সুমনা আদক
এডিনবার্গ, স্কটল্যান্ডের রাজধানী, ইতিহাসে সমৃদ্ধ একটি শহর। এটি মধ্যযুগীয় স্থাপত্য, রেনেসাঁর প্রভাব এবং আধুনিক সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিশ্রণ। শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত এডিনবার্গ ক্যাসেল এবং রয়্যাল মাইল এর ঐতিহ্যের প্রতীক। ক্রিসমাসের সময় এডিনবার্গ এক আলোকময় রূপ ধারণ করে। শীতকালীন উৎসব, জার্মান স্টাইলের ক্রিসমাস মার্কেট, আইস স্কেটিং, এবং এডিনবার্গের উজ্জ্বল আলো শহরের আবহকে মোহময় করে তোলে। রাজপথে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নতুন বছরের জন্য প্রস্তুতি শহরকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। এডিনবার্গের ক্রিসমাস উৎসব পরিবার ও বন্ধুদের একত্রিত হওয়ার এক বিশেষ উপলক্ষ।
এডিনবার্গের চারপাশের রঙটা রামধনুর মতন। রাস্তার দুপাশে ক্রিসমাসের মেলা। হাতে গোনা কয়দিন বাকি,কনকনে শীতের আবহে চারিদিকে শুধু “জিঙ্গেল বেলস জিঙ্গেল বেলস”।কেক চকলেট, পুডিং,পেস্ট্রিতে ভরপুর স্কটরা। ঢেউ খেলানো একসারীতে সাজানো বাড়িগুলো ক্রিসমাসের সময় প্রতিবছর বর্ণিল রঙের বিভায় সেজে ওঠে , খ্রীসমাস ট্রি বসেছে বসার ঘরে ঘরে ঘরে। ব্রিটেনের ক্রিসমাসের স্পেশালিটি এটাই। লেসারে Uk র ফ্ল্যাগ থেকে সান্তা হরিণ সবই ছুটে বেড়ায় বাড়ির এই দেওয়াল ওই দেওয়াল, কিংবা বাগানে, এমনকি রাস্তার দুধারে সারি দিয়ে সাজানো পাইনের ফাঁকে উঁকি মারে ক্রিস্টমাসের হরেকরকম সাজসজ্জা। এডিনবার্গ ক্রিস্টমাসের প্রি প্রিপারেশন বলতে এটাই।
বাঙালি দের কাছে কলকাতার পার্কস্ট্রিট থেকে হেদুয়া বড়দিন নিয়ে যেমন মাতামাতি আর নতুন বছরকে পাবার আনন্দ থাকে, ঠিক তেমনটাই চলে এখানে। এডিনবার্গের ব্যাস্ত শহরে উইক ডেজ কিংবা প্রত্যেক উইকেন্ড এ লোকজন শুধু ক্রিস্টমাসের কেনাকাটায় ব্যাস্ত, শহরের শপিং মল গুলোতে চলছে দেদার ডিসকাউন্ট আর ঠাসা ভিড় ঠিক আমাদের দেশের বিভিন্ন উৎসব কিংবা দিওয়ালির অফার যেমন চলে ঠিক তেমন।
স্কটল্যান্ডের সাজানো শহরে এডিনবার্গ ট্যুর ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে বিরাট একটা আকর্ষণীয় ব্যাপার। এখানে ওখানে ছড়িয়ে তার ইতিহাস। তার সাথে শুরু হয়েছে ক্রিস্টমাস ফেস্টিভ্যাল,পাথর আর সবুজ ঢাকা প্রিন্সসেস স্ট্রিট গার্ডেন যথারীতি প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও একাধিক দেশের হরেকরকম হাতে বানানো জিনিসের পসার বসেছে। আট থেকে আশি সকলেই সন্ধের পর চলে আসে এই প্রিন্সেস স্ট্রিট গার্ডেনে মেলা দেখতে। থাকা থেকে খাওয়া সব ব্যবস্থাই রয়েছে এখানে। ফেস্টিভ্যালের দেশ বিদেশের ভিন্ন স্বাদের খাবার গুলো সত্যিই লোভনীয় আর সুস্বাদু। শীতের রাতে একটুকরো মনোরঞ্জন আকর্ষনের আরেক জায়গা হলো এডিনবার্গ সুপার মার্কেট। এবছরও ২৬ শে ডিসেম্বর বক্সিং ডের জন্য তৈরি। এই বক্সিং ডে এখানে বিশেষ জনপ্রিয়।যাকে বলে সবথেকে সস্তার দিন। শপিং মলগুলোতে স্টক ক্লিয়ার কিংবা ব্র্যান্ডেড জিনিস সবেতেই ছাড় একেবারে জলের দামে চলে বেচাকেনা।কাজেই জিনিস পত্র কেনার জন্য লম্বা লাইন শুরু হয় সেই ভোর থেকে। দেখতে দেখতে অনেক বছর কেটে গেল এই দেশে। এবছরও বড়দিনের কয়েকদিন আগে থেকে ছন্দে ফিরছে এডিনবার্গ। এমনিতেই এখন দিন খুব ছোটো সকালে সূর্যের মুখ দেখলে খামখেয়ালি আবহওয়ায় বেশ মজা লাগে।
আজকাল বড়দিনের উপহার হিসাবে প্রিন্সেস স্ট্রিটের দিকে পরিপাটি সাজানো গোছানো পাব রেস্টুরেন্ট গুলোর রঙিন পরিবেশ সত্যিই নজরকাড়া । স্কটিস উইস্কী প্যানকেক থেকে লন্ডনের চিকেন টিক্কার স্পেশাল স্টল আয়োজন করেছে স্থানীয় প্রশাসন।দুস্থদের জন্য চলে খাবার বিতরণ। ব্রিটিশ সরকারি দপ্তরের তরফে কিছু এক্সজিবিশন থাকে প্রতিবছর। এবারেও তার ব্যাতিক্রম হবে না। এই সপ্তাহ থেকে ইউরোপের সবদেশই ব্যাস্ত ক্রিসমাসের এর লম্বা ছুটিতে।এডিনবার্গের প্রবাসী ভারতীয়রাও অধিকাংশ ছুটি কাটাতে চলে যায় নিজের দেশে কিংবা অন্য দেশে। এখনকার স্কুল গুলোর কথা বললে সব বন্ধ। তবে গোটা ইউরোপ ২৫ শে ডিসেম্বর কিন্তু ঘরবন্দি। সারাবছর কাজের ফাঁকে ঐ একটা দিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেলিব্রেশন চলে, বড়দিনের উৎসবের আড্ডা। এডিনবার্গ শহরের ছবিটার পরিবর্তন হয়নি এতটুকুই। ক্রিস্টমাসের আনন্দ পেতে বিদেশিরাও পাড়ি জমায় এই দেশটায়। ইতিহাসের পাতায় মোড়া দেশটার বর্ণনার শেষ নেই। অভিজাত্য গরিমায় ভরপুর থেকেও ক্রিসমাসের প্রারম্ভ এখানে বেশ জমজমাট।
শেয়ার করুন :