শরৎ আসলেই বাঙালির মনে বাজে উৎসবের ঢাক। পুজো মানেই শুধু ঠাকুরদর্শন নয়, প্রতিটি বনেদি বাড়ি আর গ্রামবাংলার আঙিনায় খাবারের গন্ধেই যেন ভরে ওঠে আনন্দের আকাশ। ঐতিহ্যের এই রন্ধনশৈলী শুধু স্বাদের নয়, একেকটা পদে লুকিয়ে থাকে প্রজন্মের গল্প, মায়ের হাতের ছোঁয়া আর পুজোর অপরিহার্য আবেগ। বনেদি বাড়ির খাওয়া-দাওয়া আর গ্রামবাংলার পুজোর বিশেষ পদ মিলিয়ে গড়ে ওঠে এক অনন্য রসনার আসর। এই লেখায় আমরা তুলে ধরছি এমনই ১০টি সেরা পুজোর রেসিপি যা আপনাকে ফিরিয়ে নেবে উৎসবের আসল ঘ্রাণ ও স্বাদে।
রানি রাসমণির বাড়ির রেসিপি:

চিংড়ি পোস্ত
কী লাগবে :চিংড়ি:৫০০ গ্রাম,পোস্ত:৫০ গ্রাম,সর্ষে:৫০গ্রাম,পেঁয়াজ:১টি(বাটা),নুন:স্বাদমতো,চিনি-১ চা চামচ,সর্ষের তেল:৬চামচ,কাঁচালঙ্কা:২টি।
রান্না:মাঝারি মাপের চিংড়ি খোলা ছাড়িয়ে নুন-হলুদ মাখিয়ে রাখুন,পোস্ত,সর্ষে,২টি কাঁচালঙ্কা এক সঙ্গে বেটে নিন।এবার একটা পাত্রে ৩ বড় চামচ সর্ষের তেল নিন।পোস্ত-সর্ষের বাটায় হলুদ,নুন,অল্প চিনি,পেঁয়াজবাটা দিন।কাঁচালঙ্কা চিরে দিতে পারেন।মিশ্রণে চিংড়ি মাছগুলো ঢেলে দিন।দেখবেন মাছ যেন ভালো করে মশলায় মিশে যায়।এবার একটি বড় কৌটোয় সম্পূর্ণ মিশ্রণটি ঢেলে দিন।আবার দেখে নিন মাছ যেন ভালোভাবে মশলায় মিশে যায়।এবারে সেই বড় কৌটোয় এর সঙ্গে সর্ষের তেল দিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন।কড়াইতে জল গরম করুন।জল অল্প গরম হলে মাঝখানে কৌটো বসিয়ে দিন।কৌটোর ওপর ভারী কিছু চাপা দিয়ে রাখুন,সাবধানের মার নেই তাই লক্ষ্য রাখবেন কৌটোর ধার যেন জলে ডুবে না থাকে।২০ থেকে ২৫ মিনিট ভাপে সেদ্ধ হতে দিন।ব্যাস ঢাকা খুললেই রানি রাসমণির বাড়ির চিংড়ি পোস্তর স্বাদগ্রহণ করতে পারবেন।

পুইঁ মেটুলি
কী চাই: পুইঁ মেটুলি-২৫০ গ্রাম,আলু:২টি,বেগুন:১টি,সিম:৫টি,কুমড়ো:১৫০গ্রাম,শুকনোলঙ্কা:২টি,কুচো চিংড়ি:২০০ গ্রাম,সর্ষে পোস্ত বাটা:২ বড় চামচ,নুন ও হলুদ:স্বাদমতো,সর্ষের তেল:৩০/৫০গ্রাম,পাঁচফোড়ন:আধ চা চামচ।
রান্না:পুইঁ মেটুলি ছোট টুকরো করে কেটে নিন।আলু,বেগুন,সিম,কুমড়ো চৌকো করে কেটে নিন।কুছ চিংড়ি খাব হালকা করে নুন হলুদ মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখুন।অল্প তেলে সবজিগুলো সামান্য নুন হলুদ দিয়ে হালকা ভেজে তুলে রাখুন।এবার তেলে সর্ষে,পাঁচফোড়ন,শুকনো লঙ্কা দিন।শুকনো করে রাখা পুইঁ মেটুলি ভেজে নিন।এবার আগে থেকে ভেজে রাখা চিংড়ি মাছ আর আনাজগুলো দিন ও সেদ্ধ করার জন্য হালকা জল মেশান।প্রয়োজনমতো নুন দেবেন।সেদ্ধ হলে সর্ষে পোস্ত বাটা দিয়ে রান্না করুন।রানি রাসমণির বাড়ির পুইঁ মেটুলি রেডি।
লাহা বাড়ি

আনারসি মুরগি
মুরগি-১ কেজি,অনার্স:(টুকরো করা):৩০০ গ্রাম,দই:২০০ গ্রাম,আদাবাটা:২ বড় চামচ,পেঁয়াজবাটা:২ বড় পেঁয়াজ,রসুনবাটা:১ বড় চামচ,এলাচ,লবঙ্গ,দারচিনি-১ বড় চামচ,তেজপাতা:২টি,নুন:স্বাদমতো,ঘি-২চামচ,কুচোনো পেঁয়াজ:২টি,লঙ্কাগুঁড়ো :স্বাদ অনুযায়ী।
রান্না:পেঁয়াজ রসুন দিয়ে চিকেন ১ঘন্টা ম্যারিনেট করুনকরে ঘি দিয়ে পেঁয়াজকুচি ভেজে নিন।পেঁয়াজে হালকা বাদামি রং ধরলে করে ম্যারিনেট করা চিকেন ভালো করে কোষে নিন।মাখোমাখো হয়ে এলে কুকারে মাংস,আনারসের টুকরো,গরম মশলা আর সামান্য জল দিয়ে প্রেশারে বসান।১টি সিটি বাজলে কুকারের ঢাকা খুলে বাকি ভাজা পেঁয়াজ ছড়িয়ে দিন।আনারসের টক টক স্বাদ আর গন্ধে মুরগির যুগলবন্দী জমে যাবে।

সুজির নাড়ু
কী চাই -সুজি:৫০০ গ্রাম,চিনি:৫০০ গ্রাম,ঘি:৫০ গ্রাম,কিশমিশ:১০ /১২ টা,কর্পূর :সামান্য
রান্না:সম পরিমাণ সুজি আর চিনি আলাদাভাবে মিক্সিতে গুঁড়ো করে নিন।কড়াইতে ঘি দিয়ে সুজি অল্প আঁচে ভাজুন।এমন ভাবে ভাজুন যাতে করে সুজি পুড়ে না যায়।লালচে ভাব হয়ে এলে চিনি গুঁড়ো দিয়ে দিন।ভালো ভাবে নাড়তে থাকুন।কিশমিশ আর সামান্য কর্পূর দিয়ে নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিন।ঠান্ডা হয়ে গেলে হাতে করে গোল্লা করে রেখে দিন।
কে সি দাশ বাড়ি

ছানার কালিয়া
কী চাই-বাড়িতে তৈরি ছানা:৫০০ গ্রাম,আদাবাটা আর অল্প হিং -এর মিশ্রণ :২ চামচ,জিরে :আধ চা চামচ,ছোট এলাচ:৬টি,দারচিনির টুকরো :আধ ইঞ্চি,লবঙ্গ:৬টি,দুধ:২কাপ,খোয়াক্ষীর পাউডার :৩০০ গ্রাম,জাফরান:২-৩ চিমটে (হালকা করে গরম জলে ভেজানো)
রান্না:ছানা ছাঁকবার সময় শক্ত করে বেঁধে ৩-৪ ঘন্টা ঝুলিয়ে রাখুন।টুকরো করে ঘি-তে ভেজে নিন।অল্প বাদামি রং ধরলে এক চিমটে নুন মেশানো হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখুন।বাদবাকি ঘি কড়াইতে দিয়ে জিরে,লাল-লঙ্কা ,গরম মশলা ভেজে নিয়ে,টোম্যাটো পিউরি দিয়ে মিনিট খানেক ষ্টার ফ্রাই করুন।এরপর লাল লঙ্কাগুঁড়ো দিন।ভাজতে ভাজতে শুকিয়ে গেলে দেড় বড় চামচ চিনি ও ২ বড় চামচ জল দিন।লালচে রং ধরলে আদা-হিং বাটা দিয়ে দু মিনিট রান্না করুন।ছানা জল থেকে তুলে মশলার মিশ্রনে ঢালুন।দুধ মিশিয়ে আঁচ কমিয়ে দু’মিনিট অপেক্ষা করুন,স্বাদমতো নুন,ক্ষীর পাউডার দিন।আঁচ বন্ধ করে জাফরান দিন।২/৩ মিনিট পর পরিবেশন করুন।
শেয়ার করুন :