২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতবর্ষের জনসংখ্যার ৭৪.৮% স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং ফোন ও কম্পিউটার মিলিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৮৮%। যোগাযোগ,কাজের অগ্রগতি, সুযোগ সুবিধা এবং আমাদের বর্তমান জীবনে ফোনের অপরিহার্যতার সঙ্গে এসেছে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোনের প্রতি ১ থেকে ৮০ বছর বয়েসীদের ভয়ঙ্কর আসক্তি।হীরক রাজার দেশের মস্তিস্ক প্রক্ষালক যন্ত্র যাকে মগজ ধোলাই বলা হয়েছিল ঠিক তেমন এই মোবাইল ,কম্পিউটার ইন্টারনেট আসক্তি ব্রেন অল্টারিং এফেক্টস বাচ্চা থেকে বুড়ো সব প্রজন্মকে কী ভাবে মহামারীতে আক্রান্ত করে চলেছে তাই নিয়ে সারা বিশ্বে গবেষণা ,চর্চা চলছে।
এই মোবাইল অ্যাডিকশনে সবচেয়ে আচ্ছন্ন এবং ক্ষতিগ্রস্ত আজকের কিশোর কিশোরী।লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ পূর্ব এশিয়ার ২৩৭ জন কিশোর কিশোরীদের ওপর প্রায় ৫বছর ধরে ব্রেন ইমেজিং স্টাডি রিসার্চ রিভিউ করে প্রমান করেছেন ইন্টারনেট অ্যাডিকশনে কিশোর কিশোরীদের ব্রেনে মাল্টিপল নিউরাল নেটওয়ার্কস আক্রান্ত হচ্ছে।এতে কিছু নেটওয়ার্ক সক্রিয় আর কিছু নেটওয়ার্ক নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে। ইন্টারনেট অ্যাডিকশনে মস্তিষ্কের যে অংশে একজিকিউটিভ কন্ট্রোল নেটওয়ার্ক,যাতে সক্রিয় চিন্তাভাবনা এবং যাকে ইংরেজিতে ‘গোল ডাইরেক্টেড বিহেভিয়ার’ বলা হয় তার কাজ কমিয়ে দেয় যা অত্যন্ত ভয়াবহ।এই গবেষকেরা আরো লক্ষ্য করেছেন যে এই অবস্থায় মস্তিকে একটা জটিল সক্রিয় নিষ্ক্রিয় অবস্থার সৃষ্টি করে যাকে পরিভাষায় ডিফল্ট নেটওয়ার্ক মোড আখ্যা দেওয়া হচ্ছে যেখানে মানুষের মন কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা কাজে না জড়িয়ে মনকে অলস এবং উদ্দেশ্যহীন জড়তায় আচ্ছন্ন রাখতে।
রিসার্চে দেখা গেছে এই ইন্টারনেট অ্যাডিকশনের অল্টারড নিউরাল অ্যাক্টিভিটির কারণে কিশোর কিশোরীরা নেতিবাচক আচরণ করছে যাতে এদের জীবন যাপনে ক্ষতি হচ্ছে।
এতে নিজেদের চারপাশের লোকেদের ,বাবা,মা ,বন্ধু,বান্ধব ,আত্মীয় স্বজন সবার সঙ্গে সম্পর্কে ক্ষতি হচ্ছে ,স্বাভাবিক থাকছে না।এছাড়া শারীরিক ক্ষতি অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে যা মারাত্মক।বিশেষত কিশোর এবং যুবাবয়েসে শারীরিক বদলের প্রক্রিয়ায় আঘাত করছে এই আসক্তি।২০২১ সালের একটি রিসার্চ স্টাডিতে দেখা গেছে ভারতের ১৯টি প্রদেশের ৫০টি যুবার ২০ -৪০ শতাংশ ইন্টারনেট অ্যাডিকশনে আক্রান্ত।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনে একটি রিসার্চে দেখা যাচ্ছে দিল্লির ২৬৪ জন ১০- ১৯ বছরের নিম্নবিত্ত কিশোর কিশোরীদের ইন্টারনেট অ্যাডিকশন ৩৩% এর বেশি।ছেলেদের ৩৩.৬% এবং মেয়েদের ৩২.৩%।আশঙ্কার কথা ছেলেদের একটি বড় অংশ অনলাইন গেমস যার মধ্যে খেলা সংক্রান্ত বেটিং আছে তাতে গভীর মনোযোগী।
বেশি দূর যেতে হবে না।আমাদের চারপাশ লক্ষ্য করলে দেখবেন দুধের শিশুকে খাওয়ানো হচ্ছে ফোন দেখিয়ে ,কাজ থেকে বাড়ি ফিরে বাবা মা আর স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ছেলে মেয়ে সবাই মোবাইল ফোনে আচ্ছন্ন।একই বাড়িতে তিন চারজন গভীর মনোযোগে এমনকি এক ঘরে থেকেও মোবাইলে ঘন্টার পর ঘন্টা আচ্ছন্ন হয়ে আছে এই দৃশ্য বিরল নয়।
এর প্রতিকারে এখন অনেক স্কুলে তো বটেই ,অনেক বাড়িতে মোবাইল টাইম রেস্ট্রিক্ট করা হচ্ছে,খাবার টেবিলে মোবাইল ফোন নিয়ে বসা বারণ হচ্ছে কিন্তু সেটা শুরু করছেন বাবা মায়েরা নিজে।সেই ছবিটির কথা মনে পড়ে যেখানে একটি মেট্রোতে চার পাঁচজন মা এবং তাদের ছেলে মেয়ে,তাদের মধ্যে একজন মা ও তার ছেলে বই পড়ছে আর বাকি মায়েরা আর তাদের ছেলে মেয়েরা মোবাইল আচ্ছন্ন,তাদের মধ্যে একজনের মা ওই বই পড়া মাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কী করে বাচ্চাকে এত ভালো স্বভাবের তৈরি করলেন ?মায়ের উত্তর ছিল বাচ্চারা শুনে নয় দেখে শেখে।
আপনার ছেলেমেয়েদের মোবাইল ও ইন্টারনেট অ্যাডিকশন কমাতে হলে আপনি আচরি ধর্ম পালন করতে হবে।
হ্যাঁ এই প্রতিবেদনটিও আপনি মোবাইল ফোনে অথবা কম্পিউটারে পড়ছেন যা আজকের এই ভয়ানক খারাপ প্রভাবের সম্পর্কে সচকিত করছে ।
শেয়ার করুন :