পুরাণ হোক বা আয়ুর্বেদ,জড়িবুটি,গাছগাছড়ার প্রয়োগ বহু প্রাচীন।ঘরে ঘরে মা ঠাকুমার টোটকার ওপর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল সকলের।আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র ও বিজ্ঞান সম্পূর্ণ আস্থা রাখে এই প্রাচীন হার্বাল পদ্ধতি আর তার উপাদানের ওপরে।এখানে রইল কিছু অমূল্য হার্বাল কেয়ার টিপস যা আপনাকে বিভিন্ন অসুখ থেকে রক্ষা করবে এবং ঘরোয়া রূপচর্চায় আপনি আরও সুন্দর হয়ে উঠবেনঃ
গ্লোইং স্কিনের জন্য –
- মুলতানি মাটি,অলিভ অয়েল,অল্প হলুদ সারা গায়ে মেখে কিছুক্ষণ রেখে স্নান করে নিন।
- অশ্বগন্ধাগুঁড়ো,বেলফুলবাটা,দুধ আর চালের গুঁড়ো মিশিয়ে একইভাবে মেখে ঘষে স্নান করুন।ফ্রেশ স্কিনের সঙ্গে গায়ের অস্বস্তিকর গন্ধও দূর হবে।
- আপেলকোরা,নারকেলকোরা,নিমপাতাবাটা একটু হলুদ আর দুধের মাঠা মিশিয়ে মাসাজ করে স্নান করুন ।
- গোলাপের পাপড়ি জলে ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিন।সকালে এই পাপড়িগুলিকে চটকে দুধের ক্রিমের সঙ্গে মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরী করুন।মুখে ও শরীরে মেখে ১৫ মিনিট রেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন।
- হলুদ আর দুধের ক্রিম দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।এটি শরীরে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
- টমেটো ,লেবু,পুদিনার রস ১ চামচ করে নিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে সারা শরীরে মেখে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
ভেষজ ফেশিয়াল
ড্ৰাই স্কিনের জন্য-১ চামচ টমেটো পেস্ট,১ চামচ দুধ,আধ চামচ পাতিলেবুর রস ও ১ চামচ চালের গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবার ১ টুকরো টমেটোর সঙ্গে মিশ্রণটি মুখে ও গলায় লাগান। এই টমেটো ব্যবহার করেই পেস্টটি ভালোভাবে ঘষে নিন। তারপর মিনিট খানেক রেখে হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলুন।এটি মুখ পরিষ্কার করে স্কিনের উজ্বলতা বাড়ায়।
ন্যাচারাল স্কিনের জন্য-ঠান্ডা দুধ নিয়ে গলা ও মুখে ম্যাসাজ করে ভেজা তুলো দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।১ টেবিল চামচ কাঁচা দুধ ও ২টি কাঠবাদামবাটা মিশিয়ে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করুন।১৫ মিনিট মাসাজ করার পর ২ টেবিল চামচ কাঠবাদামবাটা মুখে গলায় লাগান।এবারের পেস্টটি এমনভাবে বানাবেন যাতে বাদাম সামান্য দানা দানা থাকে। ১০ মিনিট হালকা হাতে মাসাজ করে ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।এর আর একটি সুবিধে এতে স্কিনের ডেড সেলস উঠে যাবে।
অয়েলি স্কিনের জন্য-পাকা পেঁপে মুখে গলায় আলতো ঘষে ধুয়ে নিন। স্কিনের দাগ তুলতে সাহায্য করে।শশা, পুদিনা ও কমলালেবুর রস মিশিয়ে মাসাজ করুন।এরপর ২ টেবিল চামচ কমলালেবুর খোসাগুঁড়ো,২ টেবিল চামচ কমলালেবুর রস মেখে ২০ মিনিট থাকুন।এর পর ৩০/৩৫টি গোলাপ পাপড়ি এককাপ জলে ফুটিয়ে ছেঁকে রেখে সেই জল অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে মিশিয়ে ময়েশ্চারাইজারের মতন ব্যবহার করে একটু পরে ধুয়ে ফেলুন।
সেনসেটিভ স্কিনের জন্য-দুধ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে শশা আর পাকা পেঁপের পেস্ট দিয়ে মাসাজ করুন।৫ মিনিট পর ধুয়ে হালকা ভাপ নিন।এবার নিম হলুদ আর চন্দনের প্যাক লাগান।১৫ মিনিট পর ধুয়ে গোলাপজল আর মধুই দিয়ে মাসাজ করে একটু পরে ধুয়ে ফেলুন।
পেটের অসুখ –
কোষ্ঠকাঠিন্য – হরিতকি, আমলকি, বহেড়া, আদাশুট, পিপলু, জোয়ান, জবক্ষার, সোনা পাতা ও বিটনুনের ৫০ গ্রাম করে নিয়ে রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে একটি পাত্রে রেখে দিন।প্রত্যেক দিন দু বেলা খাবার পর তার ১ চামচ করে খেয়ে জল খান। যদি কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি থাকে তবে রাতে দু চামচ এই মিশ্রণের গুড়ো গরম জলে মিশিয়ে খান।
অ্যাসিডিটি – রাতে পাথরের বা কাচের গ্লাসে আমলকী, হরিতকি, বহেড়া ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই জল ছেঁকে খেলে অ্যাসিডিটি দূর হয়।৫০০ গ্রাম জলে ২৫ গ্রাম মৌরী মিশিয়ে জ্বাল দিন। তা ১০০ গ্রাম হলে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে অর্ধেকটা সকালে খাবেন। বাকি অর্ধেকটা রাতে শুতে যাবার আগে খাবেন।
হজমের সমস্যায়– হরিতকি, আমলকি, বহেড়া, ৫০ গ্রাম জোয়ান, পিপলু, আদা শুঠ ১০ গ্রাম, ৫ গ্রাম বিট নুন রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে ১ টি শিশিতে রাখুন।রোজ দু বেলা খাবার পর এই মিশ্রণের ১ চামচ করে খেয়ে ১ গ্লাস জল খান। ১০ দিনে হজম শক্তি বাড়বে।
ব্লাড সুগার-আপনাকে দুবেলা খাবার সময় একটি করে এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খেতে হবে। অথবা ১৫ থেকে ২০ টি নিম পাতা এবং পাঁচ থেকে ছয়টি গল্মরুচ একসঙ্গে চিবিয়ে খেতে হবে। এভাবে আপনি দেড়- দু মাস দ খেয়ে যান দেখবেন আপনার অনেক উপকার হয়েছে।কাঁচা আমের পাতা গুঁড়ো করে পাঁচ গ্রামের মত খেতে পারেন। কালো জামের বিচি শুকিয়ে গুঁড়ো করে দুই গ্রাম খেতে পারেন।এভাবে আপনি দেড়-দু মাস খেতে পারেন দুবেলা করে।
বিশেষজ্ঞ টিম-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডঃ লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য্য ,তুষার মন্ডল -জে বি রায় আয়ুর্বেদ মেডিক্যাল কলেজ,ববিতা হাজারিকা -নিউট্রিশনিস্ট – অ্যাপোলো হসপিটালস,শর্মিলা সিং ফ্লোরা –বিউটিশিয়ান, হার্বাল ট্রি।
শেয়ার করুন :