হার্ট সুস্থ রাখতে ২০টি লেটেস্ট টিপস -

হার্ট সুস্থ রাখতে ২০টি লেটেস্ট টিপস  

জন হপকিন্স হসপিটাল,ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক,মেয়ো ক্লিনিকের কার্ডিওলজিস্টদের পরামর্শ।

১. রোজকার খাবার যেন সুষম ও হার্ট হেলদি ডায়েট হয় যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ (যেমন: কাতলা , রুই),উচ্চ ফাইবারযুক্ত শাকসবজি ও ফল (যেমন: কলা, পেয়ারা, পালংশাক)

পূর্ণ শস্য (ব্রাউন রাইস, ওটস, আটার রুটি),বাদাম ও অলিভ অয়েল।

এড়িয়ে চলুন:ট্রান্স ফ্যাট ,ফাস্ট ফুড, ভাজার তেলে বারবার রান্না করা খাবার,

অতিরিক্ত সোডিয়াম (লবণ) দিনে ৫ গ্রামের বেশি নয়,রেড মিট ও প্রসেসড মিট।

মেডিক্যাল ফ্যাক্ট: উচ্চ চর্বিযুক্ত ও সোডিয়ামযুক্ত খাদ্য কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ বাড়িয়ে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস ঘটায়।

২. রোজ শারীরিক অনুশীলন করুন-সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার (হাঁটা, সাইক্লিং) বা ৭৫ মিনিট উচ্চমাত্রার (দৌড়ানো, সাঁতার) ব্যায়াম করুন।যোগাসন ও প্রাণায়াম হৃদয়ের জন্য উপকারী, বিশেষ করে ব্লাড প্রেসার ও হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

মেডিক্যাল ফ্যাক্ট: ব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় — যা হৃদরোগের প্রধান ট্রিগার।

৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন (হাইপারটেনশন ম্যানেজমেন্ট)

রক্তচাপ নিয়মিত মাপুন (বিশেষত ৩০ বছর বয়সের পর)।

লক্ষ্যমাত্রা: ১২০/৮০ mmHg এর নিচে রাখা শ্রেয়।

উচ্চ রক্তচাপ থাকলে DASH ডায়েট মেনে চলুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ নিন (যেমন ACE inhibitors, beta-blockers)।

মেডিক্যাল ফ্যাক্ট: দীর্ঘস্থায়ী হাইপারটেনশন হার্টের বাঁ দিকে চাপ বাড়িয়ে লেফট ভেন্ট্রিকুলার হাইপারট্রফি তৈরি করে।

৪. রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন

রক্ত পরীক্ষায় দেখুন:

LDL (Bad cholesterol): < 100 mg/dL ,HDL (Good cholesterol): > 50 mg/dL ,Triglycerides: < 150 mg/দল,স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে উচ্চ কোলেস্টেরলে।

মেডিক্যাল ফ্যাক্ট: উচ্চ LDL এবং ট্রাইগ্লিসারাইড ধমনীতে প্লাক জমিয়ে করোনারি আর্টারি ডিজিজ সৃষ্টি করে।

৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন (Glycemic Control)

HbA1c ৭% এর নিচে রাখা শ্রেয়।

মিষ্টিজাত খাদ্য সীমিত করুন, নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ ও ডায়েট/ব্যায়ামে নিয়ন্ত্রণ আনুন।

মেডিক্যাল ফ্যাক্ট: ডায়াবেটিস ধমনির এন্ডোথেলিয়াল স্তর ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।

৬. ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সম্পূর্ণ পরিহার করুন

নিকোটিন ও কার্বন মনোঅক্সাইড ধমনিকে সংকুচিত করে এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।

ধূমপান ছেড়ে দিলে ১ বছরের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি ৫০% কমে যায়।

মেডিক্যাল ফ্যাক্ট: তামাকপানে ফাইব্রিনোজেন বাড়ে, যা রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়ায় এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।

৭. স্ট্রেস কমান ও মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখুন

দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ কোর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার বাড়ায়।

ধ্যান, যোগব্যায়াম ও মানসিক থেরাপি (CBT) কার্যকরী।

মেডিক্যাল ফ্যাক্ট: ক্রনিক স্ট্রেস অ্যারিথমিয়া (হার্টবিটের গড়মিল) তৈরি করতে পারে।

৮. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন (Healthy BMI)

আপনার BMI লক্ষ্য রাখুন: ১৮.৫ – ২৪.৯ আদর্শ।

মধ্যভাগে চর্বি (abdominal obesity) হৃদরোগের সবচেয়ে বিপজ্জনক সূচক।

মেডিক্যাল ফ্যাক্ট: স্থূলতা মেটাবলিক সিনড্রোম তৈরি করে, যার সঙ্গে হৃদরোগ সরাসরি সম্পর্কিত।

৯. নিয়মিত মেডিক্যাল চেক-আপ করুন

বছরে একবার ECG, ECHO বা TMT পরীক্ষা করুন (বিশেষত যাদের ফ্যামিলি হিস্ট্রি আছে)।

৪০-এর পর lipid profile, fasting glucose ও থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট করানো উচিত।

মেডিক্যাল ফ্যাক্ট: বহু হৃদরোগ লক্ষণহীন থাকে, চেকআপেই ধরা পড়ে।

১০. পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন।প্রতিরাতে ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত জরুরি।

ঘুমের ব্যাঘাত (যেমন Sleep Apnea) untreated থাকলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ বাড়ে।

মেডিক্যাল ফ্যাক্ট: Obstructive Sleep Apnea untreated থাকলে atrial fibrillation ও heart failure-এর ঝুঁকি বাড়ে।

১১)বেশি করে শিম,বরবটি খান কারণ এরা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

১২)মুঠোর ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন। হাইপার টেনশন জয়নাল অনুযায়ী টানা ৪ সপ্তাহের মুঠো সঞ্চালন -প্রসারণ ব্যায়ামে ব্লাড প্রেশার কমিয়ে দেয় ১০ %।

১৩)ডিম খান।প্রচলিত ধারণা বেশি ডিম খেলে কোলেস্টরল বাড়ার আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ হচ্ছে ।ডিমের কুসুমে থাকা ভিটামিন ই,বি -১২ এবং ফলেট করোনারি আর্টারিকে পরিষ্কার রাখে।

১৪)নিয়মিত ৩ কিলোমিটার হাঁটলে হার্ট ভালো থাকে এটা প্রমাণিত,প্রায় অনেকেরই জানা কিন্তু এই সুঅভ্যাস নিয়মিত করে হয়ে ওঠে না ।

১৫) চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত প্রাণায়াম করলে হার্ট ভালো থাকবে।

১৬) প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমোতে হবে।যারা অনিদ্রায় ভোগেন তারা অন্যান্যদের তুলনায় ৪৫% বেশি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে থাকেন।

১৭) বেশি ঘুমও কিন্তু হার্টের ক্ষতি করে।ঘুমকাতুরেদের সাবধান করেছেন কার্ডিওলজিস্টরা।দিনে ১০ ঘন্টার বেশি ঘুম ওবেসিটি বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

১৮) রোজের ডায়েটে যতটা সম্ভব ফ্যাট কমাতে হবে।খাবারে থাকা চর্বি হার্টের পক্ষে ক্ষতিকর।

১৯)ডায়েটে যেন পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার থাকে । ডায়েটে থাকুক মুগ,মসুর,রাজমা, চানা,শাক, ব্রকোলি।

২০)প্রতিদিন ২০ মিনিট সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

পরিশেষে:

হৃদয় সুস্থ রাখতে একটি হোলিস্টিক লাইফস্টাইল অনুসরণ করুন — খাদ্য, অনুশীলন, মানসিক প্রশান্তি, চিকিৎসা সচেতনতা ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা মিলেই গড়ে তোলে শক্তিশালী হৃদয়। আপনি সচেতন হলেই পরিবারটিও সুরক্ষিত থাকবে।

আপনার হার্ট আপনার হাতেই, তাই এখন থেকেই  যত্ন নিন ! প্রয়োজনে একজন কার্ডিয়োলজিস্টের পরামর্শ নিন।

*এই নিবন্ধটি সাধারণ তথ্যের জন্য যা কোনোভাবে ওষুধ আর চিকিৎসার বিকল্প নয়। অসুখ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *