স্বাধীনতার ২১ বছর আগে এই ১৫ই অগাস্ট ১৯২৬ জন্মগ্রহণ করেছিলেন কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য।প্রগতিশীল চেতনার এবং মার্ক্সবাদী চিন্তার ধারক কবি সুকান্ত কবিতায় গণমানুষের আশা -আকাঙ্খা,শোষণহীন সমাজের কথা বলে গেছেন।নিপীড়িত ও সর্বহারা মানুষকে নিয়ে কাব্য রচনার জন্য তিনি গণমানুষের কবি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।ছোটবেলা থেকে ন্যায় অন্যায়ের প্রতি প্রবল বোধ আবেগ আর গঠনমূলক কাজের দিকে ঝোঁকছিল। অল্প বয়সে অসামান্য কবি প্রতিভার কারণে তিনি কিশোর কবি হিসেবে খ্যাত। নিপীড়িত ও সর্বহারা মানুষকে নিয়ে কাব্য রচনার জন্য তিনি গণমানুষের কবি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। কবিতা রচনায় যার অনুপ্রেরণা সুকান্তের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল তার বড় দিদি রাণু। কবিতা রচনা ছাড়াও সুকান্ত বাংলা সাহিত্যের যেসব ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন- গান, গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধ। ‘বিদ্রোহের গান’ কবিতার বলেছেন- ‘দিক থেকে দিকে বিদ্রোহ ছোটে, বসে থাকবার বেলা নেই মোটে, রক্তে রক্তে লাল হয়ে, ওঠে পূর্বকোণ।
পরবর্তীকালে বাড়ির আবহে ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া।সেটা বিশ্বযুদ্ধের সময় সেটা ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি বীর বিপ্লবীদের সংগ্রামের সময়। চট্টগ্রাম অস্ত্রগার লুণ্ঠনের বীর ও শহীদদের উদ্দেশ্যে লেখেন:
চট্টগ্রামঃ বীর চট্টগ্রাম
এখনও নিস্তব্ধ তুমি
তাই আজও পাশবিকতার
দুঃসহ মহড়া চলে
তাই আজও শত্রুরা সাহসী।
ফ্যাসিস্ট শত্রু সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উচ্চারণ করলেন পবিত্রতম ঘোষণা:
বন্ধু, তোমার ছাড়ো উদ্বেগ সুতীক্ষ্ন করো চিত্ত,
বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝেনিক দুব্বৃত্ত।
মূঢ় শত্রুকে হানো স্রোত রুখে তন্দ্রাকে করো ছিন্ন,
একাগ্র দেশে শত্রুরা এসে হয়ে যাক নিশ্চিহ্ন।
ফ্যাসিস্ট বিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে সুকান্ত পোষ্টার লেখেন আর পোষ্টারের উপর তার দুটি কবিতা ‘শত্রু এক’ এবং ‘উদ্বীণ’ লিখে তা দেয়ালে দেয়ালে লাগানো হয়।
‘ছাড়পত্র’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। কবির প্রথম এই কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। ছাড়পত্র কাব্যগ্রন্থে মোট কবিতার সংখ্যা ৩৮টি। কবি সুকান্তের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থের নাম- ‘ঘুম নেই’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৫০ সালে।
‘ঘুম নেই’ কাব্যগ্রন্থে মোট কবিতার সংখ্যা- ৩৬টি। সুকান্তের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘পূর্বাভাস’ প্রকাশিত হয়েছিল- ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি। সুকান্তের বিখ্যাত ‘হরতাল’ কাব্যগ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬২ সালে। ‘কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি, ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। পূর্ণিমারচাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’-পঙক্তিটি সুকান্ত ভট্টাচার্যের হে মহাজীবন কবিতা থেকে নেওয়া। কবিতাটি ‘ছাড়পত্র’ কাব্যের কবিতা। লেখকের ছাড়পত্র কাব্যের কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘ছাড়পত্র’, ‘আগামী’, ‘রবীন্দ্রনাথের প্রতি’, ‘একটি মোরগের কাহিনী’, ‘দুরাশায় মৃত্যু’, ’ঠিকানা’, ‘লেলিন’, ‘দেশলাই কাঠি, ‘কৃষকের গান’, প্রভৃতি। ‘ভেজাল’, ‘বিয়ে বাড়ির মজা’, ‘মেয়েদের পদবী’, ‘পুরনো ধাঁধাঁ, ‘সিপাহী বিদ্রোহ’, কবিতাগুলি সুকান্তের ‘মিঠেকড়া’ কাব্যগ্রন্থের। ’বিক্ষোভ’, ‘১ লা মের কবিতা’, ‘সব্যসাচী’, ‘বিদ্রোহের গান’, ‘অভিবাদন’, ‘আমার এসেছি’, ‘একুশে নভেম্বর’, ‘দিন বদলের পালা’ প্রভৃতি কবিতাগুলোর সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ঘুম নেই’ কাব্যের। ‘জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তুপ-পিঠে চলে যেতে হবে আমাদের’ পঙক্তিটি তার ‘ছাড়পত্র’ কবিতার । ‘গীতিগুচ্ছ’ সুকান্তের সংগীতবিষয়ক কাব্যগ্রন্থ। তার বিখ্যাত প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে- ছন্দ ও আবৃত্তি, পত্রাবলী, পত্র-গুচ্ছ প্রভৃতি। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের অগ্রন্থিত কবিতার মধ্যে রয়েছে- ‘চৈত্রদিনের গান’, ‘মার্শাল টিটোর প্রতি’, ‘জনযুদ্ধের গান’, ‘বর্ষ-বাণী’, ‘দরদী কিশোর’, ‘দেবদারু গাছে রোদের ঝলক’ প্রভৃতি। বাংলা সাহিত্যের কিশোর কবি অত্যাধিক পরিশ্রমে ম্যালেরিয়া ও দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন মাত্র ২১ বছর বয়সে, ১৯৪৭ সালের ১৩ মে, কলকাতার রেড এড কিওর হোমে।
শেয়ার করুন :