পূর্ব ভারতের একমাত্র আন্তর্জাতিক JCI অ্যাক্রেডিটেড অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস আর একটি অনন্য কীর্তির নজির স্থাপন করল। এই মার্চ মাসে ৫১ বছরের ৬০ কেজি ওজনের শ্রীমতী দেবযানী দে অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা করতে আসার আগে জানতেনই না তিনি একটি ৮কেজি ম্যালিগনেন্ট টিউমার শরীরে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।বেশ কিছু ধারাবাহিক পরীক্ষার পর অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টারের মান্য অঙ্কোলজিস্টরা দেখলেন যে এটা খুব বিরল আর ‘হাইলি অ্যাগ্রেসিভ’ ইউটেরাইন টিউমার যা পেশেন্টের পেলভিক অর্গানেও ছড়িয়ে পড়েছে।এই অসুখের একমাত্র সমাধান অত্যন্ত জটিল সুপ্রা-মেজর সার্জারি যাতে টিউমার,ইউরিনারি ব্লাডার,রেক্টাম আর ডিস্টাল কোলনের অংশ বাদ দিতে হবে।রিপোর্টে দেখা গেল এই টিউমার রেক্টাম,সিগময়েড কোলন,ইউরিনারি ব্লাডার এবং ডিস্টাল ইউরেটারে ছড়িয়ে পড়েছে।
পূর্ব ভারতের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টারের (ACC ) অভিজ্ঞ ডাক্তারেরা সাফল্যের সঙ্গে এই বিরল ও জটিল ইউটেরাইন লিওমায়োসার্কোমা (LSM ) অপারেশন করেন। দীর্ঘ ৮ ঘন্টা ম্যারাথন সার্জারি করে সার্জিকাল অঙ্কোলজিস্টদের দল সাফল্যের সঙ্গে একটি বড় ২৭x২৭x২৭ সেমি. টিউমার ওপেন রেডিয়াল এন ব্লক রিসেকশন করে প্রত্যেকটি ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ কেটে বাদ দিয়ে আর যাতে সামান্য রক্তক্ষরণ হয় এমন নিপুন ও সুদক্ষভাবে অস্ত্রোপচার করেন।
লিওমায়োসার্কোমা প্রধানত 45 থেকে 53 বছরের মধ্যে থাকা পেরিমেনোপজাল মহিলাদেরকে প্রভাবিত করে, এবং এটি সব ধরনের জরায়ুর ক্যান্সারের 3 থেকে 7%-এর কারণ হয়। জরায়ুর ক্যান্সারগুলির মধ্যে, সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায় এন্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সার। কিছু ক্ষেত্রে, এন্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সারের থাইরয়েড ক্যান্সারের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে, কিন্তু মিস দেবযানী দে-এর LMS রোগটি ধরা পড়েছিল, যা এন্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সারের থেকে একেবারে আলাদা এবং তা থাইরয়েড ম্যালিগন্যান্সির সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। তাকে সার্জারির পরবর্তী পরিচর্যা করে পাঁচ দিন পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ক্ষেত্রের থেকে ডাক্তারদের দলটির নেতৃত্ব দেন অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টার কোলকাতার সার্জিকাল অঙ্কলজির কনসালটেন্ট, ড: সুপ্রতিম ভট্টাচার্য এবং সার্জিকাল অঙ্কলজির কনসালটেন্ট, ড: অমিত চোরারিয়া।
অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালসের ডি এম এস ডঃ সুরিন্দর ভাটিয়া বলেন,’পূর্ব ভারতে তো প্রথম বটেই ভারতেও এই দীর্ঘসময়ে ধরে চলা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল অপারেশন ভীষণ কঠিন এবং এই অসামান্য দৃষ্টান্তমূলক কৃতিত্বের জন্য অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টারের ডাক্তার ,টেকনিশিয়ান এবং সাহসী পেশেন্ট শ্রীমতী দেবযানী রায়কে অজস্র অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
এই সফল বিরল সার্জারি সম্পর্কে বলতে গিয়ে অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টার কলকাতার সার্জিকাল অঙ্কলজির কনসালটেন্ট ডঃ সুপ্রতিম ভট্টাচার্য বলেন, “এটা একটা জটিল আর চ্যালেঞ্জিং কেস ছিল, এতে ব্যাপক পরিমাণে সমন্বয় করা আর দলগতভাবে কাজ করার প্রয়োজন ছিল। আমি মিসেস দেবযানী দে-এর সেরে ওঠায় অত্যন্ত আনন্দিত আর রোগীকে তার বিভিন্ন অপশনের কথা ভালোভাবে জানিয়ে কিভাবে একটা বিস্তারিত কাউন্সিলিং আর ভাগ করে নেওয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ তাকে এই গুরুতর সার্জারির মধ্যে দিয়ে অনায়াসে পার করে দিয়েছে তা দেখে আমি সন্তুষ্ট। আমাদের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা আর ডাক্তারদের দক্ষ দলটি এই কাঙ্খিত পরিণাম অর্জন করাকে সম্ভব করে তুলেছে। এই ধরনের চ্যালেঞ্জিং কেসগুলো আমাদের আরও ভালো করতে চালিত করে আর আমাদের রোগীদের জন্য সম্ভাব্য সবচেয়ে সেরা পরিচর্যা প্রদান করার দিকে আমাদের উৎসাহী করে তোলে। ”
অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টার কোলকাতার, সার্জিকাল অঙ্কলজির কনসালটেন্ট, ডঃ অমিত চোরারিয়া, বলেন, “রোগীর ইচ্ছা আর লড়াকু মনোভাব আর তার সাথে অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টার,কলকাতার দলগতভাবে করা কাজই পার্থক্য গড়েছে। আমরা খুশি যে মিসেস দেবযানী আমাদের কাছে সঠিক সময়ে এসেছিলেন। সামান্য দেরী হলে টিউমারকে কেটে বাদ দেওয়া যেত না। সব ধরনের কঠিন কেস পরিচালনার জন্য একটা ভালো টিম দরকার, আর আমরা এখানে ACC-তে একটা দুর্দান্ত টিম পেয়ে ধন্য।‘’
প্রাপ্ত চিকিৎসা সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে, রোগী মিসেস দেবযানী দে বলেন, “আমি Apollo ক্যান্সার সেন্টারের টিমের অবিরাম যত্ন আর মনোযোগের জন্য আর আমাকে আমার স্বাস্থ্য আর জীবনের মান ফিরিয়ে দেওয়ায় সাহায্য করার জন্য তাদের কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ।‘’”
এই অসাধারণ কেসটি ACC কলকাতার প্রদান করা ব্যাতক্রমী মানের চিকিৎসা পরিচর্যার উপর আলোকপাত করে এবং বিরল ও জটিল চিকিৎসাগত কেস সামলানোর ক্ষেত্রে দলের অভিজ্ঞতা প্রদর্শন করে। এই সার্জারির সাফল্য একই ধরনের বিরল ও জটিল অবস্থায় ভোগা অন্যান্য অনেক রোগীদের মধ্যে আসার সঞ্চার করে।
অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টারে, একটি ৩৬০ ডিগ্রী পন্থার মাধ্যমে রোগীরা ক্যান্সারের সার্বিক পরিচর্যা পান। ACC একটি বিস্তীর্ণ চিকিৎসা পরিকল্পনা ব্যবস্থা নিয়োগ করে, যার অন্তর্ভুক্ত অত্যন্ত দক্ষ মেডিকেল, সার্জিকাল, ও রেডিয়েশন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি টিউমার বোর্ড। বোর্ডটি প্রত্যেক রোগীর জন্য নেওয়া সেরা পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে রোগনির্ণয় করার কনসালটেন্টদের সাথে একসঙ্গে প্রতিটি কেস মূল্যায়ন করে। এই প্যানেলকে প্রয়োজন অনুসারে মেডিকেল কাউন্সিলার, স্পিচ থেরাপিস্ট, ডায়েটিসিয়ান, এবং অন্যান্য পেশাদারদের একটি দল অধিকতর সহায়তা করে। বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ এবনং নিবেদিত মেডিকেল ও প্যারামেডিকেল কর্মীদের একটি দলের সাথে, অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টার উচ্চমানের স্পেশালিটি স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা প্রদান করে যা পরিণতির দিক থেকে বিশ্বের অগ্রণী হাসপাতালগুলির সমতুল্য।
তথ্যসূত্র – অনুষ্কা ভট্টাচার্য্যি,এমএসএল গ্রূপ। ছবি- কৃশানু দে
শেয়ার করুন :