সুমন্ত্র মিত্র
ভারতের আসন্ন ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস পূর্তির সময় আমরা স্মরণ করছি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিস্মরণীয় আত্মত্যাগ,জীবন পণ করে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অমানুষিক,অকল্পনীয় দুর্নিবার দুঃসাহসিক এমন কিছু অগ্নিকন্যার কথা যাঁরা আজ উপেক্ষিতা ,বিস্মৃতির অন্তরালে।একে ইতিহাসের পরিহাস,আমাদের সকলের অতলান্তিক ক্ষমাহীন লজ্জাও বলা যেতে পারে বিশেষত যখন সমাজ মাধ্যম, টেলিভিশন, সংবাদপত্রে খবর এবং প্রচারের দৈনিক প্রবল উদ্দীপনা,একটি খবর প্রকাশ হওয়ামাত্রই সেটা মুহূর্তের মধ্যে নন্দিত অথবা নিন্দিত হয়ে ভাইরাল হওয়ার সময়ে আমরা ,আত্মবিস্মৃত এবং বেশ খানিকটা আত্মঘাতী বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামে এমন বহু চিরস্মরণীয় প্রণম্য বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী দীপ্তিময়ী নারীদের অতুলনীয় দুঃসাহসী নির্ভীক আত্মাহুতির কথা। স্বাধীনতা সংগ্রামে দীপ্তিময়ী নারী বলতে মাতঙ্গিনী হাজরা ,প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার,কমলা চট্টোপাধ্যায়,সরোজিনী নাইডু বীণা দাশ এমন দুই,চার বড়ো জোর ১০ জনের নামের পর আর কতজনের নাম আমরা জানি? এমন অনেক অগ্নিকন্যাকে যে আমরা ভুলে গেছি এটি আমাদের বাঙালি জাতির লজ্জা। বিশেষ ভাবে মনে রাখতে সেই সময়ের কথা,যেখানে মেয়েদের শিক্ষা,বাড়ি থেকে বেরোনো,রক্ষণশীল পরিবার,আর্থিক অনটন,সামন্ততান্ত্রিক সমাজ, পুরুষতন্ত্রের পাহাড়প্রমাণ বাধা পেরিয়ে দেশকে স্বাধীন করতে পথে নেমেছিলেন।সুহাসিনী গাঙ্গুলির মতন নারী যখন সামান্য দুর্ঘটনায় আহত হয়ে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন (২৩/৩/১৯৬৫) তখন তাঁর পাশে কোনও আত্মীয়,বন্ধু,রাজ্য,রাষ্ট্র কেউ ছিলেন না ।হরিদ্বারের গঙ্গার ঘাটে ‘বেওয়ারিশ লাশ’ হয়ে ভেসে থাকা বীণা দাসের দেহকে তাম্রপত্র আর স্বাধীনতা সংগ্রামীর ভাতা দিয়ে ঢেকে ফেলা যায় না।

ইন্দুসুধা ঘোষ
ইন্দুসুধা ঘোষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন 1905 সালে মযনমনসিংহে।দেশ ঢাকা জেলার বজ্রযোগিনীতে।ময়মনসিংহ বিদ্যাময়ী স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস্,শান্তিনিকেতনের কলাভবনে আচার্য নন্দলাল বসুর ছাত্রী,1926 সালে বিপ্লবী যুগান্তর দলের কর্মীদের প্রভাবে রাজনৈতিক সংগ্রামে যুক্ত হন ।নিষিদ্ধ পুস্তিকা,রিভলভার রাখা এবং সংগঠন করার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।1932 সালে স্টেটসম্যান-সম্পাদক ওয়াটসনকে গুলি করার ষড়যন্ত্র মামলার পলাতক কর্মীদের আশ্রয়দান করেন।পালিয়ে জলপাইগুড়ির সামসিং চা বাগান থেকে গ্রেপ্তার,প্রেসিডেন্সি ও হিজলি জেলে আটক,1937 সালে মুক্তি পাওয়ার পর 1938 সালে এলাহাবাদ মিউনিসিপাল মহিলা শিক্ষাভবনে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে 9 বছর কাজের পর 1948 সালে ‘নারীসেবা সংঘ’সমাজ সেবা প্রতিষ্ঠানের আবাসিক সুপারিন্টেন্ডেন্ট হয়ে কলকাতায় এসে 30 বছর ভালো শিক্ষক তৈরি,অবহেলিত মহিলাদের বাঁচার রসদ জোগানোর কাজ করেন ।চলে গেছেন ২৪/৯/৯৫ সালে।

উজ্জ্বলা মজুমদার (রক্ষিত রায়)
১৯১৪ সালে ২১শে নভেম্বর ঢাকা শহরে জন্ম।পিতা সুরেশচন্দ্র মজুমদার, ঢাকা জেলার কুসুমহাটির জমিদার এই পরিবার সাহসে ও দাক্ষিণ্যে প্রসিদ্ধ ছিল।পিতা সুরেশচন্দ্র বিপ্লবীদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। উজ্জ্বলার ১৪ বছর বয়সে তাঁর বাবা কলকাতা থেকে ঢাকা শোর অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনে নিজে মেয়ের কোমরে অস্ত্র লুকিয়ে ঢাকা চলে যান।পরে ,’বি,ভি’ বিপ্লবী দলে যোগদান।তখন এদেশের নারী প্রত্যক্ষ সংগ্রামে নেমে পড়েছেন,শান্তি,সুনীতি ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে নিহত করেছেন,বীণা দাস সিনেট হলে গভর্নর জ্যাকসনকে গুলি করেছেন,প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার শহীদ হয়েছেন।’বেনু,”চলার পথে,”স্বাধীনতা’ পত্রিকা প্রভৃতি বই বিপ্লবের পথে আত্মহুতি দেবার জন্য যুব বাংলাকে আহ্বান জানাচ্ছিল তাতে উজ্বলা প্রভাবিত ও উদ্দীপ্ত হন।১৯৩৪ সালের মে মাসে পুলিশের সমস্ত সতর্কতা এড়িয়ে কয়েকটি তরুণ-তরুণী দার্জিলিং পৌঁছলেন একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে।দার্জিলিঙের স্নো-ভিউ হোটেলে উঠলেন উজ্জ্বলা মজুমদার এবং মনোরঞ্জন ব্যানার্জি এবং জুবিলী স্যানেটোরিয়ামে ভবানী ভট্টাচার্য এবং রবি ব্যানার্জি।খবর পেয়েছিলেন যে গভর্নর ফ্লাওয়ার শোতে আসবেন ,কিন্তু সেখানে উপস্থিত হয়েও ‘কাজ’ সমাধা হলোনা।পরের স্পট লেবং ঘোড়দৌড়ের মাঠ।৮ই মে ১৯৩৪,স্যানিটোরিয়াম থেকে দামি ইউরোপীয় পোশাকে ভবানী ভট্টাচার্য এবং রবি ব্যানার্জি,তাদেরকে ফলো করছেন উজ্জ্বলা ও মনোরঞ্জন।উজ্জ্বলার চোখে হাই পাওয়ার চশমা আর রঙিন শাড়ি।পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবানী ভট্টাচার্য ও রবি ব্যানার্জি গভর্নরের কাছাকাছি রিভলবার নিয়ে যাওয়ার সময়েই উজ্জ্বলা আর মনোরঞ্জন স্থান ত্যাগ করে ট্রেনে উঠে বসলে ততক্ষণে ভবানী ভট্টাচার্য ,রবি ব্যানার্জির আগ্নেয়াস্ত্র গর্জে উঠেছে। শিলিগুড়ি স্টেশনে যখন পুলিশ হাই পাওয়ার চশমা উজ্জ্বল শাড়ির মেয়ে গ্রেপ্তার করতে এসে চশমা ছাড়া এক সাদা শাড়ি পড়া বিধবা মেয়েকে দেখে ফিরে গেলেও পরে ভবানীপুরের শোভারানী দত্তের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।প্রথমে কার্শিয়াং জেল ,পরে দার্জিলিং জেল। স্পেশাল ট্রাইবুনালের মামলায় ভবানী ভট্টাচার্য,রবি ব্যানার্জি,মনোরঞ্জন ব্যানার্জির ফাঁসি এবং উজ্জ্বলা মজুমদারের ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ হয়।এর পর উজ্জ্বলার বিভিন্ন জেলে কেটে যায় ৫বছর।মহাত্মা গান্ধীর প্রচেষ্টায় ঢাকা জেল থেকে ১৯৩৯ সালের এপ্রিল মাসে মুক্তি পান ।মুক্তির পর তিনি ‘ফরোয়ার্ড ব্লক’দল গঠনে অগ্রসর হন।নোয়াখালীর দাঙ্গাবিধ্বস্ত অঞ্চলে সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।১৯৪৭ সালে শরত্চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে সোশ্যালিস্ট পার্টিতে যুক্ত হন ।ইতিমধ্যে জেলের মধ্যে বি.এ ,মুক্তির পর বি.টি পাস করেন।বারাসাতে অনুন্নত শ্রেণী অধ্যুষিত গ্রামে’পল্লী নিকেতন’ স্থাপন এবং এর মধ্যে দিয়ে সমাজসেবার কাজ করেন ।১৯৪৮ সালে বিপ্লবী সাহিত্যিক ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায়ের সঙ্গে বিবাহ হয় এবং ২৫শে এপ্রিল ১৯৯২ সালে চলে গেলেন।

সৌদামিনী পাহাড়ী
মেদিনীপুরের ভগবানপুর থানা এলাকার বিজয়নগরের বাসিদ দ্বারকানাথ পাহাড়ীর মেয়ে সৌদামিনীর জন্ম ১৮৮৬ সালে।এগরা থানার নগেন্দ্রনাথ পাহাড়ীর সঙ্গে বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই অকাল বৈধব্যে বিষণ্ণ জীবন থেকে সৌদামিনীর দাদা পাশে এসে দাঁড়ালেন,দেখালেন মুক্তির স্বপ্ন,স্বাধীনতার জন্যে সংগ্র্যাম্পের স্বপ্ন ।নগেন্দ্রনাথের পরিবার সমস্তরকম বাধা বিপত্তির সৃষ্টি করলেও আদর্শকে আত্মস্থ করতে দাদার সহায়তায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।সৌদামিনী সুন্দর গান গাইতেন,অসাধারণ বক্তৃতা দিতেন,তর্ক-বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। ১৯৩২সালে ১২ই মার্চ (আইন অমান্য আন্দোলনে)প্রথম মিছিলে নেতৃত্ব দেন,ভগবানপুর থানা এলাকার দরগা লবন কেন্দ্রে পৌঁছোন।লবন সত্যাগ্রহের পর সেই সন্ধ্যায় বাসুদেব বেড়িয়ায় সভায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। ২৭মার্চ ১৯৩২ মিছিল নিয়ে জোব্দা গ্রামে যান ,১৫ই মে এগরা থানার দুব্দা গ্রামে আরও বড় পথসভার পর দৃপ্ত বক্তৃতা করেন।১৯৩২ সালে কাঁথির দারুয়া ময়দানে ‘কাঁথি মহকুমা রাষ্ট্রীয় সম্মেলন’।সেখানে পুলিশ জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলতে এলে সৌদামিনী এমন শক্ত মুঠোয় ধরে থাকেন যে পুলিশ ক্ষান্ত হয়,৪ঠা জুলাই এগরা বাজারে বন্দি দিবস পালনের নেতৃত্বকালে পুলিশ গ্রেপ্তার করে,এই বছরেই গাইডিসেম্বর কাঁথি সাবডিভিশনাল রাষ্ট্রীয় সমিতির বাগবাজারে সভাস্থলে পৌঁছনোর সময় পুলিশ বাধা দেয় ও গ্রেপ্তার করে ।সৌদামিনীর বিচার ঐতিহাসিক ছিল,দীর্ঘ কথোপকথনের সময় তিনি বিচারককে বলেন,’আইন ভাঙলে আপনারা যাহাকে খুশি গ্রেপ্তার করতে পারেন কিন্তু মহিলাদের পুলিশ খারাপ কথা বলিতে পারে এমন আইন কি আছে ?মহিলা হিসেবে আমি আপনার মাতৃতুল্য, আপনার ঘরে মা-বোন নাই ?জনতার ওপর লাঠি দিয়ে প্রহার করা হয় কোন আইনে ?’,স্তম্ভিত বিচারক মেনে নেন,নিরস্ত্র জনতাকে সরানোর জন্য লাঠি চালানোর আইনে কোনও সমর্থন নেই।তবু সৌদামিনীর প্রশ্নবানে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েও বিচারক বাধ্য ছিলেন কুখ্যাত ম্যাজিস্ট্রেট ডি.এন সেনের মুখরক্ষা করতে ফলে ৬মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিলেন,তাঁকে আনা হলো মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে।এরপর কী হল?কেউ জানেনা ,তাঁর পরিবার ব্রাহ্মণ ঘরের বিধবার এই দুঃসাহসিক কাণ্ডের পর তাঁকে মেনে নেয়নি।আর ইতিহাস?সেও নীরব থেকে গেছে ।

সুখদাময়ী রায়চৌধুরী
১৯০৭ সালে মেদিনীপুরের পটাশপুর গ্রামে বৈকুন্ঠ বেরা ও স্বর্ণলতা বেরার কন্যা সুখদাময়ীর জন্ম। তখন কে অনুমান করেছিল পরে এই মহিয়সী ইংরেজ শাসকদের জন্য জ্বালাময়ী হয়ে উঠবেন?
সেই সময়ের রীতি অনুযায়ী মাত্র ১১ বছরে বাল্যগোবিন্দপুরের আশুতোষ রায়চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ।সেই সময়ে কাঁথিতে এসেছিলেন প্রখ্যাত গান্ধীবাদী নেতা নিবারণ দাশগুপ্ত,তাঁর মেয়ে বাসন্তী দেবী ও বন্ধুর মেয়ে উর্মিলা দেবীর সঙ্গে .’নারী কর্মী শিক্ষা দপ্তর’ প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। ইংরেজ শাসনের প্রতিরোধের লক্ষ্যে মেয়েদের প্রস্তুত করাই এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল।যদিও এই কাজে তাঁকে প্রচন্ড পারিবারিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়।তা স্বত্তেও জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সভা,সমিতি, পিকেটিং, মিছিলে যোগ দিতে শুরু করেন।খেজুরি,পটাশপুর,ভগবানপুর অঞ্চলের গৃহবধূ ও অন্যান্য মহিলাদের দেশের স্বাধীনতার কাজে যোগ দেওয়ার জন্য সংগঠিত করেন,১৯৩২ সালের ১৫ই মার্চ তাঁর এবং কুঞ্জবালা দাসের নেতৃত্বে এক বিরাট জনসভা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ,পরে ২৩শে মার্চ বাঁকি বাজারের সভায় জ্বালাময়ী ভাষণ দেওয়ার পরে পুলিশের টনক নড়ে সুখদাময়ীকে নোটিশ পাঠানোয় ৩১শে মার্চ তিনি ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠিতে লিখলেন,’…যে গভর্ণমেন্ট জাতির পোষণ না করিয়া নিষ্ঠুরভাবে মনুষ্য সমাজে ঘৃণিত ও লজ্জাজনক দমননীতি প্রয়োগ করে সে গভর্ণমেন্টের নীতি পালন করা পাপ।…আমি অর্ডিন্যান্স পাওয়ার পর থেকে সারদাবার পানিয়া বে-আইনি কংগ্রেস কমিটির সভ্যা হিসেবে কংগ্রেস ও স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্য করিয়াছি,করিতেছি,ও করিতে থাকিব।… আমি আগামী ৪ঠা এপ্রিল গান্ধী-দিবস উপলক্ষে কাঁথি মহকুমার পটাশপুর থানার বাল্যগোবিন্দপুর গ্রামে ৪টার সময় একটি সাধারণ সভায় বক্তৃতা দিব ।আপনাকে অবগত করাইলাম।ইতি,বিনীতা-সুখদাময়ী রায়চৌধুরী ।
দুহাজার নারী পুরুষের উপস্থিতিতে নির্দিষ্ট দিনে ও স্থানে সেই সভা হয়েছিল ।পুলিশ এল,সভা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করল।সুখদাময়ী গ্রেপ্তার হলেন,ঠাঁই হলো মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে,৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড।১৪ই ডিসেম্বর ছাড়া পাওয়া পর আবার ১৯৩৩ সালের ৩১শে মার্চ গ্রেপ্তার,প্রেসিডেন্সি জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর গান্ধীজির দোভাষী সতীশচন্দ্র দাশগুপ্তর ‘খদ্দর ভাণ্ডারে’দু মিস থাকার পর সেলাই ও হাতের কাজ শিখতে কলকাতার বাণী ভবনে যোগদান।গ্রামে ফিরে রায়চৌধুরী দম্পতি একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেন যা এখনো আছে ‘বাল্যগোবিন্দপুর জ্ঞান-ধর্ম বিদ্যাপীঠ নামে।১৯৪২ সালে নদিয়ায় গিয়ে যোগ দেন ‘কস্তুরবা গান্ধী সেবিকা ট্রেনিং ক্যাম্পে ।এখানে গ্রামের মহিলাদের হস্তশিল্প,নার্সিং ইত্যাদি শিখিয়ে তাঁদের জীবনযাত্রায় উন্নয়ন করার চেষ্টা করা হত।এখানে ছাড় বছর থাকার পর ত্রিপুরাতে গঠনমূলক কাজে গিয়েছিলেন।১৯৮৮ সালের পর থেকে সুখদাময়ীর জীবন কাহিনী আমাদের অজানা রয়ে গেছে,এ বছুর জুন মাসে তিনি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন । তারপরের কথা হারিয়ে গেছে ।

মায়া ঘোষ
গণিতের প্রসিদ্ধ অধ্যাপক ,বীজগণিত প্রণেতা কে.পি.বসুর দৈহিত্রী মায়া ঘোষের জন্ম দিল্লিতে ১৯১৫সালের ২২শে এপ্রিল ।মা প্রিয়ম্বদা দেবী মায়ার দুবছর বয়েসে অকালে চলে গেলে মায়াকে কে,পি,বসুর স্ত্রী মাতামহী মেঘমালা দেবী মানুষ করেন। মেঘমালা দেবীর ভাই অতুলকৃষ্ণ,অমরকৃষ্ণ ,বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখার্জির সংস্পর্শে মায়া জ্ঞান হওয়া অবধি বিপ্লবী আবহাওয়ার সঙ্গে পরিচিত হন।একদিন কংগ্রেস নেত্রী মোহিনী দেবী মায়াকে জিজ্ঞেস করলেন জেলে যেতে রাজি কিনা,সোৎসাহে রাজি হয়ে মিছিলে যোগদান করায় পুলিশ লালবাজারে নিয়ে গিয়েও ছেলেমানুষ বলে ছেড়ে দেয়।বাবা বিয়ের চেষ্টা করলে অনশন শুরু করলে বিয়ের চেষ্টা ব্যর্থ হল।বিপ্লবী রসিকলাল মায়াকে পরিচয় কোরালের ‘মন্দিরা’ পত্রিকার সম্পাদিকা কমলা দাশগুপ্তর সঙ্গে।মায়া মন্দিরে কাজ করতে থাকেন পরিপূর্ণ আগ্রহ ও আন্তরিকতার সঙ্গে।১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৪২ সালে বাড়ির অমতে স্কুলের শিক্ষয়িত্রীর কাজ জুটিয়ে বীরভূমের রামপুরহাটে নিজের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের প্রস্তুতিতে ।স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রী হিসেবে কাজ করতে করতে বীরভূমের গ্রামের অভ্যন্তরে সম্প্রদায় নির্বিশেষে জনসাধারণের কাছে কংগ্রেসের আদর্শ প্রচার করতে থাকেন।এর মধ্যে মহকুমা শাসকের যুদ্ধ তহবিলে স্কুলে সিনেমার টিকিট বিক্রির নির্দেশ অমান্য করলেও চাকরি যায়নি তাঁর।এর পর প্রভাসিনী চক্রবর্তীদের নিয়ে সিনেমা হলে কংগ্রেসের বুলেটিন বিলি করেন,৩১শে অগাস্ট ত্যানা দখল করা স্থির হয়,মহকুমা-শাসক,ফৌজদারি আদালত বন্ধ করে দিয়ে মায়াঘোষের নেতৃত্বে কর্মীবাহিনী সিভিল করতে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে এলেন।আদালতের বারান্দায় বসে থাকার সময় পুলিশ এসে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে,সাবিত্রী গান্ধী,সন্ধ্যারানি সিংহের সঙ্গে গ্রেপ্তার হলেন। নিয়ে যাওয়া হয় সিউড়ি জেলে,সাজা হয় এক বছর দশ মাস সশ্রম কারাদণ্ডের।১৯৪৪ সালে বেরিয়ে পঞ্চাশের মন্বন্তরের জন্য রিলিফের কাজ করতে চলে যান বীরভূমের বিভিন্ন গ্রামে।১৯৪৫ সালে কস্তুরবা ট্রেনিং নিতে বোম্বে চলে যান,১৯৪৬ সালে নোয়াখালি দাঙ্গার পর রিলিফের কাজ করেন,ফিরে এসে সাঁইথিয়ার একটি দুই ক্লাস যুক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষয়িত্রীরূপে যোগদান করেন।
তথ্যসূত্র- নির্বাচিত অংশ – স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী -কমলা দাশগুপ্ত,মুক্তি সংগ্রামে বাংলার উপেক্ষিতা নারী -সোনালী দত্ত।অগ্নিযুগ গ্রন্থমেলা – র্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন।
শেয়ার করুন :