গত দু বছর ধরে চলা এই ভয়ঙ্কর অতিমারিতে আমাদের সবার জীবন বিধ্বস্ত,বিপর্যস্ত।এর সঙ্গে নিজেদের কাছের মানুষ,বন্ধুদের অকস্মাৎ চলে যাওয়ার নিদারুণ অভিঘাতে আমাদের মন হতাশায় বিষন্ন।হার্ট স্পেশালিস্টরা রিসার্চে লক্ষ্য করেছেন মারাত্মক শোক দুঃখের অভিঘাত অনেকের শরীরে কিছু হরমোনের বিশেষত অ্যাড্রিনানিল ও কার্টিসন হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে তোলে ফলে হৃৎস্পন্দন আর রক্তচাপের গতি বেড়ে যায়।পেশী টানটান হয়ে চারিদিকের রক্ত মাংসপেশিতে চলে আসে ফলে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে জমাট হয়ে যায় আর চর্বিও জমতে থাকে ধমনীর দেওয়ালে ফলে এথারোক্লেসিস রোগের সম্মুখীন হতে হয় ,ফলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।শোক-দুশ্চিন্তা-হতাশা নেতিবাচক অনুভূতি হৃৎপিণ্ডের পেশিতে রক্ত চলাচল কমিয়ে প্রথমে অ্যানজাইনা ও পরে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের সাইকায়াট্রির এমডি ডঃ লিও পজুয়েলো ও কার্ডিওলজিস্ট এমডি ডঃ ডেভিড লোপেজের প্রেসক্রিপশন-
১)ব্লাড সুগার ফাস্টিং ১০০ এমজির নিচে রাখতে হবে।
২)এলডি কলেস্টরল থাকা উচিত ১০০ এমজির নিচে।হার্টের সমস্যায় ৭০এর নিচে।
৩)এইচডিএল কলেস্টরল পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪০ ও মেয়েদের ক্ষেত্রে ৫০ এর ওপর থাকা উচিত।
৪)ট্রাইগ্লিসারাইড ১৫০ এর নিচে থাকা বাঞ্ছনীয়।
৫)ব্লাড প্রেসার ওপরে ১৪০ ও নিচে ৯০র কম থাকা উচিত।
৬)ওজন বৃদ্ধির পরিমাপ ভারতীয়দের BMI (বডি মাস ইনডেক্স) ২৩ এর নিচে থাকতে হবে।
৭) প্রতিদিন ধ্যান করা আবশ্যক।দুশ্চিন্তা,আতঙ্ক,দুর্ভাবনা মনের জোরে সরিয়ে দিনে ১৫ মিনিট মেডিটেশন জরুরি।মনে করতে হবে যেসব বিষয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই তা নিয়ে অকারণ দুশ্চিন্তা করা যাবে না।
৮)নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবেই।বেশি সোশ্যাল মিডিয়া,খবরের কাগজে নৈরাশ্যমূলক খবর থেকে দূরে থাকতে হবে এই অস্থির বিপর্যস্ত সময়।
৯)খুব পরিষ্কার করে চিহ্নিত করে নিতে হবে কোন বিষয়গুলি সবচেয়ে অস্থিরতা,আতঙ্ক,দুশ্চিন্তার কারণ আর তা থেকে জোর করে দূরে থাকতে হবে।একটা মানসিক দৃঢ়তা যে যে বিষয়ে আমার কোনও কন্ট্রোল নেই তা নিয়ে অনর্থক দুশ্চিন্তা করা যাবেনা,এই বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকব।এটা অভ্যাস করা কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়।
১০)মানসিক স্থিতি যদি এতেও না আসে তাহলে দেরি না করে সায়কায়াট্রিস্টের কাছে যেতে হবে।একটা ভুল ধারণা আছে মনোবিদের কাছে যাওয়া মানেই মাথার গন্ডগোল সেটা কাটিয়ে উঠতে হবে কারণ ডিপ্রেশন থেকে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা এখন বাড়ছে।
১১)দিনে ৮ ঘন্টা ঘুম জরুরি।রিসার্চে প্রমাণিত যারা অনিদ্রায় ভোগেন অন্যদের তুলনায় তাদের হার্ট অ্যাটাকের রিস্ক ৪৫% বেশি।ঘুম না এলে শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
১২)নিয়মিত ৩কিলোমিটার হাঁটা।হার্ট ভাল রাখতে ও ডিপ্রেশন এড়াতে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।
১৩)একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট আর ডিনার করুন পরিবারের সকলের সঙ্গে।রিসার্চে প্রমাণিত এতে হার্টের সমস্যা আর ডিপ্রেশন এড়াতে ভাল কাজ করে।
১৪)সোশ্যাল মিডিয়ায় নয় সত্যিকারের বন্ধুদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন,শেয়ার করুন আপনার সমস্যা,দুশ্চিন্তা,মন খারাপ।মনের মধ্যে হতাশা,দুঃখ,দুশ্চিন্তা চেপে রেখে গুমরে থাকা ডিপ্রেশন আর হার্ট অ্যাটাকের প্রধান কারণ।
১৫)প্রতিদিনের ডায়েটে দারচিনি,আখরোট,স্যালাড রাখুন।
শেয়ার করুন :