নটী বিনোদিনী ফিরে এলেন সুদীপ্তার অভিনয়ে -

ছবি- অবন্তী চক্রবর্তী

নটী বিনোদিনী ফিরে এলেন সুদীপ্তার অভিনয়ে

‘বিনোদিনী অপেরা’ নিছক একটি নাটক নয়।

কমলেন্দু সরকার

আমি বিনোদিনীকে দেখিনি। দেখার কথাও নয়। কিন্তু বিনোদিনীকে দেখলাম অ্যাকাডেমি মঞ্চে। সুদীপ্তার অভিনয়ে সেই সন্ধ্যায় বিনোদিনী ভর করছিলেন। বিনোদিনী তো চাইতেন নতুন অভিনেতা আসুক, নতুন অভিনেত্রী আসুক, বাংলা নাটকের মঞ্চ ভরে উঠুক। রমরমা হোক বাংলা নাটকের। তাই হয়তো একালের অভিনেত্রী সুদীপ্তার সঙ্গে এক হয়ে গেছিলেন সেকালের নটী বিনোদিনী।

নাটকের নাম ‘বিনোদিনী অপেরা’। পরিচালক অবন্তী চক্রবর্তী। অভিনেত্রী বিনোদিনীর কথা অল্পবিস্তর নাট্যপ্রেমী বাঙালি সকলেই জানেন। এই নটীর কথা সকলেই জানতে চান। নইলে বিনোদিনীর আত্মজীবনী ‘আমার কথা’র বইটির এত কাটতি কেন? যাইহোক, আরও একবার স্মরণ করি এই প্রতিভাময়ী অভিনেত্রীর কথা। হাতিবাগান এলাকায় রূপবাণী সিনেমা হল আর রঙমহল থিয়েটারের সামনে পিছনে ছিল বেশকিছু বস্তি। সেইসব বস্তিতে যাঁরা বাস করতেন তাঁদের বলত হাফ গেরস্ত। সংসদ অভিধান এর অর্থ করছে, ‘ভদ্রপল্লির কাছাকাছি বাসকারী ভদ্রবেশী বেশ্যা’।

তেমনই একটি বস্তি বাড়িতে জন্ম বিনোদিনীর। সালটা ১৮৬৩। এই বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে একই বছরে  জন্ম নরেন্দ্রনাথ দত্তের। পরবর্তী কালের স্বামী বিবেকানন্দ। ১৪৫ নম্বর কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের একটি  খোলার বাড়িতে বড় হয়ে ওঠা পুঁটি অর্থাৎ পরবর্তী কালের নটী বিনোদিনী৷ যে-বাড়িটি ছিল পুঁটির দিদিমার। দিদিমা, মা’র কারণেই বিনোদিনীর ঠিকানা ছিল কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের ১৪৫ নম্বর গণিকালয়। বারবণিতা বা বেশ্যার ঘরে তাঁর জন্ম, বিনোদিনীকে এই ব্যাপারটা কুরে কুরে খেত। তিনি চেয়েছিলেন একটা ঘর, একটা সন্তান, বিয়ে করতে। কিন্তু তা হয়নি। সকলেই তাঁকে ব্যবহার করেছেন, স্বীকৃতি দেননি। অর্থ দিয়েছেন। বিনোদিনী অর্থ চাননি কোনওদিন। তিনি বলতেন “অর্থ আমাকে কিনতে পারবে না, আমি অর্থকে কিনব।” এটা আমি বিনোদিনীর অহংকার বলব না, বলব আত্মবিশ্বাস। এই প্রসঙ্গ বারবার এসেছে নাটকে। হয়তো এসেছিল বিনোদিনীর জীবনেও। মঞ্চে দেখলাম প্রতিবারই কী অসাধারণ অভিনয় করলেন সুদীপ্তা। কৌতূহল জাগছিল মনে, নটী বিনোদিনীই কী মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁর দুঃখের কথা বলছেন দর্শকদের!

মঞ্চে বিনোদিনীর প্রবেশ থেকেই সুদীপ্তা ভীষণভাবেই বিনোদিনী হয়ে উঠতে চেষ্টা করেছেন। একটু ভুল বললাম, সুদীপ্তা বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেননি বিনোদিনী হতে, হয়ে গেছেন। এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত তাঁর অভিনয়। তাই পুনরায় আরও একবার বলি, সুদীপ্তার আন্তরিকতা আর চরিত্রের প্রতি উৎসৃজন দেখে বিনোদিনী ১৯৪১-এর ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যুর পর আরও একবার ফিরেছিলেন তাঁর প্রিয় শহর কলকাতার নাট্যমঞ্চে। নিশ্চয়ই ফিরেছিলেন বিনোদিনী। নইলে সুদীপ্তা বিনোদিনী হয়ে উঠলেন কী করে!

যেমন, মঞ্চ ছেড়ে দেওয়ার পর বিনোদিনী নিয়মিত নাটক দেখতে আসতেন। সে-কথা বলেছেন নটসূর্য অহীন্দ্র চৌধুরী। তিনি ‘নিজেরে হারায়ে খুঁজি’ (প্রথম খণ্ড) বইয়ে লিখছেন, ‘বিনোদিনী তখন প্রায়ই থিয়েটার দেখতে আসতেন। যথেষ্ট বৃদ্ধা হয়েছেন, কিন্তু থিয়েটার দেখবার আগ্রহটা যায়নি। নতুন বই হলে ত উনি আসতেনই; এক কর্ণার্জুন যে কতবার দেখেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। মুখে-হাতে তখন তাঁর শ্বেতী বেরিয়েছে, একটা চাদর গায়ে দিয়ে আসতেন। এসে, উঙ্গসের ধারে বসে পড়তেন।… কথা বলতেন খুব কম’।

সুদীপ্তার বিনোদিনী হয়ে ওঠা তার মস্ত উদাহরণ— লেডি ম্যাকবেথ’ পার্ট বলছেন মঞ্চের অভিনেত্রী। পার্ট শেষে হঠাৎই উঠে সুদীপ্তা ব্যাক স্টেজে চলে যান। সেইসময় একটি ড্রাম বিট আর সুদীপ্তার ঘুরে চলে যাওয়ার যে সিঙ্ক্রোনাইজেশন মুগ্ধ করে। এই অংশে সুদীপ্তার শরীরী অভিনয় লা-জবাব! এমন অভিনয় দেখেছিলাম সুদীপ্তার পিতা বিপ্লবকেতন চক্রবর্তীর মধ্যে।

নির্দেশক অবন্তী চক্রবর্তী অভিনেত্রী বিনোদিনীর ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনা এবং নাট্যমুহূর্তগুলি  কোলাজের মাধ্যমে মঞ্চস্থ করেছেন ‘বিনোদিনী অপেরা’য়। পরিচালক কখনওই সরে যাননি বিনোদের অর্থাৎ বিনোদিনীর নাটকের প্রতি গভীর প্রেম, অভিনয়ের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা এসব থেকে। মঞ্চকে তিনি ভাবতেন মন্দির। সবচেয়ে ভাল লাগল নাটকে বিনোদিনীই হলেন প্রধান চরিত্র। এজন্য ধন্যবাদ পরিচালক, নাট্যকার অবন্তী চক্রবর্তী এবং তাঁর সহ-নাট্যকার শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

বিনোদিনীকে ঘিরে আসে অমৃতলাল বসু, গিরিশ ঘোষ, কুমার সাহেব, রাঙাবাবু, গুর্মুখ রায়, এককড়ি, তিনকড়ি, কনক কিঙ্কিণী প্রমুখ। প্রতিটি চরিত্র বিনোদিনীকে  ঘিরে উপগ্রহের মতো পাক খেলেও, সবাই সমগুরুত্ব পান ‘বিনোদিনী অপেরা’য়। নাটকটি যদি সুদীপ্তার মোনোলগ হত, তাহলেও দর্শক একইভাবে উপভোগ করতেন, ব্যক্তিগত ধারণা করবেনও। যদিও সকলেই ভাল কাজ করেছেন। তবে  অমৃতলাল বসুকে (তথাগত রায়চৌধুরী) আলাদা করে ভাল লাগে। প্রত্যেকেই অভিজ্ঞ অভিনেতা, নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করেন।

যাইহোক, আবার ফিরি বিনোদিনীর কাছে। সুদীপ্তা শুধু তাঁর অভিনয় নয়, বিনোদিনীর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা, অনুভব দিয়ে চরিত্রচিত্রণ করেছেন। কখনও শক্তির কবিতা, কখনও নবারুণের গদ্যের মতো সুদীপ্তার অভিনয়ের প্রকাশভঙ্গী। ভাল লাগে, সুদীপ্তা যখন  বিনোদিনী থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিনিধিত্ব করেন  শোষিত-পীড়িত এক নারীর। তাঁকে মনে হয়, আন্দোলনের প্রতীক। অ্যাকচুয়ালি, নটী বিনোদিনী সেকালের বাংলা নাটকের মঞ্চে তাই ছিলেন। পুরুষশাসিত সমাজে তাঁর মতো শোষিত প্রবঞ্চিত অভিনেত্রী তো দু’টি ছিলেন না। নাটকের জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন। নিজেকে ধনী পুরুষদের হাতে তুলে দিয়ে অর্থ জোগাড় করেছেন নাটকের জন্য, মঞ্চের জন্য, নাটকের বাড়ির জন্য। তাঁকে ঘিরে যাঁরা ছিলেন তাঁদের কথা অনুযায়ী বিনোদিনী আশা করেছিলেন, তাঁর নামে থিয়েটারের বাড়ি হবে ‘বি থিয়েটার’। হল না শেষপর্যন্ত। নাম হল, ‘স্টার থিয়েটার’। তাঁকে বোঝানো হল, স্টার মানেই তো বিনোদিনী৷ বঙ্কিম যাঁকে বলেছিলেন, প্রিমা ডোনা অর্থাৎ প্রধান অভিনেত্রী। বঙ্কিমচন্দ্রের কথা বিনোদিনী লিখছেন ‘আমার কথা’য়, ‘আমার মনোরমার চিত্র পুস্তকেই লিখিয়াছিলাম কখন সে প্রত্যক্ষ দেখিব এমন আশা করি নাই; আজ বিনোদের অভিনয় দেখিয়া সে ভ্রম ঘুচিল’। গিরিশ ঘোষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মান্যতা দিয়েছিলেন বিনোদিনীকে। বলেছিলেন, ‘আমি মুক্তকণ্ঠে বলেতেছি যে, রঙ্গালয়ে বিনোদিনীর উৎকর্ষ আমার শিক্ষা অপেক্ষা তাহার নিজগুণে অধিক।’ বিনোদিনী সম্পর্কে গিরিশ ঘোষ আরও প্রশংসা করছেন, ‘যাহারা অভিনেত্রী, তাহারা বুঝিবে— কিরূপ মনোনিবেশের সহিত নিজ ভূমিকার প্রতি যত্ন করিলে জনসমাজে প্রশংসাভাজন হইতে পারে!

সুদীপ্তাও ঠিক প্রচণ্ড যত্ন নিয়েছিলেন বিনোদিনী চরিত্রটির প্রতি। নইলে এমন বিনোদিনী হয়ে ওঠা সম্ভব হত না। সকলেই ভেবেছিলেন, বিনোদ বোধহয় আর অভিনয় করবে না থিয়েটারের নতুন বাড়ি ‘স্টার’-এ। সকলের ভাবনা মিথ্যে করে দিয়ে নতুন বাড়িতে প্রথম মঞ্চস্থ নাটক ‘দক্ষযজ্ঞ’-এ করলেন পার্বতীর ভূমিকা। আসলে, সপাটে একটি চড় কষালেন বিনোদিনী পুরুষশাসিত সমাজের গালে। বিনোদিনী কোনওদিন সস্তার রাজনীতি করেননি নাটকের মঞ্চ নিয়ে। কখনও মাথাও গলাননি থিয়েটারের ভাঙনে। তাই যখন অমৃতলাল বসু এক থিয়েটার ছেড়ে অন্য আর নতুন থিয়েটার তৈরির কথা বলেন, তখন সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে পুরনোকে আঁকড়ে নতুন ভাবনার কথা বললেন বিনোদিনী। তাঁর প্রিয় ভুনুদা অর্থাৎ অমৃতলাল বসুর দিব্যদৃষ্টি খুলে দেন বিনোদিনী।

স্টার থিয়েটারে ‘চৈতন্যলীলা’ হবে। নাটক দেখতে আসবেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেব। রামকৃষ্ণ দর্শন হবে, এই ভাবনায় রাতে বিনোদিনীর ঘুম নেই। তিনি লিখছেন, ‘চৈতন্যলীলা’ প্রথম অভিনয়ের দিন ভোরে গঙ্গাস্নান করে, ১০৮ দুর্গানাম লিখে মনে মনে প্রার্থনা করেছেন, যেন গৌরাঙ্গের কৃপা পান। অভিনয়ের সময়ে নিজেই চৈতন্যময়, ‘হরি মন মজায়ে লুকালে কোথায়’ গানটি গাওয়ার সময়ে ‘এক একদিন এমন হইত যে অভিনয়ের গুরুভার বহিতে না পারিয়া মূর্চ্ছিতা হইয়া পড়িতাম।’

‘বিনোদিনী অপেরা’ ‘চৈতন্যলীলা’ অংশে সুদীপ্তাও একবারে অন্যভাবে প্রবেশ করলেন মঞ্চে। এতক্ষণ  বিনোদিনী বেশধারী সুদীপ্তাকে যেভাবে দেখে চোখ সয়ে গেছিল গেরুয়া পোশাকে তিনি অন্যরকম। কেশবিন্যাসও ভিন্ন। তিনি যখন নিমাই হয়ে নৃত্য করছেন, হরি সংকীর্তন করছেন, পুরো প্রেক্ষাগৃহ মেতে উঠল। দর্শকেরা আর স্থির থাকতে পারলেন না। করতালিতে মুখর হয়ে উঠল অ্যাকাডেমি প্রেক্ষাগৃহ। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে নাটকের মাঝে করতালি দেওয়ার বিরোধী। এর ফলে, নাটক দেখার মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে। সুদীপ্তার অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শককুল মাঝেমধ্যেই করতালিতে অভিনন্দিত করছিলেন মঞ্চের বিনোদিনীকে। এই দৃশ্যে পরিচালক খুব সংযমের পরিচয় দিয়েছেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেবকে অফ ভয়েসে দিয়ে। ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেব ‘চৈতন্যলীলা’ দেখে বললেন, ‘বল মা, হরি গুরু, গুরু হরি।’ ‘মা তোমার চৈতন্য হোক।’

আমার কাছে নাটকের সেরা মুহূর্ত এটি নয় বা পূর্বের কোনও দৃশ্যই নয়। নাটকের সেরা মুহূর্তটি লেগেছে, যখন গুর্মুখ রায়ও চলে যাচ্ছে বিনোদিনীকে ছেড়ে। সেইসময় পরিচালক অবন্তী একটা মোক্ষম মোচড় দিলেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতাটি উনিশ শতকের চরিত্রের মুখে লাগিয়ে। একেবারে উনিশ শতক থেকে একুশ শতকে এনে ফেললেন দর্শকদের। কেউ বলতে পারবেন না সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতাটি বেমানান বিনোদিনীর মুখে বা তাঁকে ঘিরে যেসব চরিত্র ঘুরপাক খাচ্ছে। সত্যিই তো বিনোদিনী এ-কবিতাটি  বলার হকদার। আসলে, কবিতা তো কোনও সময় মানে না, শতাব্দী মানে না, কবিতা সবকিছুর ঊর্ধ্বে।

একেবারে নাটকের শেষে আরও চমক। সেটা উহ্যই থাক। বললে, নাটকের মজাটা উবে যাবে। তবে, ‘বিনোদিনী অপেরা’ নাটকের নামকরণে বোঝাই যাচ্ছিল, এমনটা হতে পারে।

মঞ্চে বিনোদিনীর হয়ে কান্না, বিনোদিনীর আর্তনাদ সেকালের একালের নাটকের তো বটেই, প্রতিটি বঞ্চিত, প্রবঞ্চিত নারীর কান্না হয়ে উঠেছে। সুদীপ্তার আসলে বিনোদিনীর চোখের জল কখন যেন প্রবাহিত হয়ে দর্শকদের চোখের কোণে চিকচিক করে ওঠে! সুদীপ্তা চক্রবর্তীর বিনোদিনী অনুভব করতে হয়। কত সুন্দরভাবে তিনি ভারসাম্য রেখে প্রতিটি দৃশ্য মঞ্চে উপস্থাপন করেছেন। প্রতিটি সংলাপে উনিশ শতকের ছোঁয়া রেখে একুশ শতকের দর্শকদের কাছে উচ্চারণ করেছেন তিনি। এ-ব্যাপারে অবশ্য মঞ্চে প্রতিটি অভিনীত চরিত্রই অবশ্য বেশ সতর্ক ছিলেন।

নাটকের সেরা প্রাপ্তি সুদীপ্তা চক্রবর্তীর অভিনয়। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেছেন বাকি নারী চরিত্রের অভিনেত্রীরা। ‘বিনোদিনী অপেরা’ নিছক একটি নাটক নয়। লিঙ্গবৈষম্যের কথা বলে। তা স্পষ্ট হয়, যখন গিরিশ ঘোষ বলেন, ‘তোর নামে থিয়েটার হল হলে কেউ নাটক দেখতে আসত না। আর দর্শক না-এলে নাটক হবে কী করে!’ বিনোদিনী একটি মোক্ষম প্রশ্ন তোলেন। বলেন, ‘ আমার নাটক দেখতে লোকে ভিড় করে। হল ভর্তি হয়ে যায়। আর আমার নামে থিয়েটার হল হলে লোকে নাটক দেখতে আসবে না! কেমন কথা!’

বিনোদিনীর এ-কথার জবাব আজও নেই। তাই হয়তো আজও বিনোদিনীর নামে কোনও প্রেক্ষাগৃহ গড়ে উঠল না কলকাতা এবং আশপাশে। কেন গড়ে উঠল না? এ-প্রশ্নের উত্তর নেই। বিনোদিনীর অভিনয়জীবন মাত্র ১২ বছরের। তিনি এসেছিলেন ১১-১২ বছর বয়সে থিয়েটারে আসেন। ২৩-২৪ বছর বয়সে ৫০-৬০টি নাটকে অভিনয় করেন। এই বয়সেই সেকালের বাংলা নাট্যমঞ্চের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর আসনে আসীন। বাংলা নাটকে এত কম সময়ে এত নাটক, এত চরিত্র, সম্ভবত আর কোনও অভিনেত্রী করে যেতে পারেননি। এছাড়াও এত কম সময়ে এত জনপ্রিয় এবং দর্শক-মনে স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারেননি। আজও সবাই যথেষ্ট কৌতূহলী বিনোদিনী সম্পর্কে। হয়তো সেইকারণে এবং বিনোদিনীর প্রতি সুবিচারের জন্য ‘বিনোদিনী অপেরা’ শেষ দৃশ্যে ‘বি থিয়েটার’-এর একটি কাট আউট দেখা যায়। যেটি নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করেন গুর্মুখ রায়। এবং ‘বিনোদিনী অপেরা’র পক্ষ থেকে আওয়াজ ওঠে ‘বি থিয়েটার’ চাই। এবং দর্শকদের দিকে আঙুল তুলে ‘বিনোদিনী অপেরা’র প্রতিটি চরিত্র বলেন, ‘আপনারা চান না?’ বাঙালি নাট্যপ্রেমী সবাই চান ‘বি থিয়েটার’ হোক। নইলে তো বিনোদিনী থেকে যাবেন তাঁর ব্যক্তিজীবনের মতো নির্বান্ধব একা।

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *