অ্যাপলো হসপিটালসের সিনিয়র কনসালটেন্ট,মেডিসিন,ডঃ শিবব্রত ব্যানার্জির অভিজ্ঞ তথ্যসমৃদ্ধ পরামর্শ-
ফিরে দেখা-
কোভিড ১৯ এর ভয়ঙ্কর যাত্রা শুরু ১০ই জানুয়ারি ২০২০ তে চীনের উহান প্রদেশ থেকে।২ মাস পরে কেরালায় সংক্রমণ শুরুর পর সারা ভারতে ভয়ঙ্কর সংক্রমণে আর মৃত্যুমিছিলে ২৪মার্চ ২০২০ ন্যাশনাল লকডাউন।এর আগে দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন আমরা কেউ প্রত্যক্ষ করিনি।শিশুদের কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলনা।ফার্স্ট ওয়েভের সময়কালে জরুরি পরিষেবা ছাড়া দীর্ঘকালীন স্কুল, কলেজ, অফিস কাছারি বন্ধ,চারিদিকে পরিচিত, অপরিচিতর অবর্ণনীয়,শোচনীয় মৃত্যুমিছিলের সঙ্গে যুঝতে থাকা,পৃথিবীজুড়ে মানবসভ্যতা এই কোভিড ১৯ চ্যালেঞ্জের সামনে অসহায়।আর যখন আবার নিউ নর্মাল পরিবেশে ঘুরে দাঁড়ানোর সময় সজোরে সবেগে সেকেন্ড ওয়েভের ঝড়ে আবার জীবনযাপন বিদ্ধস্ত,বিপন্ন।স্বাস্থ্য পরিকাঠামো প্রায় ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়াল।রাজ্য,দেশ,পুরো পৃথিবীকে সজোরে ঝাঁকুনি দিল।প্রচুর অমূল্য প্রাণ ও অসম যুদ্ধের ফলে আমরা সেকেন্ড ওয়েভের প্রাণঘাতী প্রাবল্যকে প্রতিহত করতে পারলেও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি।এখনও প্রতিদিন সারাদেশে নতুন আক্রান্তর সংখ্যা ৩৫০০০ এর বেশি।
ভাইরাস-মিউটেশন-ডেল্টা
এর মধ্যে প্রাণঘাতী ভাইরাস তার মিউটেশন চরিত্র বদল করে চলেছে।আলফা থেকে বেটা,গামা ডেল্টা হয়ে এখন ডেল্টা প্লাস।আলফা ভ্যারিয়েন্ট যুক্তরাষ্ট্রের।বেটা ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি সাউথ আফ্রিকায় যার ভয়ঙ্কর বেশি সংক্রমণ গতি।গামা ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি ব্রাজিলে যার সংক্রমণ ও মৃত্যুহার মারাত্মক।ডেল্টা ভারতীয়,ডাবল মিউটেশন আর সংক্রমণের হার সত্ত্বেও মৃত্যুহার মাঝারি।আর একটি মিউটেশন হল ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট ,ইমিউনিটি এড়ানোর ক্ষমতাধারী।
আমাদের মনের অবস্থা –
এই প্যানডেমিকের সঙ্গে যুদ্ধে ভয়ঙ্কর অবসাদ আর ক্লান্তিতে বিদ্ধস্ত,বিপর্যস্ত,বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে আমাদের মানসিক স্থিতি।বেপরোয়া হয়ে ভুলে যাচ্ছি কোভিড প্রটোকল, মাস্ক,স্যানিটাইজার সুরক্ষা ছাড়া বেরিয়ে পড়ছি, সেফ ডিস্টেন্স দূরত্ববিধি শিকেয় তুলে ভিড় করছি রাস্তায়,হাটে বাজারে। বেখেয়ালে,তাচ্ছিল্যে ভুলে যাচ্ছি এতে আমাদের নিজের,পরিবারের প্রাণসংশয় হতে পারে।
এর মাঝে ভ্যাকসিনে স্বস্তি,মঙ্গলবার্তা আর আশঙ্কা –
কোভিশিল্ড,কোভ্যাকসিন,স্পুটনিক ভ্যাকসিনের আগমনে আর প্রয়োগে কোভিডের প্রাণঘাতী তীব্রতা ও আক্রান্ত হওয়ার হার কমেছে। সরকারিস্তরে রাজ্য,কেন্দ্র এবং বেসরকারি হসপিটালসের সর্বসাধ্য নিয়ে এক এক ধাপে সবাইকে ভ্যাকনিনেশনের উদ্যোগ নিয়েছেন কিন্তু আরও ভাল ফলের জন্য এর দ্রুতগতি কাম্য। অসংযমী,বেপরোয়া কোভিড সুরক্ষাবিধি না মানা,ভাইরাসের মিউটেশন চরিত্র বদল আর ভ্যাক্সিনেশনের ধীর গতি থার্ড ওয়েভের শক্তিবৃদ্ধি করতে পারে।
থার্ড ওয়েভে বেশি শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনার সঠিক বিশ্লেষণ-
সোশ্যাল মিডিয়া আর অন্যান্য মিডিয়ার অকল্যাণে থার্ড ওয়েভে শিশুদের বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছে তাই প্রকৃত সত্য জানা দরকার।এটা প্রমাণিত ফার্স্ট আর সেকন্ড ওয়েভে বয়স্ক এবং কোমর্বিডিটি আছে এমন ২২% মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন যেখানে শিশুদের আক্রান্তের হার ০.৩%। কিন্তু উল্লেখযোগ্য,সেকন্ড ওয়েভে সমগ্র আক্রান্তের সংখ্যা ফার্স্ট ওয়েভের ৪ গুণ।সেইজন্য ফার্স্ট ওয়েভের চেয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বেশি।আশা করা যাচ্ছে থার্ড ওয়েভে সেকন্ড ওয়েভের থেকে ১.৮% বাড়বে।সেই অনুপাতে শিশুদের আক্রান্তের হার তুলনামূলকভাবে বাড়বে।কিন্তু সঠিক সুরক্ষাবিধি এবং ভ্যাক্সিনেশন থার্ড ওয়েভের প্রবলতা স্তিমিত করবে মৃত্যুহার আর কোমর্বিডিটি হ্রাসের কারণে।
সবাইকে যত শীঘ্র আসন্ন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার শুভেচ্ছা।
শেয়ার করুন :