ধনতেরাস প্রথা পালন ও যাপন এই কিছুদিন আগেও বাঙালি বাড়িতে ব্যাপক ছিল না । কাল পরিবর্তনে এখন ধনতেরাসের সময় সোনা,রুপো,অন্যান্য ধাতুর জিনিসপত্র কেনার ধুম পড়ে যায়।
ধন অর্থাৎ ধনসম্পত্তি আর তেরাস অর্থাৎ ত্রয়োদশীর দিন। কার্তিক মাসে কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীর দিন পালিত হয় ধনতেরাস উৎসব।
এই তিথিতে দেব চিকিৎসক ‘ধন্বন্তরি’র পুজো করা হয় যা এই করোনাকালেও হয়তো কিছুটা আড়ালে। ধন্বন্তরি’,দেব চিকিৎসক। পুরাণমতে সমুদ্রমন্থনের সময় প্রথমে ধনসম্পদের দেবী মা লক্ষী ধবল ক্ষীর ও পারিজাত ফুল নিয়ে উঠে আসার পাশে ‘ধন্বন্তরি’ উঠে আসেন।হাতে ছিল স্বেত কমুণ্ডল পূর্ণ অমৃত।
(সূত্র:মহাভারত,আদিপর্ব,সপ্তদশ-অষ্টাদশ অধ্যায়)।বিষ্ণুধৰ্মেত্মর গ্রন্থমতে এই ধন্বন্তরি সুদর্শন পুরুষ, চতুর্ভূজ,শ্যামবর্ণ,পীতাম্বর,সুবর্ণখচিত মুকুটধারী।চারহাতে শাঁখ, অমৃতভাণ্ড, অথর্ববেদ, জোঁক আর গুল্মলতা।
মহর্ষি ভরদ্বাজের থেকে সমুদয় আয়ুৰ্ব্বেদশাস্ত্রে জ্ঞান প্রাপ্ত হয়ে, তিনিই প্রথম আয়ুর্বেদশাস্ত্রকে অষ্ট প্রকারে বিভাগ করে শিষ্যগণকে দান করলেন ।“(চরক সংহিতা)। সেই হিসাবে ধন্বন্তরি যথার্থ বৈদ্য ছিলেন।
ধনতেরাস নিয়ে পৌরাণিক কাহিনী হল,রাজা হিমার ১৬ বছরের ছেলের কোষ্ঠিতে ছিল বিয়ের চার দিনের মাথায় সর্পাঘাতে তার মৃত্যু হবে।এদিকে বিয়ে তো হল,রাজপুত্রের স্ত্রী খুব বুদ্ধিমতী ছিল,বিয়ের চারদিনের মাথায় সে তার সঙ্গে নিয়ে আসা আর সব গয়না,হিরে জহরত,মূল্যবান পাথর দরজার সামনে সাজিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখে স্বামীকে গল্প শোনাতে থাকে।সাপ এসে দরজার সামনে এত সোনা গয়না দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায় আর সারারাত গয়নার ওপর বসে ভোরে চলে যায়/এইভাবে স্বামীর প্রাণরক্ষা করেন স্ত্রী।
প্রচলিত প্রবাদ অনুযায়ী ধনতেরাসের দিন ধনসম্পদের দেবী মা লক্ষী ভক্তের মনোবাসনা পূর্ণ করতে তাদের বাড়ি আসেন।এই উপলক্ষ্যে এই সময় সারা বাড়ি পরিষ্কার করে প্রদীপ, আলোয়, রঙ্গোলি,মা লক্ষীর পায়ের ছাপ এঁকে সাজানো হয়।এই দিন মা লক্ষীর সঙ্গে ধন্বন্তরিরও পুজো হয়।
দীপাবলিতে প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক।প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী সন্ধ্যে থেকে সারারাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলে ঘরে মা লক্ষী আসেন। এই দিন অর্থ,সমৃদ্ধি উন্নতিকল্পে লক্ষ্মী ও কুবের-এর পুজো করা হয়।এই দিনই কুবের মা লক্ষীর পুজো করে ধনপতি হন।
‘যাক অবসাদ বিষাদ কালো,দীপালিকায় জ্বালাও আলো’।
শেয়ার করুন :