কলেজ স্ট্রিটে প্রথম বইয়ের দোকান -

কলেজ স্ট্রিটে প্রথম বইয়ের দোকান

কলেজ স্ট্রিটে প্রথম বইয়ের দোকান

কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ায় আমরা অনেকেই গিয়েছি বই কিনতে। কিন্তু জানেন কি কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ার প্রথম দোকান কোনটি?

এমন সময় ছিল যখন এই দোকানে বই পাওয়া না গেলে তা হলে দেশে কোথাও পাওয়া যাবে না।বিদেশে চিঠি পাঠিয়ে আনাতে হবে। ‌তখন এই দোকানে ৬০/‌৬২ জন কর্মচারী তিনতলা জুড়ে কাজ করত।

লেখাপড়া কিংবা আড্ডায় কলেজ স্ট্রিটের সঙ্গে বাঙালির এক অলিখিত সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে। বাঙালির রন্ধ্রে রন্ধ্রে বইয়ের গন্ধ, আর এই বইয়ের খনি আমাদের কলেজ স্ট্রিট বইপাড়া। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘সেকেন্ড-হ্যান্ড’ বইয়ের বাজার এবং ভারতের বৃহত্তম বইয়ের বাজার হলো এটি। কলেজ স্ট্রিটের ইতিহাস প্রায় ২০০ বছরের পুরনো।

এই বইপাড়ায় তখন এত বইয়ের দোকান ছিল না। যদি প্রশ্ন করা হয়, এই বই পাড়ার সব থেকে পুরনো এবং সচল বইয়ের দোকান কোনটি ? তবে বলে রাখি তার মধ্যে একটি দোকান ছাড়া আর কোনও দোকানেরই এখন অস্তিত্ব নেই।

যে দোকানটি এখনও সচল তাকে হেরিটেজ কমিশন দেশের এক নম্বর হেরিটেজ বুক শপের মর্যাদা দিয়েছে। দোকানটির নাম ৫৪/‌৩ কলেজ স্ট্রিটের দাশগুপ্ত অ্যান্ড কোং প্রাইভেট লিমিটেড।

২০০ বছরের পুরনো তিনতলা বাড়িটি শুধু বইয়ে ঠাসা। ১৮৮৬ সালে এটি প্রথম কলেজ স্ট্রিটের বইয়ের দোকান।

খুলনা থেকে আসার পথে যশোরে গিরিশচন্দ্র দাশগুপ্ত প্রাণের বন্ধু মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্যকে বলেন, কলেজ স্ট্রিটেই অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল কলেজ রয়েছে। খুব ইচ্ছে, ওই রাস্তায় একটা বইয়ের দোকান দেওয়া।

হোমিওপ্যাথ হিসেবে তখন মহেশচন্দ্রের খুব নাম ডাক হয়েছে। তিনি বললেন, তুমি দোকান দাও। আমি কলকাতায় প্র্যাকটিস করব। গিরিশচন্দ্র মাত্র ৩৪টি বই সম্বল করে ওই বাড়িতেই বসালেন কলেজ স্ট্রিটের প্রথম বই–‌দোকান।

দাশগুপ্ত অ্যান্ড কোং প্রাইভেট লিমিটেডের কর্ণধার গিরিশচন্দ্র মারা যান ৬২ বছর বয়সে। তাঁর ছেলে ক্ষিতীশচন্দ্র এই ব্যবসার হাল ধরেন। পরে ১৯৬২ সালে তার মৃত্যুর পর, তাঁর জায়গায় আসেন ছেলে অমূল্যচন্দ্র।

ওই ষাটের দশকেই অমূল্যচন্দ্র দোকানটিকে এক আশ্চর্য সংগ্রহশালা করে তোলেন। কলকাতা সহ তার আশেপাশের অনেক জায়গা থেকে পণ্ডিত ও অধ্যাপকেরা আসতেন বিদেশি ও দেশি ইংরেজি ভাষায় লেখা যে–‌কোনও বিষয়ের বই কিনতে।

এই দোকানে বই পাওয়া না গেলে তা হলে দেশে কোথাও পাওয়া যাবে না। বিদেশে চিঠি পাঠিয়ে আনাতে হবে। ‌তখন এই দোকানে ৬০/‌৬২ জন কর্মচারী তিনতলা জুড়ে কাজ করত। ‌এখন কর্মচারী সংখ্যা কমে গিয়েছে অনেকটা।

অমুল্যবাবুর ছোট ছেলে অরবিন্দ দাশগুপ্ত এখন দোকানে বসেন। তাঁর কথায়, অমূল্যবাবু কলেজ স্ট্রিটে ‘‌বইওয়ালা’‌ নামে পরিচিত ছিল।

সেই সময় তাঁর খদ্দের ছিলেন ইংরাজির কিংবদন্তি অধ্যাপক তারক সেন, ইতিহাসের অধ্যাপক সুশোভন সরকার, ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক শহীদুল্লাহ্‌, ইতিহাসের অমলেশ ত্রিপাঠী ও দিলীপ বিশ্বাস। বাংলার অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও মদনমোহন কুমার।

ড.‌ অমর্ত্য সেন এবং তাঁর সহপাঠী একদা প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী গান্ধীর পরামর্শদাতা সুখময় চক্রবর্তী। সেই সব দিনের ইতিহাস নিয়ে এখনও চলছে দোকানটি। সেই সময় গিরিশচন্দ্র তো ৩৪টি বই নিয়ে এ ব্যবসায় এসেছিলেন।

এখন গড়ে ৭০ হাজার বই থাকে। অরবিন্দ জানালেন, ‘‌প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ বই কিনতে এই দোকানে মানুষ ভিড় করে’। আগের থেকে কম করেও এর তিনগুণ বই প্রতিদিন বিক্রি বেড়েছে। কলেজ স্ট্রিটে এখন ফুটপাথ জুড়ে বই বিক্রি হয় সারা বছর।

ছোট বড় অনেক দোকানই রয়েছে গোটা এলাকায়। এর মাঝে ২০০ বছরের পুরনো এই বইয়ের দোকান এখনও আগের মতন সচল।

ঋণ:রাজশ্রী চৌধুরী –বইতরণী

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *