শীত মানেই তাপমাত্রা কম, বাতাসে আর্দ্রতা কম আর ত্বক ও দেহ দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়। তাই শীতের দিকে এসে রূপচর্চায় একটু বেশি যত্ন নেওয়াই ভালো। বিশিষ্ট আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে নিচের কিছু অভ্যেস আজ থেকেই শুরু করতে পারেন:
১. নিয়মিত তেল- শরীর ও ত্বকের জন্য সোনার মতো দামি
এক গ্লাস গরম জল দিয়ে তেল ( যেমন তিলের তেল / নারকেল / বাদাম তেল ) একটু গরম করে নিন। শরীর জুড়ে হাত, পা, কনুই, হাঁটু, গলা, মাথা,সার্কুলার বা লম্বা হালকা ম্যাসাজ দিন। ১০–১৫ মিনিট পরে ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করুন।
কারণ? শীতকালে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল দ্রুত কমে যায়। তেল ম্যাসাজ ত্বকে গভীর তাপ ও ময়েশ্চার ফিরিয়ে এনে, আপনাকে ড্রাইনেস ও ফ্ল্যাকনেস থেকে রক্ষা করে। একই সঙ্গে রক্ত চলাচল ভালো হয়, ত্বক নরম থাকে।
২. নরম, প্রাকৃতিক ক্লেনজার এবং হালকা ফেস মাস্ক ব্যবহার করুন
শীত হলে শক্ত ফোম-সাবান বা কড়া ক্লেনজার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল খুব দ্রুত তুলে দেয় — ফলে ত্বক ফেটে-সেকটে যায়। তাই সাবান পরিবর্তে হালকা অলিভ / নারকেল / গুলর জল / দুধ / অ্যালোভেরা-ভিত্তিক ক্লেনজার বা মুখ ধোয়ার জেল ব্যবহার করুন। সপ্তাহে ১–২ বার হালকা হার্বাল স্ক্রাব বা ফেস প্যাক দিন — যেমন ঘরোয়া (বেসন + হলুদ + দুধ/গোলাপ জল/গোলাপ জল +স্যান্ডালউড)। মৃত ত্বক বের হবে, ত্বক হবে মসৃণ ও উজ্জ্বল।
৩. ভিতর–থেকে যত্ন: জল , খাবার ও হিউমিডিটি
শীতকালে গরম জল বা হার্বাল চা (জানু, তুলি, দারুচিনি, তুলসি) বেশি পান করুন — ঠান্ডা শরীর ও শুষ্ক ত্বক থেকে রক্ষা পাবার জন্য।
আপনার রোজের ডায়েটে একটু তেল, ঘি, বাদাম, গরম মসলা (দারুচিনি, আদা, জিরা) রাখুন, এগুলো ত্বক, চুল ও পুরো শরীরকে ভিতর থেকে ময়েশ্চারাইজড রাখে। যদি সম্ভব হয় ঘরের ভেতরে হিউমিডিটি একটু বাড়ান, বা স্নানের পরে হালকা লোশন/তেল লাগান, যাতে ত্বক শুষ্ক না হয়।
৪. হাত, কনুই, হাঁটু, ঠোঁটের বিশেষ যত্ন নিন।
শীতকালে শুধু মুখ বা শরীর নয়; হাত, কনুই, হাঁটু, পা, ঠোঁট যাতে শুষ্ক না হয়, এইগুলোকে নিয়মিত তেল বা ময়েশ্চারাইজার দিন। এবং গোসল বা হাত ধোয়ার পর তৎক্ষণাৎ লোশন লাগান — যাতে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল না হারায়।
৫. স্ট্রেস-কম, আরামদায়ক ঘুম ও সহজ জীবনব্যবহার
শরীরের ভিতরের ভারসাম্য (মানসিক শান্তি) বজায় রাখাই প্রকৃত সৌন্দর্যের ভিত্তি। ধ্যান, প্রাণায়াম, নিয়মিত ঘুম, শীতল মন এগুলো ত্বকের উজ্জ্বলতা ও স্বাস্থ্যকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। শীত মানেই বাড়তি সতর্কতা, কিন্তু তার মানেই বড় বাজেট বা জটিল রূপচর্চার দরকার নেই। বরং, কিছু ঘরোয়া, প্রাকৃতিক ও নিয়মিত অভ্যেস যদি আপনি অনুসরণ করেন ,যেমন প্রতিদিন একটু তেল ম্যাসাজ, হালকা ক্লেনজিং, সঠিক স্বাস্থকর ডায়েট, এবং শেষে আরামদায়ক ঘুম তাহলে শীতেও আপনার ত্বক থাকবে নরম, উজ্জ্বল ও মসৃণ।
বিউটিশিয়ান শর্মিলা সিং ফ্লোরার টিপস –
৬.গোড়ালি ফাটা – অলিভ অয়েল,সাদা ভিনিগার সমান পরিমাণে মিশিয়ে কাঁচের শিশিতে রেখে দিন।শুতে যাওয়ার আগে অল্প মিশ্রণ পায়ে ভালো করে মাসাজ করে মোজা পরে নিন।পা নরম থাকবে।যদি শীত পড়ার বেশ কিছু আগে থেকে শুরু করতে পারেন তাহলে শীতে গোড়ালি ফাটবেই না।এছাড়া সপ্তাহে ১দিন পাকাকলা চটকে তার সঙ্গে এক চামচ মধু আর কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে গোড়ালি আর পায়ে লাগাতে পারেন।১৫মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলবেন।
৭. কনুই আর হাঁটু– আটার ভুসি বা চালের গুঁড়োর সঙ্গে টকদই মিশিয়ে এই জায়গাগুলোয় ঘষুন।এখানে ডেড সেলস বেশি জমে।তাই এর ওপরে যাই মাখুন না কেন ,ফাটবেই,শুকিয়ে যাবেই।তাই ডেড সেলস তুলে ফেলা প্রয়োজনীয়।এরপর প্রতিদিন এখানে একটু নারকেল তেল মালিশ করুন।খুব ভালো কাজ করে দুধের সর বা মাঠা।এছাড়া সপ্তাহে একদিন মধু আর লেবুর রস মিশিয়ে লাগাতে পারেন।
তথ্য ঋণ – আয়ুর্বেদ ওয়েলনেস সেন্টার,আয়ুর্বেদিক সূত্র,কর্মা আয়ুর্বেদ, বিউটিশিয়ান শর্মিলা সিং ফ্লোরা।
শেয়ার করুন :





