সময় বদলাচ্ছে। কাব্যে উপেক্ষিতার’ মত এতদিন পৌরোহিত্য উপেক্ষিত ছিলেন নারীরা।,নারী উপাসনা,পুজোর কাজে মেয়েদের অংশগ্রহণের সঙ্গে প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে গিয়ে বৈবাহিক অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য শুরু করেন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের সংস্কৃত অধ্যাপিকা গৌরী ধর্মপাল। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের তাঁর ছাত্রী নন্দিনী দেবী,রুমা রায় এঁরা ওনার দেখানো পথে শুরু করে আজকের ‘শুভমস্তু ‘ দলে যোগ দিয়েছেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সেমন্তী ব্যানার্জি আর পৌলমী চক্রবর্তী। ‘শুভমস্তু’ সাংস্কৃতিক শব্দের অর্থ ‘সকলের মঙ্গল হোক’।
প্রসঙ্গত মহিলা পুরোহিত নিয়ে কিছুকালের একটি মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মোটি’র কথা মনে আসা অপ্রাসঙ্গিক নয়।.
সার্বজনীন দূর্গা পুজোয় এই প্রথা ভাঙা নিয়ে ৬৬ পল্লীর অন্যতম কর্মকর্তা প্রদ্যুম্ন মুখোপাধ্যায় জানালেন ওনাদের সাবেকি পুরোনো পুরোহিত শ্রী তরুণ ভট্টাচার্য্য প্রয়াত হওয়ার পর পৌরোহিত্যের ক্ষেত্রে বদল আনার কথা ভাবেন পুজো কমিটি।সেই সুবাদে শুভমস্তুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রাথমিক দ্বিধা দ্বন্দ কাটিয়ে ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে’ এই মহাযজ্ঞের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন ওনারা।নিঃশব্দে,সর্বগ্রাসী প্রচারের আড়ালে এত বড় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপের জন্য ৬৬ পল্লী পুজো কমিটি এবং ‘শুভমস্তুর’ এই চার মানবকন্যাকে সশ্রদ্ধ অভিবাদন।বিশ্বস্তসূত্রে আর একটি আনন্দসংবাদ পূজামন্ত্রের সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীতে প্রাঙ্গন ভরে উঠবে।
১৭৯১,মতান্তরে ১৭৬০ সালে হুগলির গুপ্তিপাড়ায় ১২ জন ব্রাহ্মণ বন্ধু চাঁদা তুলে দুর্গাপুজো করেন, সেই থেকে বারোয়ারি পুজোর চল শুরু। কোনও একটা বাড়ির পুজোয় তাদের অংশ না নিতে দেওয়ায় ক্ষোভে, প্রতিবাদে তাঁরা এ কাজ করেছিলেন বলে জানা যায়। কলকাতায় এ ধরনের পুজো প্রথম করেন কাশিমবাজারের রাজা হরিনাথ ১৮৩২ সালে।
২০২১ সালে কলকাতার ৬৬ পল্লীর প্রখ্যাত সার্বজনীন দুর্গাপুজার পৌরোহিত্যে মহিলাবৃন্দ,এই দুর্দান্ত দৃষ্টান্ত যে একটি মাইলফলক হতে চলেছে সে বিষয়ে সম্ভবত কোনও সন্দেহ নেই। মহিলা বাস, উবের, অটো ড্রাইভার,ঢাকি আমরা সাম্প্রতিক অতীতে প্রতক্ষ্য করলেও মহিলা পুরোহিতবৃন্দ দুর্গাপুজোয় পৌরোহিত্য নিঃসন্দেহে অভিনব,সাহসী, নারীশক্তির উন্মেষের একটি দৃপ্ত পদক্ষেপ।
মনে করতে ইচ্ছে করছে ওনারা যখন পুজোর বেদিতে উঠছেন তখন মাইকে বেজে উঠছে ‘পবিত্র জানি যে তুমি পবিত্র জন্মভূমি,মানবকন্যা আমি যে ধন্যা প্রাণের পুণ্যে ভরা।আমি তোমার মাটির কন্যা…’
শেয়ার করুন :