক ছোট থেকেই মা কে দেখছি বাড়ীর সকলের জন্যই নতুন জামা কাপড় কেনার লিস্ট তৈরী করে ফেলতে, তাই জুই, বেল, রজনীগন্ধার সাথে নতুন জামার গন্ধ পুরোটা জড়িয়ে থাকতো আমাদের। ছোট বেলায় দেখছি মা কাকিমা রা তাঁত, ধনেখালি , প্রিন্টেড কটন মল মল পরতে পছন্দ করতেন বেশি এই দিনটিতে তাতে সাদা লাল, হলুদ লাল এর ছোঁয়া ছিলো লক্ষনীয়। সকাল থেকেই পুজো, হালখাতা, বা সবাই একসাথে দুপুরে পাতপেড়ে খাওয়া দাওয়া, সন্ধে অব্দি আড্ডা এভাবেই কেটে যেত গোটা দিনটা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে স্টাইল আর ফ্যাশন পাল্টেছে অনেকটাই । এখন যেহেতু ফ্যামিলি ছাড়াও বন্ধু বা অফিস কলিগ দের সাথেও গেট টুগেদার, পার্টি এসব ও সংযোজিত হয়েছে তাই প্যাটার্ন অফ স্টাইলিং টা চেঞ্জ হয়েছে।
![](https://sukanyadigital.com/wp-content/uploads/2023/04/a15f356b-cdb4-4052-9036-879670aa4527.jpg)
নববর্ষ যেহেতু গ্রীষ্মকাল তাই সকালের দিকে কটন মলমল ( সলিড বা প্রিন্ট), কটনঘিচা শাড়ী, টাঙ্গাইল, তাঁত, ধনেখালী কটন, হান্ডলুম শাড়ী, কটন ব্লক প্রিন্টস পরতে পারেন অনায়াসে গ্লাসস্লিভ, স্লিভ লেস, রাউন্ড নেক, বোট নেক, ব্যাক ওপেন অর্থাৎ আপনার কমফোর্টএবল স্টাইলের ব্লাউসের সাথে পেয়ার আপ করতে পারেন, খুব হাল্কা মেকআপ, কাজল লিপস্টিক থাকতেই পারে তবে সানগ্লাস, সানস্ক্রিম আর ছাতা ইস মাস্ট।
রাতের পার্টির জন্য এই পার্টিকুলার দিনটিতে শাড়ী তেই সাজুন কটন শাড়ী তো থাকবেই তবে চাইলে হাল্কা শিফন, পিওর সিল্ক, ঢাকাই জামদানি পরতে পারেন। পুরুষরাও যেহেতু আজ কাল তাদের পরিচর্চা করতে আর পিছিয়ে নেই তাই সকালের দিকে লিনেন কটন, আজরাক পাঞ্জাবী, কুর্তা , হাফসলিভ শার্ট ( সলিড কালার বা ছোট হাল্কা এথনিক প্রিন্ট ) পরতে পারেন। রাতে একটু ডিপ রঙের পাঞ্জাবি, কুর্তা বা শার্ট এর সাথে পাজামা বা জিন্স চলতে পারে ( এই দিনটায় টি শার্ট বা ফরমাল শার্ট অ্যাভয়েড করাই ভাল)।
শেয়ার করুন :