হারিয়ে যাওয়া ৩ মাছের রান্না -

ছবি:সহজ পাঠ

হারিয়ে যাওয়া ৩ মাছের রান্না

মঙ্গলকাব্যের সময় থেকে সুপ্রাচীন বাঙালি অন্ন-ব্যঞ্জন মা ঠাকুমার রেসিপি।

বাঙালি জাতি হিসেবে সুপরিচিত তার সুপ্রাচীন রন্ধনপ্রণালী আর খাদ্যাভ্যাসের গুনে,তার আত্মপরিচয় নানা স্বাদের খাবারের সঙ্গে যার সূত্র মেলে মঙ্গলকাব্যে।বিজয়গুপ্তের ‘পদ্মপুরাণ’ বা ‘মনসামঙ্গল’-এ লখিন্দরের জন্মের আগে সনকার পঞ্চামৃতের ভোজও মনে রাখার মতো। ‘চেঙ্গ মৎস্য দিয়া রান্ধে মিঠা আমের বৌল/ কলার মূল দিয়া রান্ধে পিপলিয়া শৌল/ কৈ মৎস্য দিয়া রান্ধে মরিচের ঝোল/ জিরামরিচে রান্ধে চিতলের কোল/ উপল মৎস্য আনিয়া তার কাঁটা করে দূর/ গোলমরিচ রান্ধে উপলের পুর/ আনিয়া ইলিশ মৎস্য করিল ফালাফালা/ তাহা দিয়া রান্ধে ব্যঞ্জন দক্ষিণসাগর কলা।’ রয়েছে ডুমো ডুমো করে কাটা আলু আর মানকচু দিয়ে শোল মাছের পদ, মাগুর মাছের ঝুরি। যে জাতির কোন প্রাচীন মঙ্গলকাব্যের সময় থেকেই এত ধরনের সুবিশাল ব্যঞ্জনের আয়োজন, সে জাতি যে খাদ্যরসিক হবে, তা বলাই বাহুল্য।কালের গ্রাসে হারিয়ে যাওয়া মা ঠাকুমার এমন ৩ রেসিপি:

আদা মাগুর

উপকরণ: মাগুর মাছ:৮০০ গ্রাম,জিরে:৪চামচ,শুকনোলঙ্কা:৭টা,আদা:৫০গ্রাম,ছোট এলাচ:৫টা,সর্ষের তেল:১৫০ গ্রাম,নুন ও ঘি পরিমাণ মতো।

প্রণালী: আদা খানিকটা থেঁতো করে বাকিটা রেখে দিন/মাছ কুটে(মাথা আলাদা করে রাখুন) ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে রেখে দিন।উনুনে করা বসিয়ে সব তেল ঢেলে তেল গরম হলে মাছ ছেড়ে,মাছ সামান্য ভেজে তুলে নিন।এবার তেলে আদা থেঁতো দিয়ে মাছের মাথা ভেজে নিন।বাকি সব মশলা বেটে জলে গুলে দিয়ে দিন।মশলা সব ভাজা হয়ে গেলে,পরিমাণ মতো জল ও মাছ দিন।আদাবাটার কিছুটা করে ভাজার সময় আর বাকিটা নামাবার সময় দিতে হবে।একটু গাওয়া ঘি ছড়িয়ে কিছুক্ষন রেখে নামিয়ে নিন।

চিংড়ি এঁচোড়ের কোর্মা

উপকরণ:চিংড়িমাছ:২৫০ গ্রাম,এঁচোড়:৫০০ গ্রাম,আলু:৪টে,পেঁয়াজ:২টো,আদা:২ ইঞ্চি,ছোট এলাচ,লবঙ্গ:২/৩টে,দারুচিনি:আধ ইঞ্চি,হলো ও লঙ্কাগুঁড়ো পরিমাণমতো,কাঁচালঙ্কা:৩টে, টকদই:১০০গ্রাম,নুন চিনি তেল আন্দাজমতো।

প্রণালী:এঁচোড় মাঝারি টুকরো করে সেদ্ধ করুন।চিংড়ির খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে নিন।আলু টুকরো করে রাখুন।চিংড়ি ও আলু ভেজে নিন।চিংড়ি যেন বেশি ভাজা না হয়।১টা পেঁয়াজ কুচিয়ে আর ১টা আদার সঙ্গে বেটে রাখুন।কড়াইতে তেল গরম করুন।গরমমশলা ফোড়ন দিয়ে কুচোনো পেঁয়াজ ও কাঁচালঙ্কা ভাজুন।ভাজা হলে বাকি মশলা ও টক দই ফেটিয়ে ভাল করে কষে নিন।নুন ও অল্প চিনি দিয়ে এঁচোড় ও আলু কড়াইতে ছেড়ে কষতে থাকুন।আলু সেদ্ধ হয়ে গেলে ভাজা চিংড়ি দিয়ে কিছুক্ষন রেখে নামিয়ে নিন।

কই ভাতুরি

উপকরণ: কৈ মাছ ৪ টে, লাউপাতা ৮ টি, পেঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি, হলুদ, মরিচ, জিরে গুঁড়ো, সর্ষের তেল, কাঁচামরিচ, ৫০০ গ্রাম চাল দিয়ে রান্না করা ভাত।

প্রণালী: আগে ভাত রেঁধে নিন। এবার সব মশলা মাছের সঙ্গে মেখে লাউপাতায় মুড়ে ভাতের উপর রেখে অল্প আঁচে রেখে দিন। আধ ঘণ্টা পর মাছ বের করে নিয়ে পাতা বেটে ভর্তা করে নিন। এবার মাছ ও ভর্তা একসঙ্গে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।  

তথ্যসূত্র ও ঋণ স্বীকারঃ ১) নুনেতে ভাতেতে, রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সান্যাল ও অনার্য তাপস ২) বাঙালির খাদ্যকোষ, মিলন দত্ত ৩) রান্নার বই, লীলা মজুমদার ও কমলা চট্টোপাধ্যায়, ৪) যুগান্তর পত্রিকা,৫) দেবদ্যুতি রায়।  

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *