সম্প্রতি আমেরিকার ঐতিহ্যশালী ডার্থমাউথ কলেজ বিশ্বজয়ী কিংবদন্তি রজার ফেডেরারকে সাম্মানিক ডক্টরেট প্রদান কালে রজার ফেডেরারের অমূল্য প্রারম্ভিক ভাষণের সারাংশ যা শুধু স্নাতকোত্তর ছাত্র ছাত্রীদের জন্য নয়,জীবনযুদ্ধে লড়ে চলা প্রত্যেক মানুষের জন্য জীবন বদলে যাওয়া পরামর্শ।
আমাকে আজ এখানে যে সন্মান প্রদান করা হল তার জন্য আমি অভিভূত।কিন্তু আমি নিজে গ্র্যাজুয়েট নই।টেনিস খেলার জন্য আমায় পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছিল।আমি টেনিসে গ্র্যাজুয়েট হয়েছি ২০২২ সালে আর তোমরা গ্র্যাজুয়েট হচ্ছ ২০২৪ সালে তাই আমি তোমাদের থেকে ২ বছরের বড়।অনেকে আমার কাছে জানতে চান টেনিস খেলা ছাড়ার পর এখন আমি কি করি ।এবং আমি মেয়েকে স্কুল থেকে আনি,ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ঘর পরিষ্কার করি ,অনলাইন দাবা খেলি।
জীবনে সব ধরণের শিক্ষার প্রয়োজন আছে।এসো আজ আমি তোমাদের ‘টেনিস লেসন’ শেয়ার করি।
১ )আমরা দারুণ কিছু পারফর্মেন্স দেখে বলি এফর্টলেস মানে অনায়াসে করল।এটা একটা অতিকথন যা ঠিক নয়।অনেক সময় আমার কোনো শট দেখে বলা হয়েছে এফর্টলেস।কিন্তু সবাই ওই শটটা আমি কত অনায়াসে মারলাম সেটা দেখে বলল কিন্তু তার পেছনে আমার কত ঘন্টা,মাস ,বছরের সাধনা আছে সেটা দেখা যায় না তাই অনায়াসে কিছু হয় না।
২) প্রতিভা থাকা জরুরি।আমি কখনোই বলবো না প্রতিভার প্রয়োজন নেই ।নিশ্চয়ই আছে ।কিন্তু টেনিসের মতন জীবনেও আমি মনে করি ডিসিপ্লিনও একটা ট্যালেন্ট,কথাটা শুনতে অদ্ভুত হলেও এটা আমি বিশ্বাস করি।এবং এর সঙ্গে ধৈর্য্য ধরার ক্ষমতা একটা ট্যালেন্ট।নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখা একটা ট্যালেন্ট,এর সঙ্গে নিজের জীবন যাপন আর নিজেকে সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে উদ্যমী রাখাও একটা ট্যালেন্ট।কেউ কেউ এই বিষয়গুলি নিয়েই জন্মায় ,আবার অনেককে এটা চলার পথে আয়ত্ত করতে হয়।
৩)পরিশ্রমের পরেও কাঙ্খিত সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না।এটা আমার ক্ষেত্রে বহুবার হয়েছে।টেনিস কিন্তু আদপে খুব নিষ্ঠুর খেলা।১০০ জন খেলোয়াড় একটা ট্রফি জেতার জন্য পরিশ্রম করছে,১ জন জিতছে আর বাকিরা আবার নিজের গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছে।তারা কিন্তু সবাই যথেষ্ট পরিশ্রম করেছিল। আমি প্রত্যেকটি ট্যুর্নামেন্ট,খেলায় জিততে চেয়েছি,কিন্তু পারিনি ,অনেকবার ব্যর্থ হয়েছি ।এখানে খেলার মধ্যে এবং খেলার পর এটা মনে রেখে জরুরি যে যে হয়ে গেছে তা অতীত ,পেছনে ,র ফিরবে না ,এখন সামনের দিকে তাকাতে হবে,এই শট মিস করলাম এর থেকে জরুরি পরের শট,পরের ট্যুর্নামেন্টের প্রতি মনোসংযোগ করা।জীবনও এমনই হয়,সেটা পড়াশোনায়,কাজে সব জায়গায় একটা নাগরদোলার মতন যেখানে সাফল্য আর ব্যর্থতা হাত ধরে হাঁটে।এটাই স্বাভাবিক।আর খেলার ক্ষেত্রে বলতে পারি যখন নিজের প্রতি সন্দেহ হচ্ছে যে পারব কি না.মনে রাখবে তোমার প্রতিপক্ষের মনেও একই সন্দেহ হচ্ছে যে সেও পারবে কিনা।
৪) নেগেটিভ এনার্জি,হতাশা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেতে হবে।হেরে উঠে দাঁড়াতে হবে ।পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চ্যাম্পিয়নরা বিজয়ী হয় শুধু জিতে নয় ,তারা জানে যে তারা ব্যর্থ হবেই আর সেই ব্যর্থতায় ভেঙে না পড়ে টি থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার কঠিন মানসিকতা।
৫)জীবন টেনিস কোর্টের থেকে অনেক বড়।যখন ছোটবেলায় আমি টেনিস খেলতে শুরু করেছি তখন জানতাম যে টেনিস আমাকে পৃথিবীকে চিনতে শেখাবে কিন্তু শুধু টেনিসই আমার পৃথিবী নয় ।এত দেশ বিদেশ ঘোরা,এত ট্যুর্নামেন্ট,কত বন্ধু পরিজন কিন্তু আমার মনে ছিল যে আমি যেন কখনো নিজের শেকড় ,নিজের মাটির কথা না ভুলি।
শেয়ার করুন :