সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক ডে উপলক্ষে অ্যাপলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর পুনর্জীবন শুশ্রূষা বিষয়ে একটি সচেতনতা সভার আয়োজন করেছিল। হাই ব্লাড সুগার, কোলেস্টরল,ব্লাড প্রেশার রোগীদের ব্রেন স্ট্রোকের প্রবণতা অনেক বেশি।এর আগে ব্রেন স্ট্রোকের প্রবণতার রেশিও ছিল ৬ জনের মধ্যে ১ জন আর এখন সেটা ৪ জনের মধ্যে ১ জন।এই ভয়ঙ্কর বদলের কারণ নিম্নমানের লাইফস্টাইল আর খাদ্যাভাস।
ষ্ট্রোক হওয়ার ৪.৩০ ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর পর সাময়িক ক্ষতি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পক্ষাঘাত এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।যেহেতু ষ্ট্রোক আক্রান্তদের বাঁচাতে গোল্ডেন আওয়ার রুল প্রচন্ড জরুরি তাই অ্যাপলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালসের ষ্ট্রোক টিম এমার্জেন্সি ফিজিশিয়ান,নিউরোলজিস্ট,নিউরো রেডিওলজিস্ট এবং ক্যাথ ল্যাব টেকনিশিয়ান পূর্ব ভারতের একমাত্র আন্তর্জাতিক JCI স্ট্যান্ডার্ড সমৃদ্ধ যারা আক্রান্ত রোগীকে হসপিটালে সর্বাধুনিক দ্রুত চিকিৎসার জন্য সদাপ্রস্তুত।স্ট্রোকের উপসর্গ বা লক্ষণ দেখলেই ‘কোড ষ্ট্রোক’ ঘোষণা করা হয় যা এই টিমকে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসার সংকেত দেয়।রোগীকে তৎক্ষণাৎ সিটি স্ক্যানের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ও তারপরেই প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট মেডিক্যাল ও ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্ট শুরু করা হয়।
এই বিষয়ে অ্যাপলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালসের ডিপার্টমেন্ট অফ নিউরোলোজির ডিরেক্টর ডঃ অমিতাভ ঘোষ বলেন,‘সাধারণত দুই ধরণের ব্রেন ষ্ট্রোক হয়,ইস্কেমিক ষ্ট্রোক, যেখানে মস্তিকের একাংশে রক্ত চলাচল কমে যায় যার ফলে ওই অঞ্চলে ব্রেনের টিস্যুর ডিসফাংশন হয়।অন্যটি হল হেমারজিক ষ্ট্রোক যেখানে ব্রেনের টিস্যুতে, ভেন্ট্রিকলসে অথবা দুটোতেই হঠাৎ রক্তক্ষরণ হয়।এই দুই ক্ষেত্রেই রক্ত চলাচল ব্যাহত হওয়ার জন্য মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়।যদিও বর্তমানে এর জন্য উৎকৃষ্ট, চমৎকার চিকিৎসা উপলব্ধ। নির্দিষ্ট সময়বিধির মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা গেলে ব্রেন সেলের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি এড়ানো যায়। প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জনের যে কোনও সময়ে ষ্ট্রোক হতে পারে আর সময়মতো এর চিকিৎসা না হলে সারাজীবনের জন্য বিকলতা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।‘
অ্যাপলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালসের এমার্জেন্সি মেডিসিনের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডঃ অরিজিৎ বসু বলেন, ‘ইস্কিমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান কারণ রক্তচলাচল ব্যাহত হওয়ায় অত্যন্ত সংবেদনশীল ব্রেনটিস্যুর ক্ষতি হতে থাকে।যত সময় বয়ে যায়,প্রতিমুহূর্ত ব্রেনটিস্যুর গভীর ক্ষতি হতে থাকে তাই অ্যাকিউট ইস্কিমিক ব্রেন স্ট্রোক লক্ষণ চিনে নেওয়া আর আক্রান্তকে দ্রুত স্ট্রোক রেডি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি।‘
অ্যাপলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালসের ইন্টারভেন্সানাল নিউরো রেডিওলজিস্ট ডঃ নির্মাল্য রায় বলেন,’ আগেকার স্ট্রোক চিকিৎসা শুধু ওষুধ আর ফিজিওথেরাপি নির্ভর ছিল কিন্তু এখনকার স্বাস্থ্যপরিষেবায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে ক্যাথল্যাবে এন্ডোভাস্কুলার থেরাপি এমনকি লার্জ ভেসেল অক্লশনের মতন চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে।ব্লাডক্লটের মেকানিক্যাল রিমুভাল পদ্ধতির মতন নতুন টেকনিক আবিষ্কারের ফলে সিম্পটমের ৬ঘন্টা পরে এবং কিছুক্ষেত্রে ২৪ঘন্টার মধ্যেও এই চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার নজির আছে।এই অভিনব চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীর কুঁচকি অথবা কব্জিতে একটি পিন হোল ছিদ্র করে ব্রেনে ক্লটের হদিশ পাওয়া যায় এবং সাকশন অথবা স্টেন্ট দ্বারা ক্লট মুক্ত করাহয়।এটি যত তাড়াতাড়ি করা যায় রোগীর তত দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার অবকাশ থাকে।‘
এদিন উপস্থিত অ্যাপলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালসের ডি এম এস ডঃ সুরিন্দর সিং ভাটিয়া বলেন,‘ ব্রেন স্ট্রোকের সিম্পটম খুবই প্রকট হয়ে থাকে যেমন ব্যালেন্স হারানো,মাথাযন্ত্রণা বা মাথাঘোরা,দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া,মুখের,হাতের,পায়ের এক অংশ ঝুলে বা বেঁকে যাওয়া,দুর্বলতা,কথা বলতে অসুবিধে এমন লক্ষণ দেখা যায়।এটা সহজেই শনাক্ত করে কাছের স্ট্রোক রেডি হসপিটালে যেখানে 24×7 ক্যাথ ল্যাব,নিউরোলজিস্ট টিম আর নিউরো ইন্টারভেনশনিস্টস প্রযুক্তির সুযোগ সুবিধে আছে সেখানে দ্রুত নিয়ে যেতে হবে।উল্লেখযোগ্য বিষয় মনে রাখতে হবে যে কার্ডিয়াক অ্যাটাক প্রাণঘাতী হতে পারে কিন্তু স্ট্রোকে শুধু আক্রান্ত রোগী নয় ,এর শারীরিক অক্ষমতা তার পরিবারকেও বিপর্যস্ত করতে পারে তাই কাছের স্ট্রোক রেডি হসপিটালের খোঁজ রাখা খুব জরুরি।‘
শেয়ার করুন :