স্ট্রেস থেকে হার্ট অ্যাটাক রুখতে সাবধানতা -

ছবি – কুইক টেলিকাস্ট

স্ট্রেস থেকে হার্ট অ্যাটাক রুখতে সাবধানতা

অভিজ্ঞ কার্ডিওলজিস্ট ,স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কোচেদের পরামর্শ।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা দীর্ঘদিন ধরে স্ট্রেস,ডিপ্রেশন,দুশ্চিন্তা ,আকস্মিক দুঃসংবাদ হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ বলে আমাদের সচকিত করে আসছেন।বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, দুঃখ,হতাশা,দুশ্চিন্তা,মানসিক চাপ,বিষণ্ণতা থেকে যে কোনো সময় হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।এই সব দুঃখ,আঘাত,হতাশা শরীরে কিছু হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়,বিশেষ করে অ্যাড্রিনালিন হরমোন ও কর্টিসল স্ট্রেস হরমোন দ্রুত রক্তে বেড়ে যায়,সঙ্গে বেড়ে যায় হার্টবিট আর প্রেশার।পেশিগুলো টানটান হয়।প্রতিরোধ করবে যে পেশিগুলো সেগুলো উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে।চারদিকের রক্ত মাংসপেশিতে চলে আসে এবং রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়।ধমনীর দেওয়ালে চর্বি জমতে থাকে এতে রক্তচলাচল পথ শুরু হয়ে যায়,ধমনী শক্ত হয়ে ‘এথারোসক্লোরোসিস’ হয়।দীর্ঘস্থায়ী দুঃখ, বেদনা, স্ট্রেস,নেগেটিভ থিংকিং হৃৎপিণ্ডের পেশিতে রক্ত চলাচল কমিয়ে প্রথমে অ্যানজাইনা ও পরে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।এই কারণে শোক বিষণ্ণতা স্ট্রেস কী করে কমিয়ে হার্ট সুস্থ রাখতেই হবে তার মনোবিদ ও ডাক্তারি পরামর্শ:    

  • বছরে দু বার কমপ্লিট হেলথ চেক আপ করতে হবে।ব্লাড সুগার ফাস্টিং ১২০ এমজি আর পিপি ১৪০ এর কম রাখতে হবে।
  • নিয়মিত ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ করতেই হবে।হাঁটা,যোগ ব্যায়াম,ফ্রি হ্যান্ড।বিশেষত যাদের এক জায়গায় বসে কাজ করে যেতে হয় তাদের ১ /২ ঘন্টা পর উঠে হাঁটাহাঁটি করা,লিফ্ট ছাড়া অন্তত ২/৩ ফ্লোর  সিঁড়ি ভেঙে ওঠা নামা করার অভ্যাস করতে হবে। যে কোনো শারীরিক কাজ স্ট্রেস রিলিভার এটা প্রমাণিত সত্য।   
  • সঠিক ডায়েট খেতে হবে।নিয়মিত জাঙ্ক ফুড,অতিরিক্ত তেল মশলা,ফ্যাট,হাই ক্যালোরি খাবারে রাশ টানতে হবে।আজকের দিনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্ট্রেস এড়াতে ,মনকে ভালো রাখতে গিয়ে এই সব সুস্বাদু অথচ শরীরের পক্ষে খারাপ খাবারের প্রতি আসক্তি বেড়ে চলেছে।’এত মন খারাপ লাগছিলো যে মন ভালো করতে বিরিয়ানী আর চাঁপ খেয়ে নিলাম’,শোনা শোনা লাগছে কথাটা ?  
  • স্ট্রেস,হতাশা ,মন খারাপ ক্রমাগত চলতে থাকলে সচেয়ে আগে কাউন্সিলিং এক্সপার্ট, থেরাপিস্টের কাছে যেতে হবে।রিসার্চে প্রমাণিত অধিকাংশ ক্ষেত্রে লোকে কি বলবে ,মনোবিদের কাছে যাওয়া মানে আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে,আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি এই সব ফালতু ভাবনা ছেড়ে সাইকোলোজিস্টের কাছে যেতে হবে।বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে মানসিক অবসাদে গোড়ার দিকে চিকিৎসা হলে তা নিরাময় সহজে হয়।
  • ফোন আসক্তি এবং স্ক্রিন টাইম কমাতেই হবে।বিষণ্ণতার একটি বড় লক্ষণ একা থাকতে চাওয়া,বন্ধু বান্ধব,প্রিয়জনকে এড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে সময় কাটানো। পড়ছে। ইন্টারনেট অ্যাডিকশনে মস্তিষ্কের যে অংশে একজিকিউটিভ কন্ট্রোল নেটওয়ার্ক,যাতে সক্রিয় চিন্তাভাবনা এবং যাকে ইংরেজিতে ‘গোল ডাইরেক্টেড বিহেভিয়ার’ বলা হয়  তার কাজ কমিয়ে দেয় যা অত্যন্ত ভয়াবহ।এই গবেষকেরা আরো লক্ষ্য করেছেন যে এই অবস্থায় মস্তিকে একটা জটিল সক্রিয় নিষ্ক্রিয় অবস্থার সৃষ্টি করে যাকে পরিভাষায় ডিফল্ট নেটওয়ার্ক মোড আখ্যা দেওয়া হচ্ছে যেখানে মানুষের মন কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা কাজে না জড়িয়ে মনকে অলস এবং উদ্দেশ্যহীন জড়তায় আচ্ছন্ন রাখতে। 
  • মেডিটেশন। স্ট্রেস থেকে মুক্ত হতে ধ্যানের প্রয়োজনীয়তা অসীম,অব্যর্থ।দিনের যে কোনো সময় ,তবে সেটা দিন শুরু করার সময় হলে সবচেয়ে ভালো প্রথমে ৫মিনিট ও পরে ১০ থেকে ২০ মিনিট মেডিটেশন করুন।সবচেয়ে জরুরি এবং কঠিন ঐ সময় অন্য কিছু মনে না আনা।এটা একটা মনোসংযোগের অভ্যাস ,প্রথমে ১/২/৩ থেকে ৫ মিনিট, এভাবে ধীরে ধীরে বাড়াতে হয়।উওমেন’স মেডিটেশন নেটওয়ার্ক সাইটে ৮ রকমের পডকাস্ট আছে ,স্লিপ,হিলিং,ডেলি অ্যাফারমেশন,প্যানিক অ্যাটাক ইত্যাদি।  
  • ডেলি রুটিন।লেট নাইট ফোন আসক্তি কাটাতে হবে।নির্দিষ্ট সময় অন্তত ৭/৮ ঘন্টা ঘুম জরুরি যা নিয়মিত এক্সারসাইজ করলে আর ডিসিপ্লিনের মধ্যে থাকলে তার সুফল পাবেন এটা গ্যারান্টি দেওয়া যায়।

তথ্যসূত্র :ডাঃ শুভ্র বন্দোপাধ্যায় (MBBS,MD,MRCP –UK,FRCP –Lond,FACC) )ডাঃ শঙ্খশুভ্র দাস (MBBS,DTCD,MD,MRCP ),ডাঃ পিসি মন্ডল (MBBS,MD,MRCP-UK,MRCP-Glasgow,FACC-US),স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট ফেলিপে মুনোজ।

*এই নিবন্ধটি সাধারণ তথ্যের জন্য যা কোনোভাবে ওষুধ আর চিকিৎসার বিকল্প নয়। অসুখ বা কোন উপসর্গ ,লক্ষণ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *