বাচ্চাদের পেটে ব্যাথা ও চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন -

বাচ্চাদের পেটে ব্যাথা ও চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন

অভিজ্ঞ শিশু চিকিৎসকদের পরামর্শ।

বাচ্চারা প্রায়ই পেটে ব্যাথার কথা বলে।একে সবসময় স্কুলে যেতে না চাওয়ার অজুহাত মনে করে উপেক্ষা না করাই ভালো।অনেক কারণে পেটে ব্যাথা হতে পারে,এমনকি মানসিক কারণেও।

লক্ষণ

১)৩ বছরের কম বয়েস হলে সাধারণত মানসিক কারণে হয় না।

২)ব্যাথাটা কোথায়,ওপরে না নীচে,ডানদিকে না বাঁ দিকে নির্দিষ্ট করে না বলতে পারলে মানসিক রোগ হতে পারে।

৩)ব্যাথার সঙ্গে ডায়েরিয়া ,জ্বর,বমি,স্কিনের অ্যালার্জি,হাড়ে ব্যাথা থাকলে ,ওজন কমার লক্ষণ কিন্তু সেই ব্যাথার নির্দিষ্ট কারণ আছে।

৪) নাভির চারপাশে ব্যাথা মনোরোগের কারণ হতে পারে কিন্তু দূরে হলে সুনির্দিষ্ট কারণ আছে।

৫)শিশু এমনিতে ভালো আছে আর ঘুমের মধ্যে কষ্ট নেই এমন হলে মনোরোগের কারণ হতে পারে ।

চিকিৎসা

প্রথমে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে যে কারণে ব্যাথা সেটা শনাক্ত করতে হবে।ইউরিন ইনফেকশন,টাইফয়েড,জন্ডিসেও পেটে ব্যাথা হতে পারে।সেক্ষেত্রে রোগ সেরে গেলে ব্যথাও সেরে যাবে।কৃমির কারণে ব্যাথা হলে ব্যাথাকালীন কৃমির ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।কনস্টিপেশনে সব্জি ও প্রয়োজনে মিল্ক অফ ম্যগ্নেশিয়া খাওয়ানো যেতে পারে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে।

কোল্ড ড্রিঙ্কস আর অ্যাসিডিটি

কোল্ড ড্রিঙ্কে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড পাকস্থলীতে জল ও সোডিয়ামের সঙ্গে মিশে কার্বনিক অ্যাসিড ও সোডিয়াম বাই কার্বোনেটে বদলে যায় যা এক ধরণের ক্ষার যা মুহূর্তে পাকস্থলীর কিছুটা হাইড্রো ক্লোরিক অ্যাসিডকে প্রশমিত করে।কোল্ড ড্রিঙ্ক বা সোডা খেলে অম্বল কিছুটা কমার কারণ এটাই তার মানে কোল্ড ড্রিঙ্ক অম্বল কমানোর ওষুধ সেটা মনে করা ঠিক নয় বরং এর ভেতরে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড পাকস্থলীতে জমে আরো ফাঁপিয়ে দেয় ফলে অম্লক্ষরণ বেশি হয়।   

লিভারের রোগ নির্ণয় চিকিৎসা

প্রথমে লিভারের অসুখ হয়েছে কিনা জানতে ডাক্তারের সঙ্গে বাচ্চার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন।  ব্লাড টেস্ট করে দেখতে হবে বিলিরুবিনের পরিমাণ কত।এছাড়া লিভারের এসজিওপিটি ও এসজিওটি (লিভার এনজাইম ) অ্যালকালাইন ফসফেট পরিমাণ দেখেও জানা যায় লিভার ঠিকমতো কাজ করছে কিনা।আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করতে হতে পারে।

লিভারের সমস্যায় প্রাথমিক চিকিৎসা হল বিশ্রাম আর সহজে হজম হয় এমন খাবার খেতে হবে।

১) অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার ডায়েট থেকে সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে।

২)তেল ও মশলা জাতীয় খাবার চলবে না।

৩)ডাবের জল,গ্লুকোজ খেতে হবে।

৪)কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

৫)ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের জন্য লিভারের সমস্যা হলে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেতে হবে।

৬)হেপাটাইটিস থেকে লিভারের সমস্যা হয় তাই আগে থেকে হেপাটাইটিস ভ্যাকসিন নিতে হবে।

৭)ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বন্ধ করতে হবে।

৮) অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ বেশি খাওয়ানো যাবে না ,এতে লিভার খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

আমিষ না নিরামিষ ?

প্রচলিত ধারণা আছে,বিশেষত পুরোনো দিনের ধ্যান ধারণা মানা মা ঠাকুমার মতে পেটের অসুখ হলে নিরামিষ খাওয়া ভালো।চিকিৎসাবিজ্ঞান বলেন আমিষ খাওয়া যেতেই পারে।আমিষে প্রোটিন থাকে।শরীরে শক্তি সঞ্চয় করতে এবং অ্যানিমিয়া ঠেকাতে এর জুড়ি নেই।কিন্তু শিঙি,তাজা চারা পোনা ও ছোট মাছের হালকা ঝোল,চিকেন স্ট্যু খেতে পারেন আর জাত একবেলা নিরামিষ পছন্দ করেন তারা প্রোটিন ইনটেকের বিষয়টা খেয়াল রাখবেন।

হ্যান্ড ওয়াশ

রোজকার ব্যক্তিগত জীবনে আর বিশেষত বাচ্চাদের ছোট থেকে পরিষ্কার -পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতন রাখা খুব জরুরি।তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর ৫ বছরের নিচে ৩.৫ মিলিয়ন বাচ্চা ডায়েরিয়া আর নিউমোনিয়ায় মারা যায়।বাইরে থেকে এসে এবং দিনে অন্তত ৪/৫ বার সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া উচিত।

তথ্যঋণ-   ডঃ মহেশ গোয়েঙ্কা,ডিরেক্টর & হেড ,ইনস্টিটিউট অফ গ্যাস্ট্রোসায়েন্সেস, ডঃ অনুপম সিবাল,পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট, অ্যাপোলো হসপিটালস।

*এই নিবন্ধটি সাধারণ তথ্যের জন্য যা কোনোভাবে ওষুধ আর চিকিৎসার বিকল্প নয়। অসুখ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

শেয়ার করুন :

2 thoughts on “বাচ্চাদের পেটে ব্যাথা ও চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *