মনের জোরে জীবন বদলাতে বিশ্বখ্যাত মনোবিদ পরামর্শ -

ছবি- মহানগর চলচ্চিত্র

মনের জোরে জীবন বদলাতে বিশ্বখ্যাত মনোবিদ পরামর্শ

ভেরোনিকা জোব,জো ফ্রান্সিস,কৃষ্ণা সাভানির রিসার্চ করা টিপস।

আমাদের এই যান্ত্রিক আর জটিল জীবনে এমন অনেক সময় আসে যখন নিজেকে সংযত ,নিজের আত্মনিয়ন্ত্রণের কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়ে থাকে।সবচেয়ে সমস্যা হয় অফিসের বা কাজের জায়গায় খুব  ঝামেলা ঝঞ্ঝাট কাটিয়ে বাড়ি ফিরে এসে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে আর কতটা আর কিভাবে সংযত থাকা যায় ?আমরা প্রত্যেকেই বিশেষত ভয়ঙ্কর অতিমারিকালে ও তার আগে পরেও এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছি একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

প্রখ্যাত মনোবিদ ভেরোনিকা জোব এই ক্ষনিকের উত্তেজনা,রাগ,আবেগের পরিস্থিতিকে শর্ট টার্ম টেম্পটেশন বলেন যাকে চেষ্টা করে কিছু পদ্ধতির মাধ্যমে এড়ানো যায়।এবং আমাদের চারপাশে এমন অনেক লোকজন আছেন যাঁদেরকে আমরা ‘উনি খুব ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষ,শত প্ররোচনাতেও রাগ নেই’ বলে চিহ্নিত করি আসলে ওনারা সাধারণের তুলনায় এই শর্ট টার্ম টেম্পটেশন এড়াতে জানেন।যাঁরা কঠিন সময় এবং পরিস্থিতির মধ্যে অবিচল,নিজের আত্মশক্তিতে দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী এমন মানুষ।

বিশ্বখ্যাত মনোবিদ ভেরোনিকা জোব,জো ফ্রান্সিস,কৃষ্ণা সাভানির গবেষণা প্রসূত পরামর্শ-

  • লিমিটেড আর নন লিমিটেড উইলপাওয়ার – প্রত্যেক মানুষের সহ্যশক্তি এক নয়,বিপদে আপদে মাথা ঠিক রাখার মাত্রাও এক নয়। সাধারণত দেখা যায় অফিসে, কাজের জায়গায় খুব চাপ ,টেনশন একের পর এক আসলে প্রথম দু তিন বার সামলে নেয়ার পরের অভিঘাত সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।যেমন অফিসের পরের পর ঝামেলা সামলে বাড়ি ফিরে ছোট সমস্যা হলেও হাল ছেড়ে দেওয়া বা  ভীষণ রেগে যাওয়াকে লিমিটেড উইল পাওয়ার বলা হচ্ছে।আর অফিসের ঝামেলা সামলে বাড়িতেও ঝামেলা হাসিমুখে ঠান্ডা মাথায় সামলানোর ক্ষমতাকে নন লিমিটেড উইলপাওয়ার বলা হচ্ছে।গবেষণায় প্রমাণিত ভারতীয়দের মধ্যে এই নন লিমিটেড উইল পাওয়ার অনেক বেশি।

কিভাবে লিমিটেড থেকে নন লিমিটেড উইল পাওয়ার অর্জন?

১) ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স করা- ইংরেজিতে একটা খুব সুন্দর কথা আছে ,’ডোন্ট ব্রিং অফিস টু হোম অ্যান্ড ডোন্ট ব্রিং হোম টু অফিস’ মানে অফিসের ঝামেলা অশান্তি বাড়িতে নিয়ে যাবেন না আর উল্টোটাও করবেন না।এই হল ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স। না বলতে পারা,কাজের মধ্যে ছোট্ট ব্রেক,শরীর,মনের প্রতি যত্ন,সম্পর্কে উষ্ণতা,একটা ন্যূনতম হলেও শৃঙ্খলা বজায় রাখা-টাইম ম্যানেজমেন্ট,আয় ব্যায়ের সামঞ্জস্য,কাজের জায়গায় এবং সংসারে সমান মনোযোগ ,কাউকেই অবহেলা না করা।

আরও পড়ুন:

    ২)সারাদিন একটা শৃঙ্খলা আর ভালো অভ্যাসের  মধ্যে থাকা,সকালে ওঠা,মর্নিং ওয়াক/এক্সারসাইজ, সঠিক ডায়েট,নিয়মানুবর্তিতা -সময়ের কাজ সময়ে, এই পর্যন্ত পড়ে যারা মনে করছেন এই জ্ঞানবাণী জানি তারা দয়া করে আসে পাশে যারা নন লিমিটেড উইল পাওয়ারের অধিকারী ,ঠান্ডা মাথার ,শত প্ররোচনা আর চাপে মাথা ঝোঁকান না তাদের লক্ষ্য করে দেখুন তাদের মধ্যে ৯০% এই ডিসিপ্লিন আর লাইফ স্টাইলের মধ্যে দিয়ে যায়।    

    ছবি-ক্নি পাবলিশিং

    ৩)ধ্যান -আজকের পরিভাষায় মেডিটেশন/দিনের কাজ শুরু হওয়ার আগে অন্তত ২০/৩০ মিনিট। যদি অভ্যাস না থাকে তাহলে প্রথমে ৫ তারপর ১০ এমন করে বাড়িয়ে নিন।মাত্র ৩০ দিন পর ফলাফল দেখুন।       

    ৪)কাজের চাপে আরও ভালো কাজ- একটু বিশদে ব্যাখ্যা প্রয়োজন।সাধারণত একটা বা দুটো পর পর কঠিন কাজ সামলানোর পর পরের কাজে আর ততটা একাগ্রতা আর পরিশ্রমে শরীর মন হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা আছে যা আমরা সকলেই প্রত্যক্ষ করেছি।কিন্তু রিসার্চে প্রমাণিত এই নন লিমিটেড উইলপাওয়ার সমৃদ্ধ মানুষদের চাপের মধ্যে কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়।রিসার্চে প্রমাণিত শপিং মলে,সুপারমার্কেটে যে পেমেন্ট কাউন্টারে বেশি ভিড় সাধারণত আমরা সেই কাউন্টারের পেছনে না লাইন দিয়ে ফাঁকা কাউন্টারে দাঁড়াই কিন্তু যে কাউন্টারে বেশি ভিড় সেই কর্মচারীর কাজের স্পিড বেশি লাইনের কারণে অনেক বেশি থাকে আর অন্য কাউন্টারের কর্মচারীর কাজের স্পিড অনেক কম থাকে ফাঁকা থাকার কারণে।এছাড়া এই চাপের মধ্যে কাজ করার কারণে উইলপাওয়ার অর্থাৎ কর্মতৎপরতা আর ইচ্ছাশক্তি বেড়ে যায়।

    ৫) ডিজিটাল ডিটক্স – গবেষণায় প্রমাণিত যে ফোন/কম্পিউটার আসক্তি কমাতে পারলে সব কাজে এবং মনের উন্নতি হয়।বিশেষত রাতে ঘুমোনোর সময় ফোন অন্য ঘরে রাখা,একটা বা দুটো দিন কোনো সোশ্যাল মিডিয়ায়.হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে চোখ না রাখা (জরুরি বিষয় ছাড়া )/এই ডিজিটাল আসক্তি কমানোর আর একটা খুব ভালো সুফল হল ছেলে মেয়েদেরও বেশি ফোন ঘাঁটা থেকে বিরত করা কারণ বাচ্চারা শুনে শেখার থেকে দেখে অনেক বেশি শেখে। 

    ৬) আত্মবিশ্বাস,আত্মশক্তি -নিজের ওপর ভরসা রাখুন।অতিমারি পেরিয়ে আজকের কঠিন দুনিয়ায় চাপের সময়,সঙ্কটে শান্ত থাকা কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়।মানসিক ও শারীরিক চাপের সময় নিজের অতীতের সাফল্য আর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকলে চাপ কেটে বেরোনো যায়।একটা রুটিনের মধ্যে থাকা এবং নিজেকে ভাল রাখুন।রবীন্দ্রনাথ ‘অন্তরে যে শক্তি আছে’ তার কথা বলেছেন,বজ্রানলে নিজের বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে একলা যেতে বলেছেন,বলেছেন,’ মুক্ত করো ভয়, আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়।‘

    মহানগর ছবির আরতি মনের জোরে জীবন বদলাতে পেরেছিল। আপনি চেষ্টা করবেন ?

    ঋণ – ডেভিড রবিনসন,বিবিসি ওয়ার্কলাইফ    

    শেয়ার করুন :

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *