হিতাকাঙ্ক্ষী -

ছবি- গৌতম পাল

হিতাকাঙ্ক্ষী

মারতে তেড়ে এল রতন ! হিসহিস্ করে বলল “কি কাজ করিস, দেরি হয় এত?….

অনিন্দিতা পাত্র

বাংলা সাহিত্যের নতুন গল্পকার অনিন্দিতা।এই বইমেলায় প্রকাশিত ৮টি গল্পে নারীসংগ্রামে জিতে যাওয়ার  গল্প সংকলন ‘উত্তরণ ‘ থেকে এই গল্পটি নেওয়া হয়েছে। 

গ্যাসের স্ল্যাবের সামনে মেঝেতে উবু হয়ে বসে মশলা বাটছিল ময়না। অফিসে বেরতে বেরতে বউদি চেঁচিয়ে বলল “কতবার বলেছি মিক্সিতে এসব করবি, কথা শুনিস না একদম।” ময়না বলল “অল্প একটু আদা থেঁতো করে নিলাম, ফুলকপির তরকারিটা নামাবার আগে দেব। এটুকুর জন্যে আবার মিক্সি নামাবো?” কথাটা বোধহয় শুনতে পেল না বৌদি, ঝড় উড়িয়ে বেরিয়ে গেল। এই সময় তাড়ায় থাকে মানুষটা।

সকাল আটটায় পাপাইয়ের স্কুলের গাড়ি আসে। সে বেরিয়ে যাওয়ার পরে পরেই ময়না এসে কাজে ঢোকে। দাদা ঘুম থেকে ওঠে। দাদা বৌদিকে চা বানিয়ে দেয় ময়না, নিজের জন্যেও নেয়। চা খেয়ে ভাত বসায়, বাসন মাজে। বৌদি সকালে উঠেই ফ্রিজ থেকে মাছ সবজি বের করে রাখে। ফটাফট রান্না সারে ময়না। দশটায় একসাথে খেয়ে বেরিয়ে যায় দাদা বৌদি দুজনে। দাদা হসপিটালের ডাক্তার। সুস্থ সবল মানুষ, দেখলে বয়স বোঝা যায় না। বৌদি ব্যাঙ্কে চাকরি করে, এটা ওটা অসুখ বিসুখে ভোগে। টাকা পয়সার অভাব নেই। চাকরিটা ছেড়ে দিতে বলে দাদা, কিন্তু বউদির এক গোঁ, চাকরি সে করবেই। হসপিটাল যাওয়ার পথে বৌদিকে নামিয়ে দিয়ে যায় দাদা। ওরা বেরিয়ে গেলে রাতের রুটি তরকারি বানিয়ে গুছিয়ে রেখে তবে বাড়ি যায় ময়না। খুব বিশ্বাস করে তাকে বৌদি। ফ্ল্যাটের একটা চাবি তার কাছে থাকে।

বৌদির বড় ছেলে ব্যাঙ্গালোরে পড়তে গেছে। ন’মাসে ছ’মাসে কলকাতায় আসে। ছোট ছেলে পাপাই, ক্লাস এইটে পড়ে। দাদা বৌদি আর পাপাই, এই তিনজনের নির্ঝঞ্ঝাট সংসারে আজ পাঁচ বছর হলো ময়না কাজ করছে। পাপাই তখন থ্রিতে পড়ে, কাজে ঢুকেছিল ময়না। স্কুল থেকে ফিরলে তার হাত মুখ ধুয়ে দেওয়া, খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পাড়ানো সব ময়নাই করতো। পাপাই ঘুমালে রাতের খাবার বানাতো সে। তারপর সাতটা সাড়ে সাতটা নাগাদ বৌদি অফিস থেকে ফিরলে বাড়ি যেত। দাদার অনেক কাজ, ফিরতে রাত হয়। বৌদি কখনো ট্যাক্সি করে, কখনো বাসে করে চলে আসত। বছর খানেক হলো পাপাই একা একা থাকতে পারে। তাই সকালেই সব কাজ, রান্না সেরে বাড়ি যায় ময়না। সেই সময়টাতে বিকালে আর একটা বাড়িতে রান্নার কাজ ধরেছে সে।

রতনের সাথে অনেক দিনের ভালোবাসা ময়নার। দুজনের বাড়ি পলাশপুরে, একই গ্রামে। রতন গাড়ি চালানো শিখে কাজের খোঁজে কলকাতায় এলো। ময়না গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে সিক্স পর্যন্ত পড়েছে। তারপর পড়া ছেড়ে দিয়ে ঘরেই বসেছিল। বাবা লোকের জমিতে জন খাটে। মা আর ময়না মিলে পেনে কালি ভরার কাজ করতো বাড়িতে বসে। দু’চার টাকা যা রোজগার হয় গরীবের সংসারে তাতে সুসারই হতো। রতন কলকাতায় চলে আসার পরে ময়না ভেবেছিল রতন বুঝি আর ফিরবে না, শহরে গিয়ে তাকে ভুলে গেছে। রতনের জন্যে বুকের ভেতরটা টনটন করতো ময়নার। কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে পারত না। বড্ড ভালোবাসায় বেঁধেছিল রতনটা, সেই কোন ছোটবেলা থেকে। মেলায় যেত একসাথে দুজনে। বড় হয়ে দুর্গাপুজোয় গঞ্জে ঠাকুর দেখতে নিয়ে যেত সাথে করে রতন। টিপ, হাতের চুড়ি, কানের দুল কিনে দিত দোকান থেকে। এগরোল চাউমিন খেয়ে সন্ধ্যের পেরিয়ে বাড়ি ফিরত। তাদের গাঁয়ের পুজোয় এসব কোথায় ! সেই এক ফুচকা আর চানামটর। মাকে বলে যেত বন্ধুদের সাথে যাচ্ছে। মা ও খোঁজখবর করত না বিশেষ। এমনিতে সারা বছর তো গ্রামের বাইরে তেমন বেরই হয়না ময়না।

ওদিকে কলকাতায় এসে রতন কিছুদিন এদিক ওদিক ঘোরাঘুরির পরে একটা ছোটখাটো ফ্যাক্টরিতে ম্যাটাডোর চালানোর কাজ জুটিয়ে ফেলেছিল। আনন্দে কি করবে বুঝতে পারছিল না। মাসখানেক কাজ করে প্রথম ছুটি পেয়েই গ্রামে ফিরে গেছে ময়নার কাছে। চাকরির খবর পেয়ে ময়না প্রথমে বিশ্বাসই করেনি। তারপর আরো ছ’মাস কাজ করার পরে ময়নাকে বিয়ে করে কলকাতায় নিয়ে আসে রতন। যাদবপুরের রেললাইনের ধারে কলোনিতে এক কামরার ঘর ভাড়া নিয়ে সংসার পাতে দুটিতে। এত বড় শহর দেখে চোখে ধাঁধা লেগে গিয়েছিল ময়নার। কাজে ছুটি থাকলে এদিক ওদিক তাকে ঘুরতে নিয়ে যায় রতন। মেলায় যায় দুজনে সেই আগের মতো। তবে এ মেলা তাদের পলাশপুরের মেলার মতো নয়। কত মানুষ, কত আলো, সাজ বাজ, দোকান পাট। দিনের বেলা কাজে যায় রতন। কেরোসিনের স্টোভে রান্না করে ময়না, রাতে ফিরে রতন খাবে। কামরা ঘরের দুয়ার এঁটে সোহাগে ভরিয়ে দেয় ময়নাকে। স্বপ্নের মত মনে হচ্ছিল জীবনটা। কিন্তু স্বপ্ন দেখে তো আর পেট ভরে না ! দু চারদিন যেতে না যেতেই পেটে টান পড়ল। ম্যাটাডোর চালানোর ঐ কটা টাকায় চলবে কেন দুটো পেট? তার ওপর ঘর ভাড়া আছে। পাশের ঘরের অন্নদা মাসি কাজের সন্ধান দিয়েছিল ময়নাকে। সেই শুরু বৌদির বাড়িতে কাজ করার। শুরুতে রতন গাঁইগুঁই করেছিল বটে, কিন্তু ময়না বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করেছিল তাকে। এত বড় শহরে বাঁচতে গেলে দুজনকেই কাজ করতে হবে, বুঝে গিয়েছিল ময়না !

বিপদে আপদে সবসময় পাশে থেকেছে বৌদি। ময়নার আত্মসম্মান, মুখ ফুটে কিছু চাইতে দেয়না তাকে, কিন্তু কী করে যেন সব ঠিক বুঝে যায় বৌদি। এইতো, গতবারে পুজোর সময়, মাইনে বোনাস দেওয়ার সাথে সাথে একটা ফোনও কিনে দিল। ময়না আপত্তি করতে বলেছিল “আমি কি তোর দরকারে দিচ্ছি ? কখন কোন কাজে তোকে দরকার পড়ে ডাকতে, তাই দিচ্ছি।” কিছু বলে না ময়না, চুপ করে থাকে। সে জানে, রতন গাড়ি নিয়ে এখানে ওখানে যায়, তার আসা যাওয়ার সময়ের কোন ঠিক নেই, রাস্তাঘাটে কখন কি ঝামেলা হয়, সেই নিয়ে ময়নার মনে বড্ড ভয়। একা একা থাকে, এ শহরে নিজের বলতে কেউ নেই তাদের। রতনের মালিক ফোন দিয়েছে তাকে, কিন্তু ময়নার একটা ফোনের দরকার। সময়ে অসময়ে ফোন করে কথা বলে নিতে পারে রতনের সাথে। বৌদি ঠিক বুঝেই তাকে কিনে দিয়েছে ফোনটা।

এতগুলো বছর সবকিছু ভালোই চলছিল। একটু একটু করে সংসারটা গুছিয়ে নিয়েছিল ময়না। কিন্তু এই এক বছরে সবকিছু কেমন যেন বদলে গেল। এক অসুখেই ওলট পালট হয়ে গেল পুরো পৃথিবী, আর তার সাথে ময়নার জীবনটাও। ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেল রতনের। আজ প্রায় দশ মাস একদম ঘরবসা সে। প্রথম দু তিন মাস তো ঘর থেকে বের হয়নি লোকজন। ওরাও ঘরবন্দি হয়েই ছিল। তাছাড়া পথেঘাটে পুলিশের কড়া নজরদারি চলছিল। অফিস কাছারি, বাজার হাট সব বন্ধ। ঘরে জমা চাল ডাল দুদিনেই শেষ হয়ে গেল, বসে খেলে যা হয় ! অল্প জমা টাকা যা ছিল একে একে তাও ফুরলো। মাস দুয়েক পরে যখন সবকিছু আবার খুলল, ফোন করে ডেকে পাঠিয়েছিল বৌদি। টুক টুক করে অফিস যেতে শুরু করেছে বৌদি নিজেও, বেলাবেলি ফিরে আসে। গাড়ি নিয়ে যায় আসে। নিজেই গাড়ি চালায়। দাদা সেই তখন থেকে টানা হসপিটালেই আছে। ফোনে বাড়ির খোঁজখবর নেয়। পাপাই ও তখন থেকে বাড়িতে আটকা। টুকটাক সবকিছু খুললেও স্কুল যে কবে খুলবে কেউ বলতে পারছে না। হাত পা ধুয়ে, মুখে মাস্ক পরে কাজ শুরু করে ময়নাও। বিকালের কাজটা ছেড়ে গেছে, তারা আর কাজ করাবেনা বলে দিয়েছে। রতন ঘরবসা, তার ওপর এ কাজটাও চলে গেল। বৌদি না ডাকলে, না খেয়ে মরতে হতো তাদের। রাতের তরকারি এখন বেশি করে রাঁধতে বলে দিয়েছে বৌদি। জোর করে কৌটো ভরে পাঠিয়ে দেয় ময়নাকে, সাথে এটা ওটা খাবার। কিছু বলতে গেলে ধমক দেয়। মনে মনে ময়না ভাবে…আগের জন্মে বৌদি বুঝি, মা ছিল তার !

রতন আজকাল থম মেরে বসে থাকে সারাদিন। কথায় কথায় চেঁচামেচি করে। তাকে নিয়ে চিন্তা হয় খুব ময়নার। ফ্যাক্টরি বন্ধ হওয়ার মাস দুয়েক পরে সব যখন আবার খুলল, খুব দৌড়দৌড়ি করেছিল রতন আর কয়েকজন মিলে। কিন্তু মালিকের এক কথা “ফ্যাক্টরি যেমন বন্ধ আছে তেমনি থাক, লস টেনে চালাতে পারব না”। আরো কয়েক জায়গায় কাজের খোঁজে ঘুরল রতন, লাভ হলো না কোন। যাদেরকে কাজের কথা বলেছিল একে একে তারাও বসে গেল। কারো হাতে কাজ নেই। দেশগাঁ থেকে যারা কলকাতায় কাজে এসেছিল, বৌগুলো দশ বাড়ি ঠিকের কাজ করত আর তাদের স্বামীরা কেউ রিকশা চালাতো, কেউ ফ্যাক্টরিতে গোডাউনে কাজ করে সংসার চালাত। দু’চার টাকা বাঁচিয়ে দেশে পাঠাতো। বাবা মা, ছেলেপুলে, নাতি নাতনিরা খেয়ে পরে বাঁচত। এখন সব বন্ধ হয়ে গেল। গাঁয়ের মানুষ যা হোক শাকপাতা খেয়ে বাঁচবে তবুও। কিন্তু তারা কলকাতায় বাঁচবে কি করে? অথচ সব ছেড়েছুড়ে যে দেশে চলে যাবে তারও উপায় নেই, ট্রেন বন্ধ। অতোটা পথ তো আর হেঁটে যাওয়া যায় না। রেশনের চাল ডাল আলুর ভরসায় চলে যাচ্ছে পেট কটা, তবে মনে সুখ নেই কারো।

বাড়ির বাইরে আজকাল আর রতন বেরোয় না তেমন। একবেলা খায় কি খায় না, শুয়ে থাকে চুপচাপ। ময়না জোরাজুরি করলে, মুখ খারাপ করে তাকে। বিড়বিড় করে নিজের মনে। একদিন রাতে কোথাও কিছু নেই দেওয়ালে নিজের মাথা ঠুকতে শুরু করে। ময়না ভয় পেয়ে যায় খুব। বলে “কেন করছ এমন পাগলামি। কি অসুবিধা হচ্ছে তোমার”? রতন বলে “অসুবিধা আমার নয় তোর হচ্ছে। আমি তোকে সুখে রাখতে পারিনি। তোর টাকায় বসে বসে খাচ্ছি।” একথা শুনে কেঁদে ভাসায় ময়না। বলে “ও গো। আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না। আমি ভালো আছি। আমার সব সুখ তো তোমায় নিয়ে। তুমি ভালো থাকো শুধু। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।” আর একদিন, কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়েছিল ময়নার। মারতে তেড়ে এল রতন ! হিসহিস্ করে বলল “কি কাজ করিস, দেরি হয় এত? ঘরে ফেরার কথা মনে থাকে না। তার থেকে বিষ খেয়ে মরে গেলেই তো হয়!” কৌটোয় করে আনা খাবার কৌটোতেই পড়ে থাকে। আজ আর ভাত বসায় না ময়না, জল খেয়ে শুয়ে পড়ে। রতন সেই যে ঝগড়া করে বেরিয়েছে, আর ফেরেনি। ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়েছিল ময়না। গুমরানো কান্নার আওয়াজে উঠে পড়ে দেখে, রতন মেঝেতে বসে, মাথায় হাত দিয়ে কাঁদছে। ময়না তক্তপোশ থেকে নেমে এসে রতনকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে ! বলে “কেঁদো না। তুমি কাঁদলে আমি যে মনে বল পাই না গো। তুমিই তো আমার সব। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা আবার আগের মতো সুখে বাঁচব দেখো। ভগবান আবার মুখ তুলে চাইবে ঠিক।”

এসব কথা বৌদিকে বলতে পারে না ময়না। মনের মধ্যে চেপে রাখে। কাজ করে মুখ বুজে। তার জীবন থেকে স্বপ্নগুলো দূরে সরে সরে যাচ্ছে, বুঝতে পারে সে। আধপেটা খায়, তাতে তার দুঃখ নেই। কিন্তু রতনের এই কষ্ট সে চোখের সামনে সহ্য করতে পারে না। জোয়ান মানুষটার কাজ নেই, হাত খালি একদম ! কোনো দিকে দুটো টাকা রোজগারের রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না, মাথার ঠিক রাখে কি করে ? এসবই ভাবে ময়না সারাদিন। চিকেনটা ম্যারিনেট করে ফ্রিজে ঢুকিয়ে, জলখাবারের লুচির ময়দা মাখছিল ময়না। আজ রবিবার। বৌদির মনটা ভালো নেই, মুখ দেখে মনে হচ্ছে। একদিকে বড় ছেলে অত দূরে একা পড়ে আছে, অন্যদিকে স্বামীর জন্যে চিন্তা, বোধহয় সারারাত ঘুম হয়নি। সকাল থেকে দু প্রস্থ চা হয়ে গেছে। রান্নাঘরে ঢুকল বৌদি, বলল “সরে যা একটু কফি বানাই।” ময়না বলল “তুমি যাও, আমি দিয়ে আসছি।” শুনল না কথা বৌদি, নিজের হাতে কফি বানালো। তারপর রান্নাঘর থেকে চলে যাওয়ার আগে ময়নাকে বলে গেল “রতনকে বলিস, এ মাস থেকে গাড়িটা চালাতে। শরীরটা ভালো যাচ্ছে না তেমন। আর তাছাড়া তোর দাদারও বয়স হচ্ছে, আর নিজে ড্রাইভ না করাই ভাল”। লুচি বেলার হাতটা থেমে গেল ময়নার। বৌদির কথাটা আর একবার মনের মধ্যে আউড়ে, ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল সে। আর সেই কান্নার মধ্যেই অনেকদিন পরে তার মুখে হাসি ফুটল।

কিরে চটপট হাতের কাজ শেষ কর। মেয়েটাকে স্কুলে দিতে যেতে হবে তো?” বৌদির কথায় সম্বিত ফেরে ময়নার। মাঝে মাঝেই এমন হয় তার। বছর কয়েক আগের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাকে তাড়া করে বেড়ায়। অথচ সেইসব দিন পেরিয়ে ময়নার আজ ভরা সংসার। রতন এখন কাজ থেকে ফুরসত পায় না সারাদিনে। একটা বড় ওষুধ কোম্পানিতে লরি চালানোর কাজ করে। ভাল মাইনে পায়। খুশি এই পাঁচ বছরে পড়েছে। ফুটফুটে মেয়েটার জন্যে ঘর যেন আলো হয়ে থাকে। কেজি স্কুলে তাকে ভর্তি করেছে ময়না। বৌদিই জোর করে ভর্তি করিয়েছে অবশ্য। বৌদির বড় ছেলে চাকরি পেয়ে বিদেশে চলে গেছে। ছোট ছেলে কলকাতায় আছে, তবে নিজের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত! খুশি এখন জেঠিমার আদরের গুড়িয়া। দিনের শেষে একবার অন্তত বৌদির বাড়ি খুশিকে নিয়ে যেতেই হয়। খুশিকে না দেখে তার দিন কাটে না। রান্নাঘরের কাজ সেরে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে ময়না। খুশিকে স্কুলে নিয়ে যাবে। মনে মনে ঠাকুরকে ডাকে….ভগবান! তাদের মত সবার জীবনে বৌদির মত একটা করে মানুষ দিও। সবাই যাতে সম্মান নিয়ে নিজের মতো করে বাঁচার সাহস পায়।

রা প্রকাশন ও মুদ্রণ। বইমেলা স্টল নং- ৫৬৪ (৯ নম্বর গেটের কাছে) https://raaprakashan.com/page1.html

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *