বাংলা সিনেমার সুদিন ? -

বাংলা সিনেমার সুদিন ?

সাম্প্রতিক মুক্তি পাওয়া বাংলা ছবির রিপোর্ট কার্ড।

কমলেন্দু সরকার

হেডিংয়ে জিজ্ঞাসার চিহ্ন কেন! এ আপনাদের জিজ্ঞাস্যও হতে পারে কিংবা বিস্ময়। তাই এই চিহ্নটিই অনেক বুঝেসুঝে রাখলাম। আসলে আমার এক একদা সিনেমাপ্রেমী বন্ধু সেদিন সান্ধ্যবাসরে তার অভিজ্ঞতা ভাগ না করলে জিজ্ঞাসার চিহ্নটি রাখতাম কিনা ভেবে দেখতাম। যাক ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে লাভ কী! বন্ধুটি সেদিন একটি বাংলা ছবি দেখতে যায়, গিয়ে দেখে চলতি শোয়ের টিকিট নেই। পরের শোটিরও গুটিকয়েক টিকিট পড়ে আছে। সে তড়িঘড়ি করে একটি টিকিট কাটে।

ছবির নাম কি? জানতে চাইছেন? থাক, ছবির নাম নাইবা বললাম। ইদানীং বেশ কয়েকটি বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে। প্রায় প্রতিটি ছবিই কোটি টাকার ওপর ব্যবসা করেছে। বছর পঁচিশ আগে একটি বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছিল। এককোটি টাকার কম খরচে ছবি শেষ করলেও প্রায় আড়াই কোটি টাকার ওপর ব্যবসা করে। ছবিটি পঁচিশ বছর পর আবার পুনর্মুক্তি পেল ক’দিন আগে। এতক্ষণে ধরে ফেলেছেন কোন ছবির কথা বলছি। হ্যাঁ, পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তীর ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’।

২০২৫-এর প্রথম মাস পাঁচেকের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছবি কোটি টাকার ওপর ব্যবসা করেছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে এ বছরের সবচেয়ে বড় খবর টলিউডের তিন নায়িকা বলিউডে গিয়ে প্রথম সারির নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। ‘পেয়েছিলেন’ শব্দটি প্রয়োগের কারণ হল তাঁরা এখন আর নায়িকা নন। যাইহোক, জনপ্রিয় এই তিন বাঙালি নায়িকা আবার টালিগঞ্জে এসে ছবি করলেন। এই তিন নায়িকা হলেন— শর্মিলা ঠাকুর, রাখি গুলজার এবং মৌসুমি মুখোপাধ্যায়।

শর্মিলা অভিনীত ‘পুরাতন, রাখি অভিনীত ‘আমার বস’ দুটি ছবিই কোটি টাকার ওপর ব্যবসা দিয়েছে তবে  মৌসুমির ‘আড়ি’ আড়ালেই রয়ে গেল তেমন সাফল্য এল না বক্স-অফিসে।

সুমন ঘোষের ‘পুরাতন’, নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘আমার বস’, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’ এবং ‘কিলবিল সোসাইটি’র বক্স-অফিস সাফল্য এসেছে। পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘এই রাত তোমার আমার’ও বক্স-অফিস খারাপ ছিল না, ভালই ব্যবসা করেছে। এই ছবিতে অন্যতম মূল আকর্ষণ ছিলেন অপর্ণা সেন।

তবে সবাইকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছে, এগিয়ে চলেছে পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ‘দি একেন বেনারসে বিভীষিকা’। তবে ‘একেন’-এর বর্তমানে Brand value তৈরি হয়েছে। সূত্রের খবর, ছবিটি নাকি ছ’কোটি টাকার ওপর ব্যবসা করেছে। তবে সবাইকে অবাক করেছে পরিচালক সৌরভ পালোধীর ‘অঙ্ক কি কঠিন’। ছবিটি নাকি চলছে ভালই।

আবার ‘বিনোদিনী একটি নটীর উপাখ্যান’ শুরুটা ভাল করলেও পরের দিকে নাকি পিছিয়ে পড়েছে। অনেকেই বলছেন ‘সোনার কেল্লায় যখের ধন’-এর অবস্থা একইরকম। ওই এগোনো-পিছনোর খেলা চলছে!

একটা সময় ছিল প্রযোজক পরিবেশকেরা তাকিয়ে থাকতেন গরমের ছুটি, পুজো, বড়দিনের ছুটি ইত্যাদির দিকে। এখন কলকাতায় ভীষণ গরম পড়ছে। হাতের কাছে সিনেমাহল নেই। অর্থাৎ সিঙ্গল স্ক্রিন নেই। যেতে হবে মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে। পকেট ফাঁকা করা টিকিটের দাম। তবুও সিনেমাপ্রেমী দর্শকেরা যাচ্ছেন। যতগুলো ছবি মুক্তি পাচ্ছে তার মধ্যে অনেকগুলো ছবিই ব্যবসা ভাল করছে, বক্স-অফিস সফল হচ্ছে মন্দ কী! তবে অনেকেরই মত (যাঁরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক), এই বক্স-অফিস সাফল্যের মধ্যে অনেকটাই নাকি জল আছে। তা থাকুক, সেসব তো আর সর্বক্ষেত্রে নয়। বাংলা ছবির সুদিন ফিরছে এ কম কথা নাকি!

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *