Forgotten Bengali Women freedom fighters of Bengal |

ছবি- অরিন্দম ভৌমিক, মিদনাপুর ডট ইন

স্বাধীনতা সংগ্রামে এই বাংলার হারিয়ে যাওয়া কিছু নারীদের কথা

আদর্শনিষ্ঠা,ত্যাগ,অকল্পনীয় সংগ্ৰাম, দুর্দমনীয় সাহস ও দেশপ্রেমের দলিল।

স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালি নারীদের চিরস্মরণীয় অবদানের কথা বললেই দীপ্তিময়ী মাতঙ্গিনী হাজরা,প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার,বীণা দাস,নেলি সেনগুপ্তা,সুচেতা কৃপালিনী,সরোজিনী নাইডু .কল্পনা দত্ত,ননীবালা দেবী দের কথা মনে আসে কিন্তু স্মৃতির অতলে,প্রচারের ঢক্কানিনাদের আড়ালে এমন অনেক অসামান্যা নারীরা তাঁদের জীবন তুচ্ছ করে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন।ভুলে যাওয়া এই সব কিছু অগ্নিকন্যার কথা :

 কমলা দাসগুপ্ত ( ১৯০৭-২০০০):ছোট থেকেই দেশপ্রেমী।ঢাকার বিদগাওঁ গ্রাম থেকে বেথুন কলেজে পড়তে এসে বিপ্লবী কল্যাণী দাসের দলে যোগ দেন।১৯২৮ সালে গান্ধীজিকে চিঠি লিখেছিলেন সবরমতি আশ্রমে থেকে কাজ করতে চেয়ে।লাঠিখেলা শিখলেন বিপ্লবী দীনেশ মজুমদারের কাছ থেকে।বাড়ি ছেড়ে হোস্টেলে থাকলেন, ট্রাঙ্কে বোমা লুকিয়ে রাখতেন।১৯৩০ এর ২৫শে অগাস্ট দীনেশ মজুমদার,অতুল সেন ,শৈলেন নিয়োগীরা কুখ্যাত পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টকে হত্যার চেষ্টায় দীনেশ মজুমদারের পর গ্রেপ্তার হন,বীণা দাসের সেই পিস্তল যা দিয়ে গভর্নরকে গুলি করা হয়েছিল তাঁর টাকায় কেনা হয়।মহাত্মা গান্ধীর ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে ‘আন্দোলনে যোগ দিয়ে ৩ বছরের জেল,৪৬এর নোয়াখালীর দাঙ্গায় ধর্ষিত ৮৬ জন কে বিয়ে দেওয়ার জন্য কাগজে বিজ্ঞাপন দেন।তাঁর সংগ্রামী জীবনের আত্মকথা ‘রক্তের অক্ষরে’ কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তাঁর বই ‘স্বাধীনতা  সংগ্রামে বাঙালি নারী।’

শ্রীমতি সুশীলা মিত্র( ১৮৯৩-১৯৪৮):পলাতক বিপ্লবীদের আশ্রয়দাত্রী।দিনের বেলায় শ্বশানে আত্মগোপনকারী বিপ্লবীদের রাতে খাবার পৌঁছে দিতেন,নোয়াখালীতে মেয়েদের উন্নয়নে ‘নারী মঙ্গল সমিতি’ গড়েছেন,সেখানে হাতের কাজ,ধাত্রীবিদ্যা শেখানো হতো।আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রেফতার হন।

শ্রীমতি লতিকা ঘোষ (১৯০২১৯৮৩):শ্রী অরবিন্দের ভাইজি ছিলেন।লরেটো স্কুল,অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বি লিট রিসার্চ ডিগ্রিধারী জাতীয়বাদী চেতনার কারণে বেথুন কলেজের অধ্যাপনা থেকে বঞ্চিত হন।মেয়েদের দেশাত্ববোধ জাগিয়ে তোলার দীক্ষায় ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশন বয়কটের দাবিতে ওয়েলিংটন স্কোয়ারে কংগ্রেসের সভায় তাঁর নেতৃত্বে মহিলাদের যোগদান ও শপথগ্রহণ যা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে অবাক করেছিল।নিখিল ব্রত কংগ্রেসে সুভাষ চন্দ্র বসুর পরামর্শে পুরুষদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবিকা বাহিনী নিয়ে মিলিটারি কায়দায় মার্চ করতে ঢোকায় সেই নারীশক্তির বিচ্ছুরণ দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল উপস্থিত সকলে।

আবাদি বানো বেগম (১৮৫০-১৯২৪) :মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন এই বি আম্মা।অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।খদ্দরের কাপড় পরে হিন্দু মুসলিম ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতেন।সবাইকে নিজের সন্তান বলতেন বলে সবার ‘আম্মা’।

শান্তি ঘোষ (১৯১৬- ১৯৮৯) ও সুনীতি চৌধুরী (১৯১৭-১৯৮৮): ১৯৩১ সালে ১৪ই ডিসেম্বর কুমিল্লার ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে তার বাংলোতে গিয়ে গুলি করে মারেন ।প্রস্তুত ছিলেন ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার।অষ্টম শ্রেণীতে পড়তেন বলে ফাঁসি বদলে হল যাবজ্জীবন জেল ।স্বাধীনতার পর গান্ধীজির আবেদনে মুক্তি পেয়ে পড়াশোনা করে সুনীতিদেবী সমাজসেবা ও শান্তিদেবী ‘অরণ্য বহ্নি’নামে জীবনকাহিনী লেখেন।

তথ্যসূত্র : স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী -কমলা দাসগুপ্ত,উওমেন ইন মডার্ন ইন্ডিয়া -জেরাল্ডাইন ফোর্বস, সেকালের কথা-আশালতা সেন,মেয়েদের স্মৃতিকথা -চিত্রিতা বন্দোপাধ্যায়,লিপিকা ঘোষ-আদার ভয়েস ডট ইন,স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী – অগ্নিযুগ গ্রন্থমালা,মুক্তি সংগ্রামে বাংলার উপেক্ষিতা নারী, র‍্যাডিকাল প্রকাশনা,স্বাধীনতা সংগ্রামে নদীয়া।

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *