একলা কার্বন -

ছবি -মৃণাল শীল

একলা কার্বন

‘রিলিনা গাঙ্গুলি হল স্টিভ ওয়ার অস্ট্রেলিয়া। আর তুই বড়জোর জিম্বাবোয়ে।’

শমীক ঘোষ

‘সাজেশন?’ ঘাড়টা অল্প কাত করে তাকিয়ে বলে উঠল রিলিনা। ওর দু’টো ভুরুতে অশান্ত সমুদ্রের আভাস।

        বিকেল ফুরিয়ে আসছে। সরু গলিটার ওপরে এক ফালি আকাশের রঙে রাতের আভাস। রিলিনার ভুরুর দিকে তাকিয়ে সৌমেনের মনে হল ডুবে যাবে। ডুবেই যাবে সে। পা কেঁপে উঠল তার। মনে হল থাক সব কিছু। এক দৌড়ে সে পালিয়ে যাবে সব কিছু ছেড়ে।

        ঢোক গিলে, কোনওমতে সে বলল, ‘সাজেশন মানে অজৈব রসায়ন মানে ইনঅর্গ্যানিক কেমিস্ট্রির…’

        ‘কথাটা সাজেশ্‌চান। সাজেশ্‌চন।’ রিলিনার ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসির আভাস। ‘শ’-এর নিচে ‘চ’ তো নয়, যেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আয়নার মতো পিচে কোর্টনি ওয়ালশের ইয়র্কার। সৌমেনের মিডল স্ট্যাম্প ভেঙে গড়াচ্ছে।

রিলিনা ইংলিশ মিডিয়াম। সৌমেন পাতি বাংলা। রিলিনা নিখুঁত উচ্চারণে ইংরাজি বলে। সৌমেনের জিভের ডগা থেকে কেমিস্ট্রির বদলে এখনও রসায়ন বেরিয়ে আসে। নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফেলল সে। বুকের ভেতর ধুকপুক ধুকপুক করছে এখনও। বিকেলের আলোয় যেন লোডশেডিং হয়ে গিয়েছে। সব কিছু গাঢ় অন্ধকার। সৌমেনের হাতের তালু দু’টো ডিপ ফ্রিজের মতো ঠান্ডা। আবার ঢোক গিলল সে। তারপর সিনেমায়, গুলি খেয়ে মরে যাওয়ার আগে লোকেরা যেমন হড়হড়িয়ে সব কিছু বলে ফেলে, তেমনই মরিয়া হয়ে সে বলল, ‘সাজেচশান, সাজেচচান…’ উচ্চারণটা ঠিক হচ্ছে না কিছুতেই। সব কিছু ঘেঁটে ঘ হয়ে গেল।

        রিলিনা হাসল না একটুও। ‘ইনঅর্গ্যানিক কেমিস্ট্রির সাজেশ্‌চান পিএন স্যার যেদিন দিয়েছিল, সেদিন কি তুই ক্লাসে ছিলিস না?’

        রিলিনা চশমা মোছে না কোনওদিন। ভাসা ভাসা দু’টো চোখ ঢেকে গিয়েছে কুয়াশা জমা কাচের ওপর। সৌমেন মাথা নাড়ল দু’বার। দু’পাশে। আসলে কী বলবে সে নিজেও ভেবে পাচ্ছিল না।

        ‘ক্লাসেই চাইতি পারতি। গলির মধ্যে পেছন পেছন দৌড়ে এলি কেন?’  কুয়াশা-চশমার ওপরের সরু ভুরুতে আবারও ঢেউয়ের আভাস। সৌমেনের মনে হল কোর্টনি ওয়ালশ নয়। এ যেন একদম সৌরভের কভার ড্রাইভ। বোকা ফিল্ডারের মতো শুধু দৌড়েই যাবে সৌমেন। বলের নাগাল পাবে না কোনওদিন।

মাথা নিচু করে ফেলল সে। তার পায়ে শস্তা কিটো। খালি পায়ে ফুটবল খেলে খেলে নখগুলো কালো, ফাটাফাটা। রিলিনার গাড় বাদামী জুতো। তার ওপরে সোনালি বো-টাই। গোলাপি নেলপালিশ পরা ফুলের মতো দশটা আঙুল। সৌমেনের হঠাৎ মনে হল কেঁদে ফেলবে সে। একদম কেঁদেই ফেলবে।

        নন্দী স্যারের ক্লাসে একদম প্রথমদিনই সে দেখেছিল মেয়েটাকে। ঢলঢলে গোল একটা মুখ। চোখে চৌকো ফ্রেমের মোটা চশমা। টকটকে লাল একটা টপ পরে বসেছিল ফার্স্ট বেঞ্চে। একাএকাই।

        বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন। সৌমেনের আসতে দেরি হয়েছিল। ক্লাসে ঢুকে সে দেখেছিল, সব গুলো বেঞ্চ ভর্তি। শুধু ফার্স্ট বেঞ্চে লাল জামা পরা মেয়েটা। ঝড়ে ভেজার কাকের মতো সৌমেন। গায়ের জামাটা ঢোলা অনেকটাই। মেয়েটার পাশে বসবে কিনা ঠিক করে উঠতে পারছিল না কিছুতেই।

        স্যার ক্লাসে ঢুকে এসেছিলেন। সৌমেনকে দেখে বলে উঠেছিলেন, ‘কী রে কী দেখছিস লাল জামা? ওই জন্য কেমিস্ট্রি ক্লাসে এসেছিস?’

        স্যারের কথায় ক্লাসে হাসির রোল উঠেছিল। সৌমেন দেখেছিল মেয়েটার মুখের ওপর কালো রঙের আভাস। খুব নার্ভাস হয়ে গিয়েছিল সে। বোকার মতো বলে ফেলেছিল, ‘না, না, স্যার, সিট মানে স্যার মানে আমার নাম সৌমেন।’

        ক্লাসে হাসির রোল উঠেছিল আবার। ফার্স্ট বেঞ্চের মেয়েটাও দুলে দুলে হেসে উঠেছিল। স্যার ফিচেল হাসি হেসেছিলেন। ‘তাহলে সিট মানে সৌমেন মানে স্যার আপনি বসে পড়ুন ফার্স্ট বেঞ্চেই।’

        মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল সৌমেনের। মাথা নিচু করে সে বসে পড়েছিল মেয়েটার পাশে। তাকে জায়গা ছেড়ে একটু দূরে সরে গিয়েছিল মেয়েটা। স্যার ব্ল্যাকবোর্ডে কার্বনের চারটে হাত এঁকেছিলেন। চারটে হাত ধরে ঝুলে আছে চার চারটে হাইড্রোজেন।

রিলিনা নিজে থেকেই কথা বলেছিল একটু পরে। ‘হাই আই অ্যাম রিলিনা। রিলিনা গাঙ্গুলি। আই স্টাডি ইন সেন্ট মেরিজ।’

  মদনমোহিনী মেমোরিয়াল বয়েজ স্কুল নামটা বলতে কেমন লজ্জা করেছিল সৌমেনের। মনে হয়েছিল মেয়েটা হেসে ফেলবে। সৌমেন শুধুই শুকনো হাসি হেসেছিল। না-মোছা চশমার গাঢ় কুয়াশা ভেদ করে রিলিনার চোখ দেখতে পায়নি সে।

        ক্লাসের পর রিলিনাকে সে হেঁটে যেতে দেখেছিল সরু গলিটা দিয়ে। মনে হয়েছিল গোটা রাস্তায় সব কিছু যেন সাদাকালো হয়ে গিয়েছে। শুধু রিলিনার জামাটাই লাল।

        কে যেন পিছন থেকে হাত রেখেছিল পিঠে। সৌমেন চমকে ফিরে তাকিয়েছিল। ক্লাসেরই একটা ছেলে। ‘ওদিকে তাকিয়ে লাভ হবে না বিশেষ। রিলিনা গাঙুলির বাবা কে জানো? কলকাতা পুলিশের ডিসি।

ছেলেটার দিকে চমকে তাকিয়েছিল সৌমেন। তার মনে পড়ে গিয়েছিল বাবার দোকানটার কথা। দাঁড়িপাল্লার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে তার বাবা। একটা রবার দিয়ে রিলিনাকে সে যেন মুছে ফেলতে চেয়েছিল মন থেকে।

        ছেলেটা হাত এগিয়ে দিয়েছিল। ‘আমার নাম অর্জুন।’

        ব্ল্যাকবোর্ডের কার্বনটা সেই রাতেই আবার ফিরে এসেছিল সৌমেনের ঘুমের ভেতর। চারটে হাত নয়। দু’টো হাত আর দু’টো পা। কার্বনটার মুখের ওপর একটা চশমা। সেই চশমার ওপরে কুয়াশা লেগে আছে। কার্বনটা একটা হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সৌমেনের দিকে। খুব আস্তে ফিসফিস করে বলেছিল, ‘হাই আই অ্যাম রিলিনা। রিলিনা গাঙ্গুলি।’

        কার্বনটা মুহূর্তে বদলে গিয়ে একটা দাঁড়িপাল্লা হয়ে গিয়েছিল। সেই দাঁড়িপাল্লায় রিলিনা বড্ড ভারি। ঘুম ভেঙে গিয়েছিল সৌমেনের। ঘাম হচ্ছিল খুব। উঠে বসে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে নিয়েছিল সে। খুলে ফেলেছিল অঙ্কের বইটা। তারপর খসখস করে অঙ্ক করতে শুরু করেছিল।

        মা উঠে এসেছিল একটু পরে। ‘বাবু, ঘুমোবি না? পড়ছিস এত রাতে?’

        সৌমেন মুচকি হেসেছিল। ‘কাল তো রবিবার।’

        পিএন স্যারের কোচিং-এ আর সে কখনও রিলিনার পাশে বসেনি। অর্জুনের পাশেই বসত সে। শুধু মাঝেমাঝেই তার চোখ চলে যেত ফার্স্ট বেঞ্চের দিকে। আর রিলিনার চশমার কুয়াশা কখন যেন মেঘ লাগা পাহাড়ের মতো ভিজে ভিজে হয়ে নেমে আসত পিএন স্যারের ক্লাসে। দাঁতে দাঁত চিপে দাঁড়িপাল্লাটাকে মনে করার চেষ্টা করত সৌমেন। তারপর মেঘ টেঘ সব ছিঁড়ে শুধুই ব্ল্যাকবোর্ডটা স্পষ্ট হয়ে উঠত তার চোখের সামনে।

        অর্জুন বুঝে গিয়েছিল শেষ অবধি। ‘ভুল করছিস তুই সৌমেন?’

        ‘কী ভুল?’

        ‘রিলিনা গাঙ্গুলি হল স্টিভ ওয়ার অস্ট্রেলিয়া। আর তুই বড়জোর জিম্বাবোয়ে। রিকুয়ার্ড রানরেট কুড়ির ওপরে। ফালতু কেন ভাবছিস?’

        দপ করে কেমন যেন জ্বলে উঠেছিল সৌমেন। চাপা গলায় বলেছিল, ‘তো? ছিয়ানব্বই সালে শ্রীলঙ্কা কি ওয়ার্ল্ড কাপ জেতেনি?’ আরও ঘ্যাম নিয়ে খবরের কাগজ পড়ে শেখা কথাটাও বলে দিয়েছিলাম তারপর। ‘ডার্ক হর্স বুঝলি? কালো ঘোড়া।’

        ‘বাব্বা! পুরো বাজিগরের শাহরুখ খান!’ মুচকি হেসে বলেছিল অর্জুন।

টেস্টের পর নিয়ম করে মক টেস্ট নিতেন পিএন স্যার। প্রায় সব কটাতেই হায়েস্ট পেয়েছিল সৌমেন। শেষ মক টেস্টের দিন রিলিনার মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিল সৌমেন। রিলিনা তাকিয়েছিল তার দিকে। সৌমেন চুপ করে গিয়েছিল। মাথা নিচু করে চলে এসেছিল ভেতরে।

  মক টেস্টটা খুব খারাপ হয়েছিল সৌমেনের। জৈব রসায়নের প্রতিক্রিয়াগুলো সব গুলিয়ে যাচ্ছিল বারবার। ভৌত রসায়নের অঙ্কগুলো ভুল হয়ে যাচ্ছিল। আর ক্লাস হবে না কোনও। মক টেস্টও না। আর দেখা হবে না কারো সঙ্গে কারো।

        ক্লাস শেষ হওয়ার পর ব্যাগ গোছাচ্ছিল রিলিনা। সৌমেন চুপ করে দাঁড়িয়েছিল। রিলিনা বেরিয়ে গিয়েছিল একটু পরে। সৌমেন দাঁড়িপাল্লাটা দেখতে পেয়েছিল আবার। তারপর হঠাৎ সে ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছিল ক্লাস থেকে। দৌড়েছিল সোজা। অনেকদূরে রিলিনা হেঁটে যাচ্ছে। অর্জুন চিৎকার করেছিল ‘রিলিনা এই রিলিনা…’

        রিলিনা থমকে দাঁড়িয়েছিল। সৌমেন দৌঁড়েছিল খুব জোরে। একদম সামনে এসে বলেছিল, ‘সাজেশন… সাজেশনটা দিবি?’

        এখন মনে হচ্ছে কাজটা ভুল হয়েছে। রিলিনার ভুরু দু’টো অশান্ত সমুদ্রের মতো হয়ে রয়েছে। ক্লাসে সবার সামনে কি সত্যিই রিলিনার কাছে চাইতে পারত সে? কী বলত? অন্য কারো থেকে নিচ্ছে না কেন? দাঁড়িপাল্লা! দাঁড়িপাল্লাটার কথা কি সত্যিই ভুলে গিয়েছিল সে? খুব কান্না পাচ্ছে সৌমেনের।

        ‘কী ভাবে নিবি? জেরক্স করে?’ রিলিনা বলে উঠল হঠাৎ।

        চমকে মুখ তুলল সৌমেন। রিলিনার ঠোঁটে কোণে মৃদু একটা হাসি। ‘হ্যাঁ! হ্যাঁ! জেরক্স! জেরক্স!’ বলে উঠল সে।

        জেরক্সের দোকানটা সামনেই। রিলিনাই খাতাটা এগিয়ে দিল। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল সৌমেন। বেশি পাতা নয়। সামান্য পরেই হয়ে গেল।

        ‘শুধু ইনঅর্গ্যানিক? তোর ফিজিকাল কেমিস্ট্রি, অর্গ্যানিক লাগবে না?’ জিজ্ঞাসা করেছিল রিলিনাই।

        বোকার মতো চুপ করে দাঁড়িয়েছিল সৌমেন। কী বলবে?

        রিলিনা আবার মুচকি হেসেছিল। ‘তার থেকে আমার ফোন নাম্বারটা নেওয়াই ভালো বল? পরীক্ষার আগে এখন সময় নষ্ট করা ভালো নয়। মক টেস্টে হাইয়েস্ট পাওয়ার পরও তোর তো সাজেশ্‌চানগুলো দরকার পড়তে পারে। বলা যায় না। পরীক্ষার পরও লাগতে পারে।’

        সৌমেন কী বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। ফুরনো বিকেলের আকাশের এখন রাতের অন্ধকার। শুধু বিরাট একটা চাঁদ একদম একটা কার্বনের মতো দু’টো হাত আর দু’টো পা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে আকাশের ঠিক মধ্যিখানে টুইস্ট নাচছিল।

আলোটা ক্রমে বদলে যায়। নীল হয়ে যায়। অ্যালার্ম বাজছে। মাথা থেকে হেলমেট আর চোখ থেকে গগলসটা খুলে ফেলে সৌমেন। আজ সে অনেকটাই আগে বাড়ি ফিরে এসেছে। অ্যালার্ম বাজছে মানে রিলিনাও এসে গিয়েছে।

        হেলমেটটা আর গগলসটা ভাজ করে ড্রয়ারের মধ্যে ভরে দেয় সৌমেন। এই যন্ত্রটা দারুণ। একদম নতুন এসেছে। হাল আমলের এ আই। নাম মোমেন্টাম সিক্স ফিফটি। মোমেন্টাম ল্যাটিন কথা। মানে মোমেন্টস। মানুষের মনের ভেতরে সব স্মৃতি ফের নতুন করে ফিরিয়ে আনতে পারে যন্ত্রটা। ফিরিয়ে আনতে সেই মুহূর্তগুলো।

        চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে চলে যায় সে। ঘরের সেন্সার দেওয়া লাইটগুলো তার উপস্থিতি টের পায়। একে একে জ্বলে ওঠে। ইলেকট্রনিক ডোরটা খুলে যায় নিজে থেকেই। রিলিনা ফিরে এসেছে।

        রিলিনার চশমা নেই আর। চোখের ভেতর লেন্স বসানো। চুলগুলোয় অল্প পাক ধরেছে। হাইলাইটসের মতো করে রেখেছে ও।

        সৌমেনকে দেখে শুকনো হাসে রিলিনা। ‘ইট ওয়াজ সো হেকটিক!’

        শুকনো হাসে সৌমেন। ‘কেয়ার ফর আ ড্রিংক?’

        ‘না! আজ আর ভালো লাগছে না। শুধু একটা স্যুপ খেয়ে নেব।’

        ‘ওকে, তুই চেঞ্জ করে নে, আমি খাবারগুলো রেডি করি।’

        চল্লিশতলার ঝা চকচকে এই ফ্ল্যাটটায় ওরা দু’টো মাত্র প্রাণী। একমাত্র ছেলে নীল বিদেশে এখন।

        রিলিনা স্যুপ খাচ্ছে শুধু। সৌমেন অল্প ভাত আর ছোট মাছ। ওরা কথা বলে না কোনও। খাবারের চামচগুলো প্লেটে টোকা খায়। আওয়াজ করে।

        রিলিনা একবার সৌমেনের দিকে তাকায়। সৌমেন মন দিয়ে খাচ্ছে। রিলিনা চোখ নামিয়ে নেয়।

        সৌমেন রিলিনার দিকে তাকায় একটু পরে। রিলিনা মাথা নিচু করে স্যুপ খাচ্ছে। সৌমেনও চোখ নামিয়ে নেয়।

        রিলিনা কথা বলে একবার। ‘ফরটি ট্রিলিয়ানের টার্গেট! উফ! এই দু’হাজার চল্লিশ সালটা এতো হেকটিক যাচ্ছে না! উফ!’

        ‘ওহ, আমি পরশুদিন জুরিখ যাব। ক’দিন থাকব।’ সৌমেন জানায়।

        খাবার শেষ করে দু’জনেই উঠে পড়ে। ‘গুডনাইট।’ সৌমেন সোজা চলে যায় ঘরের দিকে। রিলিনা তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর সেও চলে আসে ঘরে। রিমোটটা নিয়ে টিপে দেয়। খুলে যায় দেরাজটা। হেলমেট আর গগলসটা বেরিয়ে আসে। মোমেন্টাম সিক্স ফিফটি। রিলিনা পরে নেয় ওগুলো।

‘সাজেশন! সাজেশনটা দিবি?’ হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠেছিল সৌমেন। রিলিনার হাসি পেয়ে গিয়েছিল খুব। একে ভুল উচ্চারণ। তারপর একদম বুদ্ধুরাম ছেলেটা। নইলে সব টেস্টে হাইয়েস্ট পাওয়ার পর এখন কেউ এসে সাজেশ্‌চান চায়? কেন বাবা সত্যি কথা বলতে ভয় করছে?

        ছেলেটাকে বুলি করার ইচ্ছে হয় খুব। ভুরু দু’টো কুঁচকে সে জিজ্ঞাসা করে, ‘সাজেশান?’

        রিলিনা আর সৌমেনের ঘরের বন্ধ দরজাদু’টোর মাঝে একটা ছোট্ট করিডোর। করিডোরটা সোজা গিয়ে ধাক্কা খায় একটা জানলায়। ঘষা কাচ লাগানো তাতে। ওই ঘষা কাচের অনেক উপরে ফ্যাকাশে সাদা কতগুলো মেঘ। তার মাঝে আরও ফ্যাকাশে একটা চাঁদ। চাঁদ নয় আসলে একটা একলা কার্বন। চারটে হাত সে বাড়িয়ে রয়েছে কাউকে ছুঁয়ে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষায়।

.

.

লেখক পরিচিতি – শমীক ঘোষ এই প্রজন্মের সাহিত্যিক‘এলভিস ও অমলাসুন্দরী’ বইয়ের জন্য ‘সাহিত্য একাডেমি যুবা’ পুরস্কার,পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমি সোমেন চন্দ স্মৃতি স্মৃতি পুরস্কার। শমীক ঘোষের লেখার বৈশিষ্ট্য হল ছোট বাক্য, দৃশ্যমান বর্ণনা এবং সময় ও স্থানের ক্রমাগত পরিবর্তন।

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *