তিনকন্যা অসামান্যা -

তিনকন্যা অসামান্যা

পায়েল কাপাডিয়া,অনুসূয়া সেনগুপ্ত আর দীপা কর্মকারের দিগ্বিজয় ।

পায়েল কাপাডিয়া,অনুসূয়া সেনগুপ্ত আর দীপা কর্মকার এই দীপ্তিময়ী তিনকন্যা বিশ্ব এবং এশিয়ায় ভারতকে জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনে উপনীত করেছে তাই এদের জন্য জগৎ জুড়ে উদার সুরে আনন্দগান বাজছে।সিনেমা এবং খেলাধুলার মধ্যে আপাত কোনো মিল না থাকলেও এক্ষেত্রে একটি বিষয়ে এই অসামান্যা তিনকন্যার মিল আছে।এঁরা এই জগৎ জোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন প্রচারের ঢক্কানিনাদের আড়ালে।এমনকি পায়েল কাপাডিয়া এবং অনুসূয়া সেনগুপ্তর কথা সেভাবে কেউ জানতোই না।

ছবি -ইন্ডিয়া টাইমস

পায়েল কাপাডিয়ার জন্ম ১৯৮৬।চিত্রশিল্পী নলিনী মালিনীর কন্যা।ছোটবেলায় বোর্ডিং স্কুলে ফিল ক্লাবের দৌলতে ঋত্বিক ঘটক আর তারকোভস্কির ছবির সঙ্গে পরিচয়।সেন্ট জেভিয়ার্সে পড়ার পর পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে পাঠরত অবস্থায় গজেন্দ্র চৌহানের প্রতি বিক্ষোভের কারণে নির্বাসিত।পায়েল তথ্যচিত্র নির্দেশনাকে পাথেয় করে তৈরি করেছেন ‘ওয়াটারমেলন ফিশ অ্যান্ড হাফ গোস্ট’,’আফটারনুন ক্লাউডস’,’দ্য লাস্ট ম্যাঙ্গো বিফোর মনসুনের’ মতন ছবি।

এবারে তার  ‘অল উই ইম্যাজিন অ্যাজ লাইট ‘ বিশ্বখ্যাত ঐতিহ্যশালী কান ফিল ফেস্টিভ্যালে বেস্ট ডকুমেন্টারি অ্যাওয়ার্ড গ্রাঁ পিঁ  জেতা বিশ্বজয়ের মহিমা উদ্ভাসিত হয়েছে। জেতার পর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় পায়েল বলেছেন ,’এখানে মনোনীত হতে পেরেই দারুণ লেগেছিল,পুরস্কৃত হওয়াটা কল্পনার অতীত।সকলকে ধন্যবাদ ।‘

 পায়েলের এই অসামান্য,অতুলনীয় সাফল্য ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের ছোট বড় সকল তথ্যচিত্র নির্মাতাদের বিপুল আশা আর অনুপ্রেরণা দেবে একথা নিশ্চিত রূপে বলা যায়।বিশ্বজয়ের পুরস্কার পেয়ে ফিরে পরের মাসে আগের মামলায় আদালতে হাজিরা দিতেও যাবেন দীপ্তিময়ী পায়েল কাপাডিয়া।  

ছবি- দীপা কর্মকার অফিশিয়াল

দীপা কর্মকার এই সময়ের ত্রিপুরার তথা ভারতের তথা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ যিনি  অলিম্পিকসে একচুলের জন্য ব্রোঞ্জ পান নি,রিও অলিম্পিকসে জিমন্যাস্টিকসে ভয়ঙ্কর কঠিন পোডোনোভা বলতে বিশ্বজয়ী সিমোন বাইলসের সঙ্গে মোকাবিলায় মাত্রা ০.১৫ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকা দুর্দান্ত কীর্তি নতুন তথ্য নয়।অলিম্পিকসে অভূতপূর্ব সাফল্য পাওয়ার পর দীর্ঘদিন চোট আঘাতের কারণে পর্যুদস্ত হয়েছেন দীপা। প্রথমে প্রাকটিসের সময়ে হাঁটুতে আঘাত ,পরে অ্যান্টেরিয়র ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট সার্জারি,এবং ইন্টারন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির পরীক্ষায় নির্বাসিত থাকার অভিশাপের অগ্নিপথের মধ্যে দিয়ে গেছেন দীপা কিন্তু মনের জোর হারাননি,ভেঙে পড়ে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবেননি,ঘুরে দাঁড়িয়েছেন,নিঃশব্দে,প্রচারের আড়ালে প্রাণপাত করে লড়েছেন।

গত ২৬শে  মে উজবেকিস্তানে আবার একটি ইতিহাস সৃষ্টি করলেন দীপা।তাশখন্দে আয়োজিত এশিয়ান সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতলেন এই দীপ্তিময়ী দীপা।২১ মাস ডোপিং করার  অপরাধে নির্বাসিত থাকার পর এই তুঙ্গস্পর্শী সাফল্য।আনন্দের এবং গর্বের বিষয় এশিয়ান সিনিয়র ট্যুর্নামেন্টে এটিই ভারতের প্রথম স্বর্ণপদক।ত্রিপুরার বাঙালি মেয়ে দীপা কি শুনেছেন ‘এভাবেও ফিরে আসা যায় ‘ গানটি ?      

ছবি -ভ্যারাইটি

অনুসূয়া সেনগুপ্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়েছেন,সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছে ছিল। ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছেন অঞ্জন দত্তর ;ম্যাডলি বেঙ্গলি’ ছবিতে।কিছুদিন গ্রূপ থিয়েটারে কাজ করে  মুম্বাইতে চলে যান এবং প্রোডাকশন ডিজাইনের কাজ করতে থাকেন।

পরিচালক কনস্টান্টাইন বোজানভ প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক  উইলিয়াম ডালরিম্পলের ‘নাইন লাইভস: ইন সার্চ অফ সেক্রেডস ইন মডার্ন ইন্ডিয়া ‘ বই থেকে ‘শেমলেস ‘ছবিতে অন্যতম নায়িকা রেণুকার  চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেলেন অনুসূয়া যে কিনা জেল থেকে একটি পুলিশ অফিসারকে খুন করে পালায়।

বাকিটা ইতিহাস।ঐতিহ্যশালী কান ফিম ফেস্টিভ্যালে আন সার্টেন রিগার্ড ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেলেন এই সুকন্যা যা ভারতের তথা বাংলার গৌরব ,শ্লাঘার মুকুটে একটি উজ্বল রত্ন এবং এই আকাশচুম্বী সাফল্য অর্জন করলেন প্রচারের আড়ালে।

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে অনুসূয়া বলেছেন ,’মঞ্চে নাম ঘোষণার সময় নাম্ব হয়ে গিয়েছিলাম।পুরস্কার নিতে স্টেজে উঠে ভেতরে অসম্ভব আনন্দ হচ্ছিল আর এটাও মনে হচ্ছিলো যে এই জয় আমার একার নয় ,দেশেরও।তবে বলতে পারি অভিনয়ের জন্য কোনোরকম তাড়াহুড়ো করিনি।’        

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *