গ্রীষ্মকাল মানেই কলকাতার অসহ্য তাপপ্রবাহ, ঝলসানো রোদ, আর চটচটে ঘাম। এই সময় শরীর ও ত্বক দুটোরই বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ইলেকট্রোলাইট ও জলের ঘাটতি দেখা যায়, যা থেকে হতে পারে ক্লান্তি, হিট স্ট্রোক, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঘটনাও।
এই সময় কী খাবেন, কী পরবেন, আর কোন অভ্যাসগুলি গড়ে তুলবেন, সে সব নিয়ে রইল বিশদ পরামর্শ কলকাতার ডাক্তার,ডায়েটিশিয়ান,স্কিন স্পেশালিষ্টদের কাছ থেকে।
১. “জল নয়, প্রয়োজন স্মার্ট হাইড্রেশন”জানালেন ডায়েটিশিয়ান শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত।
‘শুধু জল খেলেই হবে না। গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে শুধু জল নয়, ইলেকট্রোলাইট, অর্থাৎ সোডিয়াম-পটাশিয়ামও বেরিয়ে যায়। তাই মাঝে মাঝে লেবু জল, নারকেল জল, ঘরোয়া ছাতু বা ওআরএস পান করতে হবে। তরমুজ বা শসার মতো জলযুক্ত ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়লে শরীর ঠান্ডা থাকে।দিনে কমপক্ষে ৩–৪ লিটার তরল গ্রহণ করা উচিত।‘
২. “পাতে রাখুন সহজপাচ্য খাবার ও জলশাক” ডায়েটিশিয়ান সুদেষ্ণা মুখার্জী ব্যানার্জির পরামর্শ।”এই সময় বেশি তেল-মশলা দেওয়া রান্না, মাংসজাত খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। তার বদলে লাউ, পুঁইশাক, ঝিঙে, পটল ইত্যাদি হালকা শাকসবজি, ঘোল, দই, ছাতু, ফলমূল বেশি করে খান। পাতে রাখুন তেঁতুল, আমড়ার মতো জল-ধারণকারী উপাদান। এগুলি শরীর ঠান্ডা রাখে ও হজমে সাহায্য করে।”
৩. “ত্বক বাঁচান SPF-এ, আর রোদে বেরোনো কমান”-বললেন ডাঃ অয়ন মুখার্জি, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ।”কলকাতার গরমে সূর্যের UV রশ্মি ত্বকের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। বাইরে বেরোনোর অন্তত ২০ মিনিট আগে SPF ৩০ বা তার বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সুতির জামা, সানগ্লাস ও ছাতা ব্যবহার করুন। বাইরে থেকে ফিরে এসে ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান।প্রতিদিন দু’বার মুখ ধোয়া ও রাতে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার ত্বকের পক্ষে উপকারী।“
৪. “দুপুরে রাস্তায় না বেরনোই শ্রেয় ”-ডঃ কল্যাণ কুমার গঙ্গোপাধ্যায়, এন্ডোক্রিনোলজিস্ট।”১১টা থেকে ৪টার মধ্যে রোদের তেজ সবচেয়ে বেশি থাকে। এই সময় রাস্তায় বেরোলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। যদি কাজের জন্য বেরোতেই হয়, তবে সঙ্গে ছাতা, পানির বোতল ও কিছু মিষ্টি বা ওআরএস রাখুন। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে সাবধানতা আরও বেশি দরকার।”
৫. “ফল দিয়ে জলতৃষ্ণা মেটান, সফ্ট ড্রিঙ্কস নয়”- ডঃ দেবাশিস গিরি, মেডিসিন স্পেশালিস্ট।”অনেকে গরমে সফট ড্রিঙ্ক বা কোল্ড ড্রিঙ্ক পান করেন। এগুলিতে প্রচুর পরিমাণ চিনি থাকে, যা ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। এর পরিবর্তে তরমুজ, বেল, খিরসাপাত আম, নারকেল এসব খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে ও প্রাকৃতিক শর্করা মেলে।”
৬. “ব্যায়াম অবশ্যই, তবে সময় বদলান” – ডাঃ জিষ্ণু ব্যানার্জি, ফিজিওলজিস্ট।”গরমে দৌড়ানো, জিমে অতিরিক্ত শরীরচর্চা করলে ক্লান্তি ও ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তাই খুব ভোরে বা সন্ধ্যায় হালকা ব্যায়াম করুন। ঘরের ভিতর যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিংও উপকারী।”
সতর্কতা:
❌ স্ট্রিট ফুড বা কাটা ফল খাবেন না।
❌ অতিরিক্ত চা/কফি এড়িয়ে চলুন।
❌ প্লাস্টিক বোতলে দীর্ঘক্ষণ জল রেখে পান করবেন না।
শেয়ার করুন :