গত ১০ মাস ধরে বিপর্যস্ত,বিদ্ধস্ত এই সময়ে ভালো থাকা একটা বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে পৃথিবীজোড়া বিশেষজ্ঞরা আমাদের সবাইকে ডিজিটালি ভাল থাকতে বলছেন যার পোশাকি নাম ডিজিটাল ওয়েলবিইং।
ডিজিটাল ওয়েলবিইং বলতে অনেক ডিজিটাল কেয়ার প্রোগ্র্যাম যাতে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রচুর বিষয় ইনফরমেশন আর কমিউনিকেশন টেকনোলজির মাধ্যমে ডাক্তার,ক্লিনিক্যাল এক্সপার্ট ও সাধারণ মানুষদের,যে কোনও ট্রিটমেন্টে থাকা রোগীদের খুব সাহায্য করে যেমন টেলিমেডিসিন,স্মার্ট ওয়াচ যেমন ফিটবিট,স্যামসাং গ্যালাক্সী ফিট টু,এম এই ব্যান্ড যাতে আপনি দিনে কতটা হাঁটলেন,কত ক্যালোরি খরচ হলো,হার্ট বিট এই সব আপনার হাতের ঘড়িতে। এ ছাড়াও ডিজিটাল ওয়েলবিইং এর একটি প্রধান বিষয় হল ফোন টাইমিং অর্থাৎ দিনে আপনি,আপনার পরিবারের সবাই কত ঘন্টা ফোন নিয়ে বসে আছেন এবং তার জন্য কতটা বিপদ এবং ঝুঁকি নিচ্ছেন আর আপনি নিজে ও আপনার পরিবারের কেউ যে ফোন অ্যাডিকশন সিন্ড্রোমে ভুগছেন কিনা।
গার্ডিয়ান এডুকেশন,হেল্থলাইন,ডায়াগনিস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকাল ম্যানুয়াল মেন্টাল ডিসঅর্ডার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ :
আপনি নিজে অথবা আপনার পরিবারের বিশেষত বাচ্চা,ইয়ং কেউ ফোন অ্যাডিক্ট কিনা কি করে বুঝবেন ?
- ঘুম থেকে উঠেই ফোন চেক করা।
- কিছুক্ষণ ফোন ছাড়া থাকলেই অস্থির অধৈর্য্য হয়ে ওঠা।
- অ্যাংজাইটি,অস্থিরতা বেড়ে যাওয়া।
- মুড্ সুইং।
- মনোঃসংযোগে ব্যাঘাত।
- অফিসের,বাড়ির,পড়াশোনার কাজ সময়ে শেষ করে না উঠতে পারা।
- বন্ধু,পরিবারের থেকে দীর্ঘসময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া।
- ভুল করে কিছুক্ষণের জন্য ফোন ছাড়া বেরোলেই ভয়ঙ্কর টেনশন।
- বেশি রাত করে ফোন ঘাঁটার জন্য স্লিপ ডিসঅর্ডার।
- আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া।
- বেশিক্ষণ ফোন ছাড়া থাকলেই রাগ,বিরক্তি।
রিসার্চে প্রমাণিত ফোন অ্যাডিকশনের কারণে ডিপ্রেশন,স্ট্রেস,একাকিত্ব বাড়ে আর আমাদের অজান্তে আমরা এইসবের থেকে পরিত্রাণ পেতে সেই ফোনকেই আঁকড়ে ধরি, অনেকটা স্ট্রেস বাড়লে বেশি সিগারেট খাওয়ার মত।
ফোন অ্যাডিকশন মুক্তির উপায়:
- এখন ডিজিটাল ওয়েলবিইং এ ফোন আওয়ার্স মনিটর করার অনেক অ্যাপ বেরিয়েছে।প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিন। অ্যাকশন ড্যাস,ডিজিটক্স,ইওর আওয়ার ট্রাই করতে পারেন।
- বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে আপনার বাচ্চারা,ইয়ং অ্যাডাল্টরা শুনে শেখার থেকে দেখে শেখায় বেশি শেখে আর বোঝে তাই সবচেয়ে আগে নিজের ফোন আওয়ার কমান কারণ আপনি নিজে ফোন নিয়ে ব্যস্ত আর ছেলেমেয়েদের ফোন অ্যাডিকশন নিয়ে বকাঝকা করাটা সমীচীন হবেনা আর কোনও কাজে আসবে না।
- নিজেকে একটা শিডিউলের মধ্যে থাকা শুরু করুন।
- পুশ নোটিফিকেশন ,মেসেঞ্জার,হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ নোটিফিকেশন সাউন্ড অফ করে রাখুন।
- (খুব কঠিন) রাতে বিছানায় ফোন নিয়ে যাবেন না। প্রথম প্রথম অসম্ভব মনে হবে,প্রথমে এক দিন,তারপর দুদিন এমন করে চেষ্টা করুন।
- নিজের ফোন টাইম ঘন্টা ধরে ধীরে ধীরে কন্ট্রোল করুন।সাত-আট ঘন্টা থেকে পাঁচ-ছয়,পাঁচ-ছয় থেকে তিন-চার এমন। প্রথমে এক সপ্তাহে তার পর এক মাসের ট্রায়াল দিয়ে দেখুন কতটা কমাতে পারলেন।
- বিছানার পাশে ফোন চার্জ করবেন না।
- বাড়ি ফিরে ফোন নিজের কাছে না রেখে দূরে রাখুন।
- খাবার টেবিলে ফোন ব্যান।সবার জন্য।নিয়ম করে।সবচেয়ে আগে বড়রা করে দেখান তার পর ছোটদের ভাল করে বুঝিয়ে বলুন।
- সপ্তাহে ১ দিন প্রথমে এক বেলা পরে পুরো দিন ফোন ধরা আর প্রয়োজনে করা ছাড়া ফোন ফ্রি থাকার চ্যালেঞ্জ নিন।
মনে রাখবেন হঠাৎ করে কিছু আমূল পরিবর্তন হবে না আর সেটা করার কোনও প্রয়োজনীয়তাও নেই। প্রথমে অ্যাপ ডাউনলোড করুন,এই বিষয়টা বাড়ির সকলের সঙ্গে সহজ ভাবে আলোচনা করুন,খুব ভাল হয় ‘আপনি আচরি ধর্ম’ নিজে উদাহরণ হন।
এই ভয়ঙ্কর প্যানডেমিকে সবার বিশেষত ইয়াং টিনেজার্সদের মেন্টাল কন্ডিশন খুব ফ্র্যাজাইল আর টেন্সড তাই তাদের একদম না বকা ঝকা করে শান্ত ভাবে বুঝিয়ে,তাদের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটিয়ে ফোন অ্যাডিকশন কমাবার চেষ্টা করুন।দেখুন না তাদের জেনারেশনের পছন্দমত সিনেমা,গান তাদের সঙ্গে,কি মহাভারত অশুদ্ধ হবে?বড়জোর আপনার ভাল লাগবে না,কিন্তু আপনার ছেলেমেয়ের খুব ভাল লাগবে।এটা আপনার বেটার হাফের সঙ্গেও করে দেখুন,ভাল লাগবে,কাজেও লাগবে।
স্টিভ জোবস নিজের সন্তান দের শিশুকালে আই প্যাড ব্যবহার করতে দেন নি আর বিল গেটস তার সন্তানদের ১৪ বছর বয়সের আগে সেল ফোন ব্যবহার করতে দেন নি এই দুটি খবর জানতেন?
সোর্স বলা বারণ,বেহালায় এক ভদ্রলোক থাকেন,একটু ক্রিকেট খেলেছেন,এখন ক্রিকেট বোর্ডে আছেন,উনি বাড়িতে মাঝে মাঝেই নিজের মেয়ের পাশে গিয়ে চুপ করে বসে থাকেন,সঙ্গে থাকেন আর তখন খুব জরুরি না হলে ফোন ব্যাবহার করেন না,কিছু বলেন না সেটা নাকি ওঁর মেয়ের খুব ভাল লাগে যে এত ব্যস্ত বাবা আমার সঙ্গে বসে আছে।মাঝে মাঝেই নামি ইউনিভার্সিটি থেকে ওনার ডাক পড়ে,লিডারশিপ আর ম্যান ম্যানেজমেন্ট স্কিল নিয়ে কথা বলার জন্য।
নিজের ফোন টাইম কমান,চেষ্টা করুন এই গাইডলাইন্স মেনে একসঙ্গে থেকে গল্পগুজব,আড্ডা মেরে আপনার ফ্যামিলির ফোন টাইম কমানোর তাতে সবাই এই বিপর্যয়কালে ভাল থাকবেন।
আর একটি জরুরি কথা। অতিরিক্ত,শরীর ও মনের পক্ষে ক্ষতিকর ফোন টাইম কমানোর কথা বলা হয়েছে,বন্ধ করতে বা প্রয়োজনীয় ব্যাবহার করতে বারণ করা হয়নি।
ছবিঃ ডি এন এ ইন্ডিয়া, ইকনমিক টাইমস।
শেয়ার করুন :