এবছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের থিম ‘চ্যালেঞ্জ’।কতজন মেয়েকে ছোটবেলা থেকে জীবনের শেষবেলা পর্যন্ত ক্রমাগত যত প্রতিকূলতার,অন্যায়ের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় তার চোখে চোখ রেখে কথা বলা।এই মহিষয়ীসীরাও চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন সেবার,আর্ত মানুষের পাশে থাকার এই বিপন্ন বিদ্ধস্ত সময়ে।
দেবদত্তা রায়
পশ্চিমবঙ্গের করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম সারিতে কাজ করা,সম্পূর্ণ লক ডাউনের সময়ের ভিনরাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেন থেকে আসা আর তাদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প করে অক্লান্ত কাজ করা হুগলি জেলার চন্দননগর মহকুমার ৩৮ বছর বয়সী ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দেবদত্তা রায় কোভিড আক্রান্ত হয়ে চলে গেছেন।
ত্রিশের দশকের মধ্যভাগে থাকা দেবদূত রায় পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা এবং হুগলি জেলার চন্দননগরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে পদে ছিলেন।রেখে গেলেন স্বামী এবং একটি চার বছরের ছেলে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় টুইট করে শোকবার্তা জানিয়েছিলেন।
নতজানু হয়ে কুর্নিশ ওনার এই ইস্পাত কঠিন কর্ত্যব্যবোধে অবিচলিত মনোভাবের জন্য।সিনেমার পর্দায় নারীকেন্দ্রিক চরিত্রে দাপুটে দুর্দান্ত অভিনয় নয়,সেলিব্রিটি নয়,দেশের ভালো,দশের ভালোর জন্য নিজের জীবন তুচ্ছ করে মানুষের সেবা ভারতের সর্বকালের দীপ্তিময়ী মহীয়সীদের মধ্যে উনি সমুজ্বল থাকবেন।
ডক্টর স্বর্ণালী মাইতি
ফোর্টিস হসপিটালের ক্রিটিকাল কেয়ার বিভাগের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার। এই কবিডিকালে গত বছর মার্চ মাস থেকে ১বছর ওনার দায়িত্ব গভীর সঙ্কটে স্বাসকষ্টে কোবিদ আক্রান্ত মানুষের জীবন মরণ সমস্যার মোকাবিলা করছেন।গত এক বছরে প্রায় ৬০০ রুগীর সঙ্কটকালে তাদের পাশে থাকার,প্রাণ বাঁচানোর যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করে অকুতোভয়,অক্লান্ত দীপ্তিময়ী স্বর্ণালী।
ওনার কথায়,’আগে বন্ধু বান্ধব,আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ,সংগীতচর্চা,রান্না বান্নার শখ শৌখিনতা সব ছেড়ে এখন বেঁচে,টিকে থাকাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।‘
এতদিন একনাগাড়ে কাজ করে কখনও ওনার নিজের আক্রান্ত হওয়ার ভয় হয় নি?’নিশ্চয়ই হয়েছে।অনেকবার হয়েছে।মনে হয়েছে আমি চলে গেলে আমার ফ্যামিলির সন্তানের কি হবে? কিন্তু তা বলে তো এই সেবা শুশ্রূষার দায়িত্ব এড়ানো যায় না যার ওপর অনেকের জীবন মরণ নির্ভর করছে।’
দিনের মধ্যে পুরো সময় কোবিদ আক্রান্ত ক্রিটিকাল কেয়ার বিভাগে সংকটময় রোগীদের মধ্যে কাজ করে বাড়িতে ফিরে কি সুরক্ষা নেন সে বিষয়ে উনি জানালেন,’আমরা একটা থ্রি বেডরুম ফ্ল্যাটে থাকি। আমাদের বাড়ির ঢোকার একটা জোন আমি ‘ডু নট টাচ’ করে রেখেছি।আমি বাড়ি ফিরে আগে ওখানে আমার সব জামা কাপড় একটা বালতিতে ডুবিয়ে সেটা নিয়ে আমার একটা ঘরে যেখানে লাগোয়া বাথরুম আছে গিয়ে স্নান করে নিই।আমার বাড়ির পরিচারিকা একটা খাবার দিলে টুলের ওপর সেই খাবার রেখে খেয়ে সেই পাত্র ভালো করে ধুয়ে রেখে দিই।আর বাড়িতে মেয়ের আর স্বামীর সঙ্গে ডিস্টেন্স রেখে মাস্ক ছাড়া কথা বলিনা।
দেবযানী মুখার্জি,তূর্ণা ধর,লুনা চ্যাটার্জি
হসপিটালিটি সেক্টরে কর্মরত দেবায়ন দত্তর গতবছর ১৭মার্চ সম্পূর্ণ লকডাউনের সময়ে সঙ্কটে পড়া বৃদ্ধবৃদ্ধা দের জন্য কিছু করার কথা মনে হওয়াতে সেই উদ্যোগে এগিয়ে আসেন তিন অনন্যা আন্তেপ্রেনিউর দেবযানী মুখার্জি,ওয়ার্কিং প্রফেশনাল তূর্ণা ধর এবং ফুড ব্লগার দেবযানী মুখার্জি।সেই ক্রান্তিকালে ওনারা ‘লেটস হেল্প’বলে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপ খোলেন।খুবই অল্প সময়ের মধ্যে সদস্য সংখ্যা ১৫ থেকে ১৮০ হয়ে যায় এবং প্রতিদিন ১০/১৫ জনের বাড়িতে ওনারা ওষুধপত্র,বাজার পৌঁছে দিতে থাকেন।
তথ্য ঋণঃএনডিটিভি ,ফেমিনা,হিন্দুস্তান টাইমস।
শেয়ার করুন :