ডাক টিকিট -

ছবি - নির্মলেন্দু মন্ডল

ডাক টিকিট

বাড়িতে এভাবে আমি আর থাকতে পারবোনা…

অদিতি মজুমদার

গলি দিয়ে বেরিয়ে মিনিট খানেক হাঁটার পর ডান দিকে হেমচন্দ্র পার্ক। অবহেলিত উত্তর কলকাতার গুলিঘুঁজির মধ্যে দু’একটা এক চিলতে ফাঁকা জমি এখনো অবশিষ্ট আছে। অবশ্য নামেই পার্ক, অপুর ছোট বেলায় কিছু সবুজ ছিল,এখন রেলিং গুলোর মত ঘাস গুলোও উধাও হয়েছে। ভোরবেলা তাও আশেপাশের ছেলেরা ফুটবল পেটাতে আসে।পার্ক কে ডান দিকে রেখে হাঁটছে অপু। রেশন দোকানের পাশ দিয়ে নিতাইয়ের দোকান পেরোলো। নিতাই মারা গেছে বহু বছর, তার ছেলে রাজু চালায়, তবু নিতাই এর দোকানই বলে এখনো সবাই। সেনদের বাড়ি পেরিয়ে যেতেই পোস্ট অফিসের সামনের লাল পোস্ট বক্সটা চোখে পড়ে অপুর, চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে । ওখানেই যাবে সে। আশেপাশে কয়েকটা পুরনো বাড়ি, কেউ ই থাকেনা। ভূতের মত যেন পাহারা দিচ্ছে পাড়াটাকে। বেশীর ভাগই ফ্ল্যাট কিনে বাগুইহাটি, কালিন্দী কেষ্টপুরের দিকে পাড়ি দিয়েছে। শহর টা পাল্টে যাচ্ছে রোজ একটু একটু করে, এইবাড়ি গুলোও ভাঙা পড়বে অচিরেই। ফ্ল্যাট উঠবে এখানেও। নতুন মানুষজনের আনাগোনা শুরু হবে পাড়ায়। অপুর আজকাল অবাক লাগে-এত লোক, এত মানুষ কোথায় চলে যায়? সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে? তবে অপু কেন পুরোনো সময় টাকেই আঁকড়ে থাকে? সাতের দশকে জন্মানো অপু কত কী তো পাল্টাতে দেখলো, কত কী বাতিল হতে দেখলো-বদল মানেই কি ভালো? জানা নেই অপুর। চিঠি টা বাক্সে ফেলে অপু ফিরতি পথ ধরে।

 আজকাল কেউই আর চিঠি লেখেনা, কিন্তু অপু লেখে। সপ্তাহ শেষে একটা করে । আর রাত শেষ হওয়ার আগেই সে চিঠি ডাকবাক্সে ফেলে ফিরে যায়। আজ দেরি হয়ে গেছে, ভোরের দিকে চোখটা লেগে গিয়েছিল। ফেরার পথে পার্কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা বল এসে পড়ে তার সামনে-কাকু বল টা…?!! অপু বল ছুঁড়ে ফেরত দেয়। তারপর ফিরে যায় বাড়ির দিকে। 

একটা পুরোনো বাড়ির একতলায় দুটি ঘর, এখন শুধু অপু আর মা থাকেন। বাড়িওয়ালা ওপর তলায় থাকতেন আগে, এখন বন্ধ পড়ে আছে। অপুকে আজ দোকান বাজার করতে হবে, সারা সপ্তাহ সময় পায়না। একটা বেসরকারি সংস্থায় কাজ করে, ছোট চাকরি, মাইনে কম। অপুর চাহিদাও কম, চলে যায়। এর থেকে বেশি কিছু আশা করেনি।বয়েস বেড়েছে, এখন আর নতুন করে কিছু হবার কথাও নয়। বাবা চলে যাওয়ার পর জীবনের অঘটন গুলো সামলাতে সামলাতেই তো বয়েস বেড়ে গেল।

 এক কাপ চা খেয়ে বেরোবে অপু। মা চা রেখে যান নিঃশব্দে । আগে মা জিজ্ঞাসা করতেন-পোস্ট অফিস গিয়েছিলি বুঝি? আমার রেকারিংটা তোলার সময় হলে বাঁচি। বিনি চলে যাওয়ার পর মা চুপ করে গেছে কেমন। কিছুই বলেনা। 

বাজারে যেতে ভালো লাগে অপুর। পুরনো মানুষ জনের সঙ্গে দেখা হয়। দেখাই হয় শুধু, অপু ছোট থেকেই স্বল্পবাক,যত দিন যাচ্ছে আরো নিজের মধ্যে ঢুকে পড়ছে যেন। পুরোনো মানুষদের সঙ্গে দেখা হলে সে পুরোনো সময় টাকে ছুঁয়ে ফেলে,বড্ড মায়া সেই ছোঁয়ায়। এ সময়টাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে বাঁচে, সামনের দিকে তাকাতে ভুলে গেছে সে কবেই। 

অপু পুরোনো বাজারে ডিমের দোকানে যায়, বাবা আসতেন এখানে ৷ দোকানটা পাল্টায় নি তেমন। দোকানী পাল্টেছে,সজল, সে অপুর বাবাকে চেনে না, অপু কে চেনে।

 -অপু দা… কাল খেলা দেখলে নাকি? … মেসি শালা একেবারে বাঘের মত খেললো … 

-আজ চারটে হাঁসের ডিমও দিও … 

-মাসিমা ভালো আছেন? আজকাল একদম আসেন না বাজারে …? 

-ভালো আছে ..কত হলো? 

সজল বোঝে কথাবার্তা এগোবে না। অপু টাকা মিটিয়ে চলে যায়।

অপু সব্জি মাছ ডিম কিনে বাজারের লাগোয়া চা এর দোকানের বেঞে গিয়ে বসে। কত মানুষজন ব্যস্ততা, আলোচনা, অপু শোনে, কিছু বলেনা । দুটি ছেলে পাশাপাশি বসে মোবাইলে গেম খেলছে। কোনো কথা বলছে না। ওরা কি বন্ধু?চেনে একে অন্যকে? তাহলে কথা বলছেনা কেন? চায়ের দোকানের সামনের বাড়িটায় তপতীদি-রা থাকতো । এখন কোথায় থাকে? কী করে? এইসব ভাবে অপু খানিক, তারপর বাড়ির পথ ধরে।

 -এখন পারবোনা … কিছুতেই পারবো না … তুমি গ্লিজ কটা দিন যেভাবে হোক … 

কথা শেষ হয়না অপুর, তমালী তীক্ষ চোখে তাকিয়ে বলে – কেন? কেন সম্ভব নয়?

 -আমার চাকরি টা এখনো হয়নি… বিনি চলে এসেছে… বাবার পেনশনের টাকায় সংসার চলে…

-চাকরি টা কি হবে না?

 -না না হবে তো… চিঠি টা এসে গেলেই আমি… 

-আর যদি না হয়? … অপু আজ একটা ডিসিশনে আসতে হবে… বাড়িতে এভাবে আমি আর থাকতে পারবোনা… বাবা প্রায় কথাবার্তা পাকা করে ফেলেছে… ওদেরও খুব তাড়া… কিভাবে আটকাবো? …

অপু কাঁপা গলায় বলে-কি চাইছো তুমি …?

-আমি এখন ই চলে আসতে চাই… বাড়িতে কথা বলো অপু … 

অপু চুপ করে থাকে এক মুহূর্ত, তারপর থেমে থেমে বলে- আমি পারবো না … এখন বলার মত পরিস্থিতি নেই বাড়িতে…

-বুঝেছি… আমি আসি… দেরি হয়ে যাচ্ছে..

– শোনো তমালী … আমি কটা দিন … আর কটা দিন …সময় চাইছি … প্লিজ

তমালী হাত দেখিয়ে একটা রিকশাকে থামায়,বলে মেট্রো স্টেশন যাবো…

রিকশায় উঠে পড়ে তমালী। রিকশা এগিয়ে যায়, আচমকা রিকশার ছাউনির ফাঁক দিয়ে ঘুরে তাকায়। চেঁচিয়ে বলে –

 গোরাবাজারে ওদের চারতলা বাড়ি, আমি খুব ভালো থাকবো । বাড়ি যাও অপু। রাত হলো। 

রিকশা এগিয়ে যায়, তমালী সামনের দিকে তাকায়। অপুর চোখের সামনে থেকে রিকশাটা আস্তে আস্তে দুলতে দুলতে রাস্তার বাঁক ঘুরে চোখের আড়ালে চলে যায়। ল্যাম্পপোস্টের আলো ঘিরে ধরে অপুকে । পা দুটো ওখানেই আটকে গেছে তার। সেদিন অনেক রাতে বাড়ি ফিরে আসে অপু। আরো চুপচাপ হয়ে যায়। 

আর কোনোদিন তমালীর সঙ্গে দেখা হয়নি অপুর, কথাও হয়নি। যোগাযোগ করতে পারেনি কোনোদিন। সেই চাকরিটাও হয়নি তার। অপু চিঠি লেখে, চিঠি না বলে দিনলিপি বলাই ভালো। যে কথাগুলো সেদিন বলে উঠতে পারেনি, যে কথাগুলো কোনোদিন বলা হবেনা, সেসবই লেখে সারা সপ্তাহ জুড়ে। আর তারপর খামের ওপর তমালী,গোরাবাজার লিখে পোস্ট করে দেয়। যে চিঠি কোনোদিন কোথাও পৌঁছোয় না! 

ছুটি বলে আজ একটু দেরী করে উঠেছে সীমা। চায়ের কাপ হাতে খবরের কাগজ নিয়ে বসে। আজ অনেকটা সময় পাবে কাগজ পড়ার। সীমা যা পায় তাই পড়ে, খবরের কাগজ, ফেলে দেওয়া পুরোনো ম্যাগাজিন, লিফলেট, আরো যা যা হাতে এসে পড়ে সবই। না হলে সময়টা কাটতেই চায়না। বাবা যতদিন ছিলেন একজন কথা বলার লোক ছিল, বিছানায় শুয়ে থাকলেও কথা তো বলতো। বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে সীমার পড়ার নেশা আরো বেড়েছে, এখন মুড়ি খেলেও ঠোঙাটা এক বার চোখ বুলিয়ে নেয়। আগে এ পাড়ায় একটা লাইব্রেরি ছিলো, সীমা মাঝে মধ্যে গিয়ে গল্পের বই নিয়ে আসতো, এখন লাইব্রেরির ভগ্ন দশা, বইগুলোতে উই ধরেছে, কেউ আর যায়না বলে অধিকাংশ দিন বন্ধ থাকে। 

সীমা পোস্ট অফিসের পিওন। চাকরিটা তার বাবার। বাবা চিঠি দিতে গিয়ে গাড়ির সামনে পড়েন, কোমরে চোট পান। বাবার অসুস্থতার কারণে সীমা চাকরিটা পায়। বাবা অসুস্থ অবস্থাতেই ছিলেন আরো কিছুদিন, তারপর বছর পাঁচেক হল চলে গেছেন। সীমার মা নেই। নেই মানে নেই-ই। সীমার জন্মের বছর খানেকের মধ্যে মায়ের কি একটা কঠিন অসুখ হয়েছিলো, চিকিৎসা করার সময় দেননি। সীমা বাবাকেই দেখেছে, আর দেখেছে ছোট পিসিকে। বাবা-ই তাকে ইস্কুলে ভর্তি করেন, বাবা-ই তাকে তৈরি করে ইস্কুলে দিয়ে আস্তেন,আবার সন্ধেবেলা বাবার কাছেই ছোটবেলায় পড়েছে সে। সীমার সব আবদারের একমাত্র জায়গা ছিলো বাবা। বাবার কাছে মানুষ বলেই কিনা কে জানে, সীমার সব কিছু খুব অগোছালো । ঠিক অন্য পাঁচটা মেয়ের মত না। আড়ালে তাকে নিয়ে বন্ধুরা এক সময় হাসাহাসি করতো এও জানে সীমা। 

এইভাবে যত দিন গড়ালো সীমা যেন আরো কঠিন হতে লাগলো, বাবা দুই এক বার বিয়ের কথা ভেবেছিলেন, তখন সে ক্লাস টুয়েলভ। কিন্তু কারোরই তাকে পছন্দ হয়নি। সীমা সাজগোজ করেনা, সীমার মধ্যে কোমলতা নেই, সীমা দেখতে সুন্দর নয়- এই সমস্ত অভিযোগ ছোটবেলা থেকেই সঙ্গী, তাই এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না সে। একবার কষ্ট হয়েছিলো, বাংলার মাস্টারমশাই ছিলেন সুপ্রিয়দা, সীমা তাঁর কাছে কোচিং-এ পড়তো । কী যে অপূর্ব পড়াতেন সুপ্রিয়দা! সীমা হাঁ করে শুনত। ক্লাসের শেষে গল্পের বই দিতেন সুপ্রিয়দা। কী যেন একটা পড়ানোর সময় বলেছিলেন আসলে চারদিকে সবাই সবাইকে চিঠি লেখে, মেঘ বৃষ্টি পথ ঘাট ,পুরনো সময়, সবাই। চারপাশে অনেক চিঠি পড়েআছে, কুড়িয়ে নিতে জানতে হয়। সীমা বলেছিল আমার বাবা পিওন, চিঠি দেন বাড়ি বাড়ি। সবাই হেসেছিলো,সুপ্রিয়দা হাসেননি। সীমা চিঠি লিখেছিলো সুপ্রিয় দাকে, সেই প্রথম, সেই শেষ। সে চিঠি সুপ্রিয়দা কে দিয়েছিলো সীমা, কিন্তু সুপ্রিয়দা কোনোদিন তার উত্তর দেননি। সুপ্রিয়দার বান্ধবীর কথা সীমা তার কদিন পরেই জানতেপেরেছিলো। সুতপাকে চিঠির কথা বলায় সুতপা হাসতে হাসতে বলেছিলো -তুই পারিস বটে। নিজেকে দেখেছিস কখনো ভালো করে? সুপ্রিয় দা তোকে চিঠি লিখবে?

সীমা বুঝেছিলো সত্যিই ওসব বাজে কথা, কেউ কাউকে চিঠি লেখেনা, কেউ সে সব কুড়িয়েও নেয় না। সবটাই বানানো কথা। 

বাবার অ্যাক্সিডেন্ট যখন হয় তখন সীমা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। দেওয়া হয়নি পরীক্ষা, বাবার চাকরিটা নিয়ে নেয় সে, খানিকটা বাধ্য হয়েই। বাবার চিকিৎসার খরচ, সংসার খরচ সব কিছু ঘাড়ের ওপর এসে পড়ে। বয়েস বাড়লো, বাবাও বিয়ের কথা বলা ছেড়ে দিলেন। এক সময় সীমাকে মুক্তিও দিলেন তাঁর দায়দায়িত্ব থেকে। চিঠি লেখাও কমলো, তার জায়গা নিলো ইমেল। লোকে এখন ফোনেই কথা বলে, দেশ বিদেশেও ফোন করা সহজ হয়ে গেছে। সীমার কাজ কমলো, এখন পোস্ট অফিসের কাউন্টারে বসে সে। রেকারিং, এন এস সি, স্পীড পোস্ট নানারকম দেখে রোজ। সীমা কম্পিউটারে পাশ বই আপডেট করতে পারে, যতটুকু কাজের প্রয়োজনে জানতে হয়, শিখতে হয়, শিখে নিয়েছে। তবু ফাউন্টেন পেনই ব্যবহার করে। একটা কাগজে সই করছিলো সেদিন, পাশ থেকে নতুন জয়েন করা অন্বয় হেসে উঠলো…

-তুমি ফাউন্টেন পেন টা ছাড়বে না না? … কালি শেষ হয়ে গেলে পাও কোথায়?

সীমা ম্লান হেসে বলে-এখনো পাই, যেদিন পাবো না সেদিন বাতিল করে দেবো… 

বলেই চমকে উঠলো সীমা। বাতিল করে দেবে? ছোট পিসিকে সবাই যেমন বাতিল করে দিয়েছে? কোনো কাজে লাগেনা বলে? 

আজ পোস্ট অফিস থেকে বেরিয়ে সীমা বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়ালো। এমনিতে মেট্রো স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে টালিগঞ্জে নেমে বিক্রমগড় ফিরতো। কলোনি এলাকায় বড় হয়েছে, উত্তর কলকাতার গলি খুঁজি ঘুরে ঘুরে যখন বাড়িবাড়ি চিঠি দিতে যেত সীমা, একটু একটু করে যেন শহরটাকে চিনতো। কলোনি আর এই অন্যদিকটা কত আলাদা, অন্যরকম । যাপনও আলাদা । 

-ভেতরে এসো তো, একটু দেখি তোমাকে । কড়া নাড়তেই ভেতর থেকে নারী কণ্ঠ ভেসে এলো।

সীমা ভেতরে ঢোকে, আলো অন্ধকার দোতলা পুরনো বাড়ির দরজা ঠেলে। একজন বছর সত্তরের মহিলা বসে আছেন ইজি চেয়ারে । সীমা কাছে যায়। মহিলা মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন অপলক।

– এখানে একটা সই করে দেবেন। অস্বস্তি নিয়ে বলে সীমা 

-তোমার বয়েস তো অল্প, আগে তো দেখিনি কখনো!

– আমি এক মাস হলো জয়েন করেছি।

 -মাঝে মাঝে আসবে? এমনিই?

 সীমা যেত মাঝে মাঝে । অনিতা মাসিমা , অবসর প্রাপ্ত শিক্ষিকা। স্বামী আরিফ আহমেদ পেশায় উকিল ছিলেন।নিঃসন্তান। অন্য ধর্মে বিয়ে তখন সমাজে স্বীকৃতি পেতনা তেমন। বই পড়েন, গান শোনেন, আর দিন গোনেন।রাস্তায় বেরোন না, একমাত্র সঙ্গী গৃহ সহায়িকা রেখা।

সীমা তাঁর কাছ থেকেও গল্পের বই নিয়ে আসতো। পুরনো শহরটার গল্প শুনতো, আর মাসিমা সীমার কাছ থেকে জেনে নিতেন পাল্টানো শহরের ইতিবৃত্ত। 

-নিউ মার্কেট এর পেছন দিকে একটা সিনেমা হল ছিলো। 

-চ্যাপলিন মাসিমা। 

– উঁহু, অন্য কী যেন নাম, মেরী পপিস বলে একটা সিনেমা দেখেছিলাম। 

সীমা জানে না কি নাম ছিল আগে, মাসিমা ই একটু ভেবে বলেন-মিনার্ভা! এখনো সিনেমা চলে ওখানে ?

 সীমা কোনোদিন চ্যাপলিনে যায়নি। মাসিমা চলে যাওয়ার পর চ্যাপলিন উঠে যায়। এক এক করে লাইট হাউস, গ্লোবসবই উঠে গেছে। মাসিমা জানতে পারেননি । ভাগ্যিস। 

বাস এসে যায় সীমার। আজ একবার ছোট পিসির কাছে যাবে সে। ছোট পিসি বাগবাজারের পুরোনো ভাঙ্গাচোরা বাড়িটা আগলে পড়ে আছে। ছেলেরা সব চলে গেছে কলকাতার বাইরে। ছোট পিসি বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবে না।সীমার কাছে এসেও থাকবে না। সীমাই যায়, নিজের ছোট বেলার কথা বলার মত লোক তো আর তেমন কেউ নেই।

বিনি একেবারেই অপুর মত না। ছোট বেলা থেকে বিনি সপ্রতিভ, বিনির অনেক বন্ধু, বিনি হই হই করতে ভালোবাসে ।বাবাকে একমাত্র বিনিই তেমন ভয় পায়না। দু’ একটা ছোট খাটো প্রেম করার পর বিনি আচমকা রজতের প্রেমে পড়লো। রজত পাশের পাড়ায় থাকে, এ পাড়ায় ক্রিকেট খেলতে আসতো । রজতের বাবার ঘড়ির দোকান। রজত পড়াশোনায় ভালো না, এ পাড়া ও পাড়ায় খেলে বেড়ায়। বিনি তখন ক্লাস ইলেভেন, রজতের সঙ্গে এখানে সেখানে দেখা যেতে লাগলো তাকে ।

-তোমার মেয়ের কথা জানো কিছু? জয়ত্তর বৌ ওকে কাল- 

-এই বয়েসে এসব হয়। ভুলে যাবে। 

-এত ছেলে থাকতে রজত? ভালো ক্রিকেট খেলা টা একটা যোগ্যতা?

 ভোলেনি বিনি, বাড়ি থেকে পালাতে চেয়েছিলো, ধরা পড়ে যায়। বাবা বিয়ে দেন অর্ণবের সঙ্গে। পারিবারিক ব্যবসা,বিনি সুখে থাকবে। বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে বিনি সুটকেস হাতে ফিরে এসেছিলো । বাবা রেগে বিনিকে প্রায় সেদিনই ফেরত পাঠাচ্ছিলেন। 

-আমি যাবো না বাবা! এত কথা বলে কোনো লাভ নেই। ওই বাড়িতে আমি থাকতে পারবো না, ইনফ্যাক্ট ওরাও চায়না আমি থাকি।

-কি এমন করলি তুই যে এই কদিনের মধ্যে তোকে ওরা- 

-সেটা ওদের ই জিজ্ঞেস করো না! আমি বললে তোমাদের তো কিছুই বিশ্বাস হয়না। আর তাছাড়া এই বিয়েটা তোআমি করতে চাইনি। তখন শুনেছিলে? 

বিনি শান্ত মুখে অপুর ঘরে ঢুকে পড়ে। বাবা খানিক টেচামেচি করে ভেতরে চলে যান।

 বিনি অপু কে বলেছিলো সব, শুধু বলেনি সে কদিনের মধ্যেই আবার বাড়ি ছাড়বে।

-দাদা, তুই এখনো বাবা কে বলিস নি?কবে বলবি?

-বাবা কে তুই কিছু বলে বোঝাতে পেরেছিলি? চাকরি টা পেলে বলবো।

-তাহলেই হয়েছে, তোর দ্বারা কিছুই হবে না।

 সত্যি বলেছিলো বিনি। অপু বাবাকে বলতে পারেনি। চাকরিও হয়নি, বাবা নানা জনকে বলে একটা ফ্যাক্টরিতে ক্লার্কের কাজ করে দিয়েছিলেন। সে কারখানাও বন্ধ হয়ে যায়। অপু উত্তর কলকাতা থেকে বাসে প্রতিদিন যাদবপুরের কাছে গিয়ে নামতো। তারপর হেঁটে যেত ফ্যাক্টরিতে। দক্ষিণ কলকাতা তার চিরকালই অচেনা লাগে। মানুষ জনও কেমন অন্য রকম। অপু খেয়াল করেছে ধর্মতলা পেরোলেই হঠাৎ করে চারপাশটা কেমন অন্য রকম হতে শুরু করে।উত্তর কলকাতা সব সময়েই বড্ড অবহেলিত থেকে গেছে বলে মনে হয় তার। মলিন, স্যাঁতস্যাঁতে। কারখানায় কাজে আসতো সমীরদা, অলক বারাসাত থেকে, ওদের সঙ্গেই বেশি কথা হত অপুর। কারখানা লকআউট হয়, অপুর চাকরি যায়।অলকদের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি কোনোদিন। শুনেছে ওখানে নাকি শপিং মল হয়েছে। অপু যায়নি আর কখনো। ইচ্ছেই করেনি। এত জন শ্রমিক তার সঙ্গেই কাজ হারিয়েছিলো, কী হয়েছিলো তাদের? অপু জানে না! 

 সীমার আজ একটু দেরী হয়েছে, সোমবার দেরী হওয়াটা ঠিক নয়, তবু আজ সকালে একবার ডাক্তারের কাছে না গেলে চলতো না। কদিন ধরেই গোড়ালিতে একটা ব্যথা হচ্ছে। কাজ করতে করতে আচমকা সীমার চোখে পড়েএক গোছা সাদা খাম বাতিল চিঠির জায়গায় রাখা। কৌতুহল হয় সীমার, খামের ওপর একটা নাম, ঠিকানার জায়গায় গোরাবাজার। সীমা কি ভেবে জঞ্জালের মধ্যে থেকে চিঠিগুলো নিয়ে নেয় ব্যাগে। তারপর কাজে মন দিতে পারেনা একদম। 

-পার্থ দা আজ একটু আগে চলে যাবো। মাথা টা ধরেছে।

-মাঝে মাঝে ছুটি নাও। অনেক ছুটি জমেছে তো!

-বাড়িতে বসে থাকতে ভালো লাগে না পার্থ দা!

ফিরে আসে সীমা, আজ একটা উবার নিয়েছিলো, কোনদিন নেয় না,বাসে লোকজনকে দেখতে দেখতে ফিরতেই ভালো লাগে তার। আজ ফেরার তাড়া ছিলো। বাড়ি ফিরে ব্যাগ থেকে চিঠিটা বার করে, পড়ে সীমা। অপুর দিনলিপি, অপুর যন্ত্রণা, অপুর প্রেম, অপুর আফসোস এক টানা পড়ে যায় সীমা। অপু লিখেছে, 

-বাবা বিনির চলে আসার পর থেকেই কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলেন। আমিও তোমার সঙ্গে দেখা করে আসার পর বাবার ওপর রাগেই বোধহয় ভালো ব্যবহার করিনি। এক মাসের মধ্যে বাবার সেরিব্রাল হল। হাসপাতালে ছিলেন চারদিন।আমি বাবাকে বলতে পারিনি তোমার কথা । আমি পারিনি, কিন্তু বিনি পেরেছিলো। বিনি হঠাৎ একদিন বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। কোথায় গেল কিচ্ছু বলে গেল না। মা-কে একটা চিঠি লিখে গেছিলো, আর আমায় পরে একটা অচেনা নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ করে। বলেছিল আমি ভালো আছি। বলেছিলো তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে।আমি পারিনি। কেন পারিনি নিশ্চয়ই তুমি জানো। বিনি ফেসবুকে আমার একটা অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিল। আমি প্রথমেই তোমাকে খুঁজেছিলাম। পাইনি। তুমি একেবারে হারিয়ে গেলে? 

সীমা পড়ে, আর অপুর একটা চেহারা বানিয়ে ফেলে মনে মনে। অপুর সারা সপ্তাহের কথা রুদ্বশ্বাসে পড়ে ফেলে সীমা। চিঠির শেষে লিখেছে অপু -আমি কতবার ভেবেছি গোরাবাজারে যাবো, তোমার খোঁজ করবো, কিন্তু যাইনি ।গিয়েই বা কী করতাম? আজ এই পর্যন্ত থাক। আবার লিখবো। ভালো থেকো।

 সীমা চিঠিটা একটা বাক্সে পুরে রাখে খুব যত্নে। আর অপেক্ষা করে পরের সোমবারের, প্রতি সোমবার ই আসে এই চিঠি, আর বাতিল কাগজের বাক্স থেকে সীমা সে চিঠি সবার অলক্ষ্যে ঝটপট পুরে ফেলে তার ব্যাগে।

সীমা আর অপুর মধ্যে একটা অদৃশ্য যোগাযোগ তৈরি হয়। অপু লেখে তার কথা, সীমা পড়ে। শুধুই কি পড়ে? সে ফেসবুকে খোঁজে অপুকে।অপরেশ রায়-পায়, কিন্তু কোনো ছবি তো নেই। সীমা জানে অপুর পাড়ার খোঁড়া কুকুরটার নাম বুচুন,অপুদের উঠোনে অশ্বথ গাছ গজিয়েছে। এ-ও জানে অপুর মা ইদানীং ভুলে যাচ্ছেন অনেক কিছু। অপুকে বিনি মাঝে মাঝে মেসেজ করে সেকথাও জানে সীমা। একটা চিঠি বারবার পড়ে। এই তো সেদিন অপু লিখেছিলো-

আজ মা-র শরীর ভালো নেই, তাই রান্না করেনি, কিছু তো খেতে হবে, রান্নাঘরে ঢুকেই পড়লাম সাহস করে। ইউটিউবে আজকাল অনেক রকম রেসিপি পাওয়া যায়। কিন্তু সে সব জিনিষপত্র রান্নাঘরে ছিলো না।

অপু লিখেছে কেমন করে সে একটা তরকারি বানিয়েছে। সীমা হাসে, অপু লিখেছে খেতে ভালো হয়েছিলো, মা-ও বলেছে নাকি। সীমা একদিন অপুর মত করে বানিয়ে ফেলে সেই রকম তরকারি। একা একা খায় আর বলে আমারটাও ভালোই হয়েছে। 

অপুর আর আজকাল তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করেনা। হাঁটে কিছুক্ষণ ফেরার পথে, সন্ধের সময় এই পুরোনো শহরটাকে বেশি ভালবাসতে ইচ্ছে করে। কলেজ স্কোয়ারের পাশ দিয়ে, বইপাড়া পেরিয়ে সূর্য সেন স্ট্রিট, আরো কিছুটা হাঁটাহাঁটি করে তারপর বাড়ি। আগে রাস্তায় এই সময় হাঁটলে চারদিক থেকে নানা রকম রেডিওর শব্দ ভেসে আসতো।কে খবর শুনছে, কেউ গান, কেউ আবার বাজনা। কেউ শুনছে খেলার কমেন্টারি। মিলেমিশে শব্দকল্প তৈরি হত একটা। এখন মাঝে মধ্যে সিরিয়ালের আবহ আর চেঁচামেচি শোনা যায়। কমেন্টারি কেউ শোনে এখন? খেলাও তো কত বদলে গেল। টেস্ট দ্যাখে কেউ আর? টি-টোয়েন্টির যুগে? অপু হাঁটে। শীত পড়বে কদিন পর, অদ্ভুত ধোঁয়াধোঁয়া একটা সন্ধে। অনেক কিছুই পাল্টেছে শহরের, আবার এক রকম থেকে গেছে অনেক কিছু। যেমন এই ছাতিমের গন্ধটা । আগেও এরকম সময়ে ছাতিমের গন্ধে ভরে থাকতো চারদিক, এখনো থাকে । তমালীর অ্যালার্জি ছিলো ছাতিমের গন্ধে। এই কথাটাই মনে পড়লো আজ। আজকাল মনে হয় আর কত লিখবে সে তমালীকে? ক্রমে কথাও তো শেষ হয়ে আসবে। তখন কী করবে অপু? একটা বাড়ির ভেতর থেকে গান ভেসে আসছে …. তোমার মহাবিশ্বে কিছু হারায় নাতো কভু … কিছু হারায় না তবে?

 -এত তাড়া করো কেন আজকাল বাড়ি ফেরার সীমা দি? কি করবে বাড়ি ফিরে, সিরিয়াল দেখবে?

সীমা হাসে। – আমি সিরিয়াল দেখিনা রে! চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি। 

-ওমা কেন? আমি তো দেখি। বেশ লাগে। বলে অনিন্দিতা, সীমার পাশের চেয়ারে বসে। সীমার থেকে সামান্য ছোট হবে, খুব হাশিখুশি, গল্প করতে ভালবাসে ।

-এমনিই।

-কী করবে বাড়ি গিয়ে তাহলে?

-পড়বো।

 ব্যাগ গুছিয়ে উঠে পড়ে সীমা। অনিন্দিতাকে বলা হয়না সিরিয়াল দেখে তার মনে হয়েছে কত কী ঘটে সিরিয়ালে,এত কিছু ঘটে নাকি সত্যিই, কারোর জীবনে? রোজই ঘটে? সীমার মত হয়না জীবন? কতদিন হয়ে গেছে কিছুই ঘটেনা। এমন নিস্তরঙ্গই তো হয় জীবন, সিরিয়ালে তো সেসব দেখায় না! 

এভাবেই কাটে কিছুদিন, অপু লেখে, সীমা পড়ে। সীমা অপেক্ষা করে অপুর চিঠির, অপু জানতেও পারেনা । শীত পড়ে, চলে যায়, সীমা আরো একটু বেশি চিনে ফেলে অপুকে । অপু আরো একটু বেশি গুটিয়ে গেছে ততদিনে । সীমা জানে তার মতই আরো কেউ কেউ আছে, একলা মানুষ, বাতিল সময়ের মানুষ। 

সীমা ঠিক করে অপুকে দেখবে একবার, খুব ইচ্ছে তার। কিন্তু কী করে দেখবে? সে তো ঠিকানা জানে না। হিসেব কষে মনে মনে, সোমবার চিঠি পায় সীমা, তার মানে চিঠিটা ডাকবাক্সে ফেলা হয় শনিবার বা রবিবার, অপুর চিঠিতেই লেখা ছিলো চিঠিটা সে রাতে, মানে ভোরবেলা পোস্ট করে। সীমা আবার ভালো করে পড়ে পুরোনো চিঠি, এতদিনে অনেক চিঠি জমে গেছে। সমাধান পেয়ে যায়-শনিবার ভোর রাতে চিঠি পোস্ট করে অপু।

সীমা শনিবার ভোর রাতে যাবে পোস্ট অফিসে । বুকের মধ্যে একটা কী যেন হয়ে চলেছে। কেন হচ্ছে এরকম?জানে না সীমা। তার মতই আরেকজন বাতিল মানুষ, খানিকটা বাতিল সময়, তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য এত ইচ্ছে কেন হচ্ছে তার? সীমা জেগে থাকে সারারাত। 

অপুর ঠান্ডা লেগেছে খুব, সে কথাও লেখে চিঠিতে। ডাক্তারের কাছে যাবে। অপুর জ্বর হলে বিনির কথা মনে হয়।বিনি অপুর জ্বর হলে সারারাত জেগে থাকতো। অপুর মনে হয় বিনির সঙ্গে আবার রজতের যোগাযোগ হয়েছিল, বিনি রজতের কাছেই চলে গেছে। মনে হয়, আসলে এমনটা ভাবতে ভালো লাগে তার। আসলে বিনি ভালো আছে, বিনি পেরেছে এটুকুই স্বস্তি তার কাছে। তমালীও তো সুখে আছে, ভালো আছে।

জ্বরে গা পুড়ে যায় অপুর। চিঠিটা খামে ভরে মাথার কাছে রেখে আর চোখ খুলে রাখতে পারেনা। জ্বরের ঘোরে তমালীকে দেখে অপু, তমালী রিক্সায় বসে আছে, রিক্সার ছাউনিটা তার মাথার চারদিকে চালচিত্রের মত হয়ে আছে। হাসছে তমালী, বলছে-ভালো আছি, অপু। তুমি কেমন আছো? 

সীমা পোস্ট অফিসের উল্টোদিকে বসে আছে। অন্ধকারে। দুটো কুকুর পায়ের কাছে গুঁড়ি মেরে শুয়ে। অনেক মায়া চারদিকে। অপেক্ষা করে সীমা, অনন্ত অপেক্ষা। আলো ফুটবে একটু পরেই। তবে কি অপু এসে চলে গেছে? দেখাহবে না? দীর্ঘশ্বাস ফেলে সীমা । উঠে পড়ে, ফিরে যাবে । ঠিক তখনই রাস্তার বাঁকে জ্বরের ঘোরে টলতে টলতে এসে দাঁড়ায় অপু। এগোয় ডাকবাক্সের দিকে। সীমা দেখতে পায় তাকে । অপু চিঠি বাক্সে ফেলে আবার টলতে টলতেই ফেরার পথ ধরে। সীমা দুই পা এগিয়েও থমকে যায়। থাক বরং। অপু চলে যাচ্ছে ফুটপাত ঘেঁষে, সীমা যতদূর দেখা যায় দেখে, তারপর বাসস্ট্যান্ডের দিকে হাঁটা লাগায়। উবারে এসেছিলো, ফিরবে আবার সেই বাসেই। 

বাড়ি ফিরে অপু জ্বরে আর উঠতেই পারেনা সেদিন। মা বাড়িতে ডাক্তার আনার ব্যবস্থা করেন। 

সীমা সেদিন রাতে ফাউন্টেন পেন টায় কালি ভরে, তারপর লিখতে বসে, চিঠি। অপু-কে। ঠিকানা জানা নেই। খামেরওপর লিখবে অপরেশ রায়। উত্তর কলকাতা । সীমা জানে এ চিঠি কোনোদিন অপুর কাছে পৌছোবেনা। তবু লেখে, তার কথা, তার দিনলিপি।

সীমা অফিস যাওয়ার পথে একটা পোস্ট অফিসের ডাকবাক্সে চিঠিটা ফেলে দেয়। এক মায়াময় হাসি তার মুখে।

আরো একটা বাতিল মানুষের লেখা বাতিল চিঠি পড়ে থাকবে পোস্ট অফিসের কোণায়। অথবা এ চিঠি কুড়িয়ে নেবেঅন্য কেউ। যে চিঠির কোনো বিশেষ ঠিকানা নেই।

.

লেখক পরিচিতি – অদিতি মজুমদার একজন দক্ষ চিত্রনাট্যকার।’এক আকাশের নিচে’,’এখানে আকাশ নীল’,’জিও কাকা’র চিত্রনাট্য লিখেছেন।

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *