কীভাবে শুরু হয়েছিল বাংলা দিনপঞ্জিকা আর নববর্ষ ? বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ও জানা অজানা গুরুত্বপূর্ণ খবর এক নজরে।
![](https://sukanyadigital.com/wp-content/uploads/2022/04/2A-thr.jpg)
সেই ১৫০০ সালে তৎকালীন ভারতের মোগল সাম্রাজ্য হিজরি পঞ্জিকা যা পূর্ণিমা অমাবস্যা হিসেবে পরিচালিত হত কিন্তু তাতে কৃষকদের কৃষি কাজের অসুবিধে হত ফলে খাজনা দেওয়া আর আদায় কাজে বিঘ্ন ঘটত।সেই কারণে কৃষকদের যাতে অসুবিধে না হয় তাই তখনকার বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সম্রাট আকবরের নির্দেশে বাংলা সনের নিয়ম তৈরি করেন যার সূত্রপাত ১৫৮৪ সালের ১০/১১ মার্চ।কিন্তু অন্যমতে বঙ্গাব্দের সৃষ্টিকর্তা সপ্তম শতাব্দীর রাজা শশাঙ্ক।বর্তমানে গ্রেগরীয় পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতিবছর ইংরেজি ১৪/১৫ এপ্রিলে পয়লা বৈশাখ দিন পালন করা হয়।
সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, বঙ্গ, কেরল, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হত।
এখন আপামর বাঙালির মধ্যে এই সমাজে নববর্ষের আনন্দ উৎসব পালন করা হলেও আগেকার দিনে কিন্তু হাল খাতার অর্থাৎ নতুন খাতা খোলার দিন হিসেবেই পালন করা হত।
উনিশ শতকে ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’-য় সে কালের বর্ষশেষের সুন্দর বর্ণনা রয়েছে— “এদিকে আমাদের বাবুদের গাজনতলা লোকারণ্য হয়ে উঠল, ঢাক বাজতে লাগল, শিবের কাছে মাথা চালা আরম্ভ হল, সন্নাসীরা উবু হয়ে বসে মাথা ঘোরাচ্ছে, কেহ ভক্তিযোগে হাঁটু গেড়ে উপুড় হয়ে পড়েছে— শিবের বামুন কেবল গঙ্গাজল ছিটুচ্ছে, আধ ঘণ্টা মাথা চালা হল, তবু ফুল আর পড়ে না।”সে কালের কবি ঈশ্বর গুপ্তের কবিতা-‘খৃষ্ট মতে নববর্ষ অতি মনোহর।/প্রেমানন্দে পরিপূর্ণ যত শ্বেত নর॥/চারু পরিচ্ছদযুক্ত রম্য কলেবর।/নানা দ্রব্যে সুশোভিত অট্টালিকা ঘর॥’
![](https://sukanyadigital.com/wp-content/uploads/2021/04/IMG-20210412-WA0004-1024x576.jpg)
সেই সুদূর অতীত ধরে বাঙালি জীবনে যে সংস্কৃতি রীতি পরম্পরা চলে আসছে এই বাংলা নববর্ষের সময় গাজন ও চড়ক উৎসব। বাংলা পঞ্জিকার চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ জুড়ে সন্ন্যাসী বা ভক্তদের মাধ্যমে শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হয়। চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক পূজার সঙ্গে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। ধর্মের গাজন সাধারণত বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে পালিত হয়।বর্ধমান জেলার বহরান গ্রামে সেবায়েত শ্রী স্মৃতিময় মজুমদার,প্রীতিময় মজুমদারদের ৮০০ বছরের প্রাচীন গাজন উৎসব এখনও প্রতিবছর সাড়ম্বরে পালিত হয়।
![](https://sukanyadigital.com/wp-content/uploads/2022/04/rongali-bihu-thr.jpg)
রঙ্গলি/বোহাগ বিহু -আসাম-আসামে তিনটি সময় ও পর্যায়ে বিহু উৎসব পালন করা হয় যার একটি এই সময় যাকে রঙ্গলি বা বোহাগ বিহু।চৈত্র মাসের শেষ দিনে কৃষিকাজে ব্যাপ্ত কৃষকরা ঈশ্বরকে প্রণাম,ধন্যবাদ ও আশীর্বাদ চেয়ে এই উৎসব পালন করেন।
![](https://sukanyadigital.com/wp-content/uploads/2022/04/baisakhi-holding-thr-scaled.jpg)
বৈশাখী -পাঞ্জাব-পাঞ্জাবে বৈশাখী উৎসব সাড়ম্বরে ধুমধাম করে পালিত হয়।এই উৎসব পালনের অন্যতম ঐতিহাসিক তাৎপর্য মোগল সম্রাট ঔরংজেবের নির্দেশে ধর্মগুরু তেগ বাহাদুর সিংহের মুসলিম ধর্মান্তকরণের বিরোধিতায় শহীদ হওয়া এবং গুরু গোবিন্দ সিংহের ১০ম শিখগুরু রূপে অভিষেক।এখানে বাঙালি পয়লা বৈশাখের সঙ্গে আশ্চর্য মিল হল তালপাখার ব্যাবহার।তালপাখা ফল ও জল নিয়ে দান উৎসব একটি বৈশাখী পরম্পরা।
![](https://sukanyadigital.com/wp-content/uploads/2022/04/mongol-shovajatra-thr-scaled.jpg)
মঙ্গল শোভাযাত্রা,ঢাকা-ঢাকার বৈশাখী উৎসবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পয়লা বৈশাখের সকালে এই শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভাযাত্রায় সকল শ্রেণী-পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রার জন্য বানানো হয় বিভিন্ন রঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি। ১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখ উৎসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
![](https://sukanyadigital.com/wp-content/uploads/2022/04/chattagram-thr-scaled.jpg)
পার্বত্য জেলায়, আদিবাসীদের বর্ষবরণ-বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রধান তিনটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা রয়েছে যাদের প্রত্যেকেরই বছরের নতুন দিনে উৎসব আছে। ত্রিপুরাদের বৈসুক, মারমাদের সাংগ্রাই ও চাকমাদের বিজু উৎসব। বর্তমানে তিনটি জাতিসত্তা একত্রে এই উৎসবটি পালন করে। যৌথ এই উৎসবের নাম বৈসাবি উৎসব। এই উৎসবের নানা দিক রয়েছে, এর মধ্যে একটি হলো মারমাদের পানি উৎসব।
শেয়ার করুন :