শহরে অনুষ্ঠিত হলো নজরুলের ‘ভাঙার গান’ কাব্যগ্রন্থের শতবার্ষিকী সংস্করণ প্রকাশ। ১৯২৪ সালে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে নিষিদ্ধ হয়েছিল এই কাব্যগ্রন্থ। সেই ঘটনার একশো বছর পর এ বছর ব্ল্যাকলেটার্স্ নতুন ভাবে প্রকাশ করলো ‘ভাঙার গান’। সেই উপলক্ষেই গত ১০ জানুয়ারি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকানন্দ হলে আয়োজিত হল এক ঘরোয়া অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের সূচনা হলো গায়ক অর্ক মুখার্জীর গান দিয়ে। ‘কালো মেয়ের পায়ের তলায়’ – এর মত কালী সাধনার গান থেকে ‘বল ভাই মাভৈ মাভৈ’ – এর মত গণ জাগরণের গান – দর্শক ফিরে দেখলো নজরুলের ব্যাপ্তি । তালে তালে গলা মেলালো ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ -এর সোচ্চার উচচারণে। এমনি এক মুহূর্তে বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করলেন ব্ল্যাক লেটার্স্-এর কর্ণধার অর্ক দেব। সঙ্গে নজরুল বিশেষজ্ঞ বাঁধন সেনগুপ্ত, দে’জ এর অপু দে এবং সম্পাদক শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়। আনুষ্ঠানিক প্রকাশের পর বক্তব্য পেশ করেন বাঁধন সেনগুপ্ত। বললেন নজরুল বিষয়ক নানা অজানা কাহিনি।
অনুষ্ঠান এগিয়ে চললো পরবর্তী আলোচনায়। শুদ্ধব্রত দেব কথা বললেন প্রতিরোধ সাহিত্য নিয়ে। প্রতিবাদী সাহিত্য থেকে প্রতিরোধ সাহিত্যের ফারাক বা পার্থক্য হয়ে উঠলো আলোচনার কেন্দ্র। উঠে এল বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দ্রোণাচার্য ঘোষ তথা ভারাভারা রাও’র কথা। মাহমুদ দরবেশ এর কবিতার সূত্র ধরে উঠে এল প্যালেস্টাইন প্রসঙ্গ – প্রেক্ষিত অনুসারে কীভাবে প্রতিরোধের প্রতীক বদলে যায়। সেই সূত্রেই পরবর্তী বক্তা সুজাত ভদ্রের বক্তব্য। বিষয় – ‘ভারত থেকে প্যালেস্টাইন আজও বাজে ভাঙার গান’। বললেন রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবিতে তাদের অক্লান্ত কর্মকান্ডের কথা। কীভাবে শাসক বদলালেও বদলায়নি রাজনৈতিক বন্দীদের ওপর অত্যাচারের কায়দা। কীভাবে সাতের দশক থেকে আজ পর্যন্ত আইন ব্যবস্থায় দখলদারি করে শাসক দল। উঠে এল উমর খালিদের কথা। পরবর্তী বক্তা বনজোৎস্না লাহিড়ী বললেন ভাঙার গান গেয়ে চলার প্রয়োজন ও প্রাসঙ্গিকতার কথা। সেই নিয়েই অনুষ্ঠানের অন্তিম অংশে ছিল এক আলোচনা চক্র। বক্তা হিসেবে ছিলেন শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়, অর্ক দেব ও জয়রাজ ভট্টাচার্য। শিল্প চর্চায় ‘নর্মাটিভিটি’ ভাঙা এবং সেই প্রসঙ্গে ‘ভাঙার গান’এর ভূমিকা – এই ছিল আলোচনার কেন্দ্র। বাংলা ভাষায় সংস্কৃতি চর্চায় ‘ভাঙার গান’ এর পুনঃপ্রকাশ এক আলোড়ন সৃষ্টি করবে এবং উৎক্রমের পথ নিশ্চিত করবে এই আশা নিয়েই এই কাব্যগ্রন্থের শতবার্ষিকী সংস্করণ প্রকাশ অনুষ্ঠানের সমাপণ ঘটে।
শুভায়ু চ্যাটার্জী -স্নাতকোত্তর ছাত্র, তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ,যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন :