বিশ্বখ্যাত ওয়েলনেস এক্সপার্ট অ্যালিসিয়া কিজ, অ্যাশলে গ্রাহাম,বিবিসি হেল্থ,টাইম ম্যাগাজিন টিপস।
আমরা এমন একটা সময়ে দিনযাপন করছি যেখানে দিন দিন সোশ্যাল মিডিয়ার তথাকথিত চাপিয়ে দেওয়া সৌন্দর্য্যের মাপকাঠি ,রূপরেখা কঠিনতর এবং তার সুবাদে নিজেকে গড়ে তোলার আকর্ষণ অসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।আমাদের চারদিকে ,সমাজমাধ্যমে সাজগোজ,শরীরের ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক্স জীবনের থেকে বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে যার প্রমাণ বিখ্যাত সেলেবদের রূপচর্চা,পারফেক্ট ফিগারের মোহে মর্মান্তিক মৃত্যু।আরাধ্য সেলেব আর মডেলের শরীরের মাপ আর সৌন্দর্য্য আমার কি করে হবে বা কেন নেই এই কারণে ডিপ্রেশনের শিকার হচ্ছেন বহু মানুষ।এই ক্ষেত্রে এই দেশে বিশেষত এই বাংলায় যাকে বলে সোসাইট্যাল প্রেশারের কুপ্রভাবে ক্ষতি হচ্ছে অনেক মানুষের।কোনো অকেশনে দেখা হলে ‘ইশ কি রোগা হয়ে গেছিস’ বা ‘এবার ডায়েট কর যা মোটা হচ্ছিস’,’কি রে সব চুল উঠে গেলো তো টেকো’ এই বিদ্রুপের,শ্লেষের অপমানে জর্জরিত হয়ে একটা ইনফিওরিটি কমপ্লেক্সের শিকার আর এর থেকে ডিপ্রেশনের অসুখ,কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে না যেতে চাওয়ার হীনমন্যতা কাটাতে বিশ্বখ্যাত ওয়েলনেস এক্সপার্টদের অমূল্য পরামর্শ –
১) নিজের শরীর আর চেহারাকে ভালোবাসা আর আত্মবিশ্বাস – বিখ্যাত গানের লাইন ‘নিজেকে ভালোবাসো তুমি এবার’ কে গভীরভাবে বিশ্বাস করুন।আপনি যেমন ঠিক সেই উপযোগী করে নিজের শরীর ,গায়ের রং নিয়ে গর্বিত হন ,হীনমন্য নয়।এটা প্রথমে নিজেকে বিশ্বাস করতে হবে।কাজটা কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়।আজকে আমাদের চারপাশের বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ায় অবিরাম নিজেকে সেলেব স্টাইলে সেজে ছবি পোস্ট করার কুপ্রভাব,অনুষ্ঠানে তাক লাগানো চেহারা মেকআপ আর ফ্যাশনিয়েস্তা হওয়ার উদগ্র বাসনার মোহ যেখানে মাত্রাছাড়া,সেখানে আশার কথা এই মোহ কাটিয়ে ওঠার প্রবণতা পৃথিবী জুড়ে বাড়ছে।বাঙালি সমাজে ঐতিহ্য,পরম্পরা,সামাজিক চাপ কাটিয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো শুরু হয়ে গেছে।অন্তঃস্বত্বা অবস্থায় শাড়ি পরে গুরুজনকে প্রণাম করতে অস্বীকার করছে আজকের মেয়ে এমন দৃষ্টান্ত আছে।নিজের শরীরকে নিয়ে হীনমন্যতা ছেড়ে আত্মবিশ্বাস আর বডি পজিটিভিটিতে মুক্তির আনন্দ,সতেজ আত্মমর্যাদায় জীবন বদলে যাচ্ছে অনেকের।
২)ফর্সা রঙের মোহ – এই মারাত্মক ব্যাধির প্রকোপ সারা বিশ্বজুড়ে তাই সারা দেশে এবং আমাদের বাঙালি সমাজ আজ এই কুপ্রভাবের মোহে আচ্ছন্ন।আদালতের নির্দেশে ফর্সা হওয়ার ক্রিম বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও অনেক মেয়ে শুধু নিজের গায়ের রং আরো ফর্সা করার জন্য জীবনপাত করে ফেলছে কারণ সামাজিক চাপ,কারণ অনেক বাবা মা, আত্মীয় স্বজন আজও মনে করেন তাতে বিয়েতে ভালো পাত্র পাওয়া যাবে।এর সঙ্গে সবলে আর সদলে বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হওয়ার প্রভাব, সামাজিক মাধ্যম আর অধুনা ফটো এডিট প্রযুক্তির ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক কুপ্রভাব।এই ধারণাকে সজোরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে।নিজের গায়ের রঙের প্রতি লজ্জিত না হয়ে গর্বিত হয়ে সদর্পে বলা যে আমি এমনই।টেক ইট অর লিভ ইট।প্রয়োজন হলে গুরুজনদের বিনীত ভাবে প্রশ্ন করুন যদি নিজের লোকেরাই আপনার গায়ের রং নিয়ে সমালোচনা করে তাহলে বাইরের লোকেদের সঙ্গে কি করে যুদ্ধ করবে? আশার কথা এই ফর্সা রঙের মোহ কাটিয়ে নিজের আপন সৌন্দর্য্যে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে আজকের মেয়েরা এবং সেই কারণে ধীরে হলেও সমাজও সেই সত্যি মানতে বাধ্য হচ্ছে।এখনো অনেক পথ যেতে হলেও সজোরে যে শুরু করা গেছে আর যাচ্ছে এই বিষয়টা মনে রাখতে হবে।স্পষ্ট করে বলতে হবে আমায় কেমন দেখতে আর গায়ের রং যদি সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আমি সেই সম্পর্ক ,বন্ধুত্ব ছেড়ে দিতে পারি।
৩) ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক্স ধারণা বদল : আজকের পৃথিবীতে বডি পজিটিভিটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রথাগত মডেল ,সেলেবদের এবং সমাজের ঠিক করে দেওয়া ৩৬-২৬-৩৬ মাপের জন্য জীবনপাত না করা।ভারতের অপূর্ব বৈচিত্রের মতন শরীরের নানান মাপে স্বচ্ছন্দ,সাবলীল এবং সপ্রতিভ থাকার আত্মবিশ্বাস।শরীরের এবং সৌন্দর্যের একটিই মাপ হতে পারে না,যে যেমন সে তেমন তার আপনি দীপ্তিময়ী সৌন্দর্যে এই বিশ্বাস এবং তাকে সবার জন্যে আর সবার সঙ্গে সাবলীল থাকা।
৪) প্রচলিত বস্তাপচা ধ্যান – ধারণা ছুঁড়ে ফেলা – যুগ যুগ ধরে চলা সামাজিক অশিক্ষাকে অস্বীকার করার আত্মবিশ্বাস।’ফর্সা মেয়ে না হলে বিয়ে হওয়া /বয়ফ্রেন্ড পাওয়া মুশকিল,খুব রোগা,বেশ মোটা শোনার গ্লানি আর অস্বস্তি আর তা থেকে হীণমন্যতা কাটাবার দিন এসে গেছে।এই সব ফালতু কথাকে সমূলে হটিয়ে নিজেকে নিজের সৌন্দর্যের প্রতি গভীর প্রত্যয়,সমাজের ঠিক করে দেওয়া সৌন্দর্যের সংজ্ঞা নয় ,নিজের আপন সৌন্দর্যের প্রতি ভালোবাসা এবং সেটা শুধু নিজের জন্য নয় ,আপনার বন্ধুবান্ধব ,কাছের সব মানুষের জন্য এই সহমর্মিতা।
৫)নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা বন্ধ করে দেওয়া – আজকের পৃথিবীতে বিশেষত সামাজিক মাধ্যমে বিরামহীন নিজের স্ট্যাটাস আপডেটের ছবি আর অন্যের সঙ্গে নিজের অনবরত তুলনা অনেকের কাছে নিজের জানতে একটা মানসিক অসুখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের প্রত্যেকের গায়ের রং,শরীরের মাপ আলাদা আর সেটাই সবচেয়ে ভালো তাই না ?কার চুল,দেহের গড়ন,স্টাইল আপনার থেকে ভালো বা খারাপ তাতে কিচ্ছু এসে যায়না। হ্যাঁ আপনি অভিনেত্রী বা মডেল হলেও না। এটা প্রায় বিশ্বখ্যাত সব মনোবিদ আর ওয়েলনেস এক্সপার্টদের মূলমন্ত্র।
পরিশেষে বডি পজিটিভিটিকে আত্মস্থ করা একটা সজীব সপ্রতিভ উজ্বল যাত্রাপথ যাতে নিজের উন্নতি,অনুপ্রেরণা ,সজীবতা আর সব ধরণের সব শ্রেণীর মেয়েদেরকে নিয়ে একটা সংঘবদ্ধ প্রয়াস।আপন আলো জ্বালানোর দিনবদল,নিজের আত্মমর্যাদা আর দৃঢ় প্রত্যয়,সমস্ত বাজে সমালোচনাকে দূরে ছুঁড়ে ফেলে নিজেকে ভালোবাসা ,নিজের আপন সৌন্দর্যের প্রতি অটুট আস্থা আর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে চলা।
শেয়ার করুন :