ক্লাবের আর অন্যান্য উইন্টার পার্টি কার্নিভালের পাশাপাশি নিজেদের বন্ধুবৃত্তের মধ্যে হাউস পার্টি এখন বেশ ট্রেন্ডি।কিন্তু অনেক সময়ে এই সব পার্টিতে ছোট ছোট কিন্তু জরুরি কিছু পরিকল্পনার অভাবে এই হাউস পার্টিতে গিয়েও মন ভরে না কিন্তু আয়োজন,বৈভব,সুখাদ্য ও পানীয়র অভাব নেই ।দারুণ জমাটি উপভোগ্য হাউস পার্টি আয়োজনের ১৫টি জরুরি টিপস যাতে এমন হাউস পার্টিতে একবার কেউ এলে বারবার আসতে ইচ্ছে করবে।
১)ইনভিটেশন :একটা স্টাইলিশ ডিজিটাল ইনভিটেশন কার্ড করে তাতে সব ডিটেলস দিয়ে হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে ইন্ডিভিজুয়াল কল করে নেওয়া।
২)এটা অনেকদিনের প্রথা যে পার্টির পুরো খরচ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া যাতে এই বাজারে কারুর ওপর চাপ না পড়ে।
৩) থিম:পার্টির একটা থিম করে নিলে ভাল আর একটা কালার ড্রেস কোড হলে পার্টির ফ্লেভারটা জমে যায়।বন্ধুদের একটা পার্টি থিম কালার আগে থেকে বলে দিন কিন্তু দেখবেন তার মধ্যে ব্ল্যাক যেন থাকে।
৪) ডিজে মিউজিকের পাশাপাশি একটা কি বোর্ড আর কারাওকের সঙ্গে স্পিকার থাকলে পার্টি জমে যায় কারণ সাধারণত আমাদের যে কোনও আড্ডাতে সকন্ঠী গায়ক গায়িকার অভাব নেই।
৫) কিছু মজার গেম্স্ পার্টিকে প্রাণবন্ত করে তোলে,অন্তাক্ষরী,ডাম্ব শ্যারেডস,স্ট্যান্ড আপ কমেডি এমন কিছু এন্টারটেইনার।
৬)কিডস আর সেলফি কর্নার:একটা আলাদা ঘর বা স্পেসের প্রয়োজন পার্টিতে আসা বাচ্চাদের জন্য সেখানে যেন গেমসের ফেসিলিটি থাকে আর একটা সেলফি কর্নার কারণ এখন ছবি তোলা মাস্ট।
৭)পার্সোনাল টাচ:যতটা সম্ভব ব্যক্তিগত খেয়াল রাখা,তাদের প্রেফারেন্স মনে করে ড্রিকংস,স্ন্যাক্স,ডিনার মেনু সিলেকশন খুব জরুরি।পার্টি চলাকালীন লক্ষ্য রাখা কেউ লোনলি ফিল করছে কিনা,মাঝে মাঝে আলাদা করে জিজ্ঞাসা করা ‘আর ইউ কম্ফোর্টেবল?’এতে হোস্ট হিসেবে আপনার পার্টির মাহাত্ম্য বেড়ে যাবে।
৮)একটু সমাজ সচেতন হয়ে একটা ডোনেশন বক্স রাখুন আর সবাইকে রিকোয়েস্ট করুন সাধ্যমত কিছু ডোনেট করতে।পরের দিন পাড়ার কাছে দুস্থ ছেলেমেয়েদের সান্টা হতে খুব ভাল লাগবে।
৯)সমান গুরুত্ব:একটা পার্টিতে সবার ইকনমিক স্টেটাস এক নাও থাকতে পারে কিন্ত তাতে যদি তার পার্টিতে গুরুত্ব কমে বাড়ে তার চেয়ে খারাপ রুচি আর কিছুতেই নেই।দু পাত্তর পেটে পড়লে রাজা উজির মারা, আর অন্যকে ছোট করা পুরো পার্টির মেজাজ এবং পরবর্তী সম্পর্ক বিগড়ে দেবে।একান্ত ভাবে নজর রাখতে হবে এই বিষয়ে আর ট্যাক্টফুলি হ্যান্ডল করাই আসল আর্ট।একটা দারুন প্রাণবন্ত পার্টি মুহূর্তে ঝগড়া ঝাঁটির কুরুক্ষেত্র হয়ে যাওয়ার নিদর্শন প্রচুর আছে আর এর জেরে বহু বছরের সম্পর্ক ছেদের কারণও ঘটেছে ,তাই কেয়ারফুল থাকা জরুরি।
১০) টিপসি:খাও খাও বুঁদ হয়ে ডুবে যাও,দেখো চোখে সর্ষে ফুল,করুক মাথা ঝিম ঝিম।বেতাল মাতাল হয়ে পার্টি পন্ডের অজস্র নজির আছে সুতরাং এই বিষয়ে লক্ষ্য রাখা জরুরি।সুবিধে আর অসুবিধে হল ক্ষেত্র বিশেষে মাতালকে কিছু সহজে বোঝানো একইসঙ্গে খুব সহজ আর খুব কঠিন।সবচেয়ে সহজ অজুহাত ‘আর নেই’।
১১)স্ন্যাক্স-ডিনার ব্যালেন্স :খুব প্রয়োজনীয়।প্রচুর স্ন্যাকসের পর আর সাধের ডিনার করার সাধ্য নেই অথবা অপর্যাপ্ত স্ন্যাক্স এই দুটোই বেশ গোলমালের তাই দুটোর সঠিক ব্যালেন্স জরুরি। যেহেতু এই স্ন্যাক্স আর ডিনারের ব্যালেন্সের ওপর পার্টি হিট না ফ্লপ অনেকাংশে নির্ভর করে তাই এই বিষয়ে সঠিক মেনু বাছাই খুব জরুরি।যেমন স্টার্টার আর স্ন্যাক্সে ফিশ ফিঙ্গার, রকমারি অথবা ২রকমের কাবাব,চিপস,চিজ বলস,মশলা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, মেয়োনিজ, কাসুন্দি,টার্টার সস ডিপস,টুথপিক, টিস্যু পেপার,এবং টিস্যু পেপার ফেলার ডাস্টবিন,আর এমন ডিনার মেনু যা হাতে করে বুফে খাবার মতন খাওয়া যায়,যেমন পোলাও মাংস,এখনকার সর্বপ্রিয় বিরিয়ানী-চাঁপ,(ফ্রায়েড রাইস চিলি চিকেন বাদ দিলে ভালো) এমন কিছু।
১২) স্পেস আর গেস্ট সংখ্যার ভারসাম্য:অনেকেই খেয়াল করেন না কতটা জায়গায় কতজন গেস্ট কমফর্টেবলি আনন্দ করতে পারবে।এক্ষত্রে যদি হও স্বজন নীতি অতিথিদের স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে তাই স্পেস অনুযায়ী গেস্ট সংখ্যা ঠিক করতে হবে। একটা পার্টি হিট না ফ্লপ সেটা এই বিষয়ের ওপরও নির্ভর করে। একটু ছড়িয়ে ছিটিয়ে ৪/৫ জনের বসার জায়গা এমন করে যাতে এক গ্রূপ অন্য গ্রূপের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারে আর পর্যাপ্ত দাঁড়িয়ে,বসে আড্ডা মারার জায়গা ,এই দুইয়ের একটা কম্বিনেশন ,মানে হল সিটিং নয় ,রাউন্ড টেবিল টাইপ।জায়গা অনুযায়ী গেস্ট সংখ্যা খুব জরুরি।
১৩) নজর রাখা– অনেক হাউস পার্টিতে অনেকের অভিজ্ঞতা খুব সুখকর না হওয়ার কারণ ব্যক্তিগতভাবে নজর না দেওয়া,এমন পার্টির অভিজ্ঞতা কম বেশি অনেকের যে এসেছেন,এনজয় করুন,খান ,বাড়ি যান,এতে পার্টির আমেজই নষ্ট হয়ে যায়।সবসময় না হলেও অন্তত ১৫/২০ মিনিট অন্তর লক্ষ্য রাখতে হবে উপস্থিত সবাই স্বাচ্ছন্দে পার্টি উপভোগ করছে কি না।
১৪) সহযোগী – একটা বড় অথবা মাঝারি পার্টিতে এক দুজন সহযোগী থাকলে ভালো হয়।
১৫) ফুড হ্যাবিট্স – মেনু ঠিক করার সময় অতিথি অভ্যাগতদের খাদ্যাভাস জেনে রাখা আবশ্যিক।
মনে রাখতেই হবে : আপনার আনন্দ যেন অন্যের অসুবিধে না হয়।আশে পাশে বয়স্ক,অসুস্থ প্রতিবেশী থাকলে সাউন্ড ভলিউম কম করা, পার্টির পর সবাই ঠিকঠাক বাড়ি পৌঁছেছে কিনা ফোনে খবর নেওয়া আপনার রুচি আর আভিজাত্যের পরিচয়।
শেয়ার করুন :