আজকাল আমাদের জীবন যাপন আগেকার তুলনায় অনেক বেশি জটিল আর ঝঞ্ঝাটের হয়ে গেছে এ কথা অনস্বীকার্য।তার মধ্যে শরীর ও মনে বাসা বাঁধছে অনেক অজানা রোগ যে বিষয়ে আমাদের সম্যক কোনও ধারণা না থাকায় এর উপসর্গে আমরা আক্রান্ত কিন্তু বুঝতেই পারছি না তার কারণ।এমনই এক মনের অসুখের নাম ব্রেন ফগ।
ব্রেন ফগ বলতে বোঝায় মানসিক অস্পষ্টতা বা মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তির ঘোলাটে অবস্থা — যখন মস্তিষ্ক স্বাভাবিকের মতো পরিষ্কারভাবে ভাবতে বা কাজ করতে পারে না। এটি কোনো নির্দিষ্ট রোগ নয়, বরং একটি উপসর্গ বা মানসিক অবস্থা, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
মূল লক্ষণগুলি –
বেশিক্ষণ মনোসংযোগের অভাব
সহজ জিনিস ভুলে যাওয়া
সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা
কথা বলতে বা সঠিক শব্দ খুঁজে পেতে দেরি হওয়া
মানসিক ক্লান্তি বা বিভ্রান্তি অনুভব
কেন হয় এই ব্রেন ফগ ?
ঘুমের অভাব,স্ট্রেস ও উদ্বেগ,ফুড হ্যাবিট,হরমোনের পরিবর্তন,লং -কোভিড
মেডিকেল ডাক্তার এবং মর্নিং লাইভ এক্সপার্ট ডঃ থারাকার জরুরি পরামর্শ :
১) নিজেকে ভালোবাসুন : জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি দৌড়ে আপনাকে জিততে হবে এমন কেউ কোনও মাথার দিব্যি দেয় নি তাই সবক্ষেত্রে চাপ নেবেন না।আপনি লক্ষ্য করবেন আজকের এত ব্যস্ত যাপনের মধ্যে উইকেন্ড শেষ হলেই আপনার পরের সপ্তাহের কাজের ডেডলাইন,শিডিউল নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়।এগুলি আগে থেকে প্ল্যান করে নিন যে কতটা সম্ভব আর কতটা চাপের।তাই প্রতিদিন অন্তত ৭/৮ ঘন্টা ঘুমোতেই হবে না হলে ব্রেন ওভার স্ট্রেসড হয়ে যায়,ফ্যাটিগ আসে যাতে কাজের ক্ষতি হয়ে আরও স্ট্রেস বেড়ে যায়।
২) একটা রুটিনের মধ্যে থাকা – প্রতিদিনের একটা রুটিন বা শিডিউলের মধ্যে থাকলে ব্রেন ফগ অনেকটা কমে যায়।আজকে,এই সপ্তাহে,এই মাসে কি কি পেশাগত ও পারিবারিক কাজ আছে এবং তার টাইম ম্যানেজমেন্ট আগে থেকে ঠিক করে রাখা।এখন সব ফোনেই রিমাইন্ডার,অ্যালার্ম থাকে।আরও ভালো হয় যে একটা সকালের আর সন্ধ্যের রুটিন করে রাখলে।আর যদি আগে থেকে ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ ডিনার প্ল্যান করে নিতে পারেন তাহলে খুব ভালো কারণ তাতে অনবরত ব্রেনে ডিসিশন নেওয়ার চাপ থাকে না।
৩) কাজের ফাঁকে ব্রেক নিন – সময়ের অভাবে সব কাজ মেটানোর জন্য প্রতিদিন পরের পর কাজ এবং দায়িত্ব নেওয়া কাজের গুণমানের ক্ষতি করে কারণ আমরা কেউ এ আই বা রোবট নই।এতে একটা কাজ শেষ করেই পরের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লে কাজের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।তাই একটা কাজের ফাঁকে অন্য কাজে হাত দেওয়ার আগে একটু ব্রেক নিন এবং সেটা প্ল্যান করেই নিন।এর সুবিধে হল আগের কাজ কেমন হল আর পরের কাজ কি করতে হবে কেমন করে করবেন সেই সম্পর্কে আপনার ব্রেনকে গুছিয়ে নেওয়ার সময় দেওয়া এতে কাজের উৎকর্ষ বেড়ে যাবে।এটা না করে একটি কাজের পরেই আবার টানা অন্য কাজে বসলেই ব্রেন বেঁকে বসতে পারে।
৪) ক্যালেন্ডার রিমাইন্ডার – প্রত্যেকটি জুরুরি কাজ তা অফিসেরই হোক বা বাড়িরই হোক মাথায় রেখে মনে রাখা আজকের দিনে অসম্ভব কাজের সংখ্যা আগের জীবন যাপনের তুলনায় অনেক বেশি এবং এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ,শিডিউল ভুলে গিয়ে মনের ওপর ভয়ঙ্কর চাপ আর কাজের ক্ষতি।আজকাল ফোনে সব শিডিউল, অ্যালার্ম,রিমাইন্ডার সেট করে রাখা যায়।তাতে বিভিন্ন সময়,দিনে কাজের সময় জানিয়ে দেয় ফলে কোন কাজ কখন সেটা মনে রাখতে হয় না।
৫)SWANS – প্রত্যেকটি ইংরেজি অক্ষর এক একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অভ্যেসের কথা বলছে যা প্র্যাকটিস করলে আপনার ব্রেন ফগ দূর হতে সাহায্য করবে।
S – স্লিপ।প্রতিদিন অপরিহার্য,আবশ্যিক।মস্তিককে বিশ্রাম আর মনোসংযোগ সংঘবদ্ধ করে যাতে মনের আবছায়া কেটে যায়।
W – ওয়াটার।যেহেতু আমাদের শরীরের ৬০% জল তাই জলের অভাবে আমাদের অজান্তে ডিহাইড্রেশনের শিকার হয়ে থাকি।
A – অ্যাক্টিভিটি।সক্রিয় থাকা।সেডেন্টারি লাইফস্টাইলের বদ অভ্যাস ছাড়তে হবে।নিয়মিত শরীরের সঞ্চালন শরীরে রক্ত সঞ্চালন আর মস্তিষ্কে অক্সিজেন পাঠানোর কাজ করে যাতে চিন্তা ভাবনায় শৃঙ্খলতা আর স্বচ্ছতা বাড়ায়।
N – নিউট্রিশন।ব্রেনে নিউট্রিশন বাড়াতে সাধারণ সুপাচ্য তাজা পুষ্টিকর খাবার কাছে উচিত যা প্রসেসড অর্থাৎ প্রক্রিয়াজাত নয় যেমন ডিম,মাছ,বাদাম,তাজা শাকসবজি,ফল।
S – স্ট্রেস।ক্রনিক স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোনের সঞ্চালন কমিয়ে দেয়।কর্টিসল হরমোন কে স্ট্রেস হরমোন বলা হয় অর্থাৎ এই হরমোন শরীরের স্ট্রেস,মেটাবলিজম,ইমিউন ফাংশন আর ব্লাড সুগার লেভেল কন্ট্রোল করে।এই হরমোনের সঞ্চালন কম হলে তা মস্তিকে প্রভাব ফেলে ফলে পরিষ্কার চিন্তাশক্তি ব্যাহত হয়।নিয়মিত ব্যায়াম,হাঁটা,গান শোনা,প্রাণায়াম স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
শেয়ার করুন :





