নারী দিবসে অঙ্গীকার আর সঙ্কল্পের কথা -

নারী দিবসে অঙ্গীকার আর সঙ্কল্পের কথা

নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা,সামাজিক স্বীকৃতি,অসহায় মেয়েদের পাশে থাকা।

প্রতি বছর ৮ই মার্চ, বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস—একটি দিন যা নারীদের কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দেয় এবং লিঙ্গ সমতার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু এক বঙ্গনারীর কাছে এই দিনটি শুধু উদযাপনের জন্য নয়, বরং তার আত্মপরিচয়, সংগ্রাম এবং সাফল্যের প্রতিচ্ছবি।

এক উত্তরাধিকার, যে শক্তি সংগ্রামের

বাঙালি নারী চিরকালই সমাজ পরিবর্তনের অগ্রদূত। বেগম রোকেয়া যখন ‘সুলতানার স্বপ্ন’ লিখেছিলেন, তখন তিনি কেবল কল্পনার জগতে নারীর মুক্তির স্বপ্ন দেখাননি, বরং সমাজকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। সারদা মণি, মাতঙ্গিনী হাজরা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার—তাঁদের জীবন আমাদের শিখিয়েছে যে, নারী কখনোই দুর্বল নয়।বাঙালি মেয়েদের কাছে সংগ্রাম নতুন কিছু নয়। বিবাহ, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাধীনতা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীদের লড়াই করতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। কিন্তু এই শতাব্দীর বাঙালি নারী জানে কীভাবে প্রতিকূলতার মুখে দাঁড়িয়ে নিজের জন্য পথ তৈরি করতে হয়।

আধুনিক বাংলায় নারী শক্তি

আজকের দিনে নারীর ক্ষমতায়ন কেবল চাকরি পাওয়া বা অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, সামাজিক স্বীকৃতি এবং ব্যক্তিগত বিকাশের অধিকার এই ক্ষমতায়নের আসল চিত্র।বাঙালি নারী আজ চিকিৎসা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাহিত্য, রাজনীতি এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নিজেদের সাফল্যের ছাপ রাখছেন। কিন্তু এখনো নারীদের বেতন বৈষম্য, পারিবারিক বাধা ও সামাজিক সংকীর্ণতার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।

‘এক আকাশের নিচে,’জিও কাকার  চিত্রনাট্যকার ও গবেষক অদিতি মজুমদার গত বছর নারী দিবসে   এখানে ‘তাহাদের কথা’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেছিলেন : ‘আমার মা ছিলেন বরিশালের মেয়ে … এই পশ্চিম বঙ্গে এসে আর পাঁচ টা উদ্বাস্তু পরিবারের মতই ছিল আমার মামার বাড়ির জীবন … শুধু একটাই জোর ছিল তাদের … ভাই বোনেরা সবাই পড়াশোনায় খুব ভাল! আমার মা সেই যুগে ইকনমিক্স পড়েছেন বেথুন কলেজে … মা এর নাম এখনো কৃতী ছাত্রী হিসেবে লেখা আছে বেথুন কলেজের দেওয়ালে! মা বাড়ির সম্বন্ধ ফিরিয়ে দিয়ে বিয়ে করেছিলেন আমার বাবা কে …! বাড়ির অমতে এক বস্ত্রে চলে এসেছিলেন এক ঘটি পরিবারে! মা কলেজে পড়াতেন … পরে স্কুলে বাবা হাওড়ার স্কুল শিক্ষক! অভাবের সংসার … তার মধ্যেই মা একটু একটু করে বদলে দিয়েছিল আমাদের বাড়ি টাকে! মার অবসর যাপন ছিল বই পড়া … সারাদিন সারাক্ষণ বই এ মুখ গুজে কেন থাক মা? … সেকি … আমি তো শেষ দিন অব্দি পড়ে যেতে চাই … কত কি ই তো পড়া জানা বাকি রয়ে গেল! মা জানতেন অসহায় মেয়েদের পাশে কিভাবে দাড়াতে হয় … বিশ্বাস করতেন সব মেয়ের আর্থিক স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন। কখন আমাকে আর দাদা কে আলাদা করে দেখেন নি … ব্যবহারে কখনো কোনও ডিস্ক্রিমিনেশন টের পাইনি কোনোদিন!

নারীদিবসের মাহাত্ম আর মর্যাদা  কিভাবে অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে?

নারীদিবস কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট বা ফুল উপহার দেওয়ার জন্য নয়, বরং এটি হতে পারে একটি নতুন পরিবর্তনের সূচনা। কীভাবে একে আরও অর্থবহ করা যায়?

নারী উদ্যোক্তাদের সমর্থন করুন: স্থানীয় নারী পরিচালিত ব্যবসা থেকে পণ্য কিনুন ও তাঁদের উৎসাহ দিন।

শিক্ষা সচেতনতা বৃদ্ধি করুন: ছোট মেয়েদের পড়াশোনায় সাহায্য করুন, তাঁদের স্বপ্ন দেখতে শেখান।

প্রতিবাদ করুন: যেকোনো অন্যায় বা লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিজের কণ্ঠস্বর তুলুন।

বাল্য বিবাহ নারীপাচার : আপনার নেটওয়ার্কের মধ্যে এমন নির্ভরযোগ্য এনজিও অথবা এমন কেউ যিনি /যাঁরা এই বিষয়ে কাজ করছেন তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।যদি সশরীরে না পারেন আপনার সাধ্যের মধ্যে যতটা সম্ভব অর্থসাহায্য করলে এদের কাজ আরও এগোতে পারবে।  

নিজেকেও ভালোবাসুন: নারীরা সবসময় অন্যদের কথা ভাবে, কিন্তু নিজেদের যত্ন নেওয়াটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলা :আগামী দিনে নারীদের জন্য একটি সমানাধিকারপূর্ণ সমাজ গড়তে হবে, যেখানে মেয়েরা তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে বিনা বাধায়।

জ্ঞান, শিক্ষা ও সচেতনতা আমাদের একমাত্র হাতিয়ার। “নারীর উন্নতি মানেই সমাজের উন্নতি”—এই কথাটি বাস্তবে রূপ দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের।

তাই, আসুন আমরা একে অপরকে অনুপ্রাণিত করি, এগিয়ে নিয়ে যাই নারী শক্তিকে আরও একধাপ এগিয়ে।

প্রতিটি দিন হোক নারী দিবস!

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *