ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর ভারতে ৪০,০০০ শিশু পাচারের জন্য অপহৃত হয় যার মধ্যে ১১,০০০ কে খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রতি বছর অর্থাভাবে অনেক পরিবার তাদের সন্তানকে আজকের দিনেও বিক্রি করে দেন।ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে এর সর্বগ্রাসী আগ্রাসনের সংখ্যা অনেক বেশি। ন্যূনতম শিক্ষা,কাজের সুযোগের এভাবে বহু বছর ধরে এই ভয়ঙ্কর অপরাধ চলে আসছে।
আশার কথা এখন নারীপাচার রুখতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে প্রচুর স্বেচ্ছাসেবী সমাজ কল্যাণ সংস্থা দুর্দান্ত দৃষ্টান্তমুলক কাজ করছে যার জন্য অনেক মেয়ে নির্মম অত্যাচার আর অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরে এসে নতুন জীবন শুরু করছে।
মেঘালয়ে অবস্থিত এমনই এক সংস্থা ইম্পাল্স এন জি ও নেটওয়ার্ক ইন্ডিয়ার কর্ণধার সমাজকর্মী হাসিনা খারবিহ। গত ৩০ বছর ধরে অতুলনীয়,অবিশ্বাস্য,অসামান্য অসাধারণ দৃষ্টান্তমূলক কাজ করে চলেছেন।এনার বিশেষত্ব হল শুধু নারীপাচার রোখা নয়,সেই হতভাগ্য অসহায়দের কাজের সুযোগ করে দেন।
এমনই একজন মহিলা এল্লা সাংমা। অভাবের তাড়নায় তার মা তাকে দালালের হাতে বিক্রি করে দিয়েছিল জানতে পেরে সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল ‘এমন ভাবে মানুষ বিক্রি করা যায়?’।এখন ইম্পাল্স ইন্ডিয়া এন জি ও নেটওয়ার্কের একজন কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী।
ইম্পাল্স ইন্ডিয়া এন জি ও সমাজকর্মী হাসিনা খারবিহ এখনও অবধি ৭০,০০০ ট্র্যাফিক সার্ভাইভারদের সাহায্য ও উদ্ধারে কর্মরত।এই নিয়ে কাজ শুরু করেন ১৯৮৭ সাল থেকে কিন্তু কাজ করতে গিয়ে আবিষ্কার করেন হারিয়ে যাওয়া শিশুদের কথা আর বুঝতে পারেন এতো বড় বিপদ আর যুদ্ধ একার ছোট্ট ক্ষমতায় হবে না। তাই ধীরে ধীরে, পুলিশ, প্রশাসন, মিডিয়া, স্থানীয় গ্রূপ আরও সবাইকে নিয়ে তৈরী করলেন একটা নেটওয়ার্ক ফ্রেমওয়ার্ক ইম্পাল্স। দিনের পর দিন,বছরের পর বছর শুধু অক্লান্ত পরিশ্রম নয় এর সঙ্গে তৈরী করলেন একটা ডেটাবেস সেন্টার যার মূল সংযোগ অ্যান্টি হিউম্যান ট্র্যাফিক ইউনিট অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে।
এই দীপ্তিময়ী এখানেই থেমে না থেকে এই অনাম্নী অঙ্গনাদের কাজকর্মের জন্য ইম্পাল্স সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে এদের তাঁতশিল্পের কাজের মাধ্যমে উপার্জনের পথ তৈরী করেছেন যার অন্যতম সুপারভাইজার এল্লা সাংমা। তাঁর নিজের কথায় ‘নিজের ভিটেয় থেকে নিজে উপার্জনের আত্মবিশ্বাস আর সম্মানের মূল্য অপরিসীম বিশেষত আমরা যে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসেছি।’
হাসিনা খারবিহর এই দৃষ্টান্তমূলক,দুর্ধর্ষ কাজের স্বীকৃতিতে ওনাকে পঞ্চম ইয়ামিন হাজারিকা উওমেন অফ সাব্স্ট্যান্স’ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও পেয়েছেন প্রাগ প্রেরণা পুরস্কার,মাদার তেরেসা মেমোরিয়াল পুরস্কার,গার্ডিয়ান্স অফ হিউম্যানিটি পুরস্কার,জাপান সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট পুরস্কার,সিএনএন আইবিএন ইন্ডিয়া পজিটিভ পুরস্কার এছাড়া আরও অনেক সন্মান।
আসলে এই মহীয়সী কে পুরস্কৃত করলে বোধহয় পুরস্কারেরই সন্মান বেড়ে যায়।
ওনার দুর্নিবার কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করুনঃ
শেয়ার করুন :