বিদিশা রায় ,ম্যানহাটন
৫ মার্চের পর ৯ জুন. ঠিক তিন মাস চার দিন পর স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে যে অনুভূতি হলো তাকে কী বলবো? সাধু ভাষায় বললে বলতে হয় স্তম্ভিত কিংবা শীর্ষেন্দু ধার করলে – এক গাল মাছি!! করোনাক্রান্ত বাইরের দুনিয়ার ছবিটা যে তিন মাসে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে তা খানিকটা মালুম হয়েছিল পাতাল প্রবেশের পরেই. যে পাথ ট্রেনকে আমরা বনগাঁ লোকাল বলে ডাকি, উঠতে গেলে কলকাতা কনুই এর পারদর্শিতা যারপরনাই কাজে লাগে, সেই ট্রেনের বিশাল কামরায় আমি ছাড়া আর একজন মাত্র মাস্ক শোভিত যাত্রী! কিন্তু সদা গর্বিত, সদা জাগ্রত, সদা উদ্ধত নিউ ইয়র্ক সিটি – তার এই হাল?
মনে হলো ম্যানহাটান আজ সার্থকনামা – একটা পুচকে প্রাণী ম্যান-হাটান থেকে ম্যানকে হটিয়ে ছেড়েছে. রাস্তায় গাড়ির যা সংখ্যা তাতে নিউ ইয়র্ক আলাস্কার যে কোনো শহরের কাছে দশ গোলে হারতে বাধ্য. এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং এর সামনে শুয়ে দিব্বি এক ঘুম দেওয়া যায়. মেসিস, ভিক্টরিয়াস সিক্রেট – বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ঝাঁপ এমন করে কাঠের তক্তা দিয়ে বন্ধ যে আমাদের কলকাতার বাড়ির কাঠের কাজ যিনি করতেন সেই নিরঞ্জনদার কথা মনে পড়ে গেল ‘এমন বানাইসি জীবনে আর খুলবেনি.’
সেই ছাদখোলা লাল বাসগুলো কই যারা সারা দুনিয়া থেকে আসা পর্যটক নিয়ে শহরের গুণকীর্তন করতে করতে ছুটে বেড়াতো? কোথায় সেই চতুর্দিকে ম ম করা রাস্তার খাবারের গন্ধ যা এক টুকরো কলকাতা এনে দিতো ঝলকে? কোথায় সেই পাগলপারা ভিড় যা মনে করাতো যে এই শহর পার্মানেন্ট ইনসমনিয়ার রুগি? শহরটার প্রাণভোমরাই চলে গেছে অতল জলের তলায়. রাজপুত্তুর তুমি কোথায়?
শেয়ার করুন :