বাড়ির ইন্টেরিয়র ডিজাইন করার সময়ে কিছু জরুরি বিষয় খেয়াল রাখলে আপনি যেমন চেয়েছেন ঠিক তেমন অন্দরসাজ হয়ে উঠবে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মূল ব্যাপার আমাদের আশেপাশের স্পেসকে চোখের সামনে কি ভাবে দেখছি । বাড়িতে আর কাজের জায়গায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সেই অন্দরসাজ যেন চোখের আর মনের আরাম আর সুখকর হয়।
ইন্টেরিয়র ডিজাইন কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা জেনে নেওয়া যাক :
- স্পেসকে আরও দৃশ্যনন্দন করে তোলে।এর অর্থ হল স্পেসকে আপনি রুচিশীল পরিবেশে রূপায়ণ করলেন। এতে আপনি আরাম,আনন্দ উপভোগ করবেন কারণ এটি আপনার পছন্দ করে বানিয়েছেন।
- গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের ঘিরে যে রঙের সমাহার সেটা আমাদের মেজাজ ,আবেগকে প্রভাবিত করে।অনেক বাড়ি নানা রঙের হয়।আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন অনেক রেস্টুরেন্টের রং খুব আকর্ষণীয় হয়।এটি করা হয় যাতে আপনার মুড ভালো থাকে। বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টে ভিড় ভাট্টা,তাড়াহুড়ো লেগে থাকে যেখানে রং আপনার মুড ঠিক রাখে।
- যখন আপনি ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রসেসে জড়িয়ে গেছেন তখন আপনি আপনার মন প্রাণ ঢেলে সেটাই করছেন যেখানে আপনি নিজেকে প্রকাশ করছেন।এই সৃজন আপনি নান্দনিক রুচি আর ব্যক্তিত্বের পরিচয়।
- ইন্টেরিয়র ডিজাইনে আপনার এই ইচ্ছাপূরণে প্রধানত দেখা উচিত আপনার আসে পাশের স্পেসকে কতটা বেশি কার্যকরী করে তুলছেন কত কম উপায়ে।
- ইন্টেরিয়র ডিজাইনের আর একটি সুবিধে খরচ বাঁচানো,কেননা বাড়িতে উৎকৃষ্ট মানের ফার্ণিচার আর সম্ভ্রান্ত ডিজাইন দীর্ঘকাল ধরে বাড়ির অন্দরসাজের মান বাড়িয়ে তোলে।মাঝে মাঝে,দু এক বছর অন্তর বাড়ি কিছুটা রিনোভেট করে নিলে বাড়ির ইন্টেরিয়রের কদর ভালো থাকে।
- যে বাড়ি আগেকার স্থাপত্যে বানানো হয়েছিল তার নিরাপত্তার সংস্কার এবং আধুনিকীকরণ আবশ্যিক।বাড়ির ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সময়ে নিরাপত্তার বিষয়ে খেয়াল করা উচিত।ইলেক্ট্রিকাল সিস্টেমস,ওয়্যার এবং বাড়ির এন্ট্রান্সের সুরক্ষার প্রতি খেয়াল রাখা উচিত।
- নতুন ইন্টেরিয়র ডিজাইন যেমন বাড়িকে নতুন সাজে সাজিয়ে তোলে ঠিক তেমনই এর মেন্টেনেন্স সহজতর হয়ে যায়।ফার্ণিচার আর অন্যান্য ডিজাইনের অদল বদলে নিজে থেকেই বাড়ির মান দীর্ঘকালের জন্য বাড়িয়ে তোলে।
- এর আর একটি সুবিধে অন্য কাজে অনেক জায়গার সদ্ব্যবহার করা যায়। এই কারণে বাড়ির মধ্যে নানান জিনিসপত্রের অপ্রয়োজনীয় ঠাসাঠাসি ভিড় এড়ানো যায়।
- আমরা জানি সর্বদা প্রথম দর্শনের রেশ রয়ে যায়। সুতরাং আপনার গেস্টরা যারা প্রথম আপনার বাড়িতে এসে এর অনুপম অভিজাত ইন্টেরিয়র ডিজাইনে একটা তৃপ্তি আর মুগ্ধতার আভাস পান যার স্মৃতি বহুকাল অম্লান থেকে যায়।
অন্দরসাজের সমস্ত সুফলের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে যে এই ইন্টেরিয়র ডিজাইন আপনার অভিজাত সৃজনশীলতা প্রকাশের মাধ্যম।
ইন্টেরিয়র ডিজাইন করার সময়ে এই ৮টি বিষয়ে নিশ্চিত করতে হবে :
১) নিজের স্পেস সম্পর্কে সচেতন থাকুন :ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনার স্পেস সম্পর্কে সুম্পূর্ন ধারণা আর সেই অনুযায়ী ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্ল্যান করা। স্পেসের সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে অনেক বাস্তবসম্মত ডিজাইন করতে পারবেন।
২) দূরদৃষ্টি ,দর্শনশক্তি :ডিজাইনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনার একটা পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। এটি ডিজাইনের সঠিক উপাদান নির্বাচনে সাহায্য করবে এবং অন্দরসাজ পরিকল্পনায় সঠিক ফার্ণিচার পছন্দের জন্য সাহায্য করবে যদি ভিশন ঠিক থাকে।
৩) খরচের হিসেব ঠিক রাখা :প্রাচুর্য মন্ডিত বিলাসবহুল ইন্টেরিয়র ডিজাইন দামি হতে পারে।তাই ডিজাইন মেটেরিয়ালের দাম আর অন্যান্য সহযোগী জিনিসপত্রের দামের প্রতি নজর রাখতে হবে। উৎকৃষ্ট মানের সঙ্গে কোনোরকম আপস করবেন না কারণ যত দামি মেটেরিয়াল তত বেশি দিন চলে।
৪) জটিল নয়, সহজ :কনট্রাস্টে একটু বাহার সেরা ডিজাইনের পক্ষে শ্রেয় কারণ বাড়িতে কন্ট্রাস্টিং জিনিসপত্রের প্রয়োজন আছে যাতে সমস্ত ডিজাইন সম্পূর্ণ হয়ে গেলে সব কিছু এক ধরণের দেখতে না লাগে।
৫) সংক্ষেপে :স্পেস ,মেটিরিয়ালের প্ল্যান রেডি হয়ে গেলে ডিটেলে মন দিতে হবে। সমস্ত ছোটোখাটো বিষয়ে নজর দিন যাতে ঠিক যেমন চান তেমন ডিজাইন কার্যকরী হয়।
৬) বিশ্বাসযোগ্য :এটি খুব জরুরি বিষয় যা মনে রাখতে হবে।আগে উল্লেখ করা হয়েছে ইন্টেরিয়র ডিজাইন আপনার রুচির প্রকাশ যেখানে আপনার ব্যক্তিত্ব ডিজাইনের মাধ্যমে দৃশ্যমান হচ্ছে ।বেস্ট ডিজাইন হল সেই ডিজাইন যা বিশ্বাসযোগ্য।এই বিষয়ের ধারণা পেতে আপনি অন্য অনেক ডিজাইন পরখ করতে পারেন কিন্তু নিজের রুচি অনুযায়ী বিশ্বাসযোগ্য ডিজাইন আপনার জন্য সবচাইতে ভালো হবে।
৭)ব্যালেন্স :ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রচুর কন্ট্রাস্টিং ডিজাইন ভালো নয়।এক্ষেত্রে সঠিক ব্যালেন্স জরুরি যে ডিজাইন উপাদান খুব বেশি না খুব কম হচ্ছে ।
৮)এডিটিং :শেষ বিষয় হল দরকারি হলে প্রয়োজন মতো প্ল্যানের সংশোধন। যদি মনে ময় কোনো ডিজাইন এলিমেন্ট বেশি হয়ে গেছে তাকে প্ল্যান চেঞ্জ করে কমিয়ে আনা।
এই ৮টি উপদেশ মনে রাখলে আপনার স্বপ্নের ডিজাইন দক্ষতার সঙ্গে সত্যি হয়ে উঠবে।
ডেকোরেটিভ ল্যামিনেট ব্যবহারের সময় মনে রাখতে হবে এমন ডিজাইন পছন্দ করতে যা আপনার বাড়ির ডিজাইনের পক্ষে উপযুক্ত।এর বিশাল ডিজাইন সম্ভার থেকে পছন্দ করতে পারেন।এত বিপুল সংখ্যক ডিজাইনে বিভ্রান্ত হবেন না ,মনে রাখবেন সব ডিজাইন আপনার রুচি ও বাড়ির পক্ষে ভালো নাও হতে পারে।
আর একটি বিষয়ে খেয়াল রাখা যে অত্যন্ত ভালো মানের ল্যামিনেটসই কেনা উচিত।ল্যামিনেটস দীর্ঘকাল চলার কারণে শ্রেষ্ঠ ম্যানুফাকচারের কাছ থেকেই কেনা দরকার যা আপনাকে ভবিষ্যতের জন্য অনেক সাহায্য করবে। আপনি গুগল করে ‘Laminate manufacturers in India ‘ করে শ্রেষ্ঠ ল্যামিনেট নির্মাতাদের বিষয়ে জানতে পারবেন।
উপসংহার :
ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ক্ষেত্রে ডিজাইনের নিয়ম নীতি মনে রাখা দরকার কারণ এটি এমন একটা বিষয় যা আপনার বাড়ির মান মর্যাদা দীর্ঘকালের জন্য বাড়িয়ে তোলে কিন্তু তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল আপনার সৃষ্টিশীলতা প্রকাশের মাধ্যম হয়ে ওঠে যা আপনার অতিথিদের জন্য একটা দুর্দান্ত ফার্স্ট ইম্প্রেশন অথবা প্রাচীন প্রবাদ ‘পহেলে দর্শনধারী’ র যথার্থ নিদর্শন।
শেয়ার করুন :