ল্যামিনেটস একধরণের জনপ্রিয় ইন্টেরিয়র ডেকোর মেটেরিয়াল যা দেওয়াল এবং বাড়ির সারফেসের ফিনিশে ব্যবহার করা হয়।ল্যামিনেটস অত্যন্ত ফ্লেক্সিবল হওয়ার কারণে ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনে সবচেয়ে পছন্দের মেটিরিয়াল কারণ সুদৃশ্য ,কারুনৈপুণ্য এবং সাশ্রয়ী।ইন্ডাস্ট্রিয়াল,ডোমেস্টিক এবং অন্যান্য রিক্রিয়েশনাল পরিবেশে বেশিরভাগ মানুষ ল্যামিনেটস পছন্দ করেন।সেই কারণে ল্যামিনেটসের বিপুল বিশাল বৈচিত্র ও সম্ভার থেকে আপনি আপনার আগামী বাড়ি উন্নত করে সাজানোর প্রচুর রসদ পেয়ে যাবেন।
আজকাল বেশিরভাগ সুরুচিপূর্ণ বাড়িতে কাবার্ডস আর কিচেনে ল্যামিনেটসের প্রচলন বেড়ে চলেছে ।অন্দরসাজে আকর্ষণীয়তা বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে আর বাড়ির নান্দনিক সৌন্দর্যবৃদ্ধি করে।এই ব্লগে ইন্টেরিয়রে কাবার্ডস আর কিচেনে ল্যামিনেটসের ব্যবহার সম্পর্কে জানাব,কোন ধরণের ল্যামিনেটস আজকাল বেশি জনপ্রিয় আর এর মেন্টেনেন্স কিভাবে করবেন যাতে দীর্ঘদিন এর সৌন্দর্য আর ঔজ্বল্য নতুনের মতন থাকে।
ল্যামিনেটস বলতে কী বোঝায় ?
ল্যামিনেট একধরণের আর্টিফিশিয়াল সারফেস মেটেরিয়াল যাতে অনেক ধরণের লেয়ার যেমন অ্যাক্রেলিক ভার্নিশ আর ফাইব্রোয়াস উড দিয়ে জোড়া হয়।সিন্থেটিক অর্নামেন্টাল ল্যামিনেটস রিউজেবল অথবা রিসাইক্লেবল পলিমার্স দিয়ে তৈরি হয়।ল্যামিনেটস প্যানেলস হল একটা ফ্ল্যাট লেয়ার্স যা মূল ফাউন্ডেশনের ওপর ,বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্লাইউডের ওপর লাগানো হয় যাতে সেই বস্তুতে কাঠিন্য আর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
ল্যামিনেটসের রকম সকম
আমাদের পৃথিবী দিনে দিনে আরও সপ্রতিভ,হাল ফ্যাশন এবং প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে সেই অনুযায়ী আপনাকেও আপডেটেড থাকতে হবে।এর সঙ্গে আপনার থাকার জায়গাকে নিশ্চয়ই আকর্ষণীয় করে তুলতে চাইবেন।এই বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নান্দনিক অন্দরসাজ।দুর্দান্ত নজরকাড়া ডেকরের জন্য ল্যামিনেটস সবচাইতে ভালো।জেনে রাখুন কিচেনে ল্যামিনেটস ব্যবহার আজকাল খুব ট্রেন্ডি।
ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেস,সারফেস ফিনিশ ,ইন্টেনডেড ইউজ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট অনুযায়ী ল্যামিনেটসকে প্রধানত ৩ শ্রেণীতে ভাগ করা হয়।
১) হাই প্রেশার ল্যামিনেটস : এক্ষেত্রে অর্নামেন্টাল প্যানেলকে ফিউজ করে একসঙ্গে এলিভেটেড প্রেশার দিয়ে বাউন্ড করা হয়।এই কারণে এরা প্রচুর ওজন বহন করতে সক্ষম এবং সেই কারণে অত্যন্ত শক্তিশালী।
২)কনভেনশনাল অ্যান্ড মিনি ল্যামিনেটস : এগুলি সেলফ রিলায়েন্ট ল্যামিনেটস যার নির্মাণে কোনো অ্যাডিশনাল হার্ডউড অথবা প্লাইউডের প্রয়োজন হয়।
৩) অর্নামেন্টাল ল্যামিনেটস: নামেই বোঝা যাচ্ছে এই ল্যামিনেটস তার দুর্দান্ত দীপ্তি আর সৌন্দর্য আর অ্যাকসেসিবিলিটির জন্য প্রসিদ্ধ যার অসামান্য সুদৃশ্য ডিজাইন,শেপ,রং আর ফিনিশের রূপে মুগ্ধ হতেই হয়।
ল্যামিনেটস ফিনিশ
ল্যামিনেটস ফিনিশ প্রধানত দু’ প্রকার,ম্যাট এবং গ্লস।বাড়ির সুদৃশ্য ইন্টেরিয়র ডেকরেশনের ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হল ম্যাট ল্যামিনেটস না গ্লস ল্যামিনেটস কোনটা ব্যবহার করা হবে তার ওপর নির্ভরশীল।যদিও আজকালকার ট্রেন্ড অনুযায়ী কিচেন এবং কাবার্ডে গ্লস ল্যামিনেটস ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়।বাড়িকে ঝকমকে দীপ্তিমান সৃষ্টিশীল করে তুলতে হাই গ্লস ল্যামিনেটসের জবাব নেই।
কিচেনে হাই গ্লস ল্যামিনেটসই কেন ইন্সটল করবেন জানেন ?
কিচেনের পক্ষে উপযুক্ত ল্যামিনেটস ব্যবহার খুব জরুরি কারণ কিচেনের ফিনিশের সঙ্গে পুরো বাড়ির ইন্টেরিয়রের লে -আউট নির্ভরশীল আর বেমানান হলে তার প্রভাব পুরো বাড়ির ডেকরে গিয়ে পড়বে।গ্লসি ফিনিশ কিচেন ল্যামিনেটস সহজে পরিষ্কার করা যায় যে কারণে ছোটখাট নোংরা দাগ,ময়লাকে অনায়াসে মুছে ফেলা যায়।ছোট মানে আজকের কম্প্যাক্ট হোমসের জন্য আদর্শ কারণ গ্লসি ল্যামিনেটসের প্রতিফলনের সৌজন্যে যে কোনো জায়গাকে আসলের থেকে বড় দেখতে লাগে।এই ল্যামিনেটস কিন্তু কাস্টম কিচেনের জন্য উপযোগী ,পুরো বাড়ির জন্য নয়।
হাই গ্লস ল্যামিনেটস দুর্দান্ত গ্ল্যামারাস প্যানেল তৈরি করে যা সুরুচিপূর্ণ ,উজ্বল,দ্যুতিমান এবং ত্রুটিহীন,নির্ঝঞ্ঝাট পরিষ্কার করে নেওয়া যাওয়ার ফিনিশে উপলব্ধ।এছাড়া বাড়িকে চমৎকার, মহীয়ান সৌন্দর্যসৃষ্টি করে।গ্লসি ল্যামিনেটসের সৌজন্যে রং আর ঔজ্বল্য বাড়িয়ে তোলে যা ঝলমলে স্ফটিকস্বচ্ছ রুপটান তৈরি করে ।এছাড়া গ্লসি ল্যামিনেটসের আর একটি গুণ প্রখর তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে,ক্ষয়ক্ষতি আর অন্যান্য উপদ্রব থেকে রক্ষা করে।
আপনার কিচেন আর কাবার্ডের জন্য ৩ ধরণের গ্লসি ল্যামিনেটস:
১) লুসিডা হাই গ্লস ল্যামিনেটস – এই ল্যামিনেটস সুনিপুণ যত্নে দৃষ্টিনন্দন অন্দরসাজের জন্য ব্যবহার করা হয়।এত ঝলমলে ল্যামিনেটস কিচেনকে সুরুচিপূর্ণ ,শক্তিশালী আর স্ফটিকস্বচ্ছ সারফেসের কল্যাণে অতুলনীয় সুন্দর করে তোলে। আজকের অধিকাংশ বাড়িতে লুসিডা ল্যামিনেটসের জনপ্রিয়তা বেড়ে চলার কারণ এর সুদৃশ্য রূপ,শক্তিশালী গড়ন আর দাগ,ময়লা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ।
২) মিনিমাল হাই গ্লস কিচেন ল্যামিনেটস – এই ধরণের গ্লসি ফিনিশ কিচেন ল্যামিনেটস একটি প্রচলিত প্রবাদের কথা মনে করিয়ে দেয়,’সহজই সেরা ‘।অসাধারণ সুন্দর গ্লসি ফিনিশ হওয়া স্বত্তেও এর দৃশ্যমানতা পরিমিত এবং মার্জিত। এই ল্যামিনেটসের ক্ষেত্রে ‘অল্পেই বেশি’ প্রবাদ প্রযোজ্য।প্রায় প্রত্যেক ডিজাইন স্টাইল আর ফার্ণিচার স্টাইলের সঙ্গে মানানসই।অঢেল রং আর বৈচিত্রে পাওয়া যায় বলে ব্যক্তিগত,স্বতন্ত্র নানান রকম রুচির জন্য আদর্শ।
৩) কিচেনের জন্য অভিজাত প্রাচীন হাই গ্লস কিচেন ল্যামিনেটস -চমৎকার ধ্রুপদী অ্যান্টিক চেহারার কিচেনেট আর ক্যাবিনেটের জন্য ট্যান গ্লসি ফিনিশ ল্যামিনেট পছন্দ করুন।এই পরিশীলিত ডেকরের সৌন্দর্য উপস্থিত সবাইকে আকৃষ্ট করবেই।নিজগুণে,সৌন্দর্যের মহিমায় দৃষ্টিনন্দন হওয়ার জন্য এতে অন্য কিছু যোগ করার প্রয়োজন পড়েনা।এর গিল্ডেড এম্বেলিশমেন্টস গুলি আপনার পছন্দ অনুযায়ী বদলাতে পারেন।
গ্লসি ল্যামিনেটস মেন্টেনেন্স
আর্কিটেকচারাল স্পেসের জন্য আজকাল Interior Design ল্যামিনেটস সবচেয়ে প্রচলিত ও পছন্দের মেটিরিয়াল,দেওয়াল থেকে ফার্নিশিংস,হাই গ্লস ল্যামিনেটস ফিনিশের কিচিনেটস এখনকার টপ ট্রেন্ড।অন্যান্য প্রিমিয়াম মেটিরিয়ালের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে ল্যামিনেটস এদের থেকে কমদামি,অনেক সহিষ্ণু এবং স্থায়ী আর ক্ষয়ক্ষতি,দাগ ময়লা থেকে প্রতিরোধী।এছাড়া নানা রঙে আর ফিনিশে উপলব্ধ।
এখানে উল্লেখযোগ্য,নিয়মিত ব্যবহারের কারণে অন্যান্য মেটিরিয়ালের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম হলেও ক্ষয়ক্ষতি, ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।নিম্নলিখিত পরামর্শ মেনে যত্ন করলে আপনার গ্লসি ফিনিশ ল্যামিনেটস দীর্ঘদিন সমুজ্জল এবং অক্ষয় থাকবে :
- যদিও ল্যামিনেটস অন্যান্য মেটেরিয়ালের তুলনায় বেশি মজবুত এবং সাধারণ ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে সক্ষম ,মনে রাখবেন তীক্ষ্ণ কিছুর আঘাতে কিন্তু এর ক্ষতি হতে পারে।সেই কারণে পরিষ্কার করার এবং ব্যবহারের সময় মেটাল ক্লিনার্স এবং ওই ধরণের কঠোর কিছুর ব্যবহার এবং স্ট্রং ডিটারজেন্ট ব্যবহার না করা।
- একটানা সূর্যের আলো ল্যামিনেটসের ঔজ্বল্য ম্লান করে ক্ষতি করে। এই ক্ষতি এড়াতে একে সরাসরি সূর্যালোক থেকে দূরে রাখুন।
- ল্যামিনেটস দীর্ঘস্থায়ী রাখতে এতে জল বা অন্য কোনো তরল পড়লে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।
- পরিষ্কার করার সময় কখনো স্ক্র্যাবিং প্যাডস ,ব্লিচিং ,ওয়্যার মেশ অথবা টক্সিক ক্লিনজার্স ব্যবহার করবেন না কারণে এতে ওপরের ঝকমকে পালিশ বিবর্ণ হয়ে যাবে।
- আপনার ক্যাবিনেট্র্রীর ল্যামিনেটেড ফিনিশ মেন্টেন করার সহজ উপায় হল নিয়মিত একটি মাক্রোফাইবার স্পঞ্জ দিয়ে মুছে নেওয়া।
- সাধারণত, ল্যামিনেটস থেকে দাগ তুলতে একটা হালকা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে নিন ।
- ব্রাশিং করার পরেও কোনো দাগ রয়ে গেলে সেটা একটা পরিষ্কার টাওয়েল দিয়ে মুছে ফেলুন।
- প্রথমেই ল্যামিনেট সারফেসে ক্লিনজার্স ব্যবহার করবেন না সেটা হালকা ক্লিনজার হলেও কেননা এতে দাগ ধরে যেতে পারে ।প্রথমে একটি অল্প ভেজা ওয়াইপিং টাওয়েল আর ওয়াশিং ব্রাশ দিয়ে ক্লিনিং সলভেন্ট ব্যবহার করুন।
- কিচেন ক্যাবিনেট টপসকে দুর্ঘটনা,বেরঙিন এবং অত্যাধিক তাপের থেকে সুরক্ষিত রাখতে ন্যাপকিন আর শিটস ব্যবহার করুন।
নন স্টিকি হওয়ার কারণে ল্যামিনেটসের ওপর জার্মস,মাইক্রোঅর্গানিজমস জমতে পারেনা,কিন্তু কোনো ক্র্যাক বা মিহি ফাটল হলেই সেখানে কিচেনের তৈলাক্ত বাস্প ঢুকে বিপত্তি বাড়ায়।সেই কারণে এই বিষয়ে নজর দিয়ে মাইল্ড ,ফোমি সলভেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ভারতে বেশ কিছু নির্মাতা হাই গ্লস ল্যামিনেটস ম্যানুফ্যাকচার করলেও ভারতশ্রেষ্ঠ সেঞ্চুরি ল্যামিনেটস Century Laminates সাশ্রয়ী দাম,স্টাইল আর দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে সর্বোত্তম।নানা ধরণের রুচি ও পছন্দের কথা মনে রেখে সযত্নে ,আন্তর্জাতিক মানের পেশাদারি দক্ষতায় তৈরি করা হয়।
শেয়ার করুন :