লোপামুদ্রা গোস্বামী
মনোবিদ ,কেরিয়ার কাউন্সিলর ,বিশ্বভারতী ,শান্তিনিকেতন
একজন মনোবিদ হিসেবে আমার কাছে সপ্তাহে তিনটি থেকে চারটি ফোন আসে ডিপ্রেশনের সমস্যা নিয়ে । স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে টিন এজার থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই এই সমস্যার শিকার হতে পারে ।
কোনো কারণে অনেকেরই দু চার দিন মন খারাপ থাকতে পারে তবে যদি দেখা যায় সেই অবসাদ কোনো ভাবেই কাটছে না এবং তা সেই ব্যক্তির অস্তিত্বকে গ্রাস করছে তখন কিন্তু সচেতন হতে হবে।
মনখারাপ যদি দু সপ্তাহ বা তার বেশী সময় ধরে স্থায়ী হয় কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে এবং তিনি যে কাজ বা কাজগুলো করতে ভালোবাসতেন যেমন কেউ যদি টেলিভিশন বা সিনেমা দেখতে ভালোবাসেন অথবা গান শুনতে কিন্তু এখন আর সেটা ভালো লাগছে না । এই লক্ষ্মনগুলো অনেক সময় ডিপ্রেশন কে চিহ্নিত করে এর সঙ্গে আরো কিছু লক্ষ্মন থাকতে পারে । যেমন –
- লস অফ এনার্জি , ঘুম কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত ঘুমানো
- খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন (অতিরিক্ত কম বা বেশি খাওয়া )
- যদি না অন্য কোন শারীরিক সমস্যা থাকে
- কোন বিষয়ে মনোনিবেশ করতে অসুবিধা হয়
- মুভমেন্ট অতিরিক্ত কমতে বা বাড়তে পারে
- সর্বশেষ আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিতে পারে
সম্প্রতি সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পর আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে এই ডিপ্রেশন। একজন সফল সেলিব্রিটির মৃত্যু আমাদেরকে বহু প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। আজ থেকে প্রায় ১০৬ বছর আগে ১৯১৪ সালে আকাশচুম্বী খ্যাতি লাভ করার পরও রামগড় পাহাড়ে বসে বন্ধু এন্দ্রুজ কে চিঠিতে লিখলেন রবীন্দ্রনাথ এক ‘ গ্রেট
সাফারিংস এর কথা। এই সাফারিংস কি প্রত্যাশার ক্রমবর্ধমান চাপ না কি শিল্পীর হৃদয়ের অন্য কোনো বেদনা তা আমরা জানি না। তাই আপাতদৃষ্টিতে সব ঠিকঠাক চলছে মনে হলেও ডিপ্রেশন বাসা বাঁধতে পারে তার মনে ।
অনেক সময় রোগী নিজে বুঝতে পারে আবার কিছু কিছু সময় সে নিজে বুঝতে পারে না তখন পরিবারের লোক বা বন্ধু বান্ধবকে সচেতন হতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মনোচিকিৎসক বা মনোবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সময়মত চিকিৎসা শুরু হলে অবশ্যই অবসাদ কাটিয়ে বেরোনো সম্ভব হবে।
ডিপ্রেশন কাটানোর জন্য সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। কিন্তু অনেকসময় সায়কায়াস্ট্রিট বা সাইকোলজিস্টের সঙ্গে চট করে যোগাযোগ করা নাও যেতে পারে , সে ক্ষেত্রে পরিবারের লোক, বন্ধু বান্ধব বা ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
- মনোবিদ্ বা মনোচিকিৎসক রোগীর সঙ্গে কথা বলে কাউন্সেলিং শুরু করুন । সেই সঙ্গে তার অন্য কোনো শারীরিক অসুবিধা আছে কিনা সেই পরীক্ষা করা উচিত । ( দায়াবেতিস,থাইরয়েড ইত্যাদি)
- রোগী যদি চূড়ান্ত ডিপ্রেশনে ভোগেন তাহলে মনোচিকিৎসক তাকে ওষুধ দেন। এই ওষুধগুলো অধিকাংশ সময়েই দীর্ঘমেয়াদী হয়।
- এছাড়াও থেরাপির মাধ্যমে ডিপ্রেশনের চিকিৎসা করা হয়।
- কগনিটিভ বিহেভিওর থেরাপি বা সি বি টি র মাধ্যমে রোগীর চিন্তা ভাবনার জগতে এবং আচরণে ইতিবাচক দিক আনার চেষ্টা করা হয়
- মাইন্ডফুলনেস বেসড কগনিটিভ থেরাপি (এম বি সি টি ) র মাধ্যমে যারা দীর্ঘদিন ধরে এবং বারেবারে
ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হন এমন রোগীদের বিভিন্ন মেডিটেশন টেকনিক বা ব্রিদিং এক্সারসাইজের মাধ্যমে নেতিবাচক চিন্তন প্রক্রিয়া ভেঙে ইতিবাচক দিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।
ছবি – শাটারস্টক
শেয়ার করুন :