জামাই ষষ্ঠী কলকাতার প্রথা ? -

জামাই ষষ্ঠী কলকাতার প্রথা ?

হিন্দু বর্ষপঞ্জীতে জ্যৈষ্ঠ মাসে অরণ্যষষ্ঠী থেকে জামাই ষষ্ঠীর উৎপত্তি….

আবহমান কাল ধরে জামাই ষষ্ঠী বাঙালির অন্যতম পার্বণ যার মহিমা এবং রীতি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে আজকের যুগেও জনপ্রিয়।সময় বদলেছে ,আগেকার মতন শ্বশুর শ্বাশুড়ি বাজারহাট ,রান্না বান্নার পাট কিছুটা (নাকি অনেকটা?) বদলে জামাইকে পেটপূজোর জন্য বাঙালি রেস্তোঁরাতে মা ঠাকুমার রান্নার স্বাদগ্রহণ করতে যেতে হচ্ছে ।জামাই ষষ্ঠী কাজের দিনে হলে সেই উইকেন্ডে খাওয়া দাওয়ার সুবিধে করে নিচ্ছে আজকের প্রজন্ম।

কিন্তু জানেন কি  এই জামাই ষষ্ঠী প্রথার উৎপত্তি কলকাতা কেন্দ্রিক ? তার আগে সনাতন ষষ্ঠী পুজোর সংক্ষেপ বৃত্তান্ত।বাংলার সামাজিক ইতিহাস আর ধর্মীয় বৃত্তান্ত ,পুরাণ কথা ,লোকসংস্কৃতি চর্চায় মা ষষ্ঠী শুধু বাংলার দেবী নন,ভারতের নানা অঞ্চলে নানারূপে পূজিত হন।

হিন্দু বর্ষপঞ্জীতে জ্যৈষ্ঠ মাসে অরণ্যষষ্ঠী থেকে জামাই ষষ্ঠীর উৎপত্তি।আগেকার দিনে শ্বশুরবাড়িতে মেয়েদের লাঞ্ছনা ,গঞ্জনা সহ্য করতে হত (এখনও এই কুপ্রভাব পুরোপুরি যায়নি) এবং সেকালে এরকম প্রথার কথাও শোনা যায় যে বিয়ের পর সন্তান সন্ততি না হলে মেয়ের বাবা মায়ের মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার অনুমতি ছিল না।এর সঙ্গে মনে রাখতে হবে ভয়ঙ্কর সতীদাহ  এবং বহুবিবাহের মতন নির্মম প্রথার কথা যেখানে মেয়ের বাবা মা মেয়েদের বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারতেন না।এর সঙ্গে মনে রাখতে হবে সেকালে খুব কম বয়সে বিয়ে হওয়ার পর এবং অনেক ক্ষেত্রে বিয়ের পর স্বামী কার্যোপলক্ষে দূরদেশে থাকা।এইসবের হাত ধরে কলকাতার বাবু কালচারে জামাই ষষ্ঠীর অনুপ্রবেশ যা ধীরে ধীরে বাংলার গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে।আঠারো উনিশ শতকে বাংলার স্বচ্ছল শ্রেণীর মধ্যে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের প্রচলন ছিল,সেই প্রাদুর্ভাব নিজের মেয়ে এবং জামাইয়ের মঙ্গলকামনায় মেয়ের বাপের বাড়ি আসার এবং প্রধানত জামাই বাবাজিকে তুষ্ট রাখতে যাতে তার বাড়িতে মেয়ে সুখে থাকে এই মনোস্কামনায় কলকাতার উচ্চবিত্ত সমাজ থেকে এই জামাই ষষ্ঠী অনুষ্ঠানের সূত্রপাত।          

ইতিহাসে লোককথায় বার বার দেখা গেছে যখনই কোনো সঙ্কট এসেছে সেই যুগের প্রয়োজনে বাঙালির পুজো আচ্চা,রীতি নীতির কিছু বদল হয়েছে ,এক্ষেত্রে সন্তানের কল্যাণের জন্য একটি ব্রতকে মেয়ের বর্তমান এবং  ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন বাবা মায়েরা অরণ্যষষ্ঠীকে কিছুটা বদলে জামাই ষষ্ঠীতে জামাইয়ের জন্য পেটপুজো আর উপহারের আয়োজন করেছেন।  

ঋণ : জহর সরকার,বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতি কোষ – (ডঃ বরুণ কুমার সরকার সম্পাদিত)।

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *