ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল -

ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল

সারা ভারত ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কে কের মর্মান্তিক অকস্মাৎ মৃত্যুর অভিঘাত আসমুদ্রহিমাচল সঙ্গীতপ্রেমী শ্রোতারা মুহ্যমান।অনেকে এখনও এই শোকের আঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন নি।

কে কে।কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ।বর্ধিষ্ণু মালয়ালী পরিবারে জন্মগ্রহণ,দিল্লির কিরোড়িমল কলেজে শিক্ষা,৬ মাসের চাকরির পর সঙ্গীতকে জীবিকা করার আকুল উদ্যমে মুম্বাই পাড়ি।প্রায় ৩৫০০ বিজ্ঞাপনী জিঙ্গেল গাওয়ার পর স্বয়ং এ আর রেহমানের সুরে আত্মপ্রকাশ।১৯৯৯ সালের ‘পল’ অ্যালবাম জয় করে নিল তামাম ভারতবর্ষ।আর ফিরে তাকাতে হয়নি।অবশ্য এর আগে হরিহরণ সুদেশ ভোঁসলের সঙ্গে গুলজারের মর্মস্পর্শী ‘মাচিস’ ছবির এভারগ্রীন সুপারহিট.’ছোড় আয়ে হম উওহ গঁলিয়া’য় ওঁর কণ্ঠদানের কথা অনেক পরে জানা যায়।পল অ্যালবামের টাইটেল সং ‘পল’ স্কুলের ফেয়ারওয়েল সং হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এর পরে ‘হম দিল দে চুকে সনম’ ছবির তড়প তড়পকে ইস দিল সে’,’উওহ লমহে’ ছবির ‘ক্যা মাঝে প্যার হ্যায়’ থেকে ‘ওম শান্তির’ ‘আঁখো মে তেরি’,বচনা অ্যায় হাসিনো’র ‘খুদা জানে’র মত অজস্র হিট গানের সুমধুর সুকণ্ঠ গায়ক কেকে ব্যক্তিজীবনে গ্ল্যামারবর্জিত শান্ত,সহজ জীবনে অভ্যস্ত। ছিলেন।

ক্লাস সিক্সের প্রেমিকা জ্যোতিকে বিয়ে করেন এবং পুত্র কন্যা নকুল আর তামারা কে নিয়ে নিভৃত সুখের সংসার ছিল কেকের।২০১৭ তে আজ তক চ্যানেলে একটি বিরল সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তার বাল্যকালের প্রেমিকা জ্যোতিকে প্যার দিওয়ানা হোতা হ্যায় গেয়ে প্রেম নিবেদন করেছিলেন। এই গ্ল্যামারসর্বস্ব সোশ্যাল মিডিয়ায় পি আর টুইট আর পোস্ট থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করতেন ,উনি বলতেন সঙ্গীত অনুভবের বিষয়,বেশি দৃশ্যমান হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।নিজের অনুষ্ঠান ,রেকর্ডিং ছাড়া সে অর্থে একদম পি আর করতেন না বলে সম্প্রতি একটি সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিচারক দলের মধ্যে শঙ্কর মহাদেবন কেকে কে বকাবকি করছিলেন একদম যোগাযোগ না রাখার জন্য আর উনি তাই শুনে চুপচাপ মিটিমিটি  হেসে যাচ্ছিলেন।                                          

সর্বভারতীয় সঙ্গীতমহলে মূলত প্রেমের মেলোডিয়াস গান গেয়ে তিন চার প্রজন্মের কাছে প্রবল জনপ্রিয় থাকা এক বিশাল কৃতিত্বের বিষয় যা কেকের ছিল।চরিত্রগতভাবে অত্যন্ত মার্জিত, নিরহঙ্কারী ভালো মনের মানুষটি ‘ইয়ারো দোস্তি বড়ি হাসিনের মতো অজস্র গান হৃদয় দিয়ে গেয়ে সবার হৃদয় জয় করে নিতেন।

মাত্র ৫৩ বছর বয়সে এমন প্রতিভাশালী গায়কের অতর্কিত জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়া মেনে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন তার পরিবার,সঙ্গীতের অনুরাগী আর আপামর জনসাধারণের।সমাজমাধ্যমে নিন্দার আর ট্রোলের ঝড়ের পাশেই অজস্র অগুনতি শ্রোতাদের ব্যক্তিগত ভালোবাসা,দুঃখের মুহূর্তে গত তিরিশ বছর ধরে ওনার গানের সুরমূর্ছণায় কি অপার শান্তি আর ভালোবাসার স্মৃতিচারণে শ্রোতাদের মণিকোঠায় ওনার প্রতি নিবিড় ভালবাসাই প্রমাণ করে।  

মুম্বাইতে শেষযাত্রায় সঙ্গী ছিলেন সঙ্গীতজগতের দিকপাল জাভেদ আখতার,বিশাল ভরদ্বাজ,শঙ্কর মহাদেবন,হরিহরণ,শ্রেয়া ঘোষাল,অলকা ইয়াগনিক,উদিত নারায়ণ, অভিজিৎ প্রমুখ।হরিহরণ তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন তিনি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে কেকে আর নেই,সেই দিল্লি থাকার সময় থেকে পরিচয়,ওঁর পরিবারের জন্য প্রার্থনা।

আকস্মিক অকালপ্রয়াত কেকের গান আজীবন সঙ্গীত অনুরাগীদের মনে প্রাণে থেকে যাবে।     

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *